Quantcast
Channel: QuranerAlo.com – কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট
Viewing all 514 articles
Browse latest View live

মোবাইলে কুরআন পড়ার কিছু অ্যাপ

$
0
0

iQuran Pro

iQuran-Pro-Full-Aplication-For-Android

Version: 2.5.4

Download Link:

Download iQuran Pro v2.5.2 APK  (27.86 MB) via Zippyshare
Download iQuran Pro v2.5.3 APK  (27.88 MB) via Google Drive
Download iQuran Pro v2.5.4 APK  (30.74 MB) via Google Drive

Play Store Link – https://play.google.com/store/apps/details?id=com.guidedways.iQuranPro

Quran For Android

Play Store Link – https://play.google.com/store/apps/details?id=com.quran.labs.androidquran

alQuran

Play Store Link – https://play.google.com/store/apps/details?id=com.almubin.alquran

MP3 Quran

Play Store Link – https://play.google.com/store/apps/details?id=com.fantasy.MP3Quran

 


বই –যাকাতের সংক্ষিপ্ত আহকাম –ফ্রী ডাউনলোড

$
0
0

9679Mukhtasar_Ahkamiz_Zakah

 

জাকাতের সংক্ষিপ্ত আহকাম
লিখেছেনঃ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল
সৌদি আরব, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আল-আহসা ইসলামিক সেন্টার, বাংলা বিভাগ।

বইটি ডাউনলোড করুন

[page-44, size-247KB]

রমযান মাসে যদি সব শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে তাহলে এ মাসে মানুষ নিয়মিতভাবে পাপ করতে থাকে কীভাবে?

$
0
0

প্রশ্ন: এটি খুব সাধারণ এবং সকলের মনে উদয় হওয়া একটি প্রশ্ন তাহলোরমযান মাসে যদি সব শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে তাহলে এ মাসেমানুষ নিয়মিতভাবে পাপ করতে থাকে কীভাবে?

SONY DSC

উত্তর: ডা. জাকির নায়েক: হ্যাঁ, আমি এই সাধারণ প্রশ্নের সাথে একমত এবং এখন আমার বিভিন্ন আয়াত, হাদীস ইত্যাদির কথা মনে হচ্ছে যেখানে উল্লেখ আছে যে, রমযান মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে এই প্রশ্ন উত্থিত হয়।

শুধু আমাদেরই নয়, বিভিন্ন মুসলিম এবং অমুসলিমদের ভেতরেও এই প্রশ্ন ওঠে যে যদি শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ হয় তাহলে মানবজাতি এরকম পাপ কাজ চালিয়ে যেতে পারে কীভাবে? এই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হয় মূলত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসদ্বয়ের উপর ভিত্তি করে।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“হে মানবজাতি তোমাদের মাঝে পবিত্র রমযান মাস সমাগত এবং আল্লাহ তোমাদেরকে এই মাসে রোযা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আর এই মাসে বেহেশেতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেওয়া হয় আর এই মাসেই আছে কদরের রাত যেটি হাজার মাস থেকে উত্তম এবং যে ব্যক্তি এই মাসের অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হলো সে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থেই বঞ্চিত, দুর্ভাগা।” (মুসনাদ-ই আহমদ, পৃষ্ঠা-২৩০, হাদীস নং ৭১৪৮ এবং সুনানে নাসাঈ, অধ্যায়-৫, রোযা-৫, রোযা, হাদীন নং ২১০৬)

তিনি এই হাদীসে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করেছেন যে, পবিত্র রমযান মাসে শয়তানকে আল্লাহ তায়ালা শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেন। সুতরাং খুব সহজভাবেই এই প্রশ্ন উত্থিত হয় যে, শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার পরেও মানবজাতি পাপ কাজে লিপ্ত থাকে কীভাবে?

  • এখন এই লোকগুলোকে বোঝাতে আমাদেরকে এটি অনুধাবন করতে হবে যে, শয়তান যদিও শৃঙ্খলাবদ্ধ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, শয়তান একেবারে শেষ বা মরে গেছে বরং শয়তান জীবিত তারা মরে যায় না। তাদের ক্ষমতা রোধ হয়ে যায়। ব্যাপারটি ভালোভাবে বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। বাঘের কথাই ধরুন। যে বাঘটি মুক্ত তার পক্ষে মানুষ হত্যা করার সম্ভাবনা খুবই বেশি এমনকি বাঘে পেলে হত্যা করে বৈকি! আপনার জীবন তখন বিপদাপন্ন কিন্তু যখন ওই বাঘটি খাঁচাবন্দি বা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকবে তখন কিন্তু আপনি ওই বাঘ হতে নিরাপদ। তবে আপনার ওই নিরাপত্তা নির্ভর করে যতটুকু দূরত্ব আপনি বাঘের সাথে রেখেছেন তার ওপর। বাঘকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার পরেও আপনি যদি ওই বাঘের খুব কাছাকাছি চলে যান তাহলে আপনাকে হত্যা করার একটা সুযোগ কিন্তু ওই বাঘের জন্য থেকে যায়।

সুতরাং যতটা সম্ভব, ওই বাঘের কাছ থেকে বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তাহলেই আপনি নিরাপদ থাকবেন। একইভাবে আপনি যদি রমযান মাসে শয়তান হতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন তাহলে আপনিও নিরাপদ থাকতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

অর্থ: হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা হতে তোমরা আহর করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা, অধ্যায়-২, আয়াত-১৬৮)

এখানে বলা হয়েছে- “শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ এবং তার কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য সতর্ক হও” কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা এই শয়তানের পদাঙ্ক হতে বাঁচার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ এই কথা বলেন নি যে তোমরা শুধু শয়তানের কাছ থেকে সতর্ক হও, কারণ অনেক সাধারণ এবং ঈমানদার মুসলমান আছেন যারা তাদের সামনেই শয়তানকে দেখতে পান এবং এতে করে তারা নিজেরাই সতর্ক হতে পারে বা সুযোগ পায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি যুবতী মেয়ে একজন ঈমানদার যুবকের কাছে এসে বলল, চলো আজ আমরা দু’জনে একসাথে রাত কাটাই। তখন ওই যুবক বলবে, দু’জনে একসাথে রাত কাটাব! একটা মেয়ের সাথে রাত কাটাব! এটা হারাম, এটা যিনা, ব্যভিচার। সে তাৎক্ষণিকভাবে এটার প্রতিবাদ করবে। কিন্তু ওই একই যুবতী যদি ওই যুবকের সাথে ফোনে কথা বলে তাহলে এটা তেমন কোন ব্যাপার নয়, পরবর্তীতে মেয়েটি ছেলেটিকে বলল, চলো আমরা স্ন্যাকস, ম্যাকডোনাল্ড, ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি খাই।

এটার জন্য তাদের আধা ঘণ্টা ব্যয় হলো এবং এটিও তেমন কোন ব্যাপার নয়। এরপর মেয়েটি বলল আচ্ছা আমরা রাতের খাবার কেন খাচ্ছি না, চলো রেস্টুরেন্টে যাই। তারা গেল কিন্তু এটাও তেমন কোন সমস্যা নয়। এরপর মেয়েটি বলল, তাহলে রাতটা তুমি আমার সাথে কাটাচ্ছো না কেন? তখন ছেলেটি বলল, একটি মেয়ের সাথে রাত কাটাব চমৎকার, কোন সমস্যা নয়। আর এটাই হলো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ। আর শয়তানের এই পদাঙ্ক অনুসরণ একজন মুমিন বান্দাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই কারণে আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে সতর্ক হতে বলেছেন। যদি শয়তান সরাসরিভাবে কোনো ঈমানদার ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হয় তাহলে ওই মুমিন ব্যক্তি তাকে ভয় করে এবং তার থেকে বাঁচতে পারে। শয়তানের পদাঙ্ক হলো এমন একটি জিনিস যেটি খুবই বিপদজনক।

সুতরাং আমরা এটাই বুঝতে পারি যে, যখন শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে তখন পদচারণাও বন্ধ থাকে। যে কারণে অনেক পাপ কাজও বিরত থাকে। এখন যদি কেউ আগ বাড়িয়ে শয়তানের কাছে যায় তাহলে শয়তানের কাছে তার মাথানত এবং বিভিন্ন পাপ কাজ করার বা পাপে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা চরমে পৌছে। তাই পবিত্র রমযান মাসে আমরা যতই শয়তানের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবো ততই আমাদের পাপ কাজে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। আপনি যদি শৃংখলাবদ্ধ বাঘের কাছে যান যদিও সে আবদ্ধ, তবুও সে কিন্তু অল্প জায়গার ভেতরে ঘোরাফেরা করতে পারে একইভাবে শয়তানও একই কাজ করতে পারে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শয়তানরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে যায়।” তারা স্বল্প জায়গায় ঘোরাফেরা করতে পারে। সুতরাং কেউ যদি শয়তানের ঘোরাফেরার আওতায় বাইরে থাকে তাহলে সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে।

  • আমি এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় যে কারণটি অনুভব করি সেটা হলো- আমরা একটি ব্যাপার অনুধাবন করতে ব্যর্থ হই তাহলো যদিও শয়তান রমযান মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে কিন্তু বাকি আরো ১১ মাস সে কিন্তু মুক্তই থাকে। ওই ১১ মাসে শয়তান মানুষের ওপর যে সব কুমন্ত্রণা এবং পাপে জড়াতে পেরেছে তার প্রভাব মানুষকে পবিত্র রমযান মাসেও প্রভাবিত করে। আমি আপনাদেরকে সহজভাবে বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ দিচ্ছি- একজন মাদক বিক্রেতা যে বিভিন্ন প্রকার চেষ্টা করে কলেজ, ভার্সিটির তরুণ ছাত্রছাত্রীদেরকে মাদকাসক্ত করে ফেলে। এটিতে সফল হওয়ার জন্য প্রথমে তারা কি করে? প্রথমে তারা ছাত্রদেরকে বিনামূল্যে মাদক দেয়। তাদেরকে মাদক গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে।

পরবর্তীতে তারা ছাত্রদের উপর মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে মূল্য আদায় করতে শুরু করে এবং দিনে দিনে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।’ কিন্তু ততদিনে ওই ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট পরিমাণে মাদকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় যদি ওই দমাদক বিক্রেতারা ওই ছাত্রছাত্রীদের কাছে না যায় তাহলে ওই ছাত্রছাত্রীরাই নিজেরা ওই মাদক বিক্রেতাকে খুঁজে বের করে। ওই মাদক বিক্রেতারা তাদের কৌশল অনুযায়ী অন্য কোনো লোকের কাছে গিয়ে একই ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে। সুতরাং যে লোকেরা মাদকের প্রতি আসক্ত হয়েছে তারা নিজেরাই মাদকের দোকানে গিয়ে সেটি গ্রহণ করে। একইভাবে যারা শয়তানের প্রতি আসক্ত হয়েছে তারা শয়তান অনুপস্থিত থাকলেও তাদের মাঝে শয়তানকে খোঁজা বা শয়তানের আসক্তি তাদের ভেতর প্রবলভাবে কাজ করে। কিন্তু ‍মুমিন মুসলিম যারা শয়তানের প্রতি আসক্ত হয় নি তাদের পক্ষে শয়তানের কাছে থেকে দূরে থাকা বা কুমন্ত্রণা থেকে বিরত খুবই সহজ।

  • এ প্রসঙ্গে তৃতীয় কারণ হিসাবে বলবো, অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ আছেন যারা বলেন যে, পবিত্র রমযান মাসে বড় বড় শয়তানরা অনুপস্থিত থাকে কিন্তু ছোট এবং শয়তানের দোসররা মুক্ত থাকে এবং তারাই মানুষের ভিতরে কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দেয়। এই শ্রেণীতে আরেকটি যুক্তি আছে তাহলো, যদিও আল্লাহ রমযান মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেন তথাপি তারা মানুষের অন্তরে তাদের কুমন্ত্রণা দিতে থাকে এবং এরই মাধ্যমে তারা মানুষকে তাদের কাছাকাছি নিয়ে যায়।

আল্লাহ বলেন,

الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

“তারা মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং তারা আসে হয়তো মানুষ কিংবা জ্বিনের ভেতর থেকে।” (সূরা নাস, আয়াত ৫,৬)

এখানে শয়তানের কথা বলা হয়েছে। শয়তান এমনই সত্তা যে মানুষের হৃদয়কে কলুষিত করে এবং পলায়ন করে এবং সে হতে পারে মানুষ কিংবা জ্বিন জাতি হতে। সুতরাং এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা যে শয়তানকে বন্দি করেন সে হয়ত জ্বিন জাতির সদস্য কিন্তু মানবজাতির ভেতরের শয়তান তখনো মুক্ত থাকে। সুতরাং এক শ্রেণীর শয়তান যারা জ্বিন জাতি হতে আসে তারা অনুপস্থিত থাকে। কিন্তু মানবজাতীয় শয়তান উপস্থিত থাকে। তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে। এই কুমন্ত্রণাই হলো আসল জিনিস যেটি মানুষকে শয়তানের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এই ব্যাপারটি হাদীসে পরিষ্কার করা হয়েছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য রমযানকে উপস্থিত করেছেন। তোমাদের উচিত রোযা রাখা এবং এই রোযার উদ্দেশ্য হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

শয়তান কি শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে? আল্লাহ আমাদেরকে রোযা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, রোযার মাসে শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে। সুতরাং যদি তুমি রোযা রাখ তাহলে তোমার পেছনে যে শয়তান লেগে আছে আল্লাহ তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেবেন। এখানে শয়তান হতে বাঁচার জন্য শর্ত হলো আমাদেরকে অবশ্যই রোযা রাখতে হবে। যদি তুমি যথাযথ নিয়তের সাথে রোযা রাখো তাহলে নিশ্চিতভাবে শয়তান তোমার ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না।

  • এটা প্রমাণ করার সবচেয়ে যৌক্তিক উপায় হলো, যদি আমরা রমযান মাসে বিভিন্ন মুসলিম দেশের অপরাধ প্রতিবেদন দেখি তাহলে দেখা যাবে যে, অন্য মাসের তুলনায় এটি অনেক কম। কিন্তু যদি রমযান মাসে একটি অমুসলিম দেশের অপরাধ প্রতিবেদন দেখি তাহলে দেখা যাবে এটি অন্যান্য মাসের মতই রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো তারা রোযা পালন করে না, তারা মুসলিম নয় এবং শয়তান তাদের উপর তখনও প্রভাবশীল থাকে। যদিও সব মুসলমান রোযা থাকে না কিন্তু বেশির ভাগই রোযা থাকে এবং এই কারণে পবিত্র রমযান মাসে অন্যান্য অমুসলিম দেশের তুলনায় মুসলিম দেশগুলোতে অপরাধের পরিমাণ কম থাকে।

উৎস: ইসলামের পথ (ফেসবুক)

সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী

ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রত্যাখ্যান করে

$
0
0
এই প্রবন্ধটি ২০১৩ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল।  আমাদের অনেকেই ইমেইল করেছেন বিষয়টি নিয়ে কিছু বলার জন্য, তাই প্রবন্ধটি আবার প্রকাশ করা হল।

সংকলক: আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা : মো: আবদুল কাদের

ইসলাম যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে ধর্মের নামেই রয়েছে শান্তির সুবাস, যে ধর্মের নবীকেই প্রেরণ করা হয়েছে জগতবাসীর জন্য শান্তি ও রহমত স্বরূপ [ . পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭। ], সে ধর্ম সম্পর্কে এমন অপপ্রচার একান্তই বিদ্বেষপ্রসূত। ইসলাম বিদ্বেষী ভাইদের অপপ্রচারে যাতে সরলমনা মুসলিম ভাই-বোনেরা বিভ্রান্ত না হন, তাই আজ পবিত্র কুরআনে এদু’টি শব্দ কতভাবে এসেছে তা আলোচনা করে এ ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরার প্রয়াস পাব এ নিবন্ধে ইনশাআল্লাহ।

অনেক রাজনৈতিক নেতা ও চিন্তাবিদই আরবী ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ (Violence) শব্দ ও ‘ইর‘আব’ বা ‘আতঙ্কসৃষ্টি’ (Terrorism) শব্দের মধ্যে, তেমনি ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ ও ‘আল-ইর‘আব আল-উদওয়ানী’ বা ‘আগ্রাসন’ শব্দের মধ্যে এবং ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ ও ‘আল-ইর‘আব আয-যরুরী’ বা ‘ত্রাস’ শব্দের মধ্যে পার্থক্য করেন না।

বস্তুত বিদেশি শব্দ সন্ত্রাস বা Terrorism-এর আরবী প্রতিশব্দ ‘ইরহাব’ নয়; ‘ইর‘আব’ . কেননা (‘ইরহাব’ শব্দের ধাতুমূল তথা) ‘রাহ্ব’ (الرهب) শব্দ ও তা থেকে নির্গত শব্দাবলি পবিত্র কুরআনে ত্রাস নয় বরং সাধারণ ভীতি-সঞ্চার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাতে একটি নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অর্থ মিশে থাকে। অন্যের বেলায় মানুষ শব্দটি ব্যবহার তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবার জন্য [ সূরা তাওবা : ৩৪; নাহল : ৫১; আম্বিয়া : ৯০; কাসাস : ৩২; হাদীদ : ২৭; হাশর : ১৩। ]। আর এ শব্দ কিন্তু ‘র‘ব’ (الرعب) শব্দ থেকে ভিন্ন অর্থ বহন করে। কেননা ‘র‘ব’ শব্দের অর্থ তীব্র ভীতি-সঞ্চার অর্থাৎ ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা[ . সূরা আলে-ইমরান : ১৫১; আনফাল : ১২; আহযাব : ২৬; হাশর : ২। ] । মানুষ এ শব্দটিকে ব্যবহার করে অন্যকে শায়েস্তা করা এবং তাদের ওপর জুলুম চালানোর জন্য। আবার এর কতক সংঘটিত হয় উদ্দেশ্যহীন, অনির্দিষ্ট ও সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে[ইবন মানযুর, আল-বুসতানী। ] ।

তবে এতদসত্ত্বেও ‘ইরহাব’ ও ইর‘আব’ শব্দ আরবী ভাষায় ধাতুগতভাবে শুধু মন্দ বা শুধু ভালোর জন্য ব্যবহৃত হয় না। এদুটি এমন মাধ্যম যা ভালো বা মন্দের পক্ষাবলম্বন করে না। উভয় শব্দ সত্য প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় প্রতিরোধ এবং নিপীড়িতের সাহায্যার্থে ব্যবহৃত হয়। তেমনি শব্দদুটিকে নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষের ওপর অত্যাচার, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ও অধিকার হরণ এবং তাদের ভূমি দখলের জন্যও ব্যবহৃত হয়।

তবে ‘উনুফ’‘ইরহাব’ শব্দের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ‘উনুফ’ অর্থ চিন্তা, মতবাদ, দর্শন কিংবা সাধারণ বা বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে সহিংস মাধ্যম বা উপায় অবলম্বন করা। যেমন : আঘাত, শারীরিক নির্যাতন বা অস্ত্র ব্যবহার। পক্ষান্তরে ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ শব্দদুটি এর চেয়ে ব্যাপক অর্থ বহন করে। কারণ তা হতে পারে সহিংস উপায়ে আবার হতে পারে অহিংস উপায়ে। যেমন :

আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভয় দেখানো। (তাকে এভাবে ইঙ্গিতে জবাই করার ভয় দেখানো।) অথবা কথার দ্বারা ভয় দেখানো। যেমন : অর্থনৈতিকভাবে বয়কটের হুমকি, কঠোরতা আরোপের হুমকি, না খেয়ে মারার হুমকি কিংবা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ইত্যাদি। ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ শব্দদুটি ভেটোর ক্ষমতা প্রয়োগ অথবা জালেমের নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করে। অসত্য অভিযোগ প্রচারের মাধ্যমেও ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ সংঘটিত হতে পারে। যেমন : টার্গেট গোষ্ঠীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বা তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে অপপ্রচার ও প্রচলিত মিডিয়া যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করা।

এই ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ কখনো হামলার শিকার ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক হত্যা করে না। বরং তাকে দীর্ঘ শাস্তি ও ধারাবাহিক নির্যাতন করে ধুঁকিয়ে ধুঁকিয়ে মারে। অর্থাৎ এ দুটি কখনো তৎক্ষণাৎ না মেরে ধীরে ধীরে মৃত্যু ডেকে আনে। এটি করা হয় তাকে গৃহহীন অবস্থা ও ক্ষুধার মুখে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে।

আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ব্যাপকার্থে যারা ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ করছে- যার মধ্যে রয়েছে সত্য প্রতিষ্ঠা করা ও নির্যাতন প্রতিরোধ করা অথবা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া ও অত্যাচারীকে আশ্রয় দেয়া- এরা প্রধানত তিন দলে বিভক্ত। যথা :

১. যারা নীতি-নৈতিকতার বাইরে গিয়ে শব্দদুটিকে ব্যবহার করে তাদের নির্যাতন বা অন্যায়কে বৈধতা দেবার জন্য। আখিরাতে বিশ্বাসী হোক বা না হোক- এরা মানবস্বভাব ও ঐশী শিক্ষার বিরোধী। যার মধ্যে ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শও রয়েছে।

২. যারা যথাসাধ্য প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে থেকে শব্দদুটি ব্যবহার করে আত্মরক্ষা কিংবা অক্ষম ও নিরপরাধ লোকদের থেকে জুলুম প্রতিরোধের উদ্দেশে। তারা আখিরাত বা শাশ্বত জীবনে বিশ্বাস রাখে না। তারা এসব করে আল্লাহ প্রদত্ত সুস্থ বিবেকের তাড়নায়।

৩. যারা শব্দদুটি ব্যবহার করে আত্মরক্ষা বা অক্ষম ও নিরপরাধ লোকদের ওপর জুলুম প্রতিরোধে যথাসম্ভব শরীয়ত ও প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে থেকে। তারা বিশ্বাস করে এজন্য তারা আখিরাত বা শাশ্বত জীবনে বিশাল প্রতিদান লাভ করবে। অতএব, তারা এসব করে সুস্থ বিবেক ও অনন্ত জীবনের বিশাল প্রতিদানের প্রত্যাশায়।

এ জন্যই দেখা যায় শেষোক্ত দলটি আত্মোৎসর্গ ও আত্ম নিবেদনে সবচে বেশি আগ্রহী ও সাহসী হয়। কেননা ,তার দৃষ্টিতে পার্থিব জীবন কেবল উসিলা বা বিধেয় মাত্র; মাকসাদ বা উদ্দেশ্য নয়। সম্ভবত এটিই মানুষকে নিজেদের সম্মানিত স্থান, নিজেদের মাতৃভূমি ও নিপীড়িত স্বজনদের রক্ষায় প্রাণোৎসর্গমূলক জিহাদী কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।

সাধারণভাবে আত্মঘাতমূলক তৎপরতার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের আইন ব্যাখ্যাকারী তথা ফিকহবিদদের মতভিন্নতা হেতু বিভিন্ন হয়। তাদের অনেকে কাজটিকে বৈধ বলেন এবং এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধও করেন। যতক্ষণ তা হয় আত্মরক্ষার্থে এবং অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর সীমালঙ্ঘনের ইচ্ছে ছাড়া। উপরন্তু তা নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধেও পরিচালিত না হয়, যাদের ওপর ইসলাম যুদ্ধক্ষেত্রে পর্যন্ত হামলার অনুমতি দেয় না। যেমন : নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও নিরস্ত্র ব্যক্তি। অনুরূপভাবে সব রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই মানবরচিত আইন সেনাদেরকে নিজের দৃষ্টিতে বৈধ যুদ্ধক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিতে এমনকি জীবন উৎসর্গ করতে পর্যন্ত উৎসাহিত করে। পক্ষান্তরে অনেক শরীয়তবিদ কাজটিকে আত্মহত্যার সঙ্গে তুলনা করে হারাম বলে অভিহিত করেন। তাদের মতে, জীবনের ঝুঁকি নেয়া ভিন্ন জিনিস। কারণ সেখানে জীবন রক্ষার সম্ভাবনাই প্রবল। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঝুঁকি গ্রহণকারীর মৃত্যুর কোনো অভিপ্রায়ই থাকে না।

আসমানী রিসালত বা ঐশী বার্তাপ্রাপ্ত ধর্ম পালনকারী ব্যক্তিমাত্রেই জানেন, দুনিয়ার এ জীবন মূলত একটি পরীক্ষাতুল্য। এর মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনে পুরস্কারযোগ্য সৎকর্মশীল এবং অনন্ত জীবনে তিরস্কারযোগ্য অসৎ ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য রচনা করা হয়। আর সত্যপন্থী ও মিথ্যাপন্থীর সংঘাত এবং নিপীড়ক ও নিপীড়িতের দ্বন্দ্ব এ পরীক্ষার একটি অংশ মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ (40)

 

‘আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধস্ত হয়ে যেত খৃস্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়।’[হজ : ৪০।]

 

‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ কখনো সংঘটনের ইচ্ছা ছাড়া সংঘটিত হতে পারে। ভুলক্রমেও হতে পারে কখনো। তবে এ ব্যাপারে তাকে সতর্ক করার পরও যদি সে এমন কাজ থেকে নিবৃত না হয়, যা ‘ইরহাব’ বা ‘ইর‘আব’-এর কারণ হয়, তখন তা ইচ্ছাকৃত ‘ইরহাব’ বা ‘ইর‘আব’ বলেই গণ্য হবে।

ইসলাম যেহেতু মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপক শান্তি কিংবা অন্তত নানা ধর্মের মানুষের মধ্যে শুধু দুনিয়ার শান্তির প্রতি আহ্বান জানায়। তাই এ ধর্ম অন্যের ওপর অত্যাচার বা সীমালঙ্ঘনমূলক ‘ইরহাব’‘ইর‘আব’ সংঘটনকে কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করে। তীব্রভাবে একে প্রত্যাখান করে এবং সীমালঙ্ঘন বা উৎপীড়নমূলক ‘ইরহাব’ ‘ইর‘আব’ এর জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।

হ্যা, ইসলাম এতদুভয়ের অনুমতি দেয় ঠিক; তবে তা শাস্তিকে অপরাধী পর্যন্ত সীমিত রাখা এবং অনুমোদিত ক্ষেত্র অতিক্রম না করার শর্তে। অনুমোদিত ক্ষেত্র হলো, আত্মরক্ষা, শত্রু দমন ও নির্যাতিতের সাহায্যের জন্য। বিশেষত জুলুম প্রতিরোধের কোনো ক্ষমতাই সেসব দুর্বল ও অক্ষম ব্যক্তির নেই। একেই ইসলামে ‘জিহাদ’[যিনিই আরবী ‘জিহাদ’ শব্দ ও এর ধাতুমূল নিয়ে চিন্তা করবেন, দেখবেন তাতে পূর্বে সংঘটিত কোনো কিছুর প্রতিরোধ অর্থ লেপ্টে আছে। কোনো হামলার সূচনার অর্থ নেই তাতে। যেমন দেখতে পারেন, ইবনুল কায়্যিম : ৩/৫-৯।] অথবা ‘কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ’ বলা হয়। যার উদ্দেশ্য কেবল নিরস্ত্র, অক্ষম ও দুর্বলদের থেকে জুলুম তুলে দেয়া। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا (75)

 

‘আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে’ যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’[নিসা : ৭৫।]

 

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِنِّى حَرَّمْتُ عَلَى نَفْسِى الظُّلْمَ وَعَلَى عِبَادِى فَلاَ تَظَالَمُوا.

 

‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও একে হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’[মুসলিম : ৬৭৪০।]

 

এ কারণেই মুসলমানদের ক্ষেত্রে এমন বিচিত্র নয় যে তারা তাদের প্রজা সাধারণ (যিম্মী) বা সংখ্যালঘুদের বাঁচাতেও জিহাদ করছে।[ইবন কুদামা মুকাদ্দেসী; ইবন তাইমিয়া হাররানী, আশ-শিরাজী; আল-হানাফী।] এককথায়, কারও ওপর জুলুম চালানোর জন্য নয়; ইসলামে ‘জিহাদ’ নামক বিধান রাখা হয়েছে বৈধ প্রতিরোধের জন্য। আর নির্যাতন প্রতিরোধের পদক্ষেপকে গণতান্ত্রিক ও অন্যান্য দেশের মানব রচিত সকল ব্যবস্থাই সমর্থন করে। এ উদ্দেশ্যেই তো সকল রাষ্ট্র শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করে। নিজেকে সুসজ্জিত করে বিধ্বংসী সব অস্ত্র দিয়ে।

আত্মরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক ভীতিপ্রদর্শনের মধ্যে পার্থক্য করবো কিভাবে
ইতোমধ্যে আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে, ভীতিপ্রদর্শন ও ভয় দেখানো শব্দটিকে সন্ত্রাসী (জালেম) ও সন্ত্রাসের শিকার (মাজলুম) উভয়েই ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে আমরা এদুয়ের মধ্যে জালেম ও মজলুমকে পার্থক্য করবো কিভাবে?

আত্মরক্ষার্থে ভীতিপ্রদর্শন আর সন্ত্রাসমূলক ভীতিপ্রদর্শনের মধ্যে মোটাদাগে পার্থক্য এই :

অন্যের বিরুদ্ধে কে প্রথমে ত্রাস বা সন্ত্রাসের সূচনা করেছে? যে সূচনা করেছে সে চর্চা করছে আক্রমণাত্মক ভীতিপ্রদর্শন আর যিনি প্রতিরোধ করছেন তিনি হলেন আত্মরক্ষাকারী। একইভাবে যিনি জালেমকে বস্তুগত বা নৈতিকভাবে সমর্থন করবেন তিনি আক্রমণাত্মক ভীতিপ্রদর্শনকারীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন। পক্ষান্তরে যিনি মজলুমকে সাহায্য করবেন তিনি আত্মরক্ষাকারী বলে গণ্য হবেন।
এটা ঠিক সচরাচর সহজে সূচনাকারী শনাক্ত করা যায় না। কারণ, জালেম পক্ষের গরিমা ও অহঙ্কার বেশি হয়। নিপীড়কের শক্তি হয় পর্বতপ্রমাণ। এমনকি মজলুমের চেয়ে জালেমের প্রমাণও হয় দৃঢ়তর। তথাপি বিষয়টি অন্যভাবে খোলাসা করা সম্ভব।
তবে সূচনাকারী শনাক্ত করা মুশকিল হলে অন্যভাবে তা চি‎হ্নিত করা যায়। যেমন আমরা উভয় পক্ষের মধ্যে মিমাংসার চেষ্টা করে দেখবো। যে পক্ষ ইনসাফভিত্তিক সালিশের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে সে-ই জালেম, হোক সে মুসলিম। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ (9)

 

‘আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের ওপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন।’[সূরা আল-হুযরাত, আয়াত : ০৯।]

 

সন্ত্রাস ও আগ্রাসী হামলা কখনো ভিন্ন রূপ ধারণ করে। তা হলো, অভিযোগ প্রমাণ না করেই কোনো মানুষকে শাস্তি দেয়া। কিংবা কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ওপর নির্ভর করে একটি জাতিকে বা পুরো মানব সমাজকে শাস্তি দেয়া। এ কাজ ইসলাম কিছুতেই সমর্থন করে না। শাস্তি দিলে তা অবশ্যই অনুমোদিত সীমা অতিক্রম না করতে হবে। অভিযোগ প্রমাণের পরও শাস্তি থাকতে হবে যুক্তিগ্রাহ্য সীমারেখার ভেতর। পরন্তু শাস্তির প্রকৃতিও হওয়া চাই অভিন্ন। অত্যাচারী বা জালেমের ভিন্নতায় তা যেন ভিন্ন ভিন্ন না হয়। অতএব যালেম দুর্বল হলে বা মিত্র না হলে তার শাস্তি কঠোর হবে না। তেমনি যালেম শক্তিধর, মিত্র বা তার কাছে কোনো স্বার্থ থাকলে তার শাস্তি লঘু করা হবে না। সর্বদা শাস্তি হবে ইনসাফের আলোয় উদ্ভাসিত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বাবস্থায় ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآَنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ (8)

 

‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’[সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৮।]

 

তবে ইসলামের এসব সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকার পরও মুসলিম নামধারী অনেকে ইসলামের মহান আদর্শকে উপেক্ষা করে। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অমান্য করে তারা সন্ত্রাস ও আগ্রাসনের পথ বেছে নেয়। এটা স্বাভাবিক যে প্রতিটি রাষ্ট্রই তার নাগরিকদের সঠিক আচরণ শিক্ষা দেয়। তারপরও তো প্রতিটি দেশেই অপরাধীতে পূর্ণ অনেক কয়েদখানা থাকে। তাই বলে কি আমরা বলবো যে অমুক জাতি পুরোটাই অপরাধী? কিংবা অমুক জাতি তার সদস্যদের অপরাধ শিক্ষা দেয়? আমেরিকার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৫টি অন্যায় হামলা বা সন্ত্রাস সংঘটিত হয়েছে। এর অধিকাংশ সংঘটিত হয়েছে খ্রিস্টান দ্বারা, তারপর ইহুদিদের দ্বারা। তাই বলে কি আমরা বলবো সকল খ্রিস্টান বা সব ইহুদিই সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী? অবশ্যই না।

অতএব আজ যারা ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের সম্পর্ক আবিষ্কার করতে চান, কুরআনের ভেতর অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে মানবাধিকার পরিপন্থী কথা তালাশ করে হয়রান হন, তারা হয়তো অমুসলিমদের প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে কিংবা ইসলাম বিরুদ্ধ শক্তির প্রভাবে এমনটি করে থাকেন। ইদানীং মুসলিম নামধারী অনেককেও দেখা যায় ইসলাম-আরাতীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাতে। তাদের সুরে কথা বলতে। বরং ইসলামের অনিষ্ট চিন্তায় অমুসলিমদের চেয়ে এসব মুসলিম নামধারীরাই একধাপ এগিয়ে। তাদের জন্য থাকছে আমাদের বুকভরা ভালোবাসা, একরাশ করুণা আর অনন্ত শুভ কামনা। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এবং সকল মুসলিমকে হেদায়াত দিন। সবাইকে ইসলাম বিরোধী শক্তির অপ্রচারের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার তাওফীক দিন। আমীন।

কৃতজ্ঞতা-স্বীকার : ড. সাঈদ ইসমাঈল চীনী, তাসাউলাত জাদালিয়্যাহ হাওলাল ইসলাম ও তালীকাত।

বই –ডাঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগ ও অপপ্রচারের জবাব

$
0
0
ডাঃ জাকির নায়েকের সমালোচনার জবাবে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম লেখা এক প্রমাণ্য গ্রন্থ

 

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ ডঃ জাকির নায়েক মুসলিম বিশ্বের একজন প্রখ্যাত দায়ী। বিশেষ করে যখন আধুনিক শিক্ষিত নাস্তিক-মুরতাদ ও বিধর্মী আলেমগনগণ ইসলামের বিরুদ্ধে নানান প্রশ্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দ্বার করিয়েছিল, সেই মুহুর্তে প্রয়োজন ছিল তাদের মতই শিক্ষায় শিক্ষিত একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি।

এতোদিন ডাঃ জাকির নায়েক শুধু আলোচনার বিষয় থাকলেও এখন আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনার বিষয়ও বটে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের অসত্য এবং ভিত্তিহীন সমালোচনা করা হচ্ছে। মুসলিম উম্মাহর এই করুন সময়ে আমাদের কি করনীয় এবং ডাঃ জাকির নায়েকের সমালোচনার জবাবে এই প্রথম বই “ডাঃ জাকির নায়েক এবং আমরা” বইটি প্রকাশ করা হল। শত সহস্র ফিতনা ফাসাদের সময়ে যদি কেউ যদি সত্যের ওপর থাকেন, সত্য কথা বলেন তাহলে তো তাঁর বিরোধিতা হবেই। তিনি খ্রিস্টান, হিন্দু ধর্মের  ভুল প্রমান করে দিয়ে উগ্র হিন্দু ও খ্রিস্টান ও মুসলিম নামধারী ধর্ম ব্যবসায়ীদের আক্রশের লক্ষ্য বস্তুতে পরিনত হয়েছেন।

এই বইটিতে যে সব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছেঃ

  • ডাঃ জাকির নায়েক ও তার কার্যক্রম
  • ডাঃ জাকির নায়েকের ব্যাপারে অভিযোগ সমূহের গতি-প্রকৃতি
  • সমালোচকদের অভিযোগ ও তার জবাব
  • উত্তর দেওয়া হয়েছে যারা বলেন “জাকির নায়েক আলেম নন।” “তিনি পড়াশোনা করেছেন খৃষ্টান মিশনারী ও হিন্দুদের কলেজে” “(কুরান হাদিস নিয়ে অধ্যয়ন করার জন্য একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন কিন্তু) তার কোন শিক্ষক নেই।” “পর্দার ব্যাপারে ডাঃ জাকির নায়েকের শিথীলতা। তার অনুষ্ঠানে পুরুষ-মহিলাদের অংশগ্রহণ।” “ডাঃ জাকির নায়েকের অপব্যখ্যাঃ প্যান্ট-শার্ট-টাই পড়া জায়েজ”
  • তিনি গায়রে মুকাল্লিদ (আহলে হাদীস) সম্প্রদায়ের লোক হিসাবে এ সম্প্রদায়ের মতাদর্শের প্রছার-প্রশারকে নিজের মানুফেক্ট নির্বাচন করেন
  • বিভ্রান্তি গুলো যেভাবে ছড়ায়।
  • ডাঃ জাকির নায়েক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

কোন দল মত এর পক্ষে থেকে নয়, বরং একজন সাধারণ মুসলিম হিসাবে চিন্তা করুন, যে বেক্তি কত সুন্দর ভাবে যুক্তি দিয়ে মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন, যে বেক্তি কোটি কোটি মুসলিম কে ইসলাম নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন,  বিধর্মীদের কাছে ইসলামদের ভুল ধারণা দূর করেছেন, কত  বিধর্মীদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়েছেন এবং যারা তার বিরুদ্ধে বলেছেন তারা কতটূকু ইসলামদের জন্য কাজ করেছেন? তাদের কি অধিকার আছে এই ফেতনা সৃষ্টি করার?  প্রশ্নের উত্তর আপনাদের উপর ছেরে দেওয়া হল।

ডাঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগ ও অপপ্রচারের জবাব – QA Server

ডাঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগ ও অপপ্রচারের জবাব – Mediafire

বিদেশীদেরকে হত্যার ব্যাপারে ফতোয়া

$
0
0

অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

8672492467_af5ee31f70

প্রশ্ন: সম্মানিত শাইখ, বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিদেশীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে সকল আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে- সেখানে কিছু মুসলিমও নিহত হচ্ছে, বিভিন্ন ভবন ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হচ্ছে আর যারা এগুলো করছে তারা এটিকে জিহাদ বলছে! এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

উত্তর: আল হামদু লিল্লাহ-সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।

♦ প্রথমত:

বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিদেশীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে সকল আক্রমণ পরিচালতি হচ্ছে এবং সেখানে কিছু মুসলিমও নিহত হচ্ছে-যেমনটি আপনি উল্লেখ করেছন- তা জিহাদ নয়। বরং তা সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা, ধ্বংসাত্মক এবং কুৎসিত কর্ম। এ কাজ মূর্খতা ও জ্ঞানকাণ্ড হীনতার পরিচায়ক। কেননা, এ সকল বিদেশীরা মুসলিম দেশে নিরাপত্তা প্রাপ্ত। তারা অনুমতি ছাড়া এ দেশে প্রবেশ করে নি। সুতরাং হত্যা তো দূরে থাক প্রহার, সম্পদ লুণ্ঠন সহ তাদের প্রতি কোন ধরণের অন্যায় আচরণ করার সুযোগ নাই। তাদের জান-মাল সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে।

যে ব্যক্তি তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে সে মারাত্মক ধ্বংসাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হবে। যেমনটি সহীহুল বুখারীতে প্রখ্যাত সাহাবী আমল ইবনুল আস রা. হতে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا

যে ব্যক্তি মুআহিদ তথা চুক্তিবদ্ধ ভাবে মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না (জান্নাতে যাওয়া তো দূরে থাক) অথচ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেজান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।”(সহীহুল বুখারী হা/৩১৬৬)

এই বিধান যিম্মী, মুআহিদ এবং মুস্তামিন সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। [1]

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারীতে বলেন, মুআহিদ বলতে এমন কাফিরকে বুঝায় যার সাথে মুসলিমদের সাথে চুক্তি আছে। চাই যিযিয়া (অমুসলিমদের উপর ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে অর্পিত কর) প্রদানের মাধ্যমে হোক কিংবা সরকারের সাথে যুদ্ধ বিরতির চুক্তির মাধ্যমে হোক বা সাধারণ কোন মুসলিমের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে হোক।.

“সাধারণ কোন মুসলিমের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে হোক।” এ কথার মাধ্যমে ইমাম ইবনে হাজার রহ. ফকিহদের নিকট সুপরিচিত একটি মূলনীতির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আর তা হল, “কেবল শাসক বা সুলতানের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেয়া শর্ত নয় বরং যে কোন সাধারণ মুসলিমের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা দেয়া জায়েজ রয়েছে।”

এই বিদেশীরা মুসলিম দেশে প্রবেশ করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কিংবা কোন মুসলিমের নিরাপত্তার মাধ্যমে। সুতরাং তাদের ক্ষতি সাধন করা কারও জন্য বৈধ নয় যদিও তারা মুহারিবীন তথা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত কাফির হয়।

ইমাম বুখারী (হা/৩১৭১) ও মুসলিম (হা/৩৩৬) রহ. উম্মে হানী বিনতে আবী তালিব রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট গেলাম। গিয়ে দেখলাম, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা রা. তাঁকে পর্দা দিয়ে ঘিরে রেখেছেন।

তারপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দিলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন: কে আপনি?

আমি বললাম: উম্মে হানী বিনতে আবী তালিব।

তিনি বললেন: উম্মে হানী, আপনাকে স্বাগতম।

অত:পর তিনি গোসল শেষ করে একটি মাত্র কাপড়ে শরীরে পেঁচিয়ে আট রাকআত নামায আদায় করলেন।

অত:পর আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল,আমার মায়ের বেটা (ভাই) আলী বলছে, সে হুবায়রার উমুক ছেলের সাথে লড়াই করবে অথচ আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি।

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:

قَدْ أَجَرْنَا مَنْ أَجَرْتِ يَا أُمَّ هَانِئٍ

“হে উম্মে হানী,আপনি যাকে আশ্রয় দিয়েছেন আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম।”

উম্মে হানী রা. বলেন, তখন ছিল অপরাহ্ণ।

ইবনে কুদামা রহ. বলেন,“আমাদের মধ্য থেকে যে কোন পুরুষ, নারী অথবা দাস কাফেরদেরকে নিরাপত্তা দিলে তা প্রযোজ্য হবে।”

মোটকথা,কোন যুদ্ধরত কাফিরকেও যদি নিরাপত্তা দেয়া হয় তবে তাকে হত্যা করা,তার সম্পদ হরণ করা বা তার কোন ধরণের ক্ষতি সাধন করা হারাম। প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন যে কোন মুসলিম স্বেচ্ছায় এই নিরাপত্তা প্রদান করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে- চাই সে পুরুষ হোক বা নারী হোক,স্বাধীন হোক বা দাস হোক।

ইমাম সুফিয়ান সাওরী,ইমাম আওযায়ী,ইমাম শাফেয়ী, ইমাম ইসহাক, ইমাম ইবনুল কাসেম সহ অধিকাংশ বিদ্বানের এটাই অভিমত। (আল মুগনী ৯/১৯৫)

♦ দ্বিতীয়:

কোন মুস্তামিন (সাময়িকভাবে নিরাপত্তা প্রাপ্ত অমুসলিম) অথবা মুআহিদ (যুদ্ধ বিরতিতে চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম) যদি চুক্তি ভঙ্গ করে তবে কোন সাধারণ মুসলিমের জন্য বৈধ নয়, তাকে হত্যা করা। কারণ, এতে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলুলকে হত্যা করা থেকে বিরত থেকেছেন এই ভয়ে যে, কাফিররা বলাবলি করবে, মুহাম্মদ তার সঙ্গী-সাথীদেরকে হত্যা করছে!!

তদ্রূপ কেউ যদি মুরতাদ তথা ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় বা কেউ যদি মৃত্যুদণ্ড যোগ্য অপরাধ করে তবে সাধারণ কোন মুসলিমের জন্য তাকে হত্যা করা বৈধ নয়। (অর্থাৎ কোন সাধারণ মুসলিমের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগের অধিকার নেই। এটি সম্পূর্ণ মুসলিম সরকার ও আদালতের বিষয়)।

কেননা, এ ধরণের হত্যাকাণ্ড মুসলিমদের জন্য বিরাট সমস্যা ও বিপদ ডেকে নিয়ে আসে। দাওয়াতি কাজকে বাধাগ্রস্ত করে এবং দাঈদেরকে মারাত্মক চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। সেই সাথে সুযোগ সন্ধানী স্বার্থান্বেষী মহল এ সব কর্মকাণ্ডকে ইসলাম ও মুসলিমদের বদনাম করার কাজে ব্যবহার করে।

♦ তৃতীয়:

নিরপরাধ মুসলিমদেরকে হত্যা করা একটি মারাত্মক অপরাধ এবং বিরাট গুনাহের কাজ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

زَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ

“একজন (নিরপরাধ) মুসলিম হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার চেয়ে আল্লাহর নিকট সারা পৃথিবী ধ্বংস হওয়া সহজ বিষয়।” (তিরমিযী, হাদীস নং ১২৯৫, নাসাঈ, হাদীস নং ৩৯৮৭ ও ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৬১৯ –আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত)

সুতরাং এদের কার্যক্রম অন্ধকারাচ্ছন্ন। এর মূল কারণ হল, ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা, অসহিষ্ণুতাএবং বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন না হওয়া। অথচ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেযে কোন সমস্যা ও সংকটে বিজ্ঞ আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করার বা তাদের শরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বড় বড় নির্ভরযোগ্য আলেমগণ এ সকল কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সর্তক করেছেন। কারণ, একদিকে এগুলো মূলতই এগুলো হারাম কাজ। অন্য দিকে এসব অপকর্মের ফলে দেশে বিরাট বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং মুসলিমদের উপর নেমে আসে নানা সমস্যা।

সুতরাং সকলের জন্য অবশ্য কর্তব্য হল, মহান আল্লাহকে ভয় করা আর মুসলিমের দেয়া নিরাপত্তা লঙ্ঘন, অন্যায় রক্তপাত এবং মুসলিমদের উপর বিপদ-বিশৃঙ্খলা টেনে আনার ব্যাপারে কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করা।

আল্লাহ সকলকে তাঁর পছন্দনীয় ও সন্তোষ জনক কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।

♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥

বিদেশীদেরকে হত্যার ব্যাপারে ফতোয়া (ফতোয়া নং ১৩২৫২০)

উৎস: শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ কৃর্তক পরিচালিত islamqa.info

অনুবাদক আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব


টিকা:
[1]   ক. যিম্মী: (কর প্রদানের শর্তে মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিম) অর্থাৎ এমন অমুসলিম যার সাথে এ মর্মে চুক্তি রয়েছে যে, মুসলিম দেশে নিরাপত্তার সাথে বসবাস করবে কিন্তু এর বিনিময়ে সে মুসলিম সরকারকে যিযিয়া (কর) প্রদান করবে।

খ. মুআহিদ: (যুদ্ধ বিরতির শর্তে মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিম) অর্থাৎ এমন অমুসলিম যার সাথে এ মর্মে চুক্তি রয়েছে যে, সে মুসলিম দেশে বসবার করবে কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না; মুসলিমগণও তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না।

গ. মুস্তামিন: (সাময়িকভাবে নিরাপত্তার লাভ করে মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিম) অর্থাৎ এমন অমুসলিম যার সাথে কর প্রদান বা যুদ্ধ বিরতির চুক্তি নেই কিন্তু সে বিশেষ প্রয়োজনে মুসলিম দেশে প্রবেশ করেছে। যেমন, ব্যবসা,চিকিৎসা,কূটনৈতিক সম্পর্ক কিংবা ইসলাম সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে ইত্যাদি।

(আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন কর্তৃক প্রদত্ব সঙ্গা অনুসারে)

উক্ত তিন শ্রেণীর অমুসলিমকে হত্যা করা, তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করা কিংবা কোন ধরণের ক্ষতি সাধানের চেষ্টা করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।-অনুবাদক

জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সামান্যতম প্রমাণও মেলেনি : ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা

$
0
0

ভারতীয় ইসলামিক স্কলার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে উসকানির অভিযোগের সামান্যতম প্রমাণও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মহারাষ্ট্র স্টেইট ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট (এসআইডি)। দেশে ফিরলে তাকে গ্রেফতার করা হবে না বা তাকে গ্রেফতারের কোন কারণ নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এসআইডি’র সিনিয়র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তের অংশ হিসেবে ভারতে এবং ভারতের বাইরে দেয়া জাকির নায়েকের শত শত বক্তৃতার ইউটিউব ভিডিওসহ অন্যান্য তথ্যাদি পরীক্ষা করেছে সংস্থাটি। যেখানে আইসিসের প্রসারে তার বক্তৃতা প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি উঠেছে, সেই হায়দ্রাবাদের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য উপাত্ত নিয়ে সেগুলিও যাচাই করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর্যবেক্ষণ উপর মহলকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

“ইংরেজীভাষী এই ধর্ম প্রচারকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগেরই প্রমাণ মেলেনি। শুধুমাত্র যে সম্ভাব্য বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যায়, সেটি হলো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া। কিন্তু সেটিও তার বক্তৃতা থেকে প্রমাণ করা সম্ভব না। আমরা তার গতিবিধি নজরে রেখেছি। যদি তিনি তার অবস্থান থেকে কখনও সরে যান, কেবলমাত্র তখনই তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা সম্ভব। আপাতত, আমরা শুধু পর্যবেক্ষণে রেখেছি তাকে।”

hindu_report

Original article link: http://www.thehindu.com/todays-paper/state-intelligence-dept-gives-clean-chit-to-naik-no-arrest-on-his-return-to-india/article8837594.ece

মুম্বাইয়ে জাকির নায়েকের সমর্থকরা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা একটি অভিযোগও সঠিক নয়। তার আইনজীবী মুবিন সোলকারের দাবি, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগেরই সত্যতা নেই। এমনকি ‘ঘৃণা ছড়ানো’র অভিযোগও পুরোপুরি মিথ্যা। সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দেয়ার অভিযোগের তো প্রশ্নই ওঠে না। – See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/135027#sthash.e0EztsrZ.dpuf


 

পিসটিভি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দূরদর্শিতার পরিচয় দিন
– আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
————————————–
বাংলাদেশের মন্ত্রী পরিষদ কর্তৃক Peace tv বন্ধের সিদ্ধান্তের নিউজ শুনে সচেতন মানুষ মাত্রই হতবাক হয়েছে। বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়েছেএর গুণমুগ্ধ দর্শকগণ!!
বাংলাদেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী এই টিভির নিয়মিত দর্শক। দেশের উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে শুরু করে নাপিতের দোকানেও এ টিভি চলতে দেখা গেছে।
প্রখর মেধাবী, ম্যারাথন বক্তা ও চৌকশ দাঈ ডাক্তার জাকির নাইকের চমৎকার উপমা, অখণ্ডনীয় যুক্তি আর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে অনর্গল রেফারেন্স সমৃদ্ধ বক্তৃতা মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনত। অসংখ্য মানুষ এই চ্যানেলের মাধ্যমে অন্যায়-অপকর্ম ছেড়ে সৎপথে এসেছে। অগণিত অন্ধকার পথের যাত্রী আলোর পথের সন্ধান পেয়েছে। অসংখ্য অমুসলিম এই চ্যানেলেরর মাধ্যমে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে।

বিশেষ করে পিস টিভির বাংলায় বাংলাভাষী দাঈদের কুরআন-সুন্নাহ ও সহীহ আকীদা নির্ভর বিভিন্ন লেকচার থেকে মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নাই।

সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী টিভি দর্শকগণ এটি দেখা থেকে বঞ্চিত হলেও ইন্টারনেট আর অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে কোন ক্রমেই মানুষকে সত্যের আওয়াজ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

সত্যানুসন্ধিৎসু মানুষ সত্যের পথটি খুঁজে নিবে- মোবাইল মেমরী, Peace Mobile, ইন্টারনেট ইত্যাদি অসংখ্য আধুনিক মিডিয়া থেকে। কোটি কোটি বাংলাদেশী বিদেশ থেকে পিস টিভি দেখছে..এগুলো বন্ধ করা তো আর সম্ভব নয়। তাহলে কেন এই ধরণের একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত?
এভাবে কি সরকার জঙ্গিবাদ দমন করতে পারবে?

বরং পিস টিভিকে কাজে লাগিয়েই সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সহায়তা নিতে পারত। কিন্তু তা না করে বরং এ ধরণের ভুল সিদ্ধান্তই হয়ত সন্ত্রাসী মনোভাবকে উসকিয়ে দিতে পারে। কেননা, মানুষের হৃদয়ের পঞ্জিভুত হতাশা ও ক্ষোভ সন্ত্রাস সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।
———————-
তাই আশা করব, সরকারের মান্যবর মন্ত্রী পরিষদ পিসটিভি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দূরদর্শিতার পরিচয় দিবেন।

আল্লাহ আমাদের দেশকে সকল ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে হেফাজত করুন। সর্বোপরি ইসলামী দাওয়াহ, দাঈ, ইসলাম ও মুসলমানদেরকে রক্ষা করুন সকল ষড়যন্ত্রের কবল থেকে। আমীন।

বইঃ হজ্জ সফরে সহজ গাইড –নতুন সংস্করণ ২০১৬

$
0
0

Hajj-Guide-Banglaসংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ হজ্জ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বুনিয়াদি স্তম্ভ। ইসলামের এই মহান ইবাদাতটি পালন করার সময় আমরা এর নিয়মনীতি অনুসরণ না করার ফলে বেশ কিছু বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। সেই সাথে এ সম্পর্কে ভালো কোন গাইড না থাকায় আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বিড়ম্বনায় পড়ি। এছাড়া আমরা ভালোমতো না জানায় হাজ্জের কর্মগুলি সুন্দরভাবে করতে পারি না। কেউ কেউ এক্ষেত্রে অন্যে দেখে আমল করতে গিয়ে বিদআতে পর্যবসিত হন। হজ্জ করার সময় একটি আধুনিক, সমসাময়িক ও সহিহ হজ্জ গাইডের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই লেখক মো: মোশফিকুর রহমান এই বইটি লিখেছেন। যা হজ্জ সফরে প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট থাকা বাঞ্জনীয়। বাংলা ভাষায় ছবিসহ এবং এমন তথ্যপূর্ণ হাজ্জ গাইড এই প্রথম। আল্লাহ তাআলা লেখককে তার উত্তম প্রতিদান। দিক। বইটি প্রকাশ করেছে তাওহীদ প্রকাশনী। বইটি বিনামূল্যে বিতরণ করার জন্য। কেউ আগ্রহী হয়ে কোনরুপ পরিবর্তন না করে বইটি প্রচার করতে পারেন।HAJJ

বইটির অনন্য বৈশিষ্ট্য :

  • বইটিতে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক হাজ্জ, উমরাহ ও এর সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর বর্ণনা দেয়া রয়েছে।
  • হাজ্জের পূর্ব  প্রস্তুতি সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।
  • হাজ্জ যাত্রার প্রতিক্ষেত্রে বা প্রতিটি স্থানে কি করণীয়, বর্জনীয় উল্লেখ করা হয়েছে।
  • সেই সাথে বিভিন্ন জায়গায় প্রচলিত হাজীদের বিদআত সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • হাজ্জের প্রতিটি ধাপে করণীয় বুঝতে ছবিসহ বর্ণনা দেয়া রয়েছে।
  • বিভিন্ন প্রকার হজ্জে করণীয় এবং উমরাহর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
  • কোন দিবসে কি করণীয় তা তারিখ উল্লেখপূর্বক বর্ণনা রয়েছে।
  • মক্কা ও মদীনায় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের নাম, বর্ণনা ও ছবি দেয়া রয়েছে।
  • হজ্জ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, প্রয়োজনীয় আরবী শব্দ, বিভিন্ন বিমানবন্দরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে।
  • হাজ্জের পর করণীয় সম্পর্কে
  • বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয বেশ কিছু কুরআন ও হাদীসের দুআ উচ্চারণ ও অর্থসহ উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ আমাদের হাজ্জকে সূন্দরভাবে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দিন।

হজ্জ সফরে সহজ গাইড – QA Server

হজ্জ সফরে সহজ গাইড – Mediafire

সূত্রঃ waytojannah.com


বছরের শ্রেষ্ঠ ১০ দিনে করণীয় ১০ আমল

$
0
0

162

লেখক : আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

আল্লাহ তা‘আলা দয়ালু। তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে ভালোবাসেন। তিনি চান বান্দারা ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এ উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের জন্য বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন- যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আমরা পরীক্ষার দিনগুলোতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই সবচে ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য। তবে কেন আখেরাতের জন্য এসব পরীক্ষার দিনগুলোতেও সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করব না? এ দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী ও কল্যাণ বয়ে আনে। এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ মাসের এই প্রথম দশদিন। এ দিনগুলো এমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি তিনি সবিশেষ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন।


যে কারণে এই দশ দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন

. আল্লাহ তা‌আলা এর কসম করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আলা যখন কোনো কিছুর কসম করেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাই প্রমাণ করে। কারণ, মহা সত্তা শুধু মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন। আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন,
‘কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের।’ {সূরা আল-ফাজর, আয়াত : ১-২} আয়াতে ‘কসম দশ রাতের’ বলে যিলহজের দশকের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটিই সকল মুফাসসিরের মত। ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
এ মতটিই সঠিক।

২ এসবই সেই দিন আল্লাহ যাতে তাঁর জিকিরের প্রবর্তন করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আ বলেন, ‘যেন তারা নিজদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ {সূরা আল-হজ, আয়াত : ২৮} জমহূর উলামার মতে, আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে। এটিই ইবন উমর ও ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমার মত।

৩. রাসূলুল্লাহ দিনগুলোকে শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন : যিলহজের এই দিনগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

‘পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনগুলো হলো দশকের দিনসমূহ। অর্থাৎ যিলহজের (প্রথম) দশদিন। জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন নেই। হ্যা, কেবল সে-ই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।’ [মুসনাদ বাযযার : ১১২৮; মুসনাদ আবী ই‘আলা : ২০৯০]

৪. এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন : আরাফার দিন হলো বড় হজের দিন। এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নাজাতের দিন। যিলহজের এই দশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবে এ দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত। এ দিনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘আরাফা দিবসই হজ’। [তিরমিযী : ৮৯৩; নাসায়ী : ৩০১৬]

৫. এতে রয়েছে কুরবানীর দিন : কোনো কোনো আলিমের মতে কুরবানীর দিনটি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানীর দিন অতপর স্থিরতার দিন’। (অর্থাৎ কুরবানীর পরবর্তী দিন। কারণ, যেদিন মানুষ কুরবানী ইত্যাদির দায়িত্ব পালন শেষ করে সুস্থির হয়।) [নাসায়ী : ১০৫১২; ইবন খুযাইমা, সহীহ : ২৮৬৬]

৬. এ দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে :

হাফেয ইবন হাজর রহিমাহুল্লাহ তদীয় ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন,‘যিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ যা প্রতীয়মান হয় তা হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা : সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজ ইত্যাদি। অন্য কোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না।’ [ফাতহুল বারী : ২/৪৬০]

এই দশটি দিনের আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়

ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এমন কোনো দিন নেই যার আমল যিলহজ মাসের এই দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হল এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফেরত এলো না (তার কথা ভিন্ন) [বুখারী : ৯৬৯; আবূ দাউদ : ২৪৪০; তিরমিযী : ৭৫৭]

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’ [মুসনাদ আমহদ : ১৩২; বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪]

অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,যিলহজের (প্রথম) দশদিনের মতো আল্লাহর কাছে উত্তম কোনো দিন নেই। সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, হ্যা, কেবল সে-ই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।’ [সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/১৫; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৩]

এ হাদীসগুলোর মর্ম হল, বছরে যতগুলো মর্যাদাপূর্ণ দিন আছে তার মধ্যে এ দশ দিনের প্রতিটি দিনই সর্বোত্তম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনসমূহে নেক আমল করার জন্য তাঁর উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। তাঁর এ উৎসাহ প্রদান এ সময়টার ফযীলত প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনগুলোতে বেশি বেশি করে তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ওপরে ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ হয়েছে।

ইবন রজব রহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়, নেক আমলের মৌসুম হিসেবে যিলহজ মাসের প্রথম দশক হল সর্বোত্তম, এ দিবসগুলোয় সম্পাদিত নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাদীসের কোনো কোনো বর্ণনায় أَحَبُّ (‘আহাব্বু’তথা সর্বাধিক প্রিয়) শব্দ এসেছে আবার কোনো কোনো বর্ণনায় أَفْضَلُ (‘আফযালু’ তথা সর্বোত্তম) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অতএব এ সময়ে নেক আমল করা বছরের অন্য যে কোনো সময়ে নেক আমল করার থেকে বেশি মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ। এজন্য উম্মতের অগ্রবর্তী পুণ্যবান মুসলিমগণ এ সময়গুলোতে অধিকহারে ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। যেমন আবূ ছিমান নাহদী বলেন,

‘তাঁরা অর্থাৎ সালাফ তথা পূর্বসূরীগণ দিনটি দশককে অনেক বেশি মর্যাদাবান জ্ঞান করতেন : রমযানের শেষ দশক, যিলহজের প্রথম দশক এবং মুহাররমের প্রথম দশক।’

এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর ১০টি উপায়

প্রতিটি মুসলিমের উচিত ইবাদতের মৌসুমগুলোকে সুন্দর প্রস্তুতির মাধ্যমে স্বাগত জানানো। যিলহজ মাসকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি নিচের কাজগুলোর মধ্য দিয়ে : এ দশ দিন যে আমলগুলো বেশি বেশি করা উচিতঃ

১. এই দশটি দিন কাজে লাগাতে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা :

শুরুতেই যা করা সবার উচিত তা হল, এই দিনগুলোকে পুণ্যময় কাজ ও কথায় সুশোভিত করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি কোনো কাজের সংকল্প করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। তার জন্য সাহায্যকারী উপায় ও উপকরণ প্রস্তুত করে দেন। যে আল্লাহর সঙ্গে সত্যবাদিতা দেখায় আল্লাহ তাকে সততা ও সফলতায় ভূষিত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন। {সূরা আল-আ‘নকাবূত, আয়াত : ৬৯}

২. হজ ও উমরা সম্পাদন করা : হজ ও উমরা এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। যারা এ দিনগুলোতে হজ আদায়ের সুযোগ পেয়েছেন তারা যে অনেক ভাগ্যবান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ যাকে তাঁর নির্দেশিত এবং রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায় হজ বা উমরা করার তাওফীক দান করেন তার পুরস্কার শুধুই জান্নাত। কারণ, আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘এক উমরা থেকে আরেক উমরা এতদুভয়ের মাঝের গুনাহগুলোর কাফফারা এবং মাবরূর হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’[বুখারী : ১৭৭৩; মুসলিম : ৩৩৫৫]

আর মাবরূর হজ সেটি যা পরিপূর্ণভাবে সম্পাদিত হয় রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায়। যাতে কোনো রিয়া বা লোক দেখানো কিংবা সুনাম বা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর মানসিকতা নেই। নেই কোনো অশ্লীলতা বা পাপাচারের স্পর্শ। যাকে বেষ্টন করে থাকে নেক কাজ ও পুণ্যময় আমল।

. সিয়াম পালন করা : মুসলমানের জন্য উচিত হবে যিলহজ মাসের এই মুবারক দিনগুলোতে যত বেশি সম্ভব সিয়াম পালন করা। সাওম আল্লাহর অতি প্রিয় আমল। হাদীসে কুদসীতে সিয়ামকে আল্লাহ নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, সিয়াম ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য; শুধু সিয়াম ছাড়া। কারণ, তা আমার জন্য। তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ।’[বুখারী : ১৯০৪; মুসলিম : ২৭৬২]

সাওম যে এক বড় মর্যাদাসম্পন্ন ও আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল তা আমরা অনুধাবন করতে পারি আমরাএ হাদীস থেকে। তবে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিনের সাওমের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। আবূ কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,আরাফার দিনের সাওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। [মুসলিম : ১১৬৩]

এ হাদীসের ভিত্তিতে যিলহজের নয় তারিখ সাওম পালন করা সুন্নত। ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এসব দিনে সাওম পালন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব। কোনো কোনো দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের মাঝে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, যিলহজ মাসের সাত, আট ও নয় তারিখে সাওম পালন করা সুন্নত। কিন্তু সাওমের জন্য এ তিন দিনকে নির্দিষ্ট করার কোনো প্রমাণ বা ভিত্তি নেই। যিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখে যে কোনো দিন বা পূর্ণ নয় দিন সাওম পালন করা যেতে পারে।

. সালাত কায়েম করা : সালাত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, সম্মানীত ও মর্যাবান আমল। তাই এ দিনগুলোতে আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত ফরয সালাতগুলো জামাতে আদায় করতে। আরও চেষ্টা করা দরকার বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করতে। কারণ, নফল সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সবচে বেশি নৈকট্য হাসিল করে। আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই যে,আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা-সংকোচ করি না, যতটা দ্বিধা-সংকোচ করি মুমিন বান্দার প্রাণহরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি।’ [বুখারী : ৬৫০২]

৫. দান-সাদাকা করা : এ দিনগুলোতে যে আমলগুলো বেশি বেশি দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো সাদাকা। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সাদাকা দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণআমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করসে দিন আসার পূর্বেযে দিন থাকবে না কোনো বেচাকেনানা কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৫৪}

আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,কা সম্পদকে কমায় না, ক্ষমার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং কেউ আল্লাহর জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ তাকে উঁচু করেন।’ [মুসলিম : ৬৭৫৭]

৬. তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ পড়া : এসব দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয় যিকর-আযকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।[বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪]

তাকবীরের শব্দগুলো নিম্নরূপ : (আল্লাহু আকবারআল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।) উল্লেখ্য, বর্তমানে তাকবীর হয়ে পড়েছে একটি পরিত্যাক্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সুন্নত। আমাদের সকলের কর্তব্য এ সুন্নতের পুনর্জীবনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত ব্যাপক প্রচারণা চালানো। হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে,

‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতসমূহ থেকে একটি সুন্নত পুনর্জীবিত করল, যা আমার পর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তাকে সে পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে, যে পরিমাণ তার ওপর (সে সুন্নতের ওপর) আমল করা হয়েছে। এতে (আমলকারীদের) সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ [তিরমিযী : ৬৭৭]

যিলহজ মাসের সূচনা থেকে আইয়ামে তাশরীক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ তাকবীর পাঠ করা সকলের জন্য ব্যাপকভাবে মুস্তাহাব। তবে বিশেষভাবে আরাফা দিবসের ফজরের পর থেকে মিনার দিনগুলোর শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ যেদিন মিনায় পাথর নিক্ষেপ শেষ করবে সেদিন আসর পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের পর এ তাকবীর পাঠ করার জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ ও আলী রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে এ মতটি বর্ণিত। ইবন তাইমিয়া রহ. একে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত বলেছেন। উল্লেখ্য, যদি কোনো ব্যক্তি ইহরাম বাঁধে, তবে সে তালবিয়ার সাথে মাঝে মাঝে তকবীরও পাঠ করবে। হাদীস দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত। [ইবন তাইমিয়াহ, মজমু‘ ফাতাওয়া : ২৪/২২০]

৭. পশু কুরবানী করা : এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নবীকে কুরবানী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন ও কুরবানী করুন।’ {সূরা আল-কাউসার, আয়াত : ০২}

এই দশদিনের অন্যতম সেরা প্রিয় আমল হলো কুরবানী। কুরবানীর পশু জবাই ও গরিবদের মধ্যে এর গোশত বিতরণের মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভ হয়। এর দ্বারা গরিবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ পায় এবং তাদের কল্যাণ সাধন হয়।

৮. গুনাহ থেকে দূরত্ব অবলম্বন করা : সৎ কর্মের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়, গুনাহের কাজের মাধ্যমে তেমন আল্লাহ থেকে আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মানুষ তার নিজের করা অপরাধের কারণে কখনো আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমরা যদি অপরাধ মার্জনা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যাশী হই, তাহলে এ দিনগুলোতে এবং এর শিক্ষা কাজে লাগিয়ে বছরের অন্য দিনগুলোতে গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে। কেউ যখন জানতে পারেন কী বড় অর্জনই না তার জন্য অপেক্ষা করছে, তার জন্য কিন্তু যে কোনো কষ্ট সহ্য করা সহজ হয়ে যায়।

৯. একনিষ্ঠ মনে তওবা : তওবার অর্থ প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে আসা। যে সব কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অপছন্দ করেন তা বর্জন করে যেসব কথা ও কাজ তিনি পছন্দ করেন তার দিকে ফিরে আসা। সাথে সাথে অতীতে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে অন্তর থেকে অনুতাপ ও অনুশোচনা ব্যক্ত করা। যিলহজের শুভাগমনের আগে সবচে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার এ তওবা তথা সকল গুনাহ থেকে ফিরে আসার প্রতি। স্বার্থক তওবা সেটি যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যথা- প্রথম. গুনাহটি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা। দ্বিতীয়. গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। এবং তৃতীয়. এই গুনাহটি ভবিষ্যতে না করার সংকল্প করা।

“বাস্তবেই এটি তওবার সুবর্ণ সময়। দয়াময় খোদা এ সময় বেশি বেশি তওবার তাওফীক দেন এবং অধিক পরিমাণে বান্দার তওবা কবুল করেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তবে যে তাওবা করেছিল, ঈমান এনেছিল এবং সৎকর্ম করেছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (কাসাস : ৬৭)

“তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ {যুমার : ৫৩}

অতএব হে মুসলিম ভাই ও বোন, আপনি এ দিনগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হোন। সময় চলে যাওয়ার পর আফসোস না করতে চাইলে যিলহজ মাস আসার আগেই এতে অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নিন।

অন্য সাধারণ আমল বেশি বেশি করা : 

উপরে যে নেক আমলগুলোর কথা উল্লেখ করা হলো এসব ছাড়াও কিছু নেক আমল আছে যেগুলো দিনগুলোতে বেশি করা যায়ঃ
যেমন : কুরআন তেলাওয়াত, জিকির, দু‘আ, দান-সাদাকা,
পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচার, আত্মীয়তার হক আদায় করা, মা-বাবার সখী-সখার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো,
সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, সালামের প্রচার ঘটানো,
মানুষকে খাবার খাওয়ানো, প্রতিবেশিদের প্রতি সদয় আচরণ করা, মেহমানকে সম্মান করা,
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, অন্যকে কষ্ট না দেওয়া,
অপর ভাইয়ের প্রয়োজন পুরা করা, অসাক্ষাতে অন্য ভাইয়ের জন্য দু‘আ করা,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া, পরিবার ও সন্তানদের জন্য অর্থ ব্যয় করা,

আরও যেসকল আমল করতে পারেন সেগুলো হল;
অধিনস্তদের প্রতি সদয় হওয়া,
ওয়াদা ও আমানত রক্ষা করা, হারাম জিনিস থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া,
সালাতগুলোর পরে আল্লাহর জিকির করা, সুন্দরভাবে অযূ করা, আযান ও ইকামতের মাঝখানে দু‘আ করা,
জুমাবারে সূরাতুল কাহফ পড়া, মসজিদে গমন করা, সুন্নত সালাতগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আদায় করা,
ঈদগাহে গিয়ে ঈদুল আযহার সালাত আদায় করা, হালাল উপার্জন করা,
মুসলিম ভাইদের আনন্দ দেওয়া, দুর্বলদের প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া, কৃপণতা পরিহার করা,
ভালো কাজে পথ দেখানো, ছেলে-মেয়েদের ‌সুশিক্ষা দেওয়া, কল্যাণকাজে মানুষকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি।

এসবের প্রতিটিই ঈমান ও আল্লাহর মুহাব্বত বৃদ্ধি করে ফলে আল্লাহও তাকে বেশি ভালোবাসেন। এসবই একজন মুমিনের চরিত্র মাধুরীর অংশ। এসবের মাধ্যমে একজন মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। আল্লাহ এসবের মাধ্যমে দান করেন আত্মিক প্রশান্তি- প্রতিটি আল্লাহ-ভোলা মানুষই যার শূন্যতায় ভোগে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সেসব ব্যক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন যারা এই সুবর্ণ সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করে। আমীন।

——————————————————————–

সূত্র : IslamHouse.Com

কোরবানি : ১৫টি অতি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য ও আহকাম

$
0
0

197

কোরবানির দিন ও কোরবানির দিনের ফজিলত

(১) এ দিনের একটি নাম হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। যে দিনে হাজীগণ তাদের পশু জবেহ করে হজকে পূর্ণ করেন। হাদিসে এসেছে : ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোন দিন? সাহাবাগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কোরবানির দিন। রাসূলে কারীম স. বললেন : এটা হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। [১]

(২) কোরবানির দিনটি হল বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম স. বলেছেন : আল্লাহর নিকট দিবস সমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন। [২]

 কোরবানির দিনের করণীয়

  • ঈদের সালাত আদায় করা,
  • এর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার,
  • পরিচ্ছন্নতা অর্জন,
  • সুন্দর পোশাক পরিধান করা।
  • তাকবীর পাঠ করা।
  • কোরবানির পশু জবেহ করা ও তার গোশত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা।
  • এ সকল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও সন্তুষ্টি অন্বেষণের চেষ্টা করা।
  • এ দিনটাকে শুধু খেলা-ধুলা, বিনোদন ও পাপাচারের দিনে পরিণত করা কোন ভাবেই ঠিক নয়।

(৩) কোরবানির দিনটি হল ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন। কেননা এ দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে সালাত ও কোরবানি একত্র হয়। যা ঈদুল ফিতরের সালাত ও সদকাতুল ফিতরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে কাওসার দান করেছেন। এর শুকরিয়া আদায়ে তিনি তাকে এ দিনে কোরবানি ও সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। [৩]

 . কোরবানি

 পশু উৎসর্গ করা হবে এক আল্লাহর এবাদতের উদ্দেশ্যে যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার এবাদত করার জন্য। যেমন তিনি বলেন : ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার এবাদত করবে।’[৪]আল্লাহ তাআলা তার এবাদতের জন্য মানব জাতিকে সৃষ্টি করলেন।

এবাদত বলে,—যে সকল কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন; হোক সে কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে।[৫]আর এ এবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা। এ কাজটি তিনি শুধু তার উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন :—

 ‘বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ [৬]

 ইবনে কাসীর রহ. বলেন : এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিয়েছেন যে সকল মুশরিক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবেহ করে তাদের যেন জানিয়ে দেয়া হয় আমরা তাদের বিরোধী। সালাত, কোরবানি শুধু তার নামেই হবে যার কোন শরিক নাই। এ কথাই আল্লাহ তাআলা সূরা কাওসারে বলেছেন : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [৭]

 অর্থাৎ তোমার সালাত ও কোরবানি তারই জন্য আদায় কর। কেননা মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশে প্রার্থনা করে ও পশু জবেহ করে। আর সকল কাজে এখলাস অবলম্বন করতে হবে। এখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে।

 ২.  যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করবে তার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা

আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি আলী ইবনে আবি তালেবের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল :‘নবী কারীম স. গোপনে আপনাকে কি বলেছিলেন ?’ বর্ণনাকারী বলেন : আলী রা. এ কথা শুনে রেগে গেলেন এবং বললেন : ‘নবী কারীম স. মানুষের কাছে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন,এরপর লোকটি বলল : ‘হে আমিরুল মোমিনীন ! সে চারটি কথা কি ? তিনি বললেন :

  • ‘১. যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন।
  • ২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু জবেহ করে আল্লাহ তার উপর লা’নত করেন।
  • ৩. ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ লা’নত করেন যে ব্যক্তি কোন বেদআতীকে প্রশ্রয় দেয়।
  • ৪. যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লা’নত করেন। [৮]

.  এ কাজগুলো এমন, যে ব্যক্তি তা করল সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কুফরির সীমানায় প্রবেশ করল।

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নবভী রহ. বলেন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করার অর্থ এমন, যেমন কোন ব্যক্তি প্রতিমার নামে জবেহ করল অথবা কোন নবীর নামে জবেহ করল বা কাবার নামে জবেহ করল। এ ধরনের যত জবেহ হবে সব না-জায়েজ ও তা খাওয়া হারাম। জবেহকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম।

যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে:

‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকর মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে জবেহকৃত পশু আর শ্বাস রোধে মৃত জন্তু,শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু ; তবে যা তোমরা জবেহ করতে পেরেছ তা ব্যতীত, আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, এ সব হল পাপ-কার্য…। [৯] ইবনে কাসীর রহ. বলেছেন যা কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা যে হারাম এ ব্যাপারে মুসলিমদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত।

৪. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করে সে জাহান্নামে যাবে

সালমান রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে। অন্য এক ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে। এ কথা শুনার পর লোকেরা জিজ্ঞেস করল এটা কীভাবে হবে ? তিন বললেন : দু ব্যক্তি এক সম্প্রদায়ের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। সে সম্প্রদায়ের নিয়ম হল যে ব্যক্তি তাদের কাছ দিয়ে যাবে তাকে তাদের প্রতিমার উদ্দেশ্যে কিছু উৎসর্গ করতে হবে। সে সম্প্রদায়ের লোকেরা এ দুজনের একজনকে বলল : আমাদের এ প্রতিমার জন্য কিছু উৎসর্গ কর ! লোকটি উত্তর দিল আমার কাছে তো এমন কিছু নেই যা আমি এ প্রতিমার জন্য উৎসর্গ করতে পারি। তারা বলল একটি মাছি হলেও উৎসর্গ কর। সে একটি মাছি উৎসর্গ করল। তারা তাকে ছেড়ে দিল। ফলে সে জাহান্নামে যাবে।তারপর তারা দ্বিতীয় ব্যক্তিকে অনুরূপ কথা বলল। সে উত্তরে বলল আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কিছু উৎসর্গ করি না। তারা তাকে হত্যা করল। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করল। [১০]
বর্ণিত এ হাদিস থেকে আমারা কয়েকটি শিক্ষা লাভ করতে পারি

  • শিরক কত বড় মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবন করা যায়। যদি তা খুব সামান্য বিষয়েও হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ‘যে আল্লাহর সাথে শরিক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।’ [১১]
  •  যে লোকটি জাহান্নামে গেল সে কিন্তু উক্ত কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল না। কিন্তু সে মুশরিকদের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কাজটি করেছিল।
  •   যে লোকটি জাহান্নামে গেল সে মুসলিম ছিল, কিন্তু সামান্য বিষয়ে শিরক করার কারণে জাহান্নামে গেল।
  •  তাওহীদ ও এখলাসের ফজিলত কত বেশি তা অনুধাবন করা যায়।
  •   যে লোকটি জান্নাতে প্রবেশ করল সে তাওহীদের জন্য নির্যাতন সহ্য করল, নিহত হল তবু শিরকের সাথে আপোশ করল না।

 . কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন

কোরবানি বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করা। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা তিন প্রকার হতে পারে :

১. হাদী ২. কোরবানি ৩. আকীকাহ

তাই কোরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য জবেহ করা।

ইসলামি শরিয়তে এটি এবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কোরআন, হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত। কোরআন মজীদে যেমন এসেছে : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [১২]

‘বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ [১৩]

হাদিসে এসেছে : বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : যে ঈদের সালাতের পর কোরবানির পশু জবেহ করল তার কোরবানি পরিপূর্ণ হল ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল। [১৪]

আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আল্লাহর রাসূল স. নিজ হাতে দুটি সাদা কালো বর্ণের দুম্বা কোরবানি করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন।[১৫] তবে বোখারিতে ‘সাদা-কালো’ শব্দের পূর্বে‘শিংওয়ালা’ কথাটি উল্লেখ আছে

৬. কোরবানির বিধান

কোরবানির হুকুম কি ? ওয়াজিব না সুন্নত ? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে।

প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।

দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। [১৬]

যারা কোরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল :

  • (এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [১৭] আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।
  • (দুই) রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’[১৮]

যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।

  • (তিন) রাসূলে কারীম স. বলেছেন : হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া। [১৯]

 যারা কোরবানি সুন্নত বলেন তাদের দলিল :

(এক) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : ‘তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে।’ [২০]

এ হাদিসে রাসূল স.-এর ‘যে কোরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়।

(দুই) রাসূল স. তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয়।

শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। সারকথা হল যারা কোরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই।

 ৭. কোরবানির ফজিলত

(ক) কোরবানি দাতা নবী ইবরাহিম আ. ও মুহাম্মদ সা.-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।

(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :—

‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন ; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে।’ [২১]

(গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কোরবানির গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কোরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না।

 ৮. কোরবানির শর্তাবলি

(১) এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা। এ গুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম।’ যেমন এরশাদ হয়েছে :—

‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি ; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন,সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’[২২] হাদিসে এসেছে :—

‘তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার।’[২৩] আর আল্লাহর রাসূল সা. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোন জন্তু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে।

ইমাম মালিক রহ.-এর মতে কোরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম সা. এ ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে। উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কোরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদিসে এসেছে,‘আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ স.-এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি।’[২৪] গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া।

(২) শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের।

(৩) কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্র“টি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে :—

সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ স. আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন : চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না—অন্ধ ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু ; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত ; যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায়‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে। [২৫] আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কোরবানি আদায় হয় কিন্তু মাকরূহ হবে। এ সকল দোষত্র“টিযুক্ত পশু কোরবানি না করা ভাল। সে ত্র“টিগুলো হল শিং ভাংগা, কান কাটা, লেজ কাটা, ওলান কাটা,লিংগ কাটা ইত্যাদি।

(৪) যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না।

৯.  কোরবানির নিয়মাবলি | কোরবানির পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা

কোরবানির জন্য পশু পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য নিম্নোক্ত দুটো পদ্ধতির একটি নেয়া যেতে পারে।

(ক) মুখের উচ্চারণ দ্বারা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। এভাবে বলা যায় যে ‘এ পশুটি আমার কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল।’ তবে ভবিষ্যৎ বাচক শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট হবে না। যেমন বলা হল—‘আমি এ পশুটি কোরবানির জন্য রেখে দেব।’

(খ) কাজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা যায় যেমন কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করল অথবা কোরবানির নিয়তে জবেহ করল। যখন পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল তখন নিম্নোক্ত বিষয়াবলী কার্যকর হয়ে যাবে।

প্রথমত : এ পশু কোরবানি ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না, দান করা যাবে না, বিক্রি করা যাবে না। তবে কোরবানি ভালভাবে আদায় করার জন্য তার চেয়ে উত্তম পশু দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে।

দ্বিতীয়ত : যদি পশুর মালিক ইন্তেকাল করেন তাহলে তার ওয়ারিশদের দায়িত্ব হল এ কোরবানি বাস্তবায়ন করা।

তৃতীয়ত : এ পশুর থেকে কোন ধরনের উপকার ভোগ করা যাবে না। যেমন দুধ বিক্রি করতে পারবে না, কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারবে না, সওয়ারি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, পশম বিক্রি করা যাবে না। যদি পশম আলাদা করে তাবে তা সদকা করে দিতে হবে,বা নিজের কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবে, বিক্রি করে নয়।

চতুর্থত : কোরবানি দাতার অবহেলা বা অযতেœর কারণে যদি পশুটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে বা চুরি হয়ে যায় অথবা হারিয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য হবে অনুরূপ বা তার চেয়ে ভাল একটি পশু ক্রয় করা।

আর যদি অবহেলা বা অযতেœর কারণে দোষযুক্ত না হয়ে অন্য কারণে হয়, তাহলে দোষযুক্ত পশু কোরবানি করলে চলবে।

যদি পশুটি হারিয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায় আর কোরবানি দাতার উপর পূর্ব থেকেই কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে সে কোরবানির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। আর যদি পূর্ব থেকে ওয়াজিব ছিল না কিন্তু সে কোরবানির নিয়তে পশু কিনে ফেলেছে তাহলে চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে অথবা হারিয়ে গেলে তাকে আবার পশু কিনে কোরবানি করতে হবে।

১০ – কোরবানির ওয়াক্ত বা সময়

 

কোরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি এবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কোরবানি আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না। অবশ্য কাজা হিসেবে আদায় করলে অন্য কথা।

যারা ঈদের সালাত আদায় করবেন তাদের জন্য কোরবানির সময় শুরু হবে ঈদের সালাত আদায় করার পর থেকে। যদি ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে কোরবানির পশু জবেহ করা হয় তাহলে কোরবানি আদায় হবে না। যেমন হাদিসে এসেছে—

আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ স. খুতবাতে বলেছেন : এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অত:পর সালাত থেকে ফিরে আমরা কোরবানি করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে জবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কোরবানির কিছু আদায় হল না। [২৬]

 

সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে কোরবানি পশু জবেহ না করে সালাতের খুতবা দুটি শেষ হওয়ার পর জবেহ করা ভাল। কেননা রাসূলুল্লাহ স. এ রকম করেছেন। হাদিসে এসেছে:

সাহাবি জুনদাব ইবনে সুফিয়ান আল-বাজালী রা. বলেছেন : নবী কারীম স. কোরবানির দিন সালাত আদায় করলেন অত:পর খুতবা দিলেন তারপর পশু জবেহ করলেন। [২৭]

 

জুনদাব ইবনে সুফিয়ান বলেন, আমি কোরবানির দিন নবী কারীম সা.-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বে জবেহ করেছে সে যেন আবার অন্য স্থানে জবেহ করে। আর যে জবেহ করেনি সে যেন জবেহ করে। [২৮]

আর কোরবানির সময় শেষ হবে যিলহজ মাসের তেরো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে। অতএব কোরবানির পশু জবেহ করার সময় হল চার দিন। যিলহজ মাসের দশ, এগারো, বার ও তেরো তারিখ। এটাই উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।কারণ : এক. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

 

‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।’ [২৯]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি রহ. বলেন : ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: ‘এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কোরবানির দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’ [৩০]

অতএব এ দিনগুলো আল্লাহ তাআলা কোরবানির পশু জবেহ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন। দুই. রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :—

‘আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন জবেহ করা যায়।’ [৩১]

আইয়ামে তাশরীক বলতে কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে বুঝায়।

তিন. কোরবানির পরবর্তী তিন দিনে সওম পালন জায়েজ নয়। এ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে এ তিন দিনে কোরবানি করা যাবে।

চার. রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : ‘আইয়ামে তাশরীক হল খাওয়া, পান করা ও আল্লাহর জিকির করার দিন।’

এ দ্বারা বুঝে নিতে পারি যে, যে দিনগুলো আল্লাহ খাওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন সে দিনগুলোতে কোরবানির পশু জবেহ করা যেতে পারে।

পাঁচ. সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোরবানির পরবর্তী তিনদিন কোরবানির পশু জবেহ করা যায়।

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন : আলী ইবনে আবি তালেব রা. বলেছেন : ‘কোরবানির দিন হল ঈদুল আজহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’ অধিকাংশ ইমাম ও আলেমদের এটাই মত। যারা বলেন, কোরবানির দিন হল মোট তিন দিন; যিলহজ মাসের দশ, এগারো ও বার তারিখ। এবং বার তারিখের পর জবেহ করলে কোরবানি হবে না, তাদের কথার সমর্থনে কোন প্রমাণ নেই ও মুসলিমদের ঐক্যমত (ইজমা) প্রতিষ্ঠিত হয়নি। [৩২]

 

১১ – মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি

মূলত কোরবানির প্রচলন জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। যেমন আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ স. ও তার সাহাবাগণ নিজেদের পক্ষে কোরবানি করেছেন। অনেকের ধারণা কোরবানি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কোরবানি করা জায়েজ ও একটি সওয়াবের কাজ। কোরবানি একটি সদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কোরবানিও দেয়া যায়।

যেমন মৃত ব্যক্তির জন্য সদকার বিষয়ে হাদিসে এসেছেঃ

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত : এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল—হে রাসূল ! আমার মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন।কোন অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় তিনি কোন কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে ? তিনি উত্তর দিলেন : হ্যাঁ। [৩৩]

মৃত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সদকা ও কল্যাণমূলক কাজের যেমন যথেষ্ট প্রয়োজন ও তেমনি তাঁর জন্য উপকারী।

এমনিভাবে একাধিক মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব প্রেরণের উদ্দেশ্যে একটি কোরবানি করা জায়েজ আছে। অবশ্য যদি কোন কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য পূর্ণ একটি কোরবানি করতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তি নিজেকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরবানি করেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ভাল কাজ নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হয় তারপর অন্যান্য জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জন্য করা যেতে পারে। যেমন হাদিসে এসেছেঃ

আয়েশা রা. ও আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. যখন কোরবানি দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিংওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটি তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কোরবানি করলেন ; যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য কোরবানি করেছেন। [৩৪]

মৃত ব্যক্তি যদি তার সম্পদ থেকে কোরবানি করার অসিয়ত করে যান তবে তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।

 

১২ – অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি করা

যাকে ‘ভাগে কোরবানি দেয়া’ বলা হয়।

ভেড়া, দুম্বা, ছাগল দ্বারা এক ব্যক্তি একটা কোরবানি করতে পারবেন। আর উট, গরু, মহিষ দ্বারা সাত জনের নামে সাতটি কোরবানি করা যাবে। ইতিপূর্বে জাবের রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে।

অংশীদারি ভিত্তিতে কোরবানি করার দুটি পদ্ধতি হতে পারে :

(এক) সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার হওয়া। যেমন কয়েক জন মুসলিম মিলে একটি বকরি ক্রয় করল। অত:পর একজনকে ঐ বকরির মালিক বানিয়ে দিল। বকরির মালিক বকরিটি কোরবানি করল। যে কজন মিলে বকরি খরিদ করেছিল সকলে সওয়াবের অংশীদার হল।

(দুই) মালিকানার অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানি। দু জন বা ততোধিক ব্যক্তি একটি বকরি কিনে সকলেই মালিকানার অংশীদার হিসেবে কোরবানি করল। এ অবস্থায় কোরবানি শুদ্ধ হবে না। অবশ্য উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি জায়েজ আছে।

মনে রাখতে হবে কোরবানি হল একটি এবাদত ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়। তাই তা আদায় করতে হবে সময়,সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ করে। কোরবানির উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কোরবানির উদ্দেশ্য হল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা।

তাই, আমরা দেখলাম কীভাবে রাসূলুল্লাহ সা. গোশতের বকরি ও কোরবানির বকরির মাঝে পার্থক্য নির্দেশ করলেন। তিনি বললেন যা সালাতের পূর্বে জবেহ হল তা বকরির গোশত আর যা সালাতের পরে জবেহ হল তা কোরবানির গোশত।

১৩ – কোরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন

হাদিসে এসেছেঃ

উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার অন্য একটি বর্ণনায় আছে—‘সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় আছে ‘কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে।’ [৩৫]

কোরবানি দাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন : কোরবানি দাতা হজ করার জন্য যারা এহরাম অবস্থায় রয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন, তাদের সাথে একাত্মতা বজায় রাখতে পারেন।

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন : ‘কোরবানি দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কোরবানি করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি (ত্যাগ) করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ [৩৬] যদি কেউ যিলহজ মাসের প্রথম দিকে কোরবানি করার ইচ্ছা না করে বরং কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানির নিয়ত করল সে কি করবে? সে নিয়ত করার পর থেকে কোরবানির পশু জবেহ পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে।

১৪ – কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়মাবলি

কোরবানি দাতা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করবেন, যদি তিনি ভালভাবে জবেহ করতে পারেন। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. নিজে জবেহ করেছেন। আর জবেহ করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম। তাই প্রত্যেকের নিজের কোরবানি নিজে জবেহ করার চেষ্টা করা উচিত।

ইমাম বোখারি রহ. বলেছেন : ‘সাহাবি আবু মুসা আশআরী রা. নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কোরবানির পশু জবেহ করেন।’ [৩৭] তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় মেয়েরা কোরবানির পশু জবেহ করতে পারেন। তবে কোরবানি পশু জবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েজ আছে। কেননা সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সা. তেষট্টিটি কোরবানির পশু নিজ হাতে জবেহ করে বাকিগুলো জবেহ করার দায়িত্ব আলী রা.-কে অর্পণ করেছেন। [৩৮]

জবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয়

  • (১) যা জবেহ করা হবে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাকে আরাম দিতে হবে। যাতে সে কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে ,সাহাবি শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম স. বলেছেন : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন জবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা জবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়। [৩৯]

 

 

  • (২) যদি উট জবেহ করতে হয় তবে তা নহর করবে। নহর হল উটটি তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে আর সম্মুখের বাম পা বাধা থাকবে। তার বুকে ছুরি চালানো হবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন:‘সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।’ [৪০]

ইবনে আব্বাস রা. বলেন : এর অর্থ হল তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাধা থাকবে। [৪১]

 

উট ছাড়া অন্য জন্তু হলে তা তার বাম কাতে শোয়াবে। ডান হাত দিয়ে ছুরি চালাবে। বাম হাতে জন্তুর মাথা ধরে রাখবে। মোস্তাহাব হল জবেহকারী তার পা জন্তুটির ঘারে রাখবে। যেমন ইতিপূর্বে আনাস রা. বর্ণিত বোখারির হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।

  • (৩) জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।’[৪২] জবেহ করার সময় তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেমন হাদিসে এসেছে:—

 

জাবের রা. থেকে বর্ণিত … একটি দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ স. নিজ হাতে জবেহ করলেন এবং বললেন ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ ! এটা আমার পক্ষ থেকে। এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে।’[৪৩] অন্য হাদিসে এসেছে—

 

রাসূলুল্লাহ সা. দুটি শিংওয়ালা ভেড়া জবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন। [৪৪] জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর—اللّهُمَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ—(হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে, তোমারই জন্য) বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দোয়া করা জায়েজ আছে। এ ভাবে বলা—‘হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে নাও।’ যেমন হাদিসে এসেছে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির দুম্বা জবেহ করার সময় বললেন :—

আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ ! আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন।’ [৪৫]

 কোরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

অত:পর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দু:স্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।’[৪৬] রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন :—

 

তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ [৪৭]

 

‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন : কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মোস্তাহাব।

 

কোরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। ‘কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না’—বলে যে হাদিস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

 

তবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হল দুর্ভিক্ষ।দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করা জায়েজ হবে না। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কোরবানি দাতা কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন‘সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে।

 

কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েজ নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির গোশত দেয়া জায়েজ নয়। হাদিসে এসেছে :—

‘তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেয়া হবে না।’ [৪৮]

তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা না-জায়েজ হবে না।

 

১৫ – আইয়ামুত-তাশরীক ও তার করণীয়

আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে। অর্থাৎ যিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বা ‘গোশত শুকানোর দিন’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

আইয়ামুত তাশরীক এর ফজিলত

 

এ দিনগুলোর ফজিলত সম্পর্কে যে সকল বিষয় এসেছে তা নীচে আলোচনা করা হল :—

(১) এ দিনগুলো এবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—

 

‘তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে।’ [৪৯]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি রহ. বলেন :—

 

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন—‘নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে আইয়ামুত-তাশরীককে বুঝানো হয়েছে।’ [৫০]

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন : ইবনে আব্বাসের এ ব্যাখ্যা গ্রহণে কারো কোন দ্বি-মত নেই।[৫১] আর মূলত এ দিনগুলো হজের মওসুমে মিনাতে অবস্থানের দিন। কেননা হাদিসে এসেছে—

 

মিনায় অবস্থানের দিন হল তিন দিন। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দু দিনে চলে আসে তবে তার কোন পাপ নেই। আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোন পাপ নেই।[৫২] হাদিসে এসেছে—

 

নাবীশা হাজালী থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকিরের দিন।’[৫২]

 

ইমাম ইবনে রজব রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন : আইয়ামুত-তাশরীক এমন কতগুলো দিন যাতে ঈমানদারদের দেহের নেয়ামত ও স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনের নেয়ামত তথা স্বাচ্ছন্দ্য একত্র করা হয়েছে। খাওয়া- দাওয়া হল দেহের খোরাক আর আল্লাহর জিকির ও শুকরিয়া হল হৃদয়ের খোরাক। আর এভাবেই নেয়ামতের পূর্ণতা লাভ করল এ দিনসমূহে। [৫৪]

 

(২) আইয়ামুত-তাশরীকের দিনগুলো ঈদের দিন হিসেবে গণ্য। যেমন হাদিসে এসেছে—

 

‘সাহাবি উকবাহ ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন: আরাফাহ দিবস, কোরবানির দিন ও মিনার দিন সমূহ (কোরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলাম অনুসারীদের ঈদের দিন।’ [৫৫]

(৩) এ দিনসমূহ যিলহজ মাসের প্রথম দশকের সাথে লাগানো। যে দশক খুবই ফজিলতপূর্ণ। তাই এ কারণেও এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে।

(৪) এ দিনগুলোতে হজের কতিপয় আমল সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এ কারণেও এ দিনগুলো ফজিলতের অধিকারী।

 

আইয়ামুত তাশরীকে করণীয়

 

এ দিনসমূহ যেমনি এবাদত-বন্দেগি, জিকির-আযকারের দিন তেমনি আনন্দ-ফুর্তি করার দিন। যেমন রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর জিকিরের দিন।’ [৫৬]

এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া নেয়ামত নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার মাধ্যমে তার শুকরিয়া ও জিকির আদায় করা।

জিকির আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি হাদিসে এসেছে।

  • (১) সালাতের পর তাকবীর পাঠ করা। এবং সালাত ছাড়াও সর্বদা তাকবীর পাঠ করা। এ তাকবীর আদায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে এ দিনগুলো আল্লাহর জিকিরের দিন। আর এ জিকিরের নির্দেশ যেমন হাজীদের জন্য তেমনই যারা হজ পালনরত নন তাদের জন্যও।
  • (২) কোরবানি ও হজের পশু জবেহ করার সময় আল্লাহ তাআলার নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করা।
  • (৩) খাওয়া-দাওয়ার শুরু ও শেষে আল্লাহ তাআলার জিকির করা। আর এটা তো সর্বদা করার নির্দেশ রয়েছে তথাপি এ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব বেশি দেয়া। এমনিভাবে সকল কাজ ও সকাল-সন্ধ্যার জিকিরগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া।
  • (৪) হজ পালন অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ তাআলার তাকবীর পাঠ করা।
  • (৫) এ গুলো ছাড়াও যে কোন সময় ও যে কোন অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা

 


————————————————————————————————————-

সংকলনঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুররহমান

সম্পাদনাঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

 

[১]আবু দাউদ-১৯৪৫, হাদিসটি সহিহ [২]আবু দাউদ-১৮৬৫, হাদিসটি সহিহ [৩]লাতায়েফুল মাআরিফ : ইবনে রজব র., পৃ- ৪৮২-৪৮৩ [৪]সূরা জারিয়াত : ৫৬ [৫]ফতহুল মজিদ : ১৭ [৬]সূরা আনআম : ১৬২-১৬৩ [৭]সূরা কাওসার : ২ [৮]মুসলিম, শরহে নবভী [৯]সূরা মায়িদাহ : ৩ [১০]আবু নঈম, আহমদ [১১]সূরা মায়েদা : ৭২ [১২]সূরা কাওসার : ২ [১৩]সূরা আনআম ঃ ১৬২-১৬৩ [১৪]বোখারি- ৫৫৪৫, মুসলিম-১৯৬১ [১৫]বোখারি-৫৫৬৫, মুসলিম-১৯৬৬ [১৬]আহকামুল উযহিয়্যা : মুহাম্মদ বিন উসাইমীন, পৃ- ২৬ [১৭]সূরা কাওসার : ২ [১৮]মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৩ হাদিসটি হাসান [১৯]মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৫ হাদিসটি হাসান [২০]মুসলিম- ১৯৭৭ [২১]সূরা হজ্ব : ৩৭ [২২]সূরা হজ্ব : ৩৪ [২৩]মুসলিম- ১৯৬৩ [২৪]ইবনে মাজা- ৩১৩২, হাদিসটি সহিহ [২৫]তিরমিজি-১৫৪৬, নাসায়ি- ৪৩৭১, হাদিসটি সহিহ [২৬]বোখারি- ৯৬৫ [২৭]বোখারি- ৯৮৫ [২৮]বোখারি- ৫৫৬২ [২৯]সূরা হজ্ব : ২৮ [৩০]ফাতহুল বারী, ২য় খন্ড, পৃ-৫৬১ [৩১]আহমদ- ৪/৮২, হাদিসটি সহিহ [৩২]যাদুল মাআদ, ২য় খন্ড, পৃ-৩১৯ [৩৩]বোখারি-১৩৩৮, মুসলিম-১০০৪ [৩৪]ইবনে মাজা, হাদিসটি সহিহ [৩৫]মুসলিম-১৯৭৭ [৩৬]আহকামুল উযহিয়্যাহ : ইবনে উসাইমীন। পৃ-৭৭ [৩৭]ফাতহুল বারী ১০/২১ [৩৮]মুসলিম- ১২১৮ [৩৯]মুসলিম-১৯৫৫ [৪০]সূরা হজ : ৩৬ [৪১]তাফসীর ইবনে কাসির [৪২]সূরা আনআম : ১১৮ [৪৩]আবু দাউদ [৪৪]সুনানে দারামী- ১৯৮৮, হাদিসটি সহিহ [৪৫]মুসলিম- ১৯৬৭ [৪৬]সূরা হজ্ব-২৮ [৪৭]বোখারি-৫৫৬৯ [৪৮]বোখারি -১৭১৬ মুসলিম-১৩১৭ [৪৯]সূরা বাকারা : ২০৩ [৫০]ফতহুল বারী, ঈদ অধ্যায় [৫১]তাফসীর কুরতুবী [৫২]আবু দাউদ- ১৯৪৯, হাদিসটি সহিহ [৫৩]মুসলিম- ১১৪১ [৫৪]লাতায়েফুল মাআরেফ : ইবনে রজব র. পৃ-৫০৪ [৫৫]আবু দাউদ-২৪১৩, হাদিসটি সহিহ [৫৬]মুসলিম-১১৪১

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা

$
0
0

লেখক: আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

keeping ties

আত্মীয়তা-সম্পর্ক ও এর মাহাত্ম্য

এটি এমন এক বিষয় যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা মানুষের রিজিক বাড়িয়ে দেন, হায়াত দীর্ঘ করেন, এবং মানুষের ধন-সম্পদে বরকত দেন। এটি হলো আত্মীয়তা-সম্পর্ক। আত্মীয়তা-সম্পর্ক বলতে বুঝানো হয়, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এবং এসবের উর্ধ্বতন ও নিম্নতন আত্মীয়।

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা যে জরুরী, আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্ন করা যে হারাম আর আত্মীয়দের ভালো-মন্দের খোঁজ-খবর রাখা, বিপদাপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সার্বিক কল্যাণ কামনা করার ফযীলত সম্পর্কে কুরআনে কারিমে এবং হাদীসে অনেক বাণী উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে তাদের প্রশংসায় তিনি ইরশাদ করেন,

﴿وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ (21) ﴾

‘আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে।’[সূরা আর-রা‘দ : ২১]

পক্ষান্তরে যারা এ সম্পর্ক অটুট রাখে না তীব্র ভাষায় তাদের ভৎর্সনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ (25) ﴾

‘আর যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের জন্যই লা‘নত আর তাদের জন্যই রয়েছ আখিরাতের মন্দ আবাস।’[সূরা আর-রা‘দ : ২৫]

যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে না তাদের ধমক দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ (22) أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ (23) ﴾

‘তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লানত করেন, তাদেরকে বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টিসমূহকে অন্ধ করেন।’[সূরা মুহাম্মদ : ২২-২৩]

রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচারের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا﴾

‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক।’[সূরা আন-নিসা : ০১]

এসব আয়াত থেকে আমরা সুস্পষ্ট বুঝতে পারি আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আত্মীয়তা-সম্পর্ক অক্ষুণ্ন  রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এ সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করতে নিষেধ করেছেন।

প্রিয় পাঠক, আমরা কি আল্লাহর বাণীর মর্ম অনুধাবন করেছি? আমরা কি রাব্বুল আলামিনের ডাকেন সাড়া দেব না? নাকি এরপরও আমরা আত্মীয়-পরিজনদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো? নিজেদের গোমরাহিতে ডুবে থাকবো? আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতার পুনরাবৃত্তি করতে থাকবো? আর রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালনে উদাসীন থাকবো?

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ خَلَقَ الْخَلْقَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْ خَلْقِهِ قَالَتِ الرَّحِمُ هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنَ الْقَطِيعَةِ قَالَ نَعَمْ أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ قَالَتْ بَلَى يَا رَبِّ قَالَ فَهُوَ لَكِ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ﴿فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ﴾

আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জীবের সৃজন কাজ শুরু করেন। যখন তিনি এ কাজ সমাপ্ত করেন, আত্মীয়তা-সম্পর্ক বলে উঠল, ‘এটি আপনার কাছে আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্নকারীর আশ্রয়স্থান’। আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘হ্যা, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও, যে তোমাকে জুড়ে রাখবে আমিও তার সঙ্গে জুড়ে থাকবো আর যে তোমাকে ছিন্ন করবে আমিও তাকে ছিন্ন করবো?’ আত্মীয়তা-সম্পর্ক বলল, ‘জি হ্যা, হে আমার রব’। তিনি বললেন, ‘এটা শুধু তোমার জন্য’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা চাইলে এ আয়াত পড়ে দেখ :

﴿فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ﴾

‘তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে?’[{আয়াত সূরা মুহাম্মদ : ২২} বুখারী : ৫৯৮৭]

আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

. إنَّ الرَّحِمَ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تُنَادِي بِلِسَانٍ لَهَا ذُلَقٍ : اللَّهُمَّ صِلْ مَنْ وَصَلَنِي ، وَاقْطَعْ مَنْ قَطَعَنِي.

‘নিশ্চয় আত্মীয়তা-সম্পর্ক আরশকে আকঁড়ে ধরা একটি কাণ্ড, যা জিহ্বার ডগা দিয়ে বলে, ‘হে আল্লাহ, তুমি তার সাথে জুড়ো যে আমার সাথে জুড়ে আর তুমি তাকে ছিন্ন করো যে আমাকে ছিন্ন করে।’ তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা‘আলা বলেন, ‘রহীম রহমান (আমি দয়ালু, পরম করুণাময়) আর ‘রাহীম’ (الرحم)  তথা আত্মীয়তা-সম্পর্ক শব্দটিকে আমার নাম থেকে বের করেছি। সুতরাং যে এর সাথে সুসম্পর্ক রাখবে আমি তার সাথে সুম্পর্ক রাখবো আর যে এ সম্পর্ক ভঙ্গ করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ভঙ্গ করবো।’[ইবন আব্দির রাজজাক, মুসান্নফ : ২৫৯০১]

আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের আগে বাণিজ্য সফরে শাম দেশে গেলে বাদশা হেরাকল তাঁর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবরণ জানতে চান। জবাবে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবরণ তুলে ধরেন এভাবে :

يَأْمُرُنَا بِالصَّلاَةِ وَالصَّدَقَةِ وَالْعَفَافِ وَالصِّلَةِ.

‘তিনি আমাদের আল্লাহর ইবাদত, সালাত, সত্যবাদিতা, চারিত্রিত শুভ্রতা ও আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ করেন।’[বুখারী : ৫৯৮০]

আমরা এ থেকে জানতে পারি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের সূচনাকালে যেসব বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন আত্মীয়তা-সম্পর্ক তার মধ্যে অন্যতম। আমরা আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করতে পারি দু‌ভাবে। এক. কিছু কাজ করার মাধ্যমে। যেমন : আত্মীয়দের সঙ্গে সদ্ব্যবহার এবং তাদের সঙ্গে সদাচার অব্যাহত রাখা। দুই. কিছু কাজ না করার মাধ্যমে। যেমন : আত্মীয়দের কষ্ট না দেয়া এবং তাদের অনিষ্ট না করা। প্রথমটি আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার সর্বোচ্চ স্তর আর দ্বিতীয়টি সর্বনিম্ন স্তর।

উল্লেখ করা দরকার, আত্মীয়তা-সম্পর্ক আবার কয়েক ধরনের। প্রথম. সাধারণ মুসলমানের সঙ্গে সম্পর্ক। এটি আসলে দীনদারির ভিত্তিতে সম্পর্ক, যা তাকওয়ার একটি শাখাও বটে। এটি অর্জিত হয় নিম্নোক্ত কাজগুলোর মাধ্যমে :

একে অন্যের শুভ কামনা করা, পরামর্শ নেয়া, পরস্পরকে ভালোবাসা, ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা করা, ওয়াজিব বা জরুরী হক এবং যথাসাধ্য নফল বা ঐচ্ছিক হকসমূহ আদায় করা, মানুষকে সুশিক্ষা দেয়া, সুপথ দেখানো, দিক-নির্দেশনা দেয়া, সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ও অন্যের দুখে সমব্যথী হওয়া এবং মানুষের জন্য কষ্ট দূর করা। আর আমরা তো জানিই যে, মুসলিম ভাইয়ের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা।

 

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার ফযীলত

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার দ্বারা মানুষের হায়াত লম্বা হয় এবং ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়। এটি কিন্তু যার তার কথা নয়; মহা সত্যবাদী, চরম শত্রু  কাফেরদের পক্ষ থেকে আল-আমীন বা বিশ্বস্ত উপাধী লাভকারী আল্লাহর নবীর ওয়াদা, যার সম্পর্কে কুরআনে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে এভাবে,

﴿وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى (3) إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى (4) ﴾

‘তিনি আর মনগড়া কথা বলেন না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়।’[সূরা আন-নাজম : ৩-৪]

তিনি ইরশাদ করেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ

‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ হোক সে যেন আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখে।’[বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাও বলে গেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার কৃতিত্ব তারই প্রাপ্য যে অন্য পক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও নিজের পক্ষ থেকে তা জোড়া লাগায়। পক্ষান্তরে যার সাথে সম্পর্ক বহাল রয়েছে, তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করলে ব্যাস তা হবে সর্বোচ্চ ভালো সম্পর্কের প্রতিদানে ভালো সম্পর্ক। এটি যদিও আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মধ্যেই পড়ে কিন্তু যে ব্যক্তি সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে এমন আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক জুড়বে তার সওয়াব অনেক বেশি এবং তার প্রতিদান অনেক বড়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ وَلَكِنْ الْوَاصِلُ الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا

‘সে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী নয় যে সম্পর্ক রক্ষার বিনিময়ে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা-সম্পর্ক রাকারী সেই, যার সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরলে সে তা জোড়া দেয়।’[বুখারী : ৫৯৯১]

মহান এই দীনে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার প্রতি এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, কাফেরদের সাথেও সম্পর্ক রাখতে আত্মীয় অমুসলিম হলেও তার সাথে সম্পর্ক অমলিন রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ وَهِيَ رَاغِبَةٌ أَفَأَصِلُ أُمِّي قَالَ نَعَمْ صِلِي أُمَّكِ

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় আমার আম্মা মুশরিক থাকতে একবার আমার কাছে আগমন করলেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী, আমি কি আমার আম্মার সাথে সম্পর্ক রাখবো? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যা, তুমি স্বীয় মাতার সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখো।’[বুখারী : ২৬২০; মুসলিম : ২৩৭২]

প্রিয় পাঠক, আমাদের প্রিয় ধর্মে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মর্যাদা এমনই। আমরা কি আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে অবগত? আমরা পালন করি তাঁর নির্দেশ? বর্জন করি তার নিষেধকৃত বিষয়গুলো? ভেবে দেখুন, আমরা কি আত্মীয়তা-সম্পর্কই ঠিক রাখি? তাদের সাথে সাক্ষাৎ করি? তাদের খোঁজ-খবর নেই? আমরা তাদের সাথে যোগাযোগহীনতা, তাদের ব্যাপারে অন্তরের অনুদারতাকে ক্ষমার যোগ্য ভাবছি?

হে দুনিয়া-আখিরাতের সাফল্য প্রত্যাশী ভাই, আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখুন। আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ করবেন না কখনো। তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখলে, তাদের সাথে যোগাযোগ ঠিক রাখলে কত বেশি সওয়াব আর কত লাভ তা সবসময় মনে রাখবেন।

জানেন কি আত্মীয়তা-সম্পর্ক ঠিক রাখলে কত লাভ?এর লাভ দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতে। সংক্ষেপে সেদিকে ইশারা করছি :

ক.  আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা ঈমানের পূর্ণতা ও ইসলামের সৌন্দর্যের প্রকাশ।

খ.  আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা রিজিক ও হায়াত বৃদ্ধির কারণ।

গ.  আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়।

 

আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে পূর্বসূরী বুযুর্গদের উক্তি  

উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তোমরা তোমাদের বংশগতি বিদ্যা শিক্ষা করো অতপর আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করো। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় তোমাদের একজনের সাথে তার ভাইয়ের বিবাদ হবে, যদি সে জানতো তার ও এর মাঝে আত্মীয়তা-সম্পর্কের কী গুরুত্ব রয়েছে তাহলে তা তাদের এই সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত রাখতো।’ (তাফসিরে তাবারী : ১/১৪৪)

আতা বিন আবি রাবাহ রহ. বলেন, ‘আমি আমার আত্মীয়র জন্য এক টাকা খরচ করাকে দরিদ্র ব্যক্তির জন্য এক হাজার টাকা খরচ করার চেয়ে উত্তম মনে করি। একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, হে আবু মুহাম্মদ, যদি আত্মীয়টি ধনাঢ্যতায় আমার মতো হয় তবুও? তিনি বললেন, যদি সে তোমার চেয়েও বড় বিত্তশালী হয় তবুও।’ (ইবনে আবিদ্দুনিয়া, মাকারিমুল আখলাক : ৬২ পৃ.)

সাঈদ বিন মুসায়্যাব রহ. কিছু অর্থ রেখে গিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি জানেন আমি টাকা কেবল নিজের দীন ও বংশকে নিরাপদ রাখার জন্য সঞ্চয় করেছি। যে ব্যক্তি অর্থ সঞ্চয় করল না আর তা দিয়ে অন্যের পাওনা পরিশোধ করল না এবং আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করতে পারল আর নিজেকে বাঁচাতে পারল না, তাতে কোনো কল্যাণ নেই।’ (ইবনে মুফলিহ, আদাবে শরইয়্যা : ৩/২৬২।)

আমর বিন দিনার রহ. বলেন, ‘নিশ্চিত জেনো, ফরজ আদায়ের জন্য কদম ফেলার সর্বোত্তম পদক্ষেপ সেটি, যা আত্মীয়তা-সম্পর্ক রার জন্য ফেলা হয়।’

সুলাইমান বিন মুসা রহ. বলেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাইরিসকে জিজ্ঞেস করা হলো, আত্মীয়তা-সম্পর্কের হক কী? তিনি বললেন, যখন সে এগিয়ে আসে তখন তাকে স্বাগত জানানো আর যখন সে পিছিয়ে যায় তখন তার পেছনে যাওয়া।’ (প্রাগুক্ত)

আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে সতর্কিকরণ

এ আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার মধ্যে যেমন অনেক সওয়াব ও বড় নেকি রয়েছে, তেমনি তা নষ্ট করার মধ্যে রয়েছে অনেক গুনাহ ও ক্ষতিকারিতা। যেমন : বলা হয়েছে আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিনষ্টকারী জান্নাতে যাবে না। জুবাইর বিন মুতয়িম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ

‘আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’[বুখারী : ৬৬৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৭]

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে এ সম্পর্ক ছিন্নকারী যেন উত্তপ্ত বালি ভক্ষণ করে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونِي وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إِلَيَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنْ اللَّهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল, আমার কিছু আত্মীয় রয়েছে- আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করি আর তারা তা নষ্ট করে, আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি আর তারা আমার সাথে মন্দ ব্যবহার করে এবং তারা আমার সাথে মূর্খতাসূলভ আচরণ করে আর আমি তাদের আচরণে ধৈর্য্য ধরি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘটনা যদি তেমনই হয় যেমন তুমি বলছো, তাহলে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত বালু খাওয়াচ্ছো আর যতক্ষণ তুমি তোমার এ অবস্থানে থাকবে, তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে।’[বুখারী : ৬৬৮৯; মুসলিম : ৪৬৪০]

তাছাড়া আগেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিনষ্টকারীর জন্য রয়েছে আল্লাহর লানত ও শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ (22) أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ (23) ﴾

‘তবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে? এরাই যাদেরকে আল্লাহ লানত করেন, তাদে কে বধির করেন এবং তাদের দৃষ্টিসমূহকে অন্ধ করেন।’[সূরা মুহাম্মদ : ২২-২৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَالَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ (25) ﴾

‘আর যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের জন্যই লা‘নত আর তাদের জন্যই রয়েছ আখিরাতের মন্দ আবাস।’[সূরা আর-রা‘দ : ২৫]

আর আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিনষ্টকরার সবচেয়ে বড় নমুনা হলো পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা। তারপর যে সবচেয়ে কাছের তার সাথে, তারপর যে সবচেয়ে নিকটতর তার সাথে। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلَاثًا قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ

‘আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করবো না? কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আমরা বললাম, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং পিতামাতার অবাধ্য হওয়া।’[বুখারী : ২৬৫৪; মুসলিম : ২৭০]

হায় আল্লাহ! পিতামাতার অবাধ্য হওয়া কত বড় অপরাধ যে আল্লাহর সাথে শিরকের সাথে সাথেই এর কথা বলা হয়েছে!

আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিনষ্ট করার আরেকটি হলো, আখিরাতের আগেই দুনিয়াতে এর শাস্তি প্রদান করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَا مِنْ ذَنْبٍ أَحْرَى أَنْ يُعَجِّلَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى الْعُقُوبَةَ لِصَاحِبِهِ فِي الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ الْبَغْيِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ

‘আত্মীয়তা-সম্পর্ক বিনষ্ট করা ও জুলুমের চেয়ে অধিক উপয্ক্তু কোনো অপরাধ নেই যার শাস্তি সত্বরই দুনিয়াতে দেয়া হয়। অথচ আখিরাতের শাস্তি তার জন্য বরাদ্দই থাকে।’[মুসনাদে আহমদ : ২০৪১৪]

আল্লাহকে ভয় করার আহ্বান  

অতএব হে আল্লাহর বান্দাগণ, আল্লাহকে ভয় করুন এবং আত্মীয়তা-সম্পর্ক ঠিক রাখুন। আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করুন তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাদেরকে উপহার দেয়া, তাদের পেছনে অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমে। তাদের সাথে সম্পর্ক রাখুন ভালোবাসা, আন্তরিকতা, নম্র কথা, হাসিমুখ, সম্মান, শ্রদ্ধা এবং সমাজে প্রচলিত সব ধরনের আত্মীয়তা রক্ষার উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে। কামিয়াব হোন এর দ্বারা দুনিয়াতে ও আখিরাতে।  আর অবশ্যই আপনারা এ সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। কারণ তা দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতের ক্ষতি ও বিপদ ডেকে আনে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফিক দিন। আমীন।

 


Audio Lecture –খারেজীদের লক্ষণ

$
0
0

বিষয়ঃ  খারেজীদের লক্ষণ | বক্তাঃ শেইখ মতিউর রহমান মাদানী

এই বক্তব্যে শেইখ মতিউর রহমান মাদানী বর্তমানে গজিয়ে উঠা কিছু “খারেজী” মনোভাবের আলেমদের বেপ্যারে সতর্কতা মূলক আলোচনা পেশ করেছেন।

Download from QuranerAlo Server [35 MB]

Download from MediaFire Server

Download Low Quality Version [17 MB]

শিয়া বিষয়ক ফাইল

$
0
0

এ ফাইলে শী‘আ বা শিয়া ফের্কার লোকদের আকীদা-বিশ্বাস বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রিয় পাঠক, মুসলিম জাতি একটি একটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত জাতি। কিন্তু ইসলামের দুশমনরা এই একতা এবং সংহতিকে বিনষ্ট করার জন্য এমন কোন হীন প্রচেষ্টা বাকি রাখে নি। মুসলিম উম্মাহকে দলে দলে বিভক্ত করার জন্য তারা সব ধরণের ষড়যন্ত্র করেছে। এই ষড়যন্ত্রের হাত ধরে মুসলিম উম্মাহর পবিত্র দেহে নানা ধরণের বিষ ফোঁড়া সৃষ্টি হয়েছে। নানা ভাবে ক্ষত-বিক্ষত করেছে দ্বীনের ইসলামের সুরম্য অট্টালিকা। এ সকল ষড়যন্ত্রের বিষদাঁতগুলোর মধ্যে অন্যতম হল শিয়া রাফেজী, বাহাঈ, কাদিয়ানী সম্প্রদায় অন্যতম।  সকল ধরণের ভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ মুসলিজ জাতিকে পূনরায় কুরআন-সুন্নাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। এর কোন বিকল্প নাই। যাক, আজ আপনাদের জন্য ইসলাম হাউজ ডট কম এ প্রকাশিত কতিপয় লিংক শেয়ার করা হল যেগুলো শিয়া সম্প্রদায়ের প্রকৃত চেহারা উন্মোচনে সাহায্য করবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস। লিংকগুলো খুলুন এবং শিয়াদের সম্পর্কে জানুন। সেই সাথে অন্যদের নিকট লিংকগুলো শেয়ার করুন। ধন্যাবদ।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনে হকের উপর মৃত্যু অবধি অবিচল রাখুন। আমীন।

52

 

  1. শিয়া সুন্নী ঐক্য : সম্ভাবনা ও প্রাপ্তি
  2. কি ঘটেছিল কারবালায়? কারা হুসাইন (রা:) কে হত্যা করেছে?
  3. শিয়া আকিদার অসারতা
  4.  শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি
  5. সাহাবা ও ইমামগণকে গালি দেয়া নিষিদ্ধ
  6. আল ফেরদাউস একাডেমী : মানব উন্নয়ন, আরবী ভাষা শিক্ষায় নিয়োজিত
  7. শিয়াদের আকীদা-বিশ্বাস
  8. তাঁদের মধ্যে মধুময় সম্পর্ক [নবী-পরিবার ও অবশিষ্ট সাহাবীগণ পরস্পর সহানুভূতিশীল]
  9. কতিপয় প্রশ্ন, শিয়া যুবকদের যা সত্যের দিকে ধাবিত করেছে
  10. নাজাফ সম্মেলন
  11. শিয়া আলেম ও অধিকাংশ মুসলিম আলেমের মধ্যে বিরোধের বাস্তব চিত্র
  12. শিয়া আকিদার অসারতা
  13.  শী‘আ মতবাদের বিস্তৃতি

এই বিষয় গুলো ইংলিশ, আরবি,  ফার্সি, হাউসা , ইন্দোনেশিয়ান, ইরানোন, রাশিয়ান, তুর্কি এবং উর্দু ভাষায় জানতে এইখানে ক্লিক করুন।

 

সৌজন্য: IslamHouse ওয়েবসাইট 

বই –আশুরা ও কারবালা

$
0
0

লেখকঃ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ বইটিতে আশুরা ও কারবালা অর্থ, ফজিলত, রোজা রাখার নিয়ম, বিধান, কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস, কারবালা কেন্দ্রিক বিদাত, কুসংস্কার ও মিথ্যা কেচ্ছা-কাহিনী, কারবালা ও কিছু জাল-য‘য়ীফ হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আসাকরি বইটি আমাদের সকল পাঠকদের অনেক উপকারে আসবে।

আশুরা ও কারবালা – QuranerAlo Server

আশুরা ও কারবালা – Mediafire

[Size: 2.4 MB]

আশুরার রোজা রাখার ফজিলত

$
0
0

ashura-2

প্রশ্ন: আমি শুনেছি আশুরার রোজা নাকি বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়- এটা কি সঠিক? সব গুনাহ কি মোচন করে; কবিরা গুনাহও? এ দিনের এত বড় মর্যাদার কারণ কি?

উত্তর:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

 এক:

আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করছি আরাফার রোজা বিগত বছর ও আগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে। আরও প্রত্যাশা করছি আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”[সহিহ মুসলিম (১১৬২)] এটি আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ একদিনের রোজার মাধ্যমে বিগত বছরের সব গুনাহ মার্জনা হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহান অনুগ্রহকারী।

আশুরার রোজার মহান মর্যাদার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি এ রোজার ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকতেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে আশুরার রোজা ও এ মাসের রোজা অর্থাৎ রমজানের রোজার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যত বেশি আগ্রহী দেখেছি অন্য রোজার ব্যাপারে তদ্রূপ দেখিনি।”[সহিহ বুখারি (১৮৬৭)]

হাদিসে يتحرى শব্দের অর্থ- সওয়াব প্রাপ্তি ও আগ্রহের কারণে তিনি এ রোজার প্রতীক্ষায় থাকতেন।

দুই:

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আশুরার রোজা রাখা ও এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করার কারণ হচ্ছে বুখারির বর্ণিত হাদিস (১৮৬৫) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তখন তিনি বললেন: কেন তোমরা রোজা রাখ? তারা বলল: এটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করেছেন; তাই মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোজা রাখতেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের চেয়ে আমি মুসার অধিক নিকটবর্তী। ফলে তিনি এ দিন রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।”

 হাদিসের উদ্ধৃতি: “এটি উত্তম দিন” মুসলিমের রেওয়ায়েতে এসেছে- “এটি মহান দিন। এদিনে আল্লাহ মুসাকে ও তাঁর কওমকে মুক্ত করেছেন এবং ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে মেরেছেন।”

 হাদিসের উদ্ধৃতি: “তাই মুসা আলাইহিস সালাম এদিনে রোজা রাখতেন” সহিহ মুসলিমে আরেকটু বেশি আছে যে “…আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ; তাই আমরা এ দিনে রোজা রাখি”।

বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “এ দিনের মহান মর্যাদার কারণে আমরা রোজা রাখি”।

হাদিসের উদ্ধৃতি: “অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন” বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা তাদের চেয়ে মুসার অধিক নিকটবর্তী। সুতরাং তোমরা রোজা রাখ”।

 তিন:

আশুরার রোজা দ্বারা শুধু সগিরা গুনাহ মার্জনা হবে। কবিরা গুনাহ বিশেষ তওবা ছাড়া মোচন হয় না। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহ মোচন করে। হাদিসের বাণীর মর্ম রূপ হচ্ছে- কবিরা গুনাহ ছাড়া সকল গুনাহ মোচন করে দেয়। এরপর তিনি আরও বলেন: আরাফার রোজা দুই বছরের গুনাহ মোচন করে। আর আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে। মুক্তাদির আমীন বলা যদি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়… উল্লেখিত আমলগুলোর মাধ্যমে পাপ মোচন হয়। যদি বান্দার সগিরা গুনাহ থাকে তাহলে সগিরা গুনাহ মোচন করে। যদি সগিরা বা কবিরা কোন গুনাহ না থাকে তাহলে তার আমলনামায় নেকি লেখা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। … যদি কবিরা গুনাহ থাকে, সগিরা গুনাহ না থাকে তাহলে কবিরা গুনাহকে কিছুটা হালকা করার আশা করতে পারি।[আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড-৬]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: পবিত্রতা অর্জন, নামায আদায়, রমজানের রোজা রাখা, আরাফার দিন রোজা রাখা, আশুরার দিন রোজা রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু সগিরা গুনাহ মোচন হয়।[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-৫]

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

আল্লাহর জন্যে অপর মুসলিম ভাই কে ভালোবাসা

$
0
0

অনুবাদক : নুমান বিন আবুল বাশার | ওয়েব সম্পাদনাঃ কুরআনের আলো 

29

“আল্লাহর জন্য ভালোবাসা” সম্পর্কে জাহেলী যুগে মানুষের কোন ধারণা ছিল না। স্বাদেশিকতা বংশ সম্পর্ক বা অনুরূপ কিছু ছিল তাদের পরস্পর সম্পর্কের মূল ভিত্তি। আল্লাহর বিশেষ দয়ায় ইসলামের আলো উদ্ভাসিত হল। পরস্পর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উৎকর্ষতা আসল। ধর্মীয় সম্পর্ক সর্বোচ্চ ও সুমহান সম্পর্ক হিসেবে রূপ লাভ করল। এ-সম্পর্কের উপরেই প্রতিদান, পুরস্কার, ভালোবাসা ও ঘৃণা সাব্যস্ত হল। ইসলামের বিকাশের সাথে সাথে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ইত্যাদি পরিভাষা চালু হল।

আল্লাহর জন্য ভালোবাসা-এর অর্থ হচ্ছে, এক মুসলিম ভাