Quantcast
Viewing all 514 articles
Browse latest View live

বিভিন্ন প্রকরের “খতম” এর বিদা’আত

লিখেছেনঃ ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর | সংকলনঃ কুরআনের আলো ওয়েবসাইট

Image may be NSFW.
Clik here to view.
আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রকারের ‘খতম’ প্রচলিত আছে। এধরনের “খতমের” নিয়ম, ফজীলত ইত্যাদির বিবরণ ‘মকসুদুল মোমিনীন’, ‘নাফেউল খালায়েক’ ইত্যাদি বিভিন্ন বইয়ে পাওয়া যায়। সাধারণত, দুটি কারণে ‘খতম’ পাঠ করা হয়:

(১) বিভিন্ন বিপদাপদ কাটানো বা জাগতিক ফল লাভ;

(২) মৃতের জন্য সাওয়াব পাঠানো।

উভয় প্রকারের খতমই ‘বানোয়াট’ ও ভিত্তিহীন। এ সকল খতমের জন্য পঠিত বাক্যগুলি অধিকাংশই খুবই ভাল বাক্য। এগুলি কুরআনের আয়াত বা সুন্নাহ সম্মত দোয়া ও যিকর। কিন্তু এগুলি এক লক্ষ বা সোয়া লক্ষ বার পাঠের কোনো নির্ধারিত ফযীলত, গুরুত্ব বা নির্দেশনা কিছুই কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীসে বলা হয় নি। এ সকল ‘খতম’ সবই বানোয়াট। উপরন্তু এগুলিকে কেন্দ্র করে কিছু হাদীসও বানানো হয়েছে। ‘বিসমিল্লাহ’ খতম, দোয়া ইউনুস খতম, কালেমা খতম ইত্যাদি সবই এ পর্যায়ের। বলা হয় ‘সোয়া লাখ বার ‘বিসমিল্লাহ’ পড়লে অমুক ফল লাভ করা যায়’ বা ‘সোয়া লাখ বার দোয়া ইউনূস পাঠ করলে অমুক ফল পাওয়া যায়’ ইত্যাদি। এগুলি সবই ‘বুজুর্গ’দের অভিজ্ঞতার আলোকে বানানো এবং কোনোটিই হাদীস নয়।

তাসমিয়া বা (বিসমিলাহ), তাহলীল বা (লা ইলাহা ইলালাহ) ও দোয়া ইউনুস- এর ফযীলত ও সাওয়াবের বিষয়ে সহীহ হাদীস রয়েছে। তবে এগুলি ১ লক্ষ, সোয়া লক্ষ ইত্যাদি নির্ধারিত সংখ্যায় পাঠ করার বিষয়ে কোনো হাদীস বর্ণিত হয় নি। “খতমে খাজেগানের” মধ্যে পঠিত কিছু দোয়া সুন্নাহ সম্মত ও কিছু দোয়া বানানো। তবে পদ্ধিতিটি পুরোটাই বানানো।

এখানে আরো লক্ষণীয় যে, এ সকল খতমের কারণে সমাজে এ ধরণের “পুরোহিততন্ত্র” চালু হয়েছে। ইসলামের নির্দেশনা হলো, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি ইউনূস (আ)-এর মতই নিজে “দুআ ইউনূস” বা অন্যান্য সুন্নাহ সম্মত দুআ পড়ে মনের আবেগে আল্লাহ্‌র কাছে কাঁদবেন এবং বিপদমুক্তি প্রার্থনা করবেন। একজনের বিপদে অন্যজন কাঁদবেন, এমনটি নয়। বিপদগ্রস্ত মানুষ অন্য কোনো নেককার আলিম বা বুজুর্গের নিকট দুআ চাইতে পারেন। তবে এখানে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে:

(১) অনেকে মনে করেন, জাগতিক রাজা বা মন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে যেমন মধ্যস্থতাকারী বা সুপারিশকারীর প্রয়োজন, আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করতেও অনুরূপ কিছুর প্রয়োজন। আলিম-বুজুর্গের সুপারিশ বা মধ্যস্ততা ছাড়া আল্লাহ্‌র নিকট দুআ বোধহয় কবুল হবে না। এ ধরনের চিন্তা সুস্পষ্ট শিরক। জাগতিক সম্রাট, মন্ত্রী, বিচারক বা নেতা আমাকে ভালভাবে চিনেন না বা আমার প্রতি তার মমতা কম এ কারণে তিনি হয়ত আমার আবেদন রাখবেন না বা পক্ষপাতিত্ব করবেন। কিন্তু মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে কি এরূপ চিন্তা করা যায়? ইসলামের বিধিবিধান শিখতে, আত্মশুদ্ধির কর্ম শিখতে, কর্মের প্রেরণা ও উদ্দীপনা পেতে বা আল্লাহর জন্য ভালোবাসা নিয়ে আলেম ও বুজুর্গগণের নিকট যেতে হয়। প্রার্থনা, বিপদমুক্তি ইত্যাদির জন্য একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইতে হয়।

(২) কুরআন কারীম ও বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, যে কোনো মুমিন নারী বা পুরুষ যে কোনো অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজের মনের আবেগ প্রকাশ করে দুআ করলে ইবাদত করার সাওয়াব লাভ করবেন। এছাড়া আল্লাহ তার দুআ কবুল করবেন। তিনি তাকে তার প্রার্থিত বিষয় দান করবেন, অথবা এ প্রার্থনার বিনিময়ে তার কোনো বিপদ কাটিয়ে দিবেন অথবা তার জন্য জান্নাতে কোনো বড় নিয়ামত জমা করবেন।

(৩) নিজে দুআ করার পাশাপাশি জীবিত কোনো আলিম-বুজুর্গের কাছে দুআ চাওয়াতে অসুবিধা নেই। তবে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নিজের জন্য নিজের দুআই সর্বোত্তম দুআ। এছাড়া দুআর ক্ষেত্রে মনের আবেগ ও অসহায়ত্বই দুআ কবুলের সবচেয়ে বড় অসীলা। আর বিপদগ্রস্ত মানুষ যতটুকু আবেগ নিয়ে নিজের জন্য কাঁদতে পারেন, অন্য কেউ তা পারে না।

(৪) অনেকে মনে করেন, আমি পাপী মানুষ আমার দুআ হয়ত আল্লাহ শুনবেন না। এ চিন্তুা খুবই আপত্তিকর ও আল্লাহ্‌র রহমত থেকে হতাশার মত পাপের পথ।কুরআনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র কাফেররাই আল্লাহ্‌র রহমত থেকে হতাশ হয়। কুরআন ও হাদীসে বারংবার বলা হয়েছে যে, পাপ-অন্যায়ের কারণেই মানুষ বিপদগ্রস্ত হয় এবং বিপদগ্রস্ত পাপী ব্যক্তির মনের আবেগময় দুআর কারণেই আল্লাহ্‌ বিপদ কাটিয়ে দেন।

(৫) হাদীস শরীফে বলা হয়েছে যে, “দুআ ইউনূস” পাঠ করে দুআ করলে আল্লাহ্‌ কবুল করবেন। (লা ইলাহা ইলা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতুম মিনায যালিমীন) অর্থ- আপনি ছাড়া কোনো মাবূদ নেই, আপনি মহা-পবিত্র, নিশ্চয় আমি অত্যাচারীদের অন্তভূক্ত হয়েছি।

এর মর্মার্থ হলো: “বিপদে ডাকার মত, বিপদ থেকে উদ্ধার করার মত বা বিপদে আমার ডাক শুনার মত আপনি ছাড়া কেউ নেই। আমি অপরাধ করে ফেলেছি, যে কারণে এ বিপদ। আপনি এ অপরাধ ক্ষমা করে বিপদ কাটিয়ে দিন।”  আল্লাহ্‌র একত্বের ও নিজের অপরাধের এ আন্তরিক স্বীকারোক্তি আলাহ এত পছন্দ করেন যে, এর কারণে আল্লাহ্‌ বিপদ কাটিয়ে দেন।

(৬) “খতম” ব্যবস্থা চালু করার কারণে এখন আর বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে দুআ ইউনূস পাঠ বা খতম করে কাঁদেন না। বরং তিনি নির্দিষ্ট সংখ্যক আলিম-বুজুর্গকে দাওয়াত দেন। যারা সকলেই বলেন: “নিশ্চয় আমি যালিম বা অপরাধী।”  আর যার অপরাধে আল্লাহ্‌ তাকে বিপদ দিয়েছেন তিনি কিছুই বলেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দাওয়াতকৃত আলিমগণ প্রত্যেকেই যালিম বা অপরাধী, শুধু দাওয়াতকারী ব্যক্তিই নিরপরাধ!

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অনুধাবনের তাওফীক প্রদান করুন।

সুত্রঃ বই- হাদীসের নামে জালিয়াতি


আমাদের ফেসবুক পেইজ এখন ১০লক্ষ সদস্যের পরিবার

আলহামদুলিল্লাহ্‌ বাংলা ভাষায় বৃহত্তম ফেসবুক ইসলামিক পেইজ এখন কুরআনের আলো। এ উপলক্ষ্যে আমাদের সম্মানিত পাঠকদের প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি, আপনাদের ভালোবাসা, পাশে থাকা ও সহযোগিতায় সত্যের পথে আমাদের প্রতিদিনের পথচলা আরও গতিশীল হবে-ইনশাল্লাহ।

Image may be NSFW.
Clik here to view.
quraneralo 1m fans

 

আমাদের প্রকাশনা শেয়ার করুন: মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

“কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা” (সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪)।

আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ’কুরআনের আলো’ কে সংযুক্ত করুন। উৎস উল্লেখপূর্বক মূল বিষয়বস্তুর পরিবর্তন না করে আমাদের যেকোন প্রবন্ধ, বই কিংবা অডিও-ভিডিও লেকচার প্রচার ও প্রসার করতে পারেন।

 

www.facebook.com/QuranerAlo

www.youtube.com/QuranerAlo

www.twitter.com/QuranerAlo

ইসলামে ঈদে মীলাদুন্নবী পালনের বিধানের উপর কিছু ফাইল

Image may be NSFW.
Clik here to view.

আজকের বিশ্বে মুসলিম উম্মার অন্যতম উৎসবের দিন হচ্ছে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’। সারা বিশ্বের বহু মুসলিম অত্যন্ত জাঁকজমক, ভক্তি ও মর্যাদার সাথে আরবী বৎসরের ৩য় মাস রবিউল আউআল মাসের ১২ তারিখে এই ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বা নবীর জন্মের ঈদ পালন করেন। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিমই  এই ‘‘ঈদের’’ উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাসের সাথে পরিচিত নন। যে সকল ব্যক্তিত্ব এই উৎসব মুসলিম উম্মার মধ্যে প্রচলন করেছিলেন তাঁদের পরিচয়ও আমাদের অধিকাংশের অজানা রয়েছে। আমরা জানি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন পালন বা রবিউল আউয়াল মাসে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ পালনের বৈধতা ও অবৈধতা নিয়ে আলেম সমাজে অনেক মতবিরোধ হয়েছে, তবে মীলাদুন্নবী উদযাপনের পক্ষের ও বিপক্ষের সকল আলেম ও গবেষক একমত যে, ইসলামের প্রথম শতাব্দিগুলিতে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন পালন করা বা উদযাপন করার কোন প্রচলন ছিল না।

ইসলাম ধর্মে ঈদে মীলাদ বলতে কি বোঝায়? ইসলামে ঈদ কয়টি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর জন্ম দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল? নিশ্চিত ও সর্ব সম্মতভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর ওফাত বা মৃত্যু দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল? যে দিনে রাসূলে কারীম সা. ইন্তেকাল করলেন সে দিনে আনন্দ উৎসব করা কি ভাল না মন্দ? শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদ পালন করা কি জায়েয? এটা কি বিধর্মীদের অনুকরণ? এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুজতে যেয়ে এ সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।

এ ফাইলে ঈদ-ই-মীলাদুন্নবীপালন বিষয়ে কিছু বই, প্রবন্ধ, অডিও-ভিডিওর লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। লিঙ্ককগুলো খুলুন এবং এ সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি জানুন। সেই সাথে অন্যদের নিকট লিংকগুলো শেয়ার করুন। ধন্যাবদ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনে হকের উপর মৃত্যু অবধি অবিচল রাখুন। আমীন।

 

১) ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তক: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

২) ঈদে মীলাদুন্নবী (শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু শুদ্ধ)

৩) ঈদে মীলাদুন্নবীর ধারা

৪) রাসূলুল্লাহ (সা) এর জন্ম-মৃত্যুর তারিখ সম্পর্কে আলেমদের বিভিন্ন বক্তব্য

৫) গান-বাজনা ও হারাম জিনিসের আয়োজন ব্যতীত মীলাদুন্নবী উদযাপন

৬) মীলাদুন্নবী উদযাপন না করার কারণে পরিবারের যারা তিরস্কার করে, তাদের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি

৭) মীলাদুন্নবী নামে মসজিদে সমবেত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা করা

৮) মীলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলিয়ন মিলিয়ন দরূদ জমা করার প্রসঙ্গ

৯) জনৈক খ্রিষ্টান নারীর জিজ্ঞাসা মীলাদুন্নবী কী, মুসলিমের নিকট এ দিনের গুরুত্ব কত

১০) মীলাদুন্নবী বিদআত সমর্থনকারীর প্রতিবাদ

১১) মীলাদুন্নবীর মিষ্টি ক্রয় করা

১২) মীলাদুন্নবী ও জন্ম দিনের সিয়াম পালন করা

১৩) রাসূলুল্লাহ সা. সশরীরে এসে সাক্ষাত করেন, এমন ধারণা পোষণকারী ব্যক্তিকে কিভাবে প্রতিবাদ করব

১৪)  ঈদে মিলাদুন্নবী (শেইখ মতিউর রহমানের অডিও লেকচার)

১৫) ঈদে মিলাদুন্নবী (শেইখ মতিউর রহমানের ভিডিও লেকচার)

১৬) মিলাদ উন নাবী বিষয়ক প্রশ্নোত্তর (ভিডিও)

আল্লাহ্‌ আমাদের হক্ক কথা জানার এবং মানার তাউফিক দান করুন। আমিন

সৌজন্য: IslamHouse ওয়েবসাইট 

Related Articles, Lectures and Book

  1. আপনি কি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে চেনেন?
  2. কীভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসব?
  3. বইঃ আর রাহীকুল মাখতুম (রাসূল (সা:) এর জীবনী)
  4. সীরাহ (রাসূল (সা:) এর জীবনী) কেন পড়া উচিৎ?
  5. আল-কুরআন: রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবন্ত মু‘জিযা
  1. 100-Rasul (SalallahuAlayhiwasallam) bhalobasha.mp3
  2. 2-a. Nobi (s)er Morjada – Part 1.mp3
  3. 2-b. Nobi (s)er Morjada – Part 2.mp3
  4. 3.Nabi (s)-er Haq or Odhikar.mp3
  5. 110- Part 1 -Rasul (s) Shomporke Shotik Gan Hasel Kora.mp3
  6. 110- Part 2 -Rasul (s) Shomporke Shotik Gan Hasel Kora.mp3
  7. 111 Rasul (s) Madinar Jibon.mp3

 

 

 

বড় দিন বা ক্রিসমাস (Christmas) কি?

লেখকঃ আবদুল্লাহিল হাদী মু. ইউসুফ

Image may be NSFW.
Clik here to view.
n-CHRISTMAS-LIGHTS-large570
আসছে ২৫ ডিসেম্বর, খ্রীষ্টানদের বড় দিন, দিনটি খ্রীষ্টান বিশ্বে জাকজমকপূর্ণভােব উদজাপিত হয় তাদের ধর্মীয় উৎসব হিসেবে, কিন্তু দুঃখ্যজনক হলেও সত্য যে আজ মুসলিম বিশ্বেও দিনটি বেশ গুরুত্ব পচ্ছে। তাই আলোচনা করতে চাচ্ছি যে এই বড় দিন বা ক্রিসমাস কি ?

খ্রীষ্টানদের এক সম্প্রদায়ের নিকট এই দিনটি স্রষ্টার জন্ম দিন আবার অপর সম্প্রদায়ের নিকট রবের সন্তানের জন্ম দিন হিসেবে পরিচিত।এই দিনটিতে তারা বিভিন্ন রকম উপহার আদান প্রদান, আলোক সজ্জা,বিভিন্ন রকমের খাবার, বিশেষ চা পান,চার্সেগমন ইত্যাদির মাধ্যমে অতিবাহিত করে থাকে।

ইংরেজী Christmas শব্দটির দুটি অংশ একটি Christ অপরটি mas,

Christ এটি ঈসা (আঃ) এর একটি উপাধি, আর  mas অর্থ জন্ম দিন বা জন্মৎসব। তাহলে Christmas এর মাধ্যমে ঈসা (আঃ) এর জন্মৎসব বোঝানো হয়ে থাকে।

(কথাটা বিশ্বাস না হলে, google.com এ গিয়ে “birthdate of jesus christ” লিখে সার্চ দিন।)

যদিও আজকে খ্রীষ্টানরা এই দিনটিকে ঈসা (আঃ) এর জন্ম দিন হেসেবে পালন করে থাকে বাস্তবে ইতিহাসে তাঁর জন্ম তারিখ সঠিক ভাবে নির্ণিত নেই। এনিয়ে স্বয়ং খ্রীষ্টানদের মাঝেও মতবিরোধ আছে। তাই দেখা যায় কেথলিক খ্রীষ্টানরা ২৫ ডিসেম্বারকে ক্রিসমাস হিসেবে পালন করে থাকে আর অপর দিকে অর্তডোকরা ৭ জানুয়ারীকে ক্রিসমাস হিসেবে পালন করে থাকে।

নিঃসন্দেহে ক্রিসমাস খ্রীষ্টানদের একটি ধর্মীয় উৎসব,কিন্তু আজকে খ্রীষ্টানদের এই আনুষ্ঠানিকতা এবং সেসময় ঈসা (আঃ) এর জন্ম লগ্নে তাদের পূর্বসুরীদের প্রতিক্রীয়ার কথা আমাদের কে কি বার্তা দিচ্ছে? আজকের ক্রিসমাস পালনকারীরা কি তাদেরই পরবর্তী জেনারেশন নয় যারা ঈসা (আঃ) এর ভূমিষ্ট কালে তাঁর মাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল? যারা তাঁকে আল্লাহ্ র পুত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল? এবং যারা তাঁকে হত্যা  করতে চেয়েছিল? আফসোস! যারা তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা  আজ তাঁর জন্মোৎসব পালন করছে। এ যেন চোরের মার বড় গলা।

মূলতঃ ঈসা (আঃ) এর জন্ম তারিখ কোনটি? ক্যাথ লিকদের ধারণামতে ২৫ ডিসেম্বার না অর্তডোকদের ধারণামতে ৭ জানুয়ারী। মূলত খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রন্থসমূহে এর সঠিক তারিখ নিধারিত করে বর্ণনা করা হয়নি। তবে কোরআন কারীমের ভাষ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে মারইয়াম (আঃ) কে লক্ষ্য করে তার গর্ভাবস্থায় আল্লাহ্ বলছেনঃ

وَهُزِّي إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا

অর্থঃ“আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে” (সূরা  মারইয়াম-২৫)

এখান থেকে বুঝা যায় যে ঈসা (আঃ) এর জন্ম ডিসেম্বার বা জানুয়ারীতে নয় বরং জুন বা জুলাই মাসে কারণ খেজুর একটি গ্রীষ্মকালীন ফল শীতকালীন ফল নয়। তাহলে যদি তাঁর জন্ম তারিখটিই সঠিক ভাবে নির্ণিত না হয় তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই আনুষ্ঠানিকতা?

সুবহানাল্লাহ্!

দেখুন আমাদের নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জন্ম তারিখও সঠিকভাবে নির্ধারিত নেই এমনিভাবে ঈসা(আঃ) এর জন্ম তারিখও সঠিকভাবে নির্ধারিত নেই। আমার মনে হয় এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর নবীদ্বয়কে মানুষের অতিরঞ্জন থেকে রক্ষা করেছেন।

ক্রীসমাস সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টি ভঙ্গিঃ

অর্থগত দিক থেকে ক্রীসমাস শব্দটিই একটি শিরকী শব্দ কারণ শব্দটির অর্থ “রবের জন্মদিন বা রবের পুত্রের জন্ম দিন” নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক, মহান আল্লাহ এথেকে পুত পবিত্র। আল্লাহ্র বাণীঃ

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

অর্থঃ“তিন কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি (সূরা এখলাস -৩)

অতএব একজন মুসলমানের জন্য এই কথাটি মুখে উচ্চারণ করাই হারাম।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ

অর্থঃ“ আবু উমামা আল বাহেলী (রায়িাল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃযে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, আর যে যেই জাতিকে ভালবাসবে তাদের সাথে তার হাশর হবে। (আবু দাউদ হাদীস নং ৪০৩১, মোসনাদ আহমদ হাদীস নং-৫০৯৩)।

আলেমগণের মতামতঃ

قال الشيخ ابن عثيمين رحمه الله : ” وكذلك يحرم على المسلمين التشبه بالكفار بإقامة الحفلات بهذه المناسبة ، أو تبادل الهدايا أو توزيع الحلوى ، أو أطباق الطعام ، أو تعطيل الأعمال ونحو ذلك ، لقول النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( من تشبه بقوم فهو منهم ) . قال شيخ الإسلام ابن تيمية في كتابه : (اقتضاء الصراط المستقيم مخالفة أصحاب الجحيم): ” مشابهتهم في بعض أعيادهم توجب سرور قلوبهم بما هم عليه من الباطل ، وربما أطمعهم ذلك في انتهاز الفرص واستذلال الضعفاء” انتهى كلامه رحمه الله.
ومن فعل شيئا من ذلك فهو آثم سواء فعله مجاملة ، أو توددا ، أو حياء ، أو لغير ذلك من الأسباب ؛ لأنه من المداهنة في دين الله ، ومن أسباب تقوية نفوس الكفار وفخرهم بدينهم ” انتهى من “فتاوى ابن عثيمين” (৩/ ৪৪).

অর্থঃ শেইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ক্রিসমাস উপ লক্ষে অনুষ্ঠান করে,উপহার ও মিষ্টি বিতরণ করে, বিভিন্ন ধরণের খাবারের আয়োজন করে এবং ছুটি পালন করে কাফেরদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য  হারাম। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় ইক্তেযাউ সিরাতিল মুস্তাকীম গ্রন্থে বলেনঃ তাদের (কাফেরদের) কিছু উৎসবে (মুসলমানদের জন্য)তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা তারা বাতিল পন্থী হওয়া সত্বে তাদের আত্ম তৃপ্তির কারণ হবে। আবার কখনো হয়ত তা দুর্বল হৃদয়ের অধিকারী এবং সুযোগ সন্ধানীদের জন্য বৈধতার প্রমাণ গ্রহণের সুযোগ করে দিবে।

যে ব্যক্তি তা করবে সে গোনাহগার বলে গণ্য হবে তা যে উদ্দেশ্যেই করে থাকুক না কেন চাই তা  সামাজিকতা রক্ষা, ভালবাসা, লজ্জা, বা অন্য কোন কারণে হোকনা কেন। কেননা তা আল্লাহ্ র দ্বীনে তোষামোদ এবং কাফেরদের মনবলকে দৃঢ় করবে এবং তাদের ধর্ম নিয়ে তাদেরকে গৌরব করার সুযোগ করে দিবে। (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ৩/৪৪)

নববর্ষ : আত্মপর্যালোচনার দারুণ উপলক্ষ

লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

Image may be NSFW.
Clik here to view.
129

আবার এলো নববর্ষ। আবারো নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে অপচয় করা হবে কোটি কোটি ডলার। আতশবাজি, উদ্দাম নৃত্য, গান পরিবেশন, যুবক-যুবতীদের প্রণয় বিনিময়, একান্তে সময় কাটানো, বন্ধু বান্ধবীদের উদ্দেশে মোবাইল, মেইল বা সামাজিক যোগাযোগের সাইটের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময়, মদ্য পান ও নারী নিয়ে ফূর্তি করাসহ রকমারি আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদায় দেয়া হবে ২০১৫ সালকে। বরণ করা হবে ২০১৬ সাল। দেশের ফাইভ স্টার হোটেলগুলো ও পর্যটন স্পটগুলোয়  আয়োজন করা হবে নানা অনুষ্ঠানের। মোবাইল কোম্পানিগুলোর হাওয়া থেকে উপার্জিত অর্থের সৌজন্যে কক্সবাজারে আয়োজন করা হবে চোখ ধাঁধানো বর্ষবরণ উৎসবের। Happy new year 2016 লেখায় রাস্তা ও দেয়ালগুলো সুশোভিত হয়ে উঠবে। নতুন বর্ষকে বরণের উৎসব করতে গিয়ে আরো কত কিছুই না করা হবে!

আচ্ছা, আমরা কি ভেবে দেখেছি একটি বছরের বিদায় শুধু আনন্দের বিষয়? কেবলই ফূর্তি ও উল্লাস প্রকাশের উপলক্ষ? নাহ, এ কেবল আনন্দের বিষয় হতে পারে না। বরং এটি আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও পর্যালোচনার মোক্ষম উপলক্ষ বৈ কি। কেন? কারণ, একটি বছরের সাথে সাথে আমাদের জীবন নামক প্রাসাদ থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি পাথর খসে পড়ে। ছোট হয়ে আসে আমাদের নাতিদীর্ঘ জীবন। আমরা বিগত বছরটি কিভাবে কাটিয়েছি, আগামী বছর কিভাবে কাটাবো এবং এ বছর আমার অর্জন কী কী? ইত্যকার আরো নানা প্রশ্ন ঘিরে ধরা উচিত আমাদের চেতনা জগতকে।

এখন আমাদের আনন্দ-উল্লাসের এতটুকু ফুরসত থাকার কথা নয়। এখন শুধু হিসাব-নিকাশ মেলাবার সময়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

حاسبوا أنفسكم قبل أن تحاسبوا، وزنوا أعمالكم قبل أن توزنوا، وتزينوا للعرض الأكبر، يوم لا تخفى عليكم خافية

‘তোমাদের কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজেরাই নিজেদের হিসাব সম্পন্ন করে নাও, তোমাদের আমল ওজন করার আগে নিজেরাই নিজেদের আমলসমূহ ওজন করে নাও, কিয়ামত দিবসে পেশ হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত কর। সুসজ্জিত হও সেদিনের জন্য, যেদিন তোমাদের সামনে কোনো কিছু অস্পষ্ট থাকবে না।’

আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে ভেবে দেখা দরকার, আমরা কী করছি? এর পরিমাণ কী? হাসান বছরী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

رحم الله عبداً وقف عند همه، فإن كان لله مضى، وإن كان لغيره تأخر

‘আল্লাহ ওই বান্দার ওপর রহম করেন, যে তার পদক্ষেপে থামে। (এবং চিন্তা করে) যদি তা আল্লাহর জন্য হয় তা সম্পন্ন করে আর যদি তা হয় অন্য কারও জন্য তবে তা বিলম্বিত করে।’

আমরা তো কিঞ্চিৎ নেক আমল করেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। ইবন আবী মুলাইকাহ্ রহ. বলেন,

أدركت ثلاثين من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم كلهم يخاف النفاق على نفسه، ما منهم أحد يقول إنه على إيمان جبريل وميكائيل

‘আমি ত্রিশজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীকে পেয়েছি, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নিফাক সম্পর্কে সন্ত্রস্ত ছিলেন। তাঁদের কেউ এমন ছিলেন না, যিনি বলতেন যে তিনি জিবরীল এবং মিকাঈলের মতো ঈমানের ওপর আছেন।’

বিশ্বের অন্যতম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের দেশ বাংলাদেশে টিএসসিসহ উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক স্পটগুলোতে থার্টি ফার্স্ট নাইটে নববর্ষ উদযাপরনের নামে যেভাবে বেহায়া ও বেলেল্লাপনা, অবাধ যৌনাচার ও অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হয়, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। বাধ্য হয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নিরাপত্তা গ্রহণ করতে হয়। ২০০০ সালে থার্টি ফার্স্ট নাইটে বাঁধন নামের একটি মেয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়েছিল। যা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে আহত ও অপমানিত করেছিল।

দু বছর আগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করতে গিয়ে কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এর বছর তিনেক আগে ব্যাংককের একটি নাইটক্লাবে থার্টি ফার্স্ট নাইটে প্রাণ দিতে হয়েছে কমপক্ষে ৬০ জনকে। আহত হয়েছে আরো অনেকে। থাইল্যান্ডের ওই ক্লাবে তারা যখন আনন্দে আত্মহারা ঠিক তখনই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের লেলিহান শিখা তাদের বেষ্টন করে নেয়। নিমিষেই সমাপ্তি ঘটে সকল আনন্দ-উল্লাসের। এরপরও কি কেউ শিক্ষা গ্রহণ করেছে? তওবা করে ফিরে এসেছে চির শান্তির পথে? অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,

 وَلَنُذِيقَنَّهُم مِّنَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَدۡنَىٰ دُونَ ٱلۡعَذَابِ ٱلۡأَكۡبَرِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢١  [السجدة : ٢١] 

‘আর অবশ্যই আমি তাদেরকে গুরুতর আজাবের পূর্বে লঘু আজাব আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে। {আলিফ-লাম-মীম আস-সাজদাহ, আয়াত : ২১}

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,

 يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡتَنظُرۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٖۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ ١٨ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ١٩  [الحشر: ١٨،  ١٩] 

‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের জন্য কি প্রেরণ করেছে; তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। তোমরা তাদের মত হইও না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন; আর তারাই হল ফাসিক।’ {সূরা আল-হাশর, আয়াত : ১৮, ১৯}

আমরা সব অভিভাবকই চাই আমাদের কোমলমতি সন্তানদের জীবন হোক নিরোগ, নিটোল ও অনাবিল সুন্দর। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি নববর্ষের মতো এরূপ নানা উপলক্ষে যখন নিজেদের শাসনের বাঁধন একটু শিথিল করি, একটু সুযোগ দেই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাবার তখনই তাদেরকে বন্ধু-সতীর্থরা নিয়ে যায় লক্ষ্যহীন সাময়িক সুখের জীবনে। মাদক ও নেশার ভুবনে। যে ভুবন একটি শান্ত পুষ্পিত জীবনকে করে অশান্ত পূঁতি-গন্ধময়। যে জগত একজন ভদ্র সুবোধ সন্তানকে বানায় মা-বাবা’র অবাধ্য ও অপ্রিয়।

ইদানীং প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে তরুণ-তরুণীরা অধিক সংখ্যায় রাস্তায় বেরুবার সুযোগ পাচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে নিজেদের কলিজার টুকরো মেয়েটিকে পর্যন্ত আমরা মধ্য রাতে পথে-হোটেলে যাবার সুযোগ দেই? এই যে শত শত তরুণী দুপুর রাতে রাস্তায় বেরিয়ে আসছেন, এরা সবাই কি অভিভাবকহীন? নাকি এদের অভিভাবকরা সন্তানদের বল্গাহীন জীবনকে সাদরে মেনে নিয়েছেন?

মনে রাখা উচিৎ আমাদের একটু অসর্তকতার জন্য যদি সন্তানরা বিপথগামী হবার সুযোগ পায়। তবে এর ক্ষতির প্রথম শিকার হতে হবে আমাকেই। সমাজে মাথা নিচু হবে আমারই। আপন ঔরসজাত সন্তানের জন্য মানুষের কটু-কাটব্যও হজম করতে হবে কেবল আমাকে। তাছাড়া মরণের পরেও এর জন্য ক্ষতি পোহাতে হবে। আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

«كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ. الإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ, وَالرَّجُلُ رَاعٍ فِي أَهْلِهِ وَهْوَ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ, وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا وَالْخَادِمُ رَاعٍ فِي مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»

‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর সবাই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল; তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ দায়িত্বশীল তার পরিবারের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। মহিলা দায়িত্বশীল তার স্বামীর গৃহের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। ভৃত্যও একজন দায়িত্বশীল, সে জিজ্ঞাসিত হবে তার মুনিবের সম্পদ সম্পর্কে।  (এককথায়) তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে।’ [বুখারী : ৮৪৪, জুমআ আধ্যায়]

অতএব আমাদের যুবসম্প্রদায়কে যেমন সংযত হতে হবে, তেমনি অভিভাবকদেরও একটু সজাগ হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

 Source: Islamhouse.com

খৃষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন: শরিয়ত কি বলে

Image may be NSFW.
Clik here to view.
newYearAmsterdam2

উৎসব পালন  জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একটি সামগ্রিক ফিনমিনন। সুনির্দিষ্ট কোনো দিবসকে স্মরণীয় করে রাখার গভীর বাসনা থেকে, অথবা আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ, কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করা ইত্যাদি থেকে জন্ম নেয় বর্ষান্তরে উৎসব পালনের ঘটনা।

আল্লাহ তাআলা মানুষের এ স্বভাবজাত বাসনা সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত। তাই তিনি তা প্রকাশের মার্জিত ও সম্মানজনক পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। সৃষ্টিসংলগ্ন সামগ্রিক প্রজ্ঞাময়তা, পৃথিবীবক্ষে মানবপ্রজন্মের দায়দায়িত্ব, আল্লাহর ইবাদত ও দাসত্বের জিম্মাদারি ইত্যাদি বিবেচনায় রেখেই তিনি দিয়েছেন উৎসব পালনে সম্মানজনক বিধান।

আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ( রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন। তাদের ক্রীড়া-উল্লাসের ছিল দুটি দিবস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,’এ দিবস দুটি কি? ‘ উত্তরে তারা বললেন,’ জাহেলী যুগে দিবস দুটি ক্রীড়া-উল্লাসে কাটাতাম।‘ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,’আল্লাহ তাআলা এ দিবস দুটির পরিবর্তে উত্তম দুটি দিবস তোমাদেরকে দিয়েছেন- ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। [ আবু দাউদ, আহমদ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. কে বললেন,’হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতিরই উৎসব রয়েছে, আর এটা আমাদের উৎসব।‘[ বুখারি ]

মুসলিম উম্মাহর ঈদের সাথে আকিদা-বিশ্বাস ও জীবনাদর্শ সংমিশ্রিত, এবং তা বিজাতীয় সকল উৎসব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, আকার-প্রকৃতি, ধর্মসংলগ্নতা, জাতীয় অথবা পার্থিব যে ধরনেরই তা হোক না কেন।

পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে পৃথিবীময় শুরু হয় খৃষ্টীয়  উৎসব যা একত্রিশ ডিসেম্বর নববর্ষীয় মহোৎসবের মাধ্যমে শেষ হয়।

আর মুসলমানরা, সজ্ঞানে অথবা অবচেতনভাবে, আল্লাহ তাদেরকে যে সম্মান ও বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন, তা বিশ্রুত হয়ে, এ উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে।

বহু বিভিন্ন শরয়ি টেক্সট রয়েছে যা উম্মতে মুহাম্মদীর আলাদা বৈশিষ্ট্যের কথা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে এবং অন্যান্য জাতি থেকে তাদেরকে যে স্বতন্ত্রিকতা ও উন্নত অবস্থান নিয়ে চলমান থাকতে হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়।

আর এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কেননা এ উম্মত সর্বশেষ ঐশীবার্তাবহক জাতি। যাদের নবী হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং পবিত্র গ্রন্থ হল  হল মহাগ্রন্থ আল কুরআন।

আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে সর্বোচ্চ সৌন্দর্যে অভিষিক্ত করেছেন, যখন তিনি ঘোষণা দিয়েছেন:

“তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে বের করা হয়েছে মানুষের জন্য। তোমরা ভালো কাজের  নির্দেশ দেবে ও মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।” [সূরা আল ইমরান: ১১০]

সে হিসেবে এ উম্মত হচ্ছে সর্বোত্তম উম্মত।

মায়াবিয়া ইবনে হায়দা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,’ তোমরা সত্তর উম্মতের সংখ্যা পূর্ণকারী। আর তোমরা এ সত্তর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম এবং আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত। [ আহমদ, তিরমিযি, ইবনে মাযাহ ও হাকেম ]

তিনি আরো বলেছেন,’জান্নাতবাসীদের একশত বিশ কাতার হবে, তন্মধ্যে এ উম্মত হবে আশি কাতার।‘ [ তিরমিযি, ইবনে মাযাহ ও আহমদ ]

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ’আমরা কিয়ামত দিবসে শেষ ও শুরু, আমরা সর্বাগ্রে জান্নাতে প্রবেশকারী, যদিও তাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আর এসেছি তাদের পরে। তারা মতানৈক্য করেছে। তারা যে বিষয়ে মতানৈক্য করেছে আল্লাহ আমাদেরকে সে বিষয়ে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। এটা সে দিবস যে দিবস সম্পর্কে তারা মতানৈক্য করেছে। আর আমাদেরকে আল্লাহ এ বিষয়ে হিদায়াত দিয়েছেন। অদ্যকার দিবস আমাদের। কালকেরটা ইহুদিদের এবং পরশু হল নাসারাদের।‘ [ বুখারি ও মুসলিম ]

ইবনে কাছীর র. বলেছেন,’ এই উম্মত উত্তম কাজে বিজয়ের ঝাণ্ডাবাহী। এ উম্মতের নবী হল মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি আল্লাহর তাবৎ সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, রাসূলদের মধ্যে সমধিক সম্মানিত, আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ শরিয়ত দিয়ে পাঠিয়েছেন, যা অন্য কোনো রাসূলকে দেন নি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর পথ ও পদ্ধতি অনুযায়ী অল্প আমল অন্যান্যদের অধিক আমল থেকেও উত্তম।‘ [ তাফসিরুল কুরআনিল আযীম, ২/৯৪ ]

শুদ্ধানুভূতির অভাব, ইমানী দুর্বলতা ইত্যাদির কারণে, বর্তমানযুগের কিছু মুসলমান যীশুখৃষ্টের জন্মতিথি ও নববর্ষের উৎসব ইত্যাদিতে অংশ নিয়ে থাকে, নাসারাদের বেশভূষা, তাদের ধর্মীয় চিহ্ন ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, যেমন:

১. ডাক অথবা ইন্টারনেট যোগে শুভেচ্ছা বিনিময়।

২. নাসারাদের সাথে এসব উৎসব পালনে অংশ নেয়া, গির্জায়, হোটেলে, উন্মুক্ত মাঠে অথবা সেট্যালাইট চ্যানেলে।

৩. কৃস্টমাস ট্রি ক্রয়, শিশুদের কাছে প্রিয় বাবানোয়েলের পুতুল ক্রয়, ও ইত্যাদি গিফট হিসেবে নববর্ষের রাত্রিতে প্রদান।

৪. গান-বাজনা, নাচ, অশ্লীলতা, মদ্যপান, মোমবাতি জ্বালিয়ে তার আগুন নেবানো ইত্যাদি কর্মকাণ্ড যা উন্মুক্ত বা ঘরোয়াভাবে করা হয়।

এ উভয় উৎসব, অর্থাৎ যীশুখৃষ্টের জন্মতিথি এবং নববর্ষের উৎসব উভয়টাই উৎসব হিসেবে নেয়া মুসলমানেদের জন্য বৈধ নয়।

যীশুখৃষ্টের জন্মতিথি কুফরসর্বস্ব ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যে অবগঠিত একটি দিবস, যেখানে ঈসা আ.কে ঐশিক গুণাবলিসর্বস্ব হওয়া, সৃষ্টিকর্তার মানুষের রূপ পরিগ্রহণ, ছেলে হিসেব আবির্ভাব, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে আত্মদান ইত্যাদি ভ্রান্ত বিশ্বাস বিশপ ও খৃষ্টীয় ধর্মগুরুদের কর্তৃক তুমুলভাবে প্রচার করা হয়।

আর দ্বিতীয় দিবসটি হল পার্থিবতা ও অশ্লীলতাসর্বস্ব, যাতে চর্চিত হয় বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনা, পাশবিকতাপূর্ণ আচরণ, যা সর্বার্থে মনুষ্য  উপযোগিতারহিত। মুমিনের কথা তো এখানে আসতেই পারে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। একটি ঘটনা থেকে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। এক ব্যক্তি বুওয়ানা নামক জায়গায় উট যবেহ করার মান্নত মানল। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল,’আমি বুওয়ানায় একটি উট যবেহ করার মান্নত করেছি। প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,’ সেখানে কি জাহেলীযুগের কোনো মূর্তি পূজা হত? তারা বললেন,’ না।‘ তিনি বললেন,’সেখানে কি তাদের কোনো উৎসব হত? ‘ তারা বললেন,’ না।‘ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,’তোমার মান্নত পুরন করো। আর জেনে রাখো, আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ হয় এমন মান্নত পূর্ণ করতে নেই এবং এমন মান্নতও পুরন করতে নেই মানুষ যার অধিকার রাখে না।‘ [ আবু দাউদ ]

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,’যে ব্যক্তি মুশরিকদের দেশে বাড়ি তৈরি করল, তাদের উৎসব-দিবস পালন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল, তবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। [ সুনানে বাইহাকি ৯/২৩৪ ]

এধরনের উৎসব পালন অবৈধ হওয়ার কারণ বাহ্যিক ধরন-ধারণে সাদৃশ্যগ্রহণ ও আন্তর বিশ্বাস এদুয়ের মাঝে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। শায়খুল ইসলাম ইবেন তাইমিয়া র. তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ( ইকতেযাউসিরাতিল মুসতাকিম মুখালাফাতু আসহাবিল জাহীম) – এ বলেন,’সিরাতুল মুসতাকীম হৃদয়ে অবস্থিত আন্তর বিষয়; যেমন আকিদা-বিশ্বাস, ইচ্ছা ইত্যাদি এবং বাহ্যিক বিষয়; যেমন কথা-কাজ, হতে পারে তা ইবাদত, হতে পারে তা খাবার, পোশাক, বিবাহ-শাদি, বাড়ি-ঘর, সম্মিলন ও বিচ্ছেদ, সফর-আরোহণ ইত্যাদি সংক্রান্ত। এইসব আন্তর ও বাহ্যিক বিষয়ের মাঝে সম্পর্ক রয়েছে। কেননা হৃদয়জগতে যে অনুভূতি আন্দোলিত হয় তা বিভিন্নভাবে বাহ্যদৃশ্যে রূপায়িত হতে বাধ্য, আবার বাহ্যিক কাজকর্মও হৃদয়ে তৎসংলগ্ন অনুভূতি জাগ্রত করে থাকে।

আর আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন হিকমতসহ, যা হল তাঁর সুন্নত ও আদর্শ, এবং তিনি তাঁর জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন সুনির্দিষ্ট পথ ও পদ্ধতি। এই হিকমতের একটি হল যে তিনি রাসূলের জন্য এমন কথা ও কাজ বিধিবদ্ধ করেছেন, যা অভিশপ্তদের পথ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অতঃপর তিনি বাহ্যিক বেশভূষায় তাদের উল্টো করতে বলেছেন, যদিও অনেকের কাছে বাহ্যত এতে কোনো বিচ্যুতি মনে হয় না। তিনি এরূপ করেছেন কয়েকটি কারণে। কারণগুলোর একটি হল, বাহ্যিক বেশভূষায় সাদৃশ্যগ্রহণ, যে সাদৃশ্য গ্রহণ করল এবং যার সাদৃশ্য গ্রহণ করা হল, এদুজনের মাঝে ধরন-ধারণে একটা সম্পর্ক কায়েম করে দেয়, যা আমল-আখলাকে সম্মতিজ্ঞাপন পর্যন্ত নিয়ে যায়। এ বিষয়টি সহজেই অনুমেয়; যে ব্যক্তি আলেমদের পোশাক গ্রহণ করে সে নিজেকে আলেমদের সাথে সম্পৃক্ত বলে অনুভব করতে থাকে। আর যে ব্যক্তি সৈনিকদের পোশাক পরে তার হৃদয়ে সৈনিকসংলগ্ন ভাব জন্মে। তার মেজাজও সৈনিকতুল্য হয়ে যায়। যদি না এ পথে কোনো বাধা থাকে।‘

ইবনে তাইমিয়া র. আরো বলেন,’ এ হিকমতের মধ্যে আরেকটি হল, বাহ্যিক ক্ষেত্রে উল্টো করা ভিন্নতা ও বিচ্ছেদ সৃষ্টির কারণ হয়, যা করলে আল্লাহ নারাজ হন এবং যা কিছু পথহারা করে দেয় তা থেকে দূরে রাখে এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্তদের প্রতি আগ্র্র্রহী করে। আর এর দ্বারা মুমিন ও আল্লাহর শত্রুদের মাঝে সম্পর্কচ্ছেদের যে বিধান আল্লাহ তাআলা রেখেছেন তা বাস্তবায়িত হয়। আর হৃদয় যত বেশি জাগ্রত থাকবে, প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের অধিকারি হবে- এখানে প্রকৃত ইসলাম বোজাচ্ছি, সাধারণভাবে মুসলমানতুল্য বেশভূষা ও বিশ্বাস পালনের কথা বলছি না।- ততোই বাহ্যত ও বিশ্বাসগতভাবে ইহুদি নাসারাদের থেকে আলাদা থাকার অনুভূতি পূর্ণতা পাবে। আর তাদের আচার-অভ্যাস, যা অনেক মুসলমানের মধ্যেই পাওয়া যায় তা থেকে দূরে থাকার মানসিকতা তৈরি হবে। উল্লিখিত হিকমতের মধ্যে আরেকটি হল, প্রকাশ্য বেশভূষায় সাদৃশ্যগহণ বাহ্যত মিলমিলাপ ও সংমিশ্রণ-সম্মিলন ঘটানোর কারণ হয়। হেদায়াতপ্রাপ্ত মুমিন এবং অভিশপ্তদের মাঝে ভিন্নতা ও বৈশিষ্ট্যের দেয়াল উঠে যায়। ধর্মীয় বিষয়ে নয় বরং সাধারণ ক্ষেত্রে তাদের সাদৃশ্যগ্রহণের বিষয়টি যদি এরূপ হয়, তাহলে যেসব বিষয় বিজাতীদের কাফের হওয়ার কারণ সেসব বিষয়ের ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণের পাপ-অপরাধ তাদের পাপের মাত্রানুযায়ী নির্ধারিত হবে। এই মূলনীতিটি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।‘ [ ১/৮০-৮২ ]

ইমানাদৃপ্ত স্পর্শকাতর মন ও তাওহীদী ভাবাদর্শে জাগ্রত হৃদয় ব্যতীত এসব অর্থ ও ভাব হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব নয়। আর যারা তথাকথিত ধার্মিক, যাদের ইমানী অনুভূতি কদর্যতায় আক্রান্ত, এসব কথা তাদের কাছে অর্থহীন। বিজাতির সাদৃশ্যগ্রহণ এদের কাছে আদৌ কোনো গুরুত্বের বিষয় নয়। তারা নির্দ্বিধায় অভিবাদন-শুভেচ্ছা বিনিময় করে যায়। তারা এসব উৎসব অনুষ্ঠানে অবলীলায় আমোদ স্ফূর্তি প্রকাশ করে যায়।

ইবনুল কাইয়েম র. আহকামু আহলিয্ যিম্মাহ ( যিম্মিদের বিধান) গ্রন্থে বলেন,’ বিজাতিদের নিজস্ব কুফুরি নিদর্শনকেন্দ্রিক কোনো উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়, যেমন তাদের ধর্মীয় উৎসব বা রোজার সময় বলা,’শুভ উৎসব ‘ অথবা ’এ উৎসবে আপনি আনন্দ-আপ্লুত হোন, ‘ ইত্যাদি। এ ধরনের শুভেচ্ছাবার্তা প্রদানকারী যদি কুফর থেকে পবিত্র থাকে তাহলে তা হারাম বলে বিবেচিত হবে। এটা ক্রসচিহ্ন সিজদাকারীকে শুভেচ্ছা প্রদানের মতোই। এটা বরং আল্লাহর কাছে অধিক পাপ বলে পরিগণিত। এটা আল্লাহর কাছে মদ্যপান, মানবহত্যা, যিনা ইত্যাদির  চেয়েও অধিক ঘৃণিত। দীন-ধর্মে যাদের কোনো অংশ নেই তারাই এসব কর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে। তারা কত ঘৃণার কাজ করছে তারা নিজেরাই জানে না। যে ব্যক্তি কোনো পাপীকে পাপকর্ম সম্পাদনের পর শুভেচ্ছা জানাল, অথবা কোনো বিদআতপন্থীকে বিদআতকর্ম সম্পাদনের পর শুভেচ্ছা জানাল সে আল্লাহর ঘৃণা ও রোষের উপযোগী হল। [ আহকামু আহলিয্ যিম্মা:২০৫-২০৬ ]

সমাপ্ত

পরিবার বিষয়ক প্রবন্ধ –স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব

Image may be NSFW.
Clik here to view.
4cbc5d5286d9b76a3e020000

লেখকঃ ড. সালেহ ইবন আবদিল্লাহ ইবন হুমাইদ | অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

পর্ব – ১ | পর্ব – ২

بسم الله الرحمن الرحيم

ভূমিকা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টি করেন, অতঃপর সুঠাম করেন, যিনি নির্ধারণ করেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেন; আমি তার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তিনি শেষে ও প্রথমে সকল প্রশংসার প্রাপ্য মালিক। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, যাঁর কোনো শরীক নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি নির্বাচিত নবী ও বান্দা; আল্লাহ তাঁর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং যে ব্যক্তি তাঁর দা‘ওয়াতের মাধ্যমে দা‘ওয়াত দান করে ও যে ব্যক্তি তাঁর পদ্ধতির অনুসরণে জীবনযাপন করে, সে ব্যক্তিসহ উল্লেখিত সকলের উপর রহমত, শান্তি ও বরকত বর্ষণ করুন।

অতঃপর:

জেনে রাখুন, আল্লাহ আপনাকে তাওফীক দিন— আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম মহান নিয়ামত ও নিদর্শন হল ঘর-সংসার, যা আশ্রয়স্থল ও শান্তি নিকেতন; তার ছায়াতলে মানবগোষ্ঠী ভালবাসা ও অনুকম্পা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা এবং মহৎ জীবন ও শালীনতা লাভ করবে … তার কোলে শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজ বেড়ে উঠবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিস্তার লাভ করবে এবং পারস্পরিক দায়বদ্ধতা শক্তিশালী হবে। অন্তরের সাথে অন্তর যুক্ত হবে … এবং মনের সাথে মনের আলিঙ্গন হবে; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ ﴾ [البقرة: ١٨٧]

“তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ।” – ( সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭ )।

এই মজবুত সম্পর্ক ও উন্নত সংসারের মধ্যে উত্তম বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটবে এবং ঐসব পুরুষ ব্যক্তিগণ বেড়ে উঠবে, যাদেরকে আমানতস্বরূপ মহান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; আর ঐসব নারীদেরকে শিক্ষা দেওয়া হবে, যারা বংশমূল তথা জাতির ভবিষ্যতকে দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করে।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্বের কতিপয় কারণ

জীবনের বাস্তবতা এবং মানুষ (যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; আর যা তিনি সৃষ্টি করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন) সে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিতে কখনও কখনও (জীবনের বাস্তবতায়) এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যাতে দিক-নির্দেশনা কাজ করে না এবং ভালবাসা ও প্রশান্তি সুদৃঢ় হয় না; যার কারণে কখনও কখনও দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট রাখা কষ্টকর ও কঠিন হয়ে যায়। ফলে তাতে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় না এবং তার দ্বারা নবীন সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সমর্থ হয় না। আর এ বিশৃঙ্ল ও অনৈক্যের অবস্থা বা পরিস্থিতিসমূহের কারণসমূহ কখনও কখনও হয়ে থাকে আভ্যন্তরীণ আবার কখনও কখনও হয় বহিরাগত।

যেমন কখনও কখনও এ সমস্যার উত্থান হয়: স্বামী-স্ত্রীর অভিভাবক অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্য অনভিজ্ঞ ব্যক্তির হস্তক্ষেপ, অথবা স্বামী-স্ত্রীর সকল ছোট বড় কর্মকাণ্ডের পশ্চাদ্ধাবন; আবার কখনও কখনও পরিবারের কোনো কোনো অভিভাবক এবং পরিবারের বড়দের পক্ষ থেকে তাদের অধিনস্থদের উপর এত বেশি নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া হয় যে, তা কখনও কখনও বিচারকের নিকট বিচার নিয়ে যাওয়ার পর্যন্ত গড়ায়; ফলে আড়ালে ঢাকা রহস্যসমূহ প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং গোপন বিষয়সমূহ উম্মোচন হয়ে যায়, আর এগুলো হয় নিছক ছোট-খাট বিষয় অথবা তুচ্ছ কিছু কারণে; যার উৎপত্তি হয়ত অনুপযুক্ত অথবা প্রজ্ঞাশূন্য হস্তক্ষেপ অথবা তাড়াহুড়া ও দ্রুততা অবলম্বন বা গুজব ও আজে-বাজে কথায় কান দেওয়া ও সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা।

আর কখনও কখনও সমস্যার উৎসস্থল হয়: দীনের ব্যাপারে দূরদর্শিতার স্বল্পতা ও মহানুভব শরী‘য়তের বিধিবিধানসমূহের ব্যাপারে অজ্ঞতা এবং পুঞ্জীভূত কুঅভ্যাস ও দুর্বল চিন্তাধারা লালন করা।

ফলে কোনো কোন স্বামী বিশ্বাস করে বসে যে, তালাকের দ্বারা হুমকি দেওয়া অথবা তা উচ্চারণ করা হল দাম্পত্য বিরোধ ও পারিবারিক সমস্যার একটি সঠিক সমাধান; সুতরাং সে তার প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এবং তার নির্দেশ প্রদান ও নিষেধাজ্ঞার সময়ে, এমনকি তার সকল অবস্থায় (স্ত্রীর সাথে) কথাবার্তার ক্ষেত্রে তালাকের শব্দগুলো ব্যতীত অন্য কিছু জানে না বা বুঝে না; আর সে এও জানে না যে, এর দ্বারা সে প্রকারান্তরে আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাস হিসেবে গ্রহণ করেছে; সে তার কর্মকাণ্ডে অপরাধী বা পাপী হচ্ছে, তার সংসার ধ্বংস করছে এবং তার পরিবার-পরিজন হারাচ্ছে।

হে মুসলিমগণ! এটাই কি দীনের ফিকহ তথা সুক্ষ্ম জ্ঞান হতে পারে?!

নিশ্চয়ই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত পদ্ধতি যে তালাকের বিধান রয়েছে তার উদ্দেশ্য দাম্পত্য সম্পর্কের বন্ধন বা রশি কর্তন করা নয়, বরং বলা যায় যে, এ পদ্ধতির তালাক হচ্ছে এই সম্পর্ক সাময়িকভাবে আটকে রাখা এবং প্রতীক্ষা, চিন্তাভাবনা ও সংশোধনের একটি পর্যায়; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … لَا تُخۡرِجُوهُنَّ مِنۢ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخۡرُجۡنَ إِلَّآ أَن يَأۡتِينَ بِفَٰحِشَةٖ مُّبَيِّنَةٖۚ وَتِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهُۥۚ لَا تَدۡرِي لَعَلَّ ٱللَّهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ أَمۡرٗا ١ فَإِذَا بَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمۡسِكُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٍ أَوۡ فَارِقُوهُنَّ بِمَعۡرُوفٖ … ﴾ [الطلاق: ١،  ٢]

“ … তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও বের হবে না, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা; যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোনো উপায় করে দেবেন। অতঃপর তাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে তোমরা হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে দেবে, না হয় তাদেরকে যথাবিধি পরিত্যাগ করবে। …” – (সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১-২)।

এটাই হচ্ছে শরী‘য়ত। বরং বিষয়টি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; নিশ্চয়ই সুন্নাত পদ্ধতিতে তালাক প্রদানের বিধানটি প্রতিকারের সর্বশেষ অস্ত্র এবং এর পূর্বে অনেকগুলো উপায় রয়েছে।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের কতিপয় উপায়

আমার মুসলিম ভাই ও বোন:

যখন বিরোধের আলামত, অবাধ্যতা, মতানৈক্যের লক্ষণ প্রকাশ পাবে, তখন তালাক বা তালাকের হুমকি প্রদান করা তার প্রতিকার নয়।

প্রতিকারের জন্য যা দাবি করা হয়, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল: ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, বিবেক ও বুদ্ধির ক্ষেত্রে বিভিন্নতা এবং স্বভাব-প্রকৃতির ক্ষেত্রে ভিন্নতার বিষয়টি অনুধাবন করা; সাথে আরও জরুরি হল অনেক বিষয়ে উদারতার পরিচয় দেওয়া এবং দেখেও না দেখার ভান করা; কারণ সব সময় সে যা পছন্দ ও কামনা করে, তার মধ্যে মঙ্গল ও কল্যাণ হয় না, বরং কখনও কখনও সে যা পছন্দ ও কামনা করে না, তার মধ্যেই কল্যাণ হয়; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا ١٩ ﴾ [النساء: ١٩] 

“আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯ )।

কিন্তু যখন সমস্যা প্রকাশ পাবে, পারস্পরিক দায়বদ্ধতার বন্ধনে শিথিলতা দেখা দিবে এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে অবাধ্যতা, তার স্বভাব চরিত্রে অহমিকা এবং তার দায়িত্ব থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রকাশ পাবে; যেমন- ঘৃণার প্রকাশ পাওয়া, স্বামীর অধিকারের ব্যাপারে কমতি করার বিষয় এবং স্বামীর মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার বিষয় প্রকাশ করা, তখন ইসলামে এর চিকিৎসা বা প্রতিকার সুস্পষ্ট; তাতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনোভাবেই তালাক প্রসঙ্গ আসবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সুস্পষ্ট কিতাবে বলেন:

﴿ …  وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ ﴾ [النساء: ٣٤]

“ … আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪ )।

তাই বুঝা গেল যে, উক্ত অবস্থার প্রতিকার হবে উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, অধিকারসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এবং আল্লাহর গজব ও ঘৃণা থেকে ভয় প্রদর্শন করার মাধ্যমে; সাথে আরও প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের পথে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান ও ভয় প্রদর্শন করা।

আর কখনও কখনও অহমিকা ও অবাধ্যতার মোকাবিলায় শয্যা বর্জন ও বয়কট করা হচ্ছে এর প্রতিকার; আপনারা লক্ষ্য করুন যে, শয্যা বর্জন করার অর্থ শয়নকক্ষ বর্জন করা নয়; … তা হল শয্যা বর্জন করা, ঘর বয়কট করা নয় … পরিবার বা সন্তান বা অপরিচিত লোকজনের সামনে নয়।

উদ্দেশ্য হল প্রতিকার করা, ঘোষণা করা অথবা অপমান করা অথবা গোপন বিষয় প্রকাশ করা নয়; বরং উদ্দেশ্য হল বর্জন ও বয়কটের মাধ্যমে অবাধ্যতা ও অহংকারের মোকাবিলা করা, যা পারস্পরিক ঐক্য, সংহতি ও সমতার দিকে পরিচালিত করে।

আর কখনও কখনও কিছু কঠোর ও রূঢ় মনোভাবের মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে; কারণ, কিছু মানুষ এমনও রয়েছে, যাদেরকে সোজা করার ক্ষেত্রে উত্তম ব্যবহার ও ভদ্র কথায় কোনো কাজ হয় না; বরং তারা এমন শ্রেণীর মানুষ যাদেরকে অধিকাংশ সময় নম্র ব্যবহার ও সহিষ্ণুতা অবাধ্য করে তোলে … সুতরাং যখন কঠোরতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে, তখন অবাধ্য ব্যক্তি থেমে যাবে এবং বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি শান্ত হয়ে যাবে।

হ্যাঁ, কখনও কখনও কিছু চাপ প্রয়োগের আশ্রয় নেয়াটাও কার্যকর প্রতিষেধক হতে পারে; আর কেনই বা সে তার আশ্রয় নিবে না, অথচ দায়িত্বের প্রতি বৈরী ভাব ও স্বভাব-প্রকৃতি থেকে বের হওয়ার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে যাচ্ছে?

আর সকল বিবেকবান ব্যক্তির নিকট বিদিত যে, কঠোরতা যখন সংসারের জন্য তার শৃঙ্খলা ও মজবুত বন্ধনকে ফিরিয়ে দিবে এবং পরিবারকে ফিরিয়ে দিবে ভালবাসা ও হৃদ্যতা, তখন তা নিঃসন্দেহে তালাক ও বিচ্ছেদের চেয়ে উত্তম; তা হবে ইতিবাচক, শিক্ষামূলক ও অর্থবহ সমাধান; ঘায়েল করা ও প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে নয়; বরং তার দ্বারা অবাধ্যতাকে দমন করা হয় এবং বিশৃঙ্খলাকে সংযত করা করা হয়।

আর যখন স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশঙ্কা করবে, তখন আল-কুরআনুল কারীম তার প্রতিকারের দিক নির্দেশনা প্রদান করে তাঁর বাণীর মাধ্যমে, আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ وَإِنِ ٱمۡرَأَةٌ خَافَتۡ مِنۢ بَعۡلِهَا نُشُوزًا أَوۡ إِعۡرَاضٗا فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَآ أَن يُصۡلِحَا بَيۡنَهُمَا صُلۡحٗاۚ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ … ﴾ [النساء: ١٢٨]

“আর কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে তারা আপোস-নিষ্পত্তি করতে চাইলে তাদের কোনো গোনাহ নেই এবং আপোস-নিষ্পত্তিই শ্রেয়।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮ );

প্রতিকার হবে আপোস-নিষ্পত্তি ও শান্তি স্থাপনের মাধ্যমে, তালাক ও সম্পর্ক বাতিলের মাধ্যমে নয়। আবার কখনও কখনও বিবাহ বন্ধনকে সুরক্ষার জন্য আর্থিক অথবা ব্যক্তিগত অধিকারের কিছু কিছু বিষয় ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে।

﴿ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ  ﴾ [আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম]। অবাধ্যতা, দুর্ব্যবহার, বিদ্বেষ ও তালাকের চেয়ে আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম।

আমার মুসলিম ভাই ও বোন:

এটা একটা গতিশীল আবেদন এবং আল্লাহর দীনের ফিকহের দিক থেকে ও তাঁর বিধিবিধানের উপর ভিত্তি করে আচার-আচরণের একটি সংক্ষিপ্ত স্মারক; সুতরাং তার থেকে মুসলিমগণ কোথায় যাচ্ছে?

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিরোধের ব্যাপারে কেন সালিস নিয়োগ করা হয় না?  এ সমাধান থেকে কেন সংস্কারকগণ বিরত থাকে? সে কি প্রকৃত সংশোধনের ব্যাপারে অমনোযোগী, নাকি পরিবার ভাঙ্গন ও সন্তানদেরকে বিভক্ত করার ব্যাপারে উৎসাহী?

নিশ্চয়ই আপনি তাকে নির্বুদ্ধিতা, বাড়াবাড়ি, আল্লাহর ভয় ও তাঁর নজরদারী থেকে দূরুত্বে অবস্থান, তাঁর বিধিবিধানের অধিকাংশকে প্রত্যাখ্যান এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা রেখার ব্যাপারে ছিনিমিনি খেলা ছাড়া অন্য কিছু মনে করবেন না।

ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান প্রমূখ গ্রন্থকারগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন:

« ما بال أقوام يلعبون بحدود الله . يقول أحدهم : قد طلقتك . قد راجعتك . قد طلقتك ؟ أيلعب بحدود الله و أنا بين أظهركم » . ( رواه ابن ماجه و ابن حبان  ) .

“কিছু লোকের কি হল যে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে; তাদের কেউ কেউ বলে: আমি তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনলাম, আমি তোমাকে তালাক দিলাম? সে কি আল্লার নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, অথচ আমি তোমাদের মাঝেই রয়েছি?”[1]

দ্বন্দ্ব নিরসনের সর্বশেষ উপায়

দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যাপারে যখন সকল উপায় ব্যর্থ হবে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল রাখা যখন কঠিন ও কষ্টকর হয়ে যাবে, এমনকি যখন তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত অভিষ্ট লক্ষ্য ও মহান তাৎপর্য বাস্তবায়ন করা না যায়, তখন শরী‘য়তের উদারতা ও তার বিধানসমূহের পরিপূর্ণতার প্রমাণ হচ্ছে যে, এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য উপায় রাখা হয়েছে। তবে মুসলিমগণের অনেকেই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত পদ্ধতির তালাকের সম্পর্কে অজ্ঞ এবং আল্লাহর সীমারেখা ও তাঁর শরী‘য়তের প্রতি লক্ষ্য রাখা ছাড়াই তালাক শব্দটি উচ্চারণ করে থাকে।

ঋতুবর্তীকালীন সময়ে তালাক দেয়া হারাম, (একসাথে) তিন তালাক প্রদান করা হারাম এবং এমন ঋতুমুক্তকালীন সময়ে তালাক প্রদান করাও হারাম, যাতে উভয়ের মাঝে মিলন (সহবাস) হয়েছে; সুতরাং এ ধরনের সকল তালাক বিদ‘আত ও হারাম (নিষিদ্ধ)। এ ধরনের তালাকদাতার পাপ হবে; কিন্তু আলেমগণের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তালাক সংঘটিত হয়ে যাবে।

যে সুন্নাত পদ্ধতির তালাক সম্পর্কে অবহিত হওয়া মুসলিমগণের উপর ওয়াজিব, তা হলো:  ঋতুমুক্তকালীন সময়ে মাত্র এক তালাক প্রদান করা যাতে উভয়ের মিলন (সহবাস) হয়নি, অথবা গর্ভকালীন সময়ের মাঝে তালাক প্রদান করা।

এ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক প্রদান করা নিঃসন্দেহে একটি প্রতিকার হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বেশ কিছু সময় পায়, সে সময়ে তারা চিন্তা-ভাবনা কিংবা পর্যালোচনা করতে পারে।

আর এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক প্রদানকারীকে ঋতুমুক্তকালীন সময়ের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে; আর হতে পারে যে, তখন তার মন পরিবর্তন হবে, হৃদয় জগ্রত হবে এবং আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের জন্য নতুন কোনো উপায় করে দেবেন, ফলে তাদের সম্পর্ক তালাক পর্যন্ত গড়াবে না।

আর ইদ্দতের সময়কাল, — চাই তা মাসিক জনিত ইদ্দত হউক, অথবা নির্দিষ্ট মাসসমূহের ইদ্দত হউক, অথবা গর্ভস্থ সন্তানের প্রসব সংশ্লিষ্ট ইদ্দত হউক— এ সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা ও আত্মপর্যালোচনার যথেষ্ট সুযোগ থাকে; যা কখনও কখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভালবাসার বন্ধন ও দাম্পত্য সম্পর্ককে মিলিয়ে দিতে পারে।

আর মুসলিমগণ যা জানে না তন্মধ্যে অন্যতম হল: স্ত্রীকে যখন রেজ‘য়ী (প্রত্যাবর্তনযোগ্য) তালাক দেওয়া হবে, তখন তার উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল স্বামীর ঘরে অবস্থান করা; সে বের হবে না এবং তাকে বের করে দেওয়া হবে না।

বরং আল্লাহ তা‘আলা তাকে (স্বামীর ঘরকে) তার (স্ত্রীর) জন্য ঘর হিসেবে বরাদ্দ দিয়ে দিলেন; আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ لَا تُخۡرِجُوهُنَّ مِنۢ بُيُوتِهِنَّ ﴾ [الطلاق: ١]

“তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না” – (সূরা আত-তালাক, আয়াত:১);

এই আয়াতটি (ঘরে) অবস্থান করার বিষয়টিকে দৃঢ়তার সাথে তাদের অধিকার বলে ঘোষণা করেছে। সুতরাং তার স্বামীর ঘরে তার অবস্থান করার মানে তার পুনরায় প্রত্যাবর্তনের একটা পথ, ভালবাসার সহনুভূতি উত্থাপন করার ক্ষেত্রে আশার সূচনা এবং সম্মিলিত জীবনযাপনের বিষয়টি স্মরণ করানো। ফলে এই অবস্থায় তালাকের হুকুমের ক্ষেত্রে স্ত্রীর অবস্থান দূরে প্রতীয়মান হলেও চোখের দৃশ্যপট থেকে তার অবস্থান স্বামীর নিকটে।

আর এর দ্বারা মূলত উদ্দেশ্য হল তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া অশান্ত ঝড়কে শান্ত করা, হৃদয়ে নাড়া দেওয়া, অবস্থানসমূহ পুণ পর্যালোচনা এবং ধীরে-সুস্থে নিজ সংসার, শিশু ও পরিবারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ লাভ। আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿ … لَا تَدۡرِي لَعَلَّ ٱللَّهَ يُحۡدِثُ بَعۡدَ ذَٰلِكَ أَمۡرٗا ١ ﴾ [الطلاق: ١ ]

“ … আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোনো উপায় করে দেবেন।” – ( সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১ )।

সুতরাং হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর … এবং তোমাদের ঘর-সংসারসমূহকে হেফাযত কর; আর তোমাদের দীনের বিধানসমূহ জানতে ও বুঝতে শিখ … আর আল্লাহর সীমারেখা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং তা লঙ্ঘন করো না; আর তোমারা তোমাদের নিজেদের মাঝে (সম্পর্কের) সংশোধন ও সংস্কার করে নাও।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দীনের ব্যাপারে সঠিক বুঝ এবং শরী‘য়তের ব্যাপারে দূরদর্শিতা দান করুন; হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার কিতাবের হিদায়াতের মাধ্যমে উপকৃত করুন; আর আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা আচার-আচরণ আমাদেরকে দান করুন।


[1] সুনানু ইবনে মাজাহ: ২০১৮; সহীহু ইবনে হিব্বান: ৪২৬৫

মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ

লেখকঃ হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল | অনুবাদক : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া | প্রকাশনায় : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين، أما بعد

মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালবাসা রয়েছে  তা পৃথিবীর কোন মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভাল পোষাকও পরিধান করতে পারেন নি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপেক্ষায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল,তখন বুক কেঁপে উঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়!  সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না?। এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলো:

১. বেশী বেশী দু‘আ করা 

মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু‘আ করবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন । আল-কুরআনে এসেছে,

 رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٤]

‘‘হে আমার রব, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’’ [সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৪]

رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١﴾ [ابراهيم: ٤١]

‘‘হে আমাদের রব, রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন’’ [সুরা ইবরাহীমঃ৪১]

এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ‘আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ

 رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارَۢا ٢٨ ﴾ [نوح: ٢٨

‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না ’[সূরা নুহ: ২৮] ।

 

মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ».

অর্থ: মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া  ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে [সহিহ মুসলিম: ৪৩১০]

মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ।

 ২. দান-ছাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ

মা-বাবা বেচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে  সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে। হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّىَ افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَلَمْ تُوصِ وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ « نَعَمْ »

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমার মা হঠাৎ মৃতু বরণ করেছেন। তাই কোন অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-ছাদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে ছাদকা করলে তিনি কি এর ছাওয়াব পাবেন ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৭৩]

তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি।

 ৩. মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম  পালনঃ

মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«مَنْ مَاتَ  وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ»

অর্থ: ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিল। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে’’ [সহীহ বুখারী:১৯৫২]।

অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদীসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোযা বা মানতের রোযার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম রাখার পক্ষে দলীল নাই।

 ৪. হজ্জ বা উমরাহ করাঃ

মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা  উপকৃত হবে। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ»

অর্থ: ‘‘ জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ [সহীহ বুখারী: ১৮৫২]

তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ-ওমরাহ করতে হবে।

 ৫. মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করাঃ

মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِى سَوَادٍ وَيَبْرُكُ فِى سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِى سَوَادٍ فَأُتِىَ بِهِ لِيُضَحِّىَ بِهِ فَقَالَ لَهَا « يَا عَائِشَةُ هَلُمِّى الْمُدْيَةَ » ثُمَّ قَالَ « اشْحَذِيهَا بِحَجَرٍ ». فَفَعَلَتْ ثُمَّ أَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَهُ ثُمَّ ذَبَحَهُ ثُمَّ قَالَ « بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ». ثُمَّ ضَحَّى بِهِ.

অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন। [ সহীহ মুসলিম:৫২০৩]

 ৬. মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা

মা-বাবা শরীয়াহ সম্মত কোন ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবন সুয়াইদ আসসাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أُمِّي أَوْصَتْ أَنْ نُعْتِقُ عَنْهَا رَقَبَةً ، وَعِنْدِي جَارِيَةٌ سَوْدَاءُ ، قَالَ : ادْعُ بِهَا ، فَجَاءَتْ ، فَقَالَ : مَنْ رَبُّكِ ؟ قَالَتِ : اللَّهُ ، قَالَ : مَنْ أَنَا ؟ قَالَتْ : رَسُولُ اللَّهِ ، قَالَ : أَعْتِقْهَا ، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ».

অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাসমুক্ত করার জন্য ওসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ডাকো, সে আসল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে ? উত্তরে সে বলল, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে ? উত্তরে সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেন না সে মু’মিনা । [সহীহ ইবন হিববান :১৮৯]

 ৭. মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা 

মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া,তাদেরকে হাদিয়া দেয়া। এ বিষয়ে হাদীসে উল্লেখ আছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ ابْنُ دِينَارٍ فَقُلْنَا لَهُ أَصْلَحَكَ اللَّهُ إِنَّهُمُ الأَعْرَابُ وَإِنَّهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيرِ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّ أَبَا هَذَا كَانَ وُدًّا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَإِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ ».

অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক বেদুঈন এর সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উপবিষ্ট ছিলেন এবং তাঁর (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়িটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবান দীনার রাহেমাহুল্লাহ বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম: আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ: সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায়-(এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভাল ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ’’ [সহীহ মুসলিম:৬৬৭৭]।

মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ فَيَقُولُ « أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ »

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বকরী যবেহ করতেন, তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদীজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও [সহীহ মুসলিম: ৬৪৩১]

 ৮. মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা

সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ ، فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ»

‘যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে’ [সহীহ ইবন হিববান:৪৩২]

 ৯. ঋণ পরিশোধ করা

মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهً حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ».

অর্থ: ‘‘মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ তা তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়”। [সুনান ইবন মাজাহ:২৪১৩]

ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে  আরো এসেছে,

«مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى دَيْنُهُ»

অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯]

 ১০. কাফফারা আদায় করা   

মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা,ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿وَمَن قَتَلَ مُؤۡمِنًا خَطَ‍ٔٗا فَتَحۡرِيرُ رَقَبَةٖ مُّؤۡمِنَةٖ وَدِيَةٞ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُواْۚ ﴾ [النساء: ٩٢] 

অর্থ: যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা) [ সূরা আন-নিসা:৯২]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِهَا وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ ».

অর্থ: ‘‘ যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা অদায় করবে’’ [সহীহ মুসলিম: ৪৩৬০] ।

এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।

 ১১. ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ

মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে বলা হয়েছে,

«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ . فَيَقُولُ : أَيْ رَبِّ ، أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ ؟ فَيُقَالُ : وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ»

অর্থ: আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো’’ [আল-আদাবুল মুফরাদ:৩৬]।

মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«عَنْ عُثْمَانَ ، قَالَ : وَقَفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرِ رَجُلٍ وَهُوَ يُدْفَنُ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَالَ : اسْتَغْفِرُوا لأَخِيكُمْ وَسَلُوا اللَّهَ لَهُ بالثَّبَاتِ ؛ فَإِنَّهُ يُسْأَلُ الآنَ».

অর্থ: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’’ [মুসনাদুল বাজ্জার :৪৪৫]।

তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো‘আ করা।

 ১২. মান্নত পূরণ করা 

মা-বাবা কোন মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَصُومَ شَهْرًا فَمَاتَتْ فَأَتَى أَخُوهَا النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ :« صُمْ عَنْهَا ».

অর্থ: কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। [সহীহ ইবন হিববান:২৮০]

 ১৩. মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা 

মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে এসেছে,

«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ »

‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’। [সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]

«مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ»

যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:২৩৯৮]।

 ১৪. কবর যিয়ারত করা  

সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ»

অর্থ: আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,অত:পর মুহাম্মাদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।

যিয়রাত কর, কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয় [সুনান তিরমীযি :১০৫৪]।

কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে,

«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ ، نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ».

অর্থ: কবরবাসী মুমিন-মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক । নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [সুনান ইবন মাজাহ :১৫৪৭]

 ১৫. ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা    

মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٤ ﴾ [الاسراء: ٣٤] 

অর্থ: আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [ সূরা বনী ইসরাঈল:৩৪]

 ১৬.কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা

মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে। কেননা আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ».

এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না’’ [সহীহ মুসলিম:৬৯৮০]।

 ১৭.মা-বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়া 

মা-বাবা বেচে থাকতে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাওকে কষ্ট দিয়ে থাকলে মা-বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতি পূরণ দিয়ে দিবে।  কেননা হাদীসে এসেছে,

«عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : أَتَدْرُونَ مَنِ الْمُفْلِسُ ؟ قَالُوا : الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ ، وَلاَ مَتَاعَ لَهُ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ ، فَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا ، وَأَكَلَ مَالَ هَذَا ، وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا ، فَيَقْعُدُ ، فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ ، فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُعْطِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ ، فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ».

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো গরীব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে সেদিন তার নেক আমল নামা দিয়ে দেয়া হবে। এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সুনান আততিরমিযি :২৪২৮]

সুতরাং এ ধরনের নিঃস্ব ব্যক্তিকে মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া সন্তানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

অল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন!

وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين- وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين


বই –রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল

Image may be NSFW.
Clik here to view.

লেখকঃ আব্দুল হামিদ ফাইযী আল মাদানী

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ সহীহ দলীলকে ভিত্তি করে রমযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল জানার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই। মুসলিমদের জন্য রমযান অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ন মাস। এতে একজন মুসলিম রমযান মাসকে কিভাবে ফলপ্রসূ করবে তার মাসআলা-মাসায়েল ও ফাযায়েল সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদির প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলো খুব সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে।

এখানে শুধুমাত্র রমযানের মাসায়েল সম্পর্কেই আলোচনা হয়নি রমযান মাস আমাদের জীবনে কেন এত গুরুত্তপুর্ন তারও বর্ননা রয়েছে। এখানে আলোচিত হয়েছেঃ

• সিয়ামের ফযীলত।
• সিয়ামের প্রকারভেদ।
• রমযান মাসের বৈশিষ্ঠ্য ও রোযার ফযিলত।
• রমযানের রোযার মানুষের শ্রেণীভেদ।
• খাদ্যদানের নিয়ম।
• মুসাফিরের জন্য রোযা রাখা ভালো নাকি কাযা করা ভালো?
• নিফাস ও ঋতুমতী।
• সেহেরি খাওয়া।
• ইফতার।
• রোযা অবস্থায় যা বৈধ
• রোযাদারদের জন্য যা অপছন্দনীয়।
• যাতে রোযা নষ্ট ও বাতিল হয়।
• রমযানে যে যে কাজ রোযাদারের কর্তব্য।
• ঈদ ও তার বিভিন্ন আহকাম।
• রমযানের পরে কি?
• রমযানের রোযা কাযা করার বিবরন।
• তারাবীহর সালাত বা কিয়ামে রামাযান
• সাদকাহ বা দান করা
• ইফতার করানো
• কুরআন তিলাওয়াত
• উমরাহ
• শেষ দশকের আমল ও ইবাদত
• ইত্তেকাফ
• শাবে ক্বাদর অন্বেষণ করা
• ফিতরার বিবরণ
• ঈদ ও ঈদের বিভিন্ন আহকাম
• ঈদের আদব
• ঈদ সংক্রান্ত আরও কিছু মাসায়েল
• রমযানের রোযা কাযা করার বিবরণ
• নফল রোযার প্রকারভেদ
• যে দিন গুলতে রোযা রাখা নিষিদ্ধ।

আরো অনেক বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

মোটকথা, বইটি প্রতিটি মুসলমানের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় এবং অতি গুরুত্বপূর্ন। রোযা ও রমযানের মত একটি মহান উৎদ্দীপনা তথা আনন্দমুখর মৌসুমকে ঘিরে যে সকল জানা ও মানার কথা এখানে পরিবেশিত হয়েছে তা আশা করি সকল মুসলিম ভাই বোনদের জানা প্রয়োজন। এই বইটি লিখেছেন আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী এবং প্রকাশনায় তাওহীদ প্রকাশনী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০৮।

 

Image may be NSFW.
Clik here to view.
রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল – QA Server

Image may be NSFW.
Clik here to view.
রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল – Mediafire

বই –রমযানের ৬০ শিক্ষা ৩০ ফতোয়া –ফ্রী ডাউনলোড

Image may be NSFW.
Clik here to view.
30-fatawa

সংকলনঃ  ইব্রাহিম ইবনে মোহাম্মদ আল হাকিম

প্রকাশনায়ঃ পিস পাবলিকেশন্স বাংলাদেশ

পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৪৮

ফাইল সাইজঃ ৯.৬৮ MB

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ এই বইটিতে কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে রমযানের ৬০ শিক্ষা এবং ৩০ ফতোয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

এই বইটিতে কুরআনের আলো টিম (Interactive Link) অ্যাড করেছে, যা একমাত্র আমাদের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাচ্ছে।

Image may be NSFW.
Clik here to view.
রমযানের ৬০ শিক্ষা ৩০ ফতোয়া – QA Server

Image may be NSFW.
Clik here to view.
রমযানের ৬০ শিক্ষা ৩০ ফতোয়া – Mediafire

বই –রামাদান নির্বাচিত ফাতাওয়া –১

Image may be NSFW.
Clik here to view.

আলহামদুলিল্লাহ্‌ জনপ্রিয় ওয়েবসাইট Islam-QA.com এর রামাদান সম্পর্কিত ১১২টি ফাতাওা বাংলায় বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকাশনায়ঃ Ath-Thabāt Library (www.aththabat.com)

Image may be NSFW.
Clik here to view.
রামাদান নির্বাচিত ফাতাওয়া – ১ – QA Server

রামাদান প্রত্যাহিক কর্ম তালিকা – Ramadan Check List

সম্পাদনাঃ ডঃ মনজুর ই ইলাহী | অনুবাদ, ডিজাইন ও সংকলনঃ কুরআনের আলো টিম

Image may be NSFW.
Clik here to view.
pickingpublisher_checklist

আলহামদুলিল্লাহ আর মাত্র ১৫ দিন পর রামাদান মাস।

ভেবে কুল পাচ্ছেন না এই রামাদানে কোন কোন ইবাদাত করবেন? বুঝতে পারছেন না, কোন ইবাদাত দিয়ে শুরু করবেন? যেসব ইবাদত করবেন বলে স্থির করেছিলেন সেগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে পারছেন না? ভাবছেন, এই মাসের অতিরিক্ত সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলেন?

এমনটি হতেই পারে। তবে এর সমাধানও আছে।

‘কুরআনের আলো’ টিম আপনাদের জন্য এমন কিছু ইবাদাতের তালিকা তৈরি করেছে যেটা রামাদানের উত্তম ইবাদাতগুলো মনে রাখতে সাহায্য করবে। চমৎকার এই ইবাদাত তালিকায় রয়েছে দিনব্যাপী নানারকম ইবাদাতের সমাহার। শুধু রামাদানেই নয় রামাদানের পরেও এসব ইবাদাতের মাধ্যমে অনিঃশ্বেষ সাওয়াব হাসিল করতে পারবেন।

এই ইবাদাতের মাধ্যমে বাড়বে আপনার জান্নাতে প্রবেশের সম্ভাবনা, কেননা:

  • এই তালিকা অনুসরণ করে আপনি আপনার সময়কে সবচেয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
  • আপনার দিনকে সাজাতে পারবেন জ্ঞান অর্জন, ফার্‌দ সালাহ, নাওয়াফিল ইবাদাত, কুরআন তিলাওয়াত, দু‘আ, সাদাকাহ ও যিক্‌রের মাঝে।
  • আপনার রাতকে সাজাতে পারবেন তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে কথা বলে! আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্ক হবে আরও মজবুত।
  • শুধরে নিন নিজের ভুলত্রুটি, ঋণ পরিশোধ করুন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করুন, নিয়্যাতকে পরিশুদ্ধ করুন, বাড়িয়ে তুলুন ইবাদাহ।
  • মাসের প্রতি সপ্তাহের জন্য আমাদের ইবাদাত তালিকা থেকে আপনার পছন্দের ইবাদাতগুলো বেছে নিয়ে কোমর বেঁধে নামুন। আর হ্যাঁ রামাদানের শেষ দশ রাতের জন্য আলাদা প্ল্যান করতে ভুলবেন না যেন!

রামাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিজেকে পরিণত করুন মহান আল্লাহর একজন নিবেদিত বান্দা হিসেবে। রামাদানকে ব্যবহার করুন আগের চেয়ে আরও ভালো, আরও বেশি বেশি ইবাদাত চর্চা করার মাধ্যম হিসেবে। হেলাফেলায় এ মাস যেন চলে না যায় খেয়াল রাখুন। দেরি না করে শুরু করুন এখনি। সময় তো এখনো চলে যায়নি, শুধু দরকার সঠিক উদ্যোগ ও নিয়্যাত। বেশি বেশি দু‘আ করবেন যাতে বারাকাহপূর্ণ এই মাস—রামাদান চলে যাওয়ার পরও আমরা ঈমান, ইবাদাহ ও আন্তরিকতার যে পর্যায়ে উন্নীত হবো, সেটা যেন ধরে রাখতে পারি।

আর দেরি না করে এক্ষুনি নিচের লিংটিতে ক্লিক করে নামিয়ে নিন রামাদানের ইবাদাত তালিকা:

Ramadan Check List – Black and White.pdf  | Mediafire

Ramadan Check List – Colour.pdf  (High Quality file for Press Printing) | Media Fire

কিভাবে ব্যাবহার করবেন? 

প্রথমে ফাইলটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন। একমাসের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে মোট চারটি শিট। এর পর আপনি লিস্ট অনুযায়ী যেইসব আমল করতে পারবেন, সেইগুলো টিক দিন। এই ভাবে করে আপনি প্রত্যেক সপ্তাহে কত বেশী ইবাদাত করেছেন তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

শুধু নিজে না, আপনার বন্ধ-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে প্রিন্ট করে দিন। আমরা আপনার সুবিধার্থে Colour ফাইলও দিয়েছে। যেকোনো প্রিন্টিং প্রেস থেকে বিশাল আকার প্রিন্ট করে বিতরণ করতে পারবেন। 

বি.দ্রঃ এছাড়াও আরও অনেক প্রকার ভালো আমল আছে। শুধু মাত্র এই আমল গুলো করেই থেমে যাবেন না। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আরও যেইসব আমল আছে তা জানুন এবং আমল করার চেষ্টা করুন। 

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

 

 

রমজান মাসের ৩০ আমল

লিখেছেনঃ হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল   |   সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

Image may be NSFW.
Clik here to view.
4879951199_aa063b31f5

 

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين محمد وآله وأصحابه أجمعين أما بعد

রমাদান মাস আল্লাহ তা‘আলা এক বিশেষ নিয়ামাত। সাওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, রহমাত, বরকত ও নাজাতের মাস-রমাদান মাস।

আলকুরআনে এসেছে,

﴿ شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘‘রমাদান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫]

রমাদান মাসের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ»

‘‘রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)’’ [সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩]

এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:

এক. ইখলাস অর্থাৎ ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে। আল-কুরআনে এসেছে,

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ ﴾ [البينة: ٥]

“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫]

দুই. ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন।
কুরআনে এসেছে,

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]

‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ [সূরা হাশর: ৭]

এ বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ».

‘‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]

রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-

[১] সিয়াম পালন করাঃ

ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

“সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ »

‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]

«مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُوْمُ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا»

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’। [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

[২] সময় মত সালাত আদায় করা

সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,

﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣ ﴾ [النساء: ١٠٣]

‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]

 এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,

«عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَقْرَبُ إِلَى الْجَنَّةِ قَالَ الصَّلَاةُ عَلَى مَوَاقِيتِهَا»

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]

[৩] সহীহভাবে কুরআন শেখা

রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ ﴾ [العلق: ١]

‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

« تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ ، وَاتْلُوهُ»

‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

 [৪] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো

রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ»

‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭]

 

«مَنْ عَلَّمَ آيَةً مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ، كَانَ لَهُ ثَوَابُهَا مَا تُلِيَتْ»

‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে পাবে’ [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭]

[৫] সাহরী খাওয়া

সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে,

«السُّحُورُ أَكْلَةٌ بَرَكَةٌ فَلاَ تَدَعُوهُ ، وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جَرْعَةً مِنْ مَاءٍ ، فَإِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ»

‘‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ]

[৬] সালাতুত তারাবীহ পড়া

সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে,

« مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»

‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ [সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯]

 তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে,

«إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَة»ٍ

‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে’’ [সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহীহ]।

তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লিংক গুলো দেখতে পারেনঃ 

  1. http://islamqa.info/bn/9036
  2. http://islamqa.info/en/82152
  3. http://islamqa.info/en/38021

[৭] বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা

এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا ، لاَ أَقُولُ الْم حَرْفٌ ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ»

‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’’ [সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ]।

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান ব্যতীত কোন মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«وَلاَ أَعْلَمُ نَبِىَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِى لَيْلَةٍ وَلاَ صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ وَلاَ صَامَ شَهْرًا كَامِلاً غَيْرَ رَمَضَانَ».

‘‘রমাদান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি’’ [সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩]।

 [৮] শুকরিয়া আদায় করা

রমাদান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা। রমাদান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,

﴿ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٥]

‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’[সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫]

﴿وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكُمۡ لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ ٧ ﴾ [ابراهيم: ٧]

‘‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’।’’ [সূরা ইবরাহীম : ৭]

 

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন

« الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ »

অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য [সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮]

[৯] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা

এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« وَيُنَادِى مُنَادٍ يَا بَاغِىَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِىَ الشَّرِّ أَقْصِرْ وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ »

‘‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]

 [১০] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া

রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ »

‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ [সহীহ মুসলিম : ২৮১২]

[১১] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা

এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

«كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ»

‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

[১২] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা

রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ يَوْمَئِذٍ وَلاَ يَسْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّى امْرُؤٌ صَائِمٌ»

‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশস্নীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি রোযাদার’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৫১]

[১৩] ই‘তিকাফ করা

ই‘তিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

« كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ عَشْرَةَ أَيَّامٍ فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا».

‘‘প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন’’ [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪]। দশ দিন ই‘তেকাফ করা সুন্নাত।

[১৪] দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা

রমাদান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আলকুরআনের ঘোষণা :

﴿ وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلٗا مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ٣٣ ﴾ [فصلت: ٣٣]

‘‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম’’ [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]

 হাদীসে এসেছে,

«مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ »

‘‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’ [সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০]

 [১৫] সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা

এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«قَالَ فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً مَعِي».

‘‘রমাদান মাসে উমরা করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য’’ [সহীহ আলবুখারী : ১৮৬৩]

[১৬] লাইলাতুল কদর তালাশ করা

রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা,

﴿ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ ﴾ [القدر: ٣]

‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ [সূরা কদর : ৪]

 হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ يَقُمْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৩৫]

 এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَجْتَهِدُ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِى غَيْرِهِ».

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৭৫]

 লাইলাতুল কদরের দো‘আঃ

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী ! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বলবেঃ

«اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى»

‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩]

 [১৭] বেশি বেশি দো‘আ ও কান্নাকাটি করা

দো‘আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দো‘আ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে,

«إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلِكَ كُلّ لَيْلَةٍ»

‘‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’’ [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]

 অন্য হাদীসে এসেছে,

«إِنَّ للهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عُتَقَاء فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَإِنَّهُ لِكُلِّ مُسْلِمٍ فِيْ كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ دَعْوَة مُسْتَجَابَة»

‘‘রমযানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দো‘আ কবূল করা হয়’’ [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২]

 [১৮] ইফতার করা

সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা । কেননা হাদীসে এসেছে,

« إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ صَائِمًا فَلْيُفْطِرْ عَلَى التَّمْرِ فَإِنْ لَمْ يَجِدِ التَّمْرَ فَعَلَى الْمَاءِ فَإِنَّ الْمَاءَ طَهُورٌ »

‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ]

 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন :

« ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ ».

“পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।” [সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]

 অপর বর্ণনায় যে এসেছে

«اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ »

“হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।” [সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮] এর সনদ দুর্বল। আমাদের উচিত সহীহ হাদীসের উপর আমল করা।

 [১৯] ইফতার করানো

অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে,

«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْء. »

‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’ [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ]

 [২০] তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা

তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। আল-কুরআনে এসেছে,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ﴾ [التحريم: ٨]

‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’ [সূরা আত-তাহরীম : ৮]

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّى أَتُوبُ فِى الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ ».

‘‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি’’ [সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪]

 তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া, আর তা হচ্ছে,

«اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُك وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ»

‘‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’’

ফযিলাত: ‘‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৬৩০৬]

 [২১] তাকওয়া অর্জন করা

তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [البقرة: ١٨٣]

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৩]

 

﴿ۚ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ ﴾ [الطلاق: ٢]

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। [সূরা তালাক : ০২]

 [২২] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা

ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ صَلَّى الغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ»

যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬]

 [২৩] ফিতরাহ দেয়া

এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ».

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩]

 [২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো

রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে,

﴿ وَيُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسۡكِينٗا وَيَتِيمٗا وَأَسِيرًا ٨ ﴾ [الانسان: ٨]

অর্থ: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ-দাহর: ৮]

 এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে,

«عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ:«تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ ، وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ».

‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১২]

 অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে,

«أَيُّمَا مُؤْمِنٍ أَطْعَمَ مُؤْمِنًا عَلَى جُوعٍ أَطْعَمَهُ اللهُ مِنْ ثِمَارِ الْجَنَّةِ»

‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। [বাইহাকী, শু‘আবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান]

 [২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা

আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١ ﴾ [النساء: ١]

‘‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা: ১]

 আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«بُلُّوا أَرْحَامَكُمْ وَلَوْ بِالسَّلَامِ»

“সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।” [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩]

 [২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা

কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে,

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ -[সূরা আল-হিজর: ৯]

 যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।

আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا ».

‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে” -[সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪]

 [২৭] আল্লাহর যিকর করা

এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাসবীহ পাঠ করা। সময় পেলেই

سبحان الله ، الحمدلله ، لا إله إلا الله ، الله أكبر পড়া।

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى مِنَ الْكَلاَمِ أَرْبَعًا : سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ ، فَمَنْ قَالَ : سُبْحَانَ اللهِ ، كُتِبَ لَهُ عِشْرُونَ حَسَنَةً ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عِشْرُونَ سَيِّئَةً ، وَمَنْ قَالَ : اللَّهُ أَكْبَرُ فَمِثْلُ ذَلِكَ ، وَمَنْ قَالَ : لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ فَمِثْلُ ذَلِكَ ، وَمَنْ قَالَ : الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ كُتِبَ لَهُ ثَلاَثُونَ حَسَنَةً وَحُطَّتْ عَنْهُ ثَلاَثُونَ سَيِّئَةً»

অর্থ: ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো سبحان الله ، الحمدلله ، لا إله إلا الله ، الله أكبر যে ব্যক্তি سبحان الله পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি الله أكبر পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি لا إله إلا الله পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’। [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]

[২৮] মিসওয়াক করা

মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে,

«السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ»

অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। [সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।

 [২৯] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো

রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

« وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ حَتَّى يَنْسَلِخَ يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْقُرْآنَ »

জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন। [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

 

ইবনে হাজার রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমযান হতে অন্য রমযান অবধি যা নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দু বার শোনান ও শোনেন ।

[৩০] কুরআন বুঝা ও আমল করা

কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,

﴿ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٣ ﴾ [الاعراف: ٣]

‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’ -[সূরা আল-আ‘রাফ : ৩]

 কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«كُنَّا نَتَعَلَّمُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ آيَاتٍ فَمَا نَعْلَمُ الْعَشْرَ الَّتِي بَعْدَهُنَّ حَتَّى نَتَعَلَّمَ مَا أُنْزِلَ فِي هَذِهِ الْعَشْرِ مِنَ الْعَمَلِ»

‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’ [শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০]

 

যা করণীয় নয়

রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

1. বিলম্বে ইফতার করা

2. সাহরী না খাওয়া

3. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা

4. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা

5. অপচয় ও অপব্যয় করা

6. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা

7. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা

8. বেশি বেশি খাওয়া

9. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা

10. বেশি বেশি ঘুমানো

11. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য

12. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা

13. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা

14. বিদ‘আত করা

15. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা

 

প্রিয় পাঠক!

রমাদান মাস পাওয়ার মত সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে! আমরা যদি এ মাসের প্রতিটি আমল সুন্নাহ পদ্ধতিতে করতে পারি তবেই আমাদের রমাদান পাওয়া সার্থক হবে।
কেননা হাদীসে এসেছে,

«وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ أَتَى عَلَيْهِ شَهْرُ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ ، وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ»

‘‘যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক’’ [শারহুস সুন্নাহ : ৬৮৯]।

 

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার তাওফীক দিন। আমীন!

وصلى الله على نبينا محمد وعلي اله وأصحابه أجمعين – وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

 

ওয়েব সম্পাদনাঃ মুহাম্মাদ মাহমুদ ইবন গাফফার

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল –প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

Image may be NSFW.
Clik here to view.

রামাদান বিষয়ে প্রতিদিন আপডেট করা হবে এই লিস্ট।

এই রামাদান পরিনত করুন আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রামাদ্বানে। এই ‘রামাদ্বান রিসোর্সেস পোস্ট’-এ আছে  গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ, লেকচার, বই, অন্যান্য দরকারী তথ্য যা আপনার রামাদ্বান প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে যাতে আপনি কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী অনেক বেশি সৎ আমল করতে পারেন এবং সর্বোচ্চ উপকার  পেতে পারেন এই পবিত্র মাস থেকে।

রামাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিজেকে পরিণত করুন মহান আল্লাহর একজন নিবেদিত বান্দা হিসেবে। রামাদানকে ব্যবহার করুন আগের চেয়ে আরও ভালো, আরও বেশি বেশি ইবাদাত চর্চা করার মাধ্যম হিসেবে। হেলাফেলায় এ মাস যেন চলে না যায় খেয়াল রাখুন।  ইনশা’আল্লাহ। আমরা  আরো নতুন রিসোর্সেস যোগ করবো এই পোস্ট এর সাথে। 

পোস্টটি সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে 6/02/২০১5 তারিখে। আসুন তাহলে এখন থেকেই রামাদ্বানের প্রস্তুতি শুরু করি। Ramadan Productivity Tools 

  1. রামাদান প্রত্যাহিক কর্ম তালিকা – Ramadan Check List –
  2. Ramadan Self Improvement Checklist is for those who wish to increase their good deeds and piety during the month of Ramadan. Download
  3. Ramadan Diary: The diary, in essence, is a day by day guide packed full of practical hints and tips and quotes from the Quran and Sunnah that can help you every step of the way throughout the Holy month. Download

প্রবন্ধ/আর্টিকেল

রামাদ্বানের পর 

বই

রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল

Image may be NSFW.
Clik here to view.

 

লেখকঃ আব্দুল হামিদ ফাইযী আল মাদানী

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ সহীহ দলীলকে ভিত্তি করে রমযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল জানার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই। মুসলিমদের জন্য রমযান অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ন মাস। এতে একজন মুসলিম রমযান মাসকে কিভাবে ফলপ্রসূ করবে তার মাসআলা-মাসায়েল ও ফাযায়েল সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদির প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলো খুব সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে। এখানে শুধুমাত্র রমযানের মাসায়েল সম্পর্কেই আলোচনা হয়নি রমযান মাস আমাদের জীবনে কেন এত গুরুত্তপুর্ন তারও বর্ননা রয়েছে। মোটকথা, বইটি প্রতিটি মুসলমানের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় এবং অতি গুরুত্বপূর্ন। রোযা ও রমযানের মত একটি মহান উৎদ্দীপনা তথা আনন্দমুখর মৌসুমকে ঘিরে যে সকল জানা ও মানার কথা এখানে পরিবেশিত হয়েছে তা আশা করি সকল মুসলিম ভাই বোনদের জানা প্রয়োজন। এই বইটি লিখেছেন আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী এবং প্রকাশনায় তাওহীদ প্রকাশনী।

ডাউনলোড/Download [8.15 MB] Download from mediafire.com

রমযানের ৬০ শিক্ষা ৩০ ফতোয়া

Image may be NSFW.
Clik here to view.
30-fatawa

সংকলনঃ  ইব্রাহিম ইবনে মোহাম্মদ আল হাকিম | প্রকাশনায়ঃ পিস পাবলিকেশন্স বাংলাদেশ সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ এই বইটিতে কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে রমযানের ৬০ শিক্ষা এবং ৩০ ফতোয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। Download | Download from Mediafire

বই – রোযার সত্তরটি মাসয়ালা – মাসায়েল

Image may be NSFW.
Clik here to view.
 

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ সিয়াম বা রোযা প্রসঙ্গে জ্ঞাতব্য অনেকগুলো জরুরী মাসয়ালা – মাসায়েল, কুরআন – হাদীস ও যুগশ্রেষ্ঠ আলেমগণের ফতওয়ার উপর ভিত্তি করে সৌদী আরবের বিশিষ্ট আলেম সম্মানিত শায়খ মুহাম্মাদ সলেহ আল-মুনাজ্জেদ “সাবাউনা মাসয়া্লা ফিস্ সিয়াম” বইটি আরবি ভাষায় প্রণয়ন করেছেন । এবং এর বাংলা অনুবাদ “রোযার সত্তরটি মাসয়ালা – মাসায়েল” করেছেন – সরদার মুহাম্মাদ জিয়াউল হক। বিস্তারিত জানতে এবং ডাউনলোড করতে এইখানে ক্লিক করুন।

রামাদান নির্বাচিত ফাতাওয়া

Image may be NSFW.
Clik here to view.

আলহামদুলিল্লাহ্‌ জনপ্রিয় ওয়েবসাইট Islam-QA.com এর রামাদান সম্পর্কিত ১১২টি ফাতাওা বাংলায় বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি ডাউনলোড করার এইখানে ক্লিক করুন

রোযার মৌলিক শিক্ষা

লেখক: খোন্দকার আবুল খায়ের ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে।

সিয়াম ও রমজান

Image may be NSFW.
Clik here to view.
ramadanqqqqqq

রহমত,মাগফিরাত ও নারকীয় জীবনের স্পর্শ থেকে মুক্তি লাভের অফুরান সম্ভাবনা নিয়ে ফিরে আসে মাহে রমজান। আসে তাকওয়ার উত্তাপ অনুভব করাতে,যা কিছু অকল্যাণকর, অন্ধকারময় তা থেকে ব্যক্তির অন্তর ও বাহ্য জগৎকে বিমুক্ত করে শুদ্ধ-আলোকিত মানুষের উন্মেষ ঘটাতে। তবে তার জন্য প্রয়োজন মাহে রমজানকে যথার্থভাবে যাপন,সিয়াম পালনের নীতি-বিধান বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন,সিয়ামের শিক্ষা ও মাসায়েল বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অর্জন।মাহে রমজান ও সিয়াম সাধনা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ এই রচনাটি ইমাম ও দায়ীদের জন্য একটি অতি-মূল্যবান তথ্য-ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সাধারণ পাঠক সিয়াম সাধনার খুঁটি-নাটি বিষয়ে অজানা বহু তথ্য খুঁজে পাবেন বইটিতে। এই বইটি ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন

ফিকহুস সিয়াম

Image may be NSFW.
Clik here to view.

সংকলক: মুহাম্মাদ নাসীল শাহরুখ | সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী আমাদের জীবনকে বদলে দিয়ে নতুন মানুষ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ রামাদান! কিন্তু আমরা অনেকেই জ্ঞান ও প্রস্তুতি ছাড়াই রামাদানে প্রবেশ করি, ফলে আমাদেরকে চমকে দিয়ে চলে যায় আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয়ের এই মৌসুম। রামাদানের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং রোযার প্রয়োজনীয় মাসায়েল দ্রুত খুঁজে পাওয়ার উপযোগী করে রচিত হয়েছে এই সংকলন। ডাউনলোড করুন 

আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রামাদান মাসে একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সংকলন: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: আলোচ্য রচনায় আল-কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে রামাদান মাসে একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ডাউনলোড করুন 

রমযান মাসের ৩০ আসর

সংকলন: মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন | অনুবাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া – আলী হাসান তৈয়ব সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এ হচ্ছে ‘মুবারক রমযান মাসের কিছু আসর’; যাতে সিয়াম, কিয়াম, যাকাত ইত্যাদি ও এ উত্তম মাসের উপযোগী কিছু বিধান স্থান পেয়েছে। আমি এটাকে দৈনিক অথবা রাত্রিকালিন আসররূপে সাজিয়েছি। এর অধিকাংশ খুতবা বা আসরের ভূমিকা আমি ‘কুররাতুল ‘উয়ূনিল মুবসিরাহ বি তালখীসে কিতাবিত তাবসিরাহ’ গ্রন্থ থেকে যতটুকু যথা সম্ভব পরিপাটি করে চয়ন করেছি। আর আমি এখানে যত বেশি সম্ভব হুকুম-আহকাম, বিধি-বিধান, ও আদাব নিয়ে নিয়ে এসেছি; কারণ মানুষের এটাই বেশি প্রয়োজন। আর আমি এটাকে ‘মাজালিসু শাহরি রামাদান’ বা ‘রমযান মাসের আসরসমূহ’ নামকরণ করেছি। ডাউনলোড করুন 

রমযান স্বাগতম

সংকলন: আব্দুল হামীদ ফাইযী সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সহীহ দলীলকে ভিত্তি করে রমযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল জানার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই। মুসলিমদের জন্য রমযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এতে একজন মুসলিম রমযান মাসকে কিভাবে ফলপ্রসূ করবে তার মাসআলা-মাসায়েল ও ফাযায়েল সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদির প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলো খুব সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে। ডাউনলোড করুন 

রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল

সংকলন: ইবরাহীম বিন মুহাম্মাদ আল হুকাইল | অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস, শিক্ষা ও মাসায়েল: লেখক বলেছেন: “সিয়াম, ইতিকাফ, রমযানের কিয়াম ও লাইলাতুল কদর ইত্যাদি বিষয়ে ষাটটি দরস তৈরি করেছি, যা থেকে বিশেষভাবে দ্বীনের দায়ি ও মসজিদের ইমামগণ এবং সাধারণভাবে সকল মুসলিম উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ। প্রত্যেক দরসের ভিত্তি রেখেছি কুরআন ও হাদিসের ওপর, যদি শিরোনামের অনুকূলে কোন আয়াত পেয়েছি, তাহলে তা উল্লেখ করেছি, অতঃপর হাদিস উল্লেখ করেছি। আর শিরোনামের অনুকূলে কোন আয়াত না থাকলে সরাসরি উক্ত বিষয়ের হাদিস উল্লেখ করেছি। হাদিস বাছাই করার ক্ষেত্রে দলিল হিসেবে পেশ করার উপযুক্ত সহিহ ও হাসান হাদিসগুলো নির্বাচন করেছি, দুর্বল হাদিস এড়িয়ে গেছি। আল্লাহ সবাইকে এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার তওফিক দান করুন।” ডাউনলোড করুন 

প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ

সংকলন: অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলাম  | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এ বইটিতে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সিয়ামের ফজিলত, বিভিন্ন আহকাম ও মাসায়েল বর্ণনা করা হয়েছে। ডাউনলোড করুন 

ঈদুল ফিতর ও যাকাতুল ফিতর এর সংক্ষিপ্ত বিধি বিধান

অনুবাদক: উমাইর লুৎফর রহমান | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: গ্রন্থটিতে সংক্ষিপ্তভাবে ঈদুর ফিতরের বিবিধ বিধি-বিধান ও যাকাতুল ফিতরের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। ডাউনলোড করুন  

রামাযানের সাধনা

লেখকঃ হাফেজ হুসাইন বিন সোহরাব (অনার্স হাদিস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা, সৌদি আরব) ডাউনলোড করুন 

স্বাস্থ্য বিষয়ক 

  1. Ramadan Health and Spirituality Guide
  2. রমজান ও ডায়াবেটিস

দুয়া

  1. Duas to say after Salah – in PDF
  2. Duas to say morning & evening – in PDF
  3. Duas to say when sleeping or waking – in PDF
  4. Duas to say morning & evening one page – in PDF

অডিও – ভিডিও লেকচার

 বক্তা – শেইখ মতিউর রহমান মাদানী

রামাদানের ফজিলত

Audio | Video

রামাদানের সৎ আমল

Audio | Video

 সিয়াম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

Audio | Video

 সিয়াম ও রামজান

Audio Video

জাল জয়ীফ হাদিস রামাদান সম্পর্কে 

Video

রমজান স্বাগতম

বক্তাঃ Saifuddin Belal Madani Audio

সিয়াম (রোজা) – Video lecture

সিয়াম ও জিজ্ঞাসা

Video

রামাদান

রামাদানে সিয়াম পালন, ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। স্তম্ভ এমন কোন কিছুকে বলা হয় যা সম্পূর্ণ বস্তুকে দাড় করিয়ে রাখে। অথচ আমরা মুসলিমরা কি আজ এর যথার্থ মূল্যায়ন করছি! অথচ এই রামাদানকে ঘিরে সাহাবারা প্রস্তুতি শুরু করতেন মাস শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে। এর কারন হয়তবা আমরা রামাদানের সঠিক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারিনি। রামাদানের গুরুত্ব ও কিছু সংক্ষিপ্ত মাসায়েল নিয়ে শুনুন শাইখ আব্দুর রাজ্জাকের কুরআন ও হাদীসভিত্তিক এই অনন্য বক্তব্যটি। এই অডিওটি ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন

 সিয়ামের ফজিলত ও নফল সিয়াম

সিয়াম সাধনা, ইসলামের এক অনন্য ইবাদাত। এটি এমন এক ইবাদাত যার পুরস্কার দিবেন স্বয়ং আল্লাহ, সিয়াম পালনকারীদের জন্য রয়েছে জান্নাতে একটি স্বতন্ত্র দরজা আর এছাড়াও রয়েছে আরো প্রচুর পুরষ্কার। সিয়াম এমন কোন ইবাদাত নয় যা শুধু রামাদানের সাথে সম্পর্কিত , বরঞ্চ হাদীস ও সাহাবাদের জীবন থেকে আমরা দেখতে পাই প্রচুর নফল সিয়াম। সিয়াম পালনে নিজেকে আগ্রহী করে তুলতে শুনুন প্রখ্যাত ‘আলেমে দ্বীন শাইখ আব্দুর রাজ্জাকের সিয়ামের পুরষ্কার ও নফল সিয়াম সম্পর্কিত এই তথ্যবহুল বক্তব্য। এই অডিওটি ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন

 ইংরেজি ভাষায়ে আরো প্রবন্দ, বই, লেকচার পড়তে এবং ডাউনলোড করতে হলে এই লিংক এ ক্লিক করুন – http://i.iloveallaah.com/qswwe

আপনাদের কাছে যদি কোন রামাদান বিষয়ে নতুন প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার থাকে, তাহলে আমাদের ইমেইল করুন – info[@]quraneralo.com

উৎসাহ উদ্দিপনা মূলক ভিডিও –জীবনের পরিচয় – HD


প্রশ্নঃ রামাদ্বান কি?

Image may be NSFW.
Clik here to view.

 

উত্তরঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

রামাদ্বান/রমযান …এটি ‘আরাবী’ বার মাসগুলোর একটি, আর এটি দ্বীন ইসলামে একটি সম্মানিত মাস।  এটি অন্যান্য মাস থেকে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ও ফাযিলাহ (ফযীলত) সমূহের কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেমনঃ

১. আল্লাহ -‘আযযা ওয়া জাল্ল- সাওমকে (রোযাকে) ইসলামের আরকানের মধ্যে চতুর্থ রুকন হিসেবে স্থান দিয়েছেন, যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

“রামাদ্বান মাস যে মাসে তিনি আল কুরআন নাযিল  করেছেন, তা মানবজাতির জন্য হিদায়াতের উস, হিদায়াত ও সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন সুতরাং তোমাদের মাঝে যে এই মাস পায় সে যেন সাওম রাখে [সূরা বাক্বারাহঃ ১৮৫]

আর  সাহীহুল বুখারী ইমান অধ্যায়  ও  সাহীহ মুসলিম এ ইবনু উমার এর হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে নাবী (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) বলেছেনঃ

ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা তাঁর রাসূল সালাত কায়েম (প্রতিষ্ঠা) করা, যাকাত প্রদান করা, রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং বাইতুল্লাহ (কাবাহ)এর উদ্দেশ্যে হজ্জ করা”।

২. আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্ল এই মাসে আল কুরআন  নাযিল করেছেন, যেমনটি তিনি-তা‘আলা-পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করেছেনঃ

“রামাদ্বান মাস যে মাসে তিনি আল কুরআন নাযিল করেছেন, তা মানবজাতির জন্য হিদায়াতের , হিদায়াত সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন; সুতরাং তোমাদের মাঝে যে এই মাস পায় সে যেন সাওম রাখে”। [সূরা বাক্বারাহঃ ১৮৫]

তিনি –সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা- আরো বলেছেনঃ

নিশ্চয়ই আমি একে (আল কুরআন) লাইলাতুল ক্বাদরে নাযিল করেছি”। [সূরা ক্বাদরঃ১]

৩. আল্লাহ এ মাসে লাইলাতুল ক্বাদর রেখেছেন যে মাস হাজার মাস থেকে উত্তম যেমনটি তিনি-তা’আলা বলেছেনঃ

“নিশ্চয়ই আমি একে লাইলাতুল ক্বাদরে (আল কুরআন ) নাযিল করেছি। এবং আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বাদর কি ? লাইলাতুল ক্বাদর হাজার মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। এতে ফেরেশতাগণ এবং রূহ (জিবরাই আলাইহিস সালাম) তাদের রবের (প্রতিপালকের) অনুমতিক্রমে অবতরণ করেন সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। শান্তিময় (বা নিরাপত্তাপূর্ণ ) সেই রাত ফাজরের সূচনা পর্যন্ত”। [সূরা ক্বাদরঃ১-৫]

তিনি আরো বলেছেনঃ

নিশ্চয়ই আমি একে (আল কুরআন) এক বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি, নিশ্চয়ই আমি সর্তককারী”। [সূরা আদ দুখানঃ৩]

আল্লাহ তা’আলা রমযান মাসকে লাইলাতুল ক্বাদর  দিয়ে সম্মানিত করেছেন আর এই বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) রাতে মর্যাদার বর্ণনায় সূরাতুল ক্বাদর নাযিল করেছেন।

আর এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে অনেক আহাদীস (হাদীসসমূহ, হাদীসের বহুবচন)। আবূ হুরাইরাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেনঃ

তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েহে রামাদ্বান, এক বারাকাতপূর্ণ (বরকতময়) মাস। এ মাসে স্বাওম পালন করা আল্লাহ-‘আযযা ওয়া জাল্ল-তোমাদের উপর ফারদ্ব (ফরজ) করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে জাহীমের দরজাসসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে অবাধ্য শাইত্বানদের শেকলবদ্ধ করা হয় আর এ মাসে রয়েছে আল্লাহর এক রাত যা হাজার মাস থেকে উত্তম, যে এ রাত থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃত পক্ষেই বঞ্চিত হল [বর্ণনা করেছেন আন-নাসা’ঈ (২১০৬), আহমাদ (৮৭৬৯) এবং আল-আলবানী একে সাহীহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ‘সাহীহুত তারঘীব’ (৯৯৯) – এ]

আর আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- থেকে বর্ণিত  যে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ

“যে ঈমান সহকারে প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্বাদর (ক্বাদরের রাত্রিতে) ‘ইবাদাত  করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।” [বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (১৯০১) ও মুসলিম (৭৬০)]

৪. আল্লাহ -‘আযযা ওয়া জাল্ল – এই মাসে স্বাওম পালন ও ক্বিয়াম করাকে গুনাহ মাফের কারণ করেছেন, যেমনটি দুই সাহীহ গ্রন্থ বুখারী (২০১৪) ও মুসলিম (৭৬০) – এ বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ-এর হাদীস থেকে যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ

“যে রামাদ্বান মাসে ঈমান সহকারে ও সাওয়াবের আশায় স্বাওম পালন করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।”

এবং বুখারী (২০০৮) ও মুসলিম (১৭৪)-এ তাঁর (আবূ হুরাইরাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ-) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেনঃ

“যে রামাদ্বান মাসে ঈমান সহকারে ও সাওয়াবের আশায় ক্বিয়াম করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ  মাফ করে দেয়া হবে।”

মুসলিমদের মাঝে রামাদ্বানের রাতে ক্বিয়াম করা সুন্নাহ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ (ঐক্যমত) রয়েছে। ইমাম আন-নাওয়াউয়ী উল্লেখ করেছেনঃ

রামাদ্বানে  ক্বিয়াম করার অর্থ হল তারাউয়ীহের (তারাবীহের) স্বালাত আদায় করা অর্থাৎ তারাউয়ীহের (তারাবীহের) স্বালাত আদায়ের মাধ্যমে যাতে ক্বিয়াম করার উদ্দেশ্য সাধিত হয়।

৫. আল্লাহ-‘আযযা ওয়া জাল্ল- এই মাসে জান্নাতসমূহের দরজা সমূহ খুলে দেন, এ মাসে জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেন এবং শাইত্বানদের শেকলবদ্ধ করেন।

৬. এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে (তাঁর বান্দাদের) মুক্ত করেন। ইমাম আহমাদ (৫/২৫৬) আবূ উমামাহ’র হাদীস থেকে বর্ণনা করেছেন যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ

“আল্লাহর রয়েছে প্রতি ফিত্বরে (ইফত্বারের সময় জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দা

আল-মুনযিরী বলেছেন এর ইসনাদে কোন সমস্যা নেই। আর আল-আলবানী এটিকে ‘সাহীহুত তারঘীব’ (৯৮৭) – এ সাহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল-বাযযার (কাশফ ৯৬২) আবূ সা‘ঈদের হাদীস থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ – তাবারাকা ওয়া তা‘আলা – র রয়েছে (রামাদ্বান মাসে) প্রতি দিনে ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দাগণ আর নিশ্চয়ই একজন মুসলিমের রয়েছে প্রতি দিনে ও রাতে কবুল হওয়া দু‘আ’

৭. রামাদ্বান মাসে স্বাওম পালন করা পূর্ববর্তী রামাদ্বান থেকে কৃত গুনাহসমূহের কাফফারাহ লাভের কারণ যদি বড় গুনাহ সমূহ (কাবীরাহ গুনাহ সমূহ) থেকে বিরত থাকা হয়, যেমনটি প্রমাণিত হয়েছে ‘সাহীহ মুসলিম (২৩৩)-এ যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ

“পাঁচ ওয়াক্বতের পাঁচবার স্বালাত, এক  জুমু‘আহ থেকে অপর  জুমু‘আহ, এক রামাদ্বান থেকে অপর রামাদ্বান এর মাঝে কৃত গুনাহসমূহের কাফফারাহ  করে যদি বড় গুনাহ সমূহ (কাবীরাহ গুনাহ সমূহ) থেকে বিরত থাকা হয়

৮. এই মাসে স্বাওম পালন করা দশ মাসে স্বিয়াম পালন করার সমতূল্য যা ‘সাহীহ মুসলিম’ (১১৬৪)-এ প্রমাণিত আবূ আইয়ূব আল-আনসারীর হাদীস থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায় যে তিনি বলেছেনঃ

“যে রামাদ্বান মাসে স্বিয়াম পালন করল, এর পর শাউওয়ালের ছয়দিন স্বাওম পালন করল, তবে তা সারা জীবন স্বাওম রাখার সমতূল্য”

আর ইমাম আহমাদ (২১৭/০৬)বর্ণনা করেছেন যে, নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ

“যে রামাদ্বান মাসে স্বাওম পালন করল, তা দশ মাসের (স্বাওম পালনের) সমতূল্য আর ‘ঈদুল ফিত্বরের পর (শাউওয়ালের মাসের) ছয় দিন স্বাওম পালন করা গোটা বছরের (স্বাওম পালনের) সমতূল্য।”

 

[বিঃদ্রঃ সূরা (৬) আল-আন‘আমের ১৬০ নং আয়াত অনুসারে কোন মু’মিন কোন ভাল কাজ করলে আল্লাহ-তা‘আলা-তাকে দশ গুণ সাওয়াব দেন। সুবহানাল্লাহ ! তাই রামাদ্বান মাসে ৩০ দিন স্বাওম পালনের অর্থ এই দাঁড়ায় (৩০×১০)=৩০০ দিন অর্থাৎ   দশ মাস স্বিয়াম পালন করা; আর (শাউওয়ালের মাসের) ছয় দিন স্বাওম পালন করার অর্থ দাঁড়ায় (৬×১০)=৬০ দিন অর্থাৎ  দুই মাস স্বিয়াম পালন করা। সুতরাং রামাদ্বান ও এর পরবর্তী শাউওয়ালের ছয় দিন স্বাওম পালন করা (১০ মাস+২ মাস) = ১২ মাস অর্থাৎ  গোটা বছরের সমতূল্য!]

“আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযক্ব দান করেন” [সূরা আন-নূরঃ ৩৮]

৯. এই মাসে যে ইমামের সাথে তিনি (ইমাম)(স্বালাত) শেষ করে চলে যাওয়া পর্যন্ত ক্বিয়াম করে, সে সারা রাত ক্বিয়াম করেছে বলে হিসাব করা হবে যা ইমাম আবূ দাঊদ (১৩৭০) ও অন্য সূত্রে আবূ যার -রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- এর হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ

“যে ইমাম চলে যাওয়া পর্যন্ত তাঁর (ইমামের) সাথে ক্বিয়াম করল, সে সারা রাত ক্বিয়াম করেছে বলে ধরে নেয়া হবে।”

আল-আলবানী ‘স্বালাহ আত-তারাউয়ীহ’ বইতে (পৃঃ১৫) একে সাহীহ বলে চিহ্নিত করেছেন।

১০. এই মাসে ‘উমরাহ করা হাজ্জ করার সমতূল্য। ইমাম আল-বুখারী (১৭৮২) ও মুসলিম (১২৫৬) ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন  যে তিনি বলেছেনঃ

রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- আনসারদের এক মহিলাকে প্রশ্ন করলেনঃ

“কিসে আপনাকে আমাদের সাথে হাজ্জ করতে বাঁধা দিল?”

তিনি (আনসারী মহিলা)বললেনঃ

“আমাদের শুধু পানি বহনকারী দুটি উটই ছিল।”

তাঁর স্বামী ও পুত্র একটি পানি বহনকারী উটে করে হাজ্জে গিয়েছিলেন।

তিনি বললেনঃ

“আর আমাদের পানি বহনের জন্য  একটি পানি বহনকারী উট রেখে গেছেন।”

তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেনঃ

“তাহলে রামাদ্বান এলে  আপনি ‘উমরাহ করেন কারণ, এ মাসে ‘উমরাহ করা হাজ্জ করার সমতূল্য।”

মুসলিমের রিওয়াইয়াতে আছেঃ

“……কারণ এ মাসে ‘উমরাহ করা আমার সাথে হাজ্জ করার সমতূল্য।”

১১. এ মাসে ই‘তিকাফ করা সুন্নাহ কারণ নাবীসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তা নিয়মিতভাবে করতেন যেমনটি বর্ণিত হয়েছে ‘আ’ইশাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু‘আনহা-থেকে –

ল্লাহ তাঁকে (রাসূলুল্লাহকে) ক্বাবদ্ব (কবজ, মৃত্যু দান) না দেওয়া পর্যন্ত রামাদ্বানের শেষ দশ দিনে ই‘তিকাফ করতেন। তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীগণও ই‘তিকাফ করেছেন।”

[বর্ণনা করেছেন আল বুখারী (১৯২২) ও মুসলিম (১১৭২)]

১২. রামাদ্বান মাসে ক্বুর’আন অধ্যয়ন ও তা বেশি বেশি তিলাওয়াত করা খুবই তা’কীদের (তাগিদের)  সাথে করণীয় এক মুস্তাহাব্ব (পছন্দনীয়) কাজ। আর ক্বুর’আন অধ্যয়ন হল একজন অপরজনকে ক্বুর’আন পড়ে শুনাবে এবং অপরজনও তাকে তা পড়ে শুনাবে। আর তা মুস্তাহাব্ব  হওয়ার দালীলঃ

“যে জিবরীল রামাদ্বান মাসে প্রতি রাতে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং ক্বুরআন অধ্যয়ন করতেন।”

[বর্ণনা করেছেন আল বুখারী (৬) ও মুসলিম (২৩০৮)]

কুরআন ক্বিরা‘আত সাধারণভাবে মুস্তাহাব্ব, তবে রামাদ্বানে বেশি তা’কীদ যোগ্য।

১৩. রামাদ্বানে স্বাওম পালনকারীকে ইফত্বার করানো মুস্তাহাব্ব যার দালীল যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী হতে বর্ণিত হাদীস যাতে তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃ

“যে কোন স্বাইমকে (স্বাওম পালনকারীকে) ইফত্বার করায়, তার (যে ইফত্বার করালো) তাঁর (স্বাওম পালনকারীর) সমান সাওয়াব হবে, অথচ সেই স্বাওম পালনকারীর সাওয়াব কোন অংশে কমে না”

[বর্ণনা করেছেন আত-তিরমিযী(৮০৭), ইবনু মাজাহ (১৭৪৬) এবং আল আলবানী ‘সাহীহ আত তিরমিযী’(৬৪৭) তে একে সাহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন ]

দেখুন প্রশ্ন নং (12598)

এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

 

Islam Q & A

কুরআনের তেলাওাত সহ বাংলা অনুবাদ (অডিও – mp3)

بسم الله الرحمن الرحيم

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ কুরআনে কারিমের সহজ সরল বাংলা অনুবাদের এই সিডিটি আপনাদের জন্য পেশ করেছে কুরআনের আলো পাবলিকেশন্স। এই সিডিতে কুরআন তেলাওয়াত করেছেন মক্কায় অবস্থিত মাসজীদ আল হারাম এর ইমাম, শেইখ সাউদ আস সুরাইম । বাংলা অনুবাদ করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন। এবং বাংলা অনুবাদে কন্ঠ দিয়েছেন জায়েদ ইকবাল

সব ফাইল একসাথে ডাউনলোড করুন – QuranRecitation.zip (916 MB)

01 Al-Fatiha.mp3
02 Al-Baqara.mp3
03 Alo Imran.mp3
04 An-Nisa.mp3
05 Al-Maidah.mp3
06 Al-Anam.mp3
07 Al-Araf.mp3
08 Al-Anfal.mp3
09 At-Tawbah.mp3
10 Yunus.mp3

11 Hud.mp3
12 Yusuf.mp3
13 Ar-Rad.mp3
14 Ibrahim.mp3
15 Al-Hijr.mp3
16 An-Nahl.mp3
17 Bani Israil.mp3
18 Al-Kahf.mp3
19 Maryam.mp3
20 Ta-Ha.mp3
21 Al-Anbiya.mp3
22 Al-Hajj.mp3
23 Al-Muminun.mp3
24 An-Nur.mp3
25 Al-Furqan.mp3
26 Ash-Shuara.mp3
27 An Namal.mp3
28 Al-Qasas.mp3
29 Al-Ankabut.mp3
30 Ar-Rum.mp3
31 Luqman.mp3
32 Sajdah.mp3
33 Al-Ahzab.mp3
34 Saba.mp3
35 Al-Fatir.mp3
36 Ya-Sin.mp3
37 As-Saffat.mp3
38 Sad.mp3
39 Az-Zumar.mp3
40 Al-Mumin.mp3
41 Ha-Mim Sajdah or Fussilat.mp3
42 Ash-Shura.mp3
43 Az-Zukhruf.mp3
44 Ad-Dukhan.mp3
45 Al-Jathiyyah.mp3
46 Al-Ahqaf.mp3
47 Muhammad.mp3
48 Al-Fath.mp3
49 Al-Hujurat.mp3
50 Qaf.mp3
51 Adh-Dhariyyat.mp3
52 At-Tur.mp3
53 An-Najm.mp3
54 Al-Qamar.mp3
55 Ar-Rahman.mp3
56 Al-Waqiah.mp3
57 Al-Hadid.mp3
58 Al-Mujadilah.mp3
59 Al-Hashr.mp3
60 Al-Mumtahina.mp3
61 As-Saff.mp3
62 Al-Jumua.mp3
63 Al-Munafiqun.mp3
64 At-Taghabun.mp3
65 At-Talaq.mp3
66 At-Tahrim.mp3
67 Al-Mulk.mp3
68 Al-Qalam.mp3
69 Al-Haqqa.mp3
70 Al-Maarij.mp3
71 Nuh.mp3
72 Al-Jinn.mp3
73 Al-Muzzammil.mp3
74 Al-Muddaththir.mp3
75 Al-Qiyamah.mp3
76 Ad-Dahr.mp3
77 Al-Mursalat.mp3
78 An-Naba.mp3
79 An-Naziat.mp3
80 Abasa.mp3
81 At-Takwir.mp3
82 Al-Infitar.mp3
83 Al-Mutaffifin.mp3
84 Al-Inshiqaq.mp3
85 Al-Buruj.mp3
86 At-Tariq.mp3
87 Al-Ala.mp3
88 Al-Ghashiyah.mp3
89 Al-Fajr.mp3
90 Al-Balad.mp3
91 Ash-Shams.mp3
92 Al-Layl.mp3
93 Ad-Duha.mp3
94 Al-Inshirah.mp3
95 At-Tin.mp3
96 Al-Alaq.mp3
97 Al-Qadr.mp3
98 Al-Bayyinah.mp3
99 Az-Zilzal.mp3
100 Al-Adiyat.mp3
101 Al-Qariah.mp3
102 At-Takathur.mp3
103 Al-Asr.mp3
104 Al-Humaza.mp3
105 Al-Fīl.mp3
106 Quraysh.mp3
107 Al-Maun.mp3
108 Al-Kauthar.mp3
109 Al-Kafirun.mp3
110 An-Nasr.mp3
111 Al-Lahab.mp3
112 Al-Ikhlas.mp3
113 Al-Falaq.mp3
114 An-Nas.mp3

Android App: অর্থপূর্ণ নামায (সালাত) শব্দসহ

নামাযে (সলাতে) আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কি বলছেন তা কি জানেন??

Image may be NSFW.
Clik here to view.
13227373_499611420249119_333068579871727857_o

অর্থপূর্ণ নামায (সলাত) এমন একটি অ্যাাপ যার দ্বারা আপনি নামাযের পঠিত সূরা, তসবিহ, দোআ ইত্যাদির অর্থ (প্রতিটি শব্দের অর্থ সহ) শিখতে পারবেন।

:::::এতে আছে::::::

১। সলাতে(নামাযে) পঠিত সূরা, তাসবিহ, দোআর অর্থ

২। সূরা ফাতিহাহ এবং শেষ ১৩ সূরা

৩। শব্দে শব্দে অনুবাদ, গভীর শাব্দিক এনালাইসিস ও তাফসির আহসানুল বায়ান

৪। সলাতের ওয়াক্ত, ওয়াক্ত নোটিফিকেশান এবং কিবলা

৫। Pinch zoom করে মন মত ফন্ট সাইজ পরিবর্তন করে নিন

৬। ছবি ও লেখা শেয়ার করার সুবিধা

৭। কোন অ্যাড নেই!

নতুন ১.১ এ যা এসেছেঃ

৮। নামাযের সময়সূচী দেখার জন্য উইজেট সুবিধা
৯। Marshmellow আর lolipop e crash সংশোধন
১০। কিছু ডিজাইন আপডেট

Playstore link: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.greentech.salatbn

Android App: দো‘আ ও যিকির (হিসনুল মুসলিম)

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা পেতে, আমাদের চাহিদাগুলো সুনির্দিষ্ট উপায়ে চাইতে, অন্যের জন্য ভালো কামনা করতে, জীবনের প্রতি পরতে পরতে আল্লাহর সাহায্য পেতে দু’আর বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে আমরা সবাই কম-বেশি দো‘আ করি। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন দো‘আ কুরআন ও হাদীসে বিদ্যমান। এই দো‘আগুলো আমাদের নিকট গুপ্তভাণ্ডার বা ধনভাণ্ডারের ন্যায়। আল্লাহর কাছে চাওয়ার আবেদনপত্র স্বরূপ। এরুপ দো‘আর বইয়ের মধ্যে অন্যতম বই হলো “হিসনুল মুসলিম।”

কুরআন-সুন্নাহ্‌র যিক্‌র ও দো‘আ সংবলিত হিসনুল মুসলিম রচনা করেছেন “ড. সাঈদ ইব্‌ন আলী ইব্‌ন ওয়াহফ আল-ক্বাহত্বানী”। এটি অনুবাদ করেছেন আমাদের দেশের প্রখ্যাত আলেম-ই-দীন, “ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া”। এতে প্রতিটি দো‘আ এবং যিকরের আরবি, উচ্চারণ, অর্থ এবং তার উৎসনির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এখানে সর্বমোট ২৫৬ টি দো‘আ এবং যিকর রয়েছে যা সুবিধার জন্যে ১৭টি ভাগে আলাদা আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে।

Image may be NSFW.
Clik here to view.
11539213_391441851066077_4532027950678537277_o

এতে আছে

•ঘুমানোর, ঘুম থেকে ওঠার, পোশাক পরা ও খোলার, পায়খানার, ওযুর, নামাযের, মসজিদের, ইস্তিখারার দো’আ (দুয়া বা দুআ) ও সকাল ও বিকালের যিকর (বা জিকির)

•কুরআন ও হাদিসের ২৫০ ও বেশি দোআ ও যিকির

•আপনার পছন্দের দোআ সেভ করে রাখুন

•সুবিধা মত ফন্ট সাইজ পরিবর্তন করে নিন

•শেয়ার করে সওয়াব অর্জন করুন

•প্রতিটি দোআর সাথে এর অর্থ, উচ্চারণ এবং ফযিলত দেয়া আছে।

•প্রতিটি দোআর অডিও আছে এতে!!

•অডিও ফাইল শেয়ারও করা যায়

•Pinch zoom এর অপশন যুক্ত করা হয়েছে

•কোন অ্যাড নেই

•সার্চ অপশন বাংলা ফনেটিক দ্বারা

•সুবিধার জন্য আলাদা আলাদা বিষয়ে বিভক্ত

Play Store Link: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.greentech.hisnulmuslimbn

Android App: iHadis

ihadis হাদিস অ্যাপের ফিচারসমুহঃ

Image may be NSFW.
Clik here to view.
13411619_969901039796740_7963246147866824179_o

– ম্যাটেরিয়াল ডিজাইনঃ app এর ডিজাইনের দিকে বেশ অনেকটা সময় ব্যয় করা হয়েছে। সাদার সাথে বিভিন্ন কালার কম্বিনেশন করা হয়েছে। হোমপেজে শুরুতেই চমক আছে – ২ টা ভিউ রাখা হয়েছে- যে যেটা পছন্দ করেন। নতুন অ্যাপে বেশ কয়েকটি হাদিসের বই দেয়া হবে। বই> অধ্যায়> হাদিস — এই প্যাটার্ন ফলো করা হয়েছে।

– সার্চঃ যাই সার্চ করেন না কেন সব হাদিসের বইয়ের ভেতর খুঁজে রেজাল্ট আসবে ১ সেকেন্ডের মধ্যে ইনশাল্লাহ, হ্যাঁ এতটাই ফাস্ট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দিতে যাচ্ছে ihadis হাদিস অ্যাপ

– ড্রয়ার : সুদৃশ্য একটি ড্রয়ার আছে আমাদের অ্যাপে। এতে বুকমার্ক, সেটিংস সহ বেশ কিছু অপশন আছে।

– চ্যাপটার পেজ : হাদিসের রেঞ্জসহ হাদিসের অধ্যায়গুলো দেখা যাবে। অধ্যায়ে ক্লিক করলে পরের পেজে হাদিস দেখাবে

– হাদিস পেজ : ihadis হাদিস অ্যাপের অন্যতম মুল আকর্ষণ হাদিস পেজ। মাল্টিপল ভিউ এবং সিঙ্গেল ভিউ- এই দুইটি ভিউই আছে, যা অন্য কোন (national/international) হাদিসের অ্যাপে নেই আমার জানামতে। যেন বই থেকেই হাদিস পড়ছি – এই অনুভূতি দেবে মাল্টিপল ভিউ। আরও রয়েছে স্মুথ স্ক্রল এক্সপেরিয়েন্স। এক হাদিস থেকে দ্রুত আরেক হাদিসে জাম্প করার সুবিধাও রয়েছে। সিঙ্গেল ভিউতে হাদিসটা আরও বেশি হাইলাইট হবে, একটি হাদিসের উপর মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে। হাদিস পড়তে পড়তে জ্ঞানের সাগরে ডুব দিতে পারবেন পাঠককুল – এমনটাই আশা করছি আমরা।

– চ্যাপটার পেজ : হাদিসের রেঞ্জসহ হাদিসের অধ্যায়গুলো দেখা যাবে। অধ্যায়ে ক্লিক করলে পরের পেজে হাদিস দেখাবে

– কোন অ্যাড নেই

যে সকল হাদিস গ্রন্থ আছেঃ

১. সহিহ বুখারী
২. সহিহ মুসলিম
৩. আবূ দাউদ
৪. তিরমিজী
৫. ইবনে মাজাহ
৬. সহিহ হাদিসে কুদসী
৭. ৪০ হাদিস

 

Playstore Link: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.ihadis

Viewing all 514 articles
Browse latest View live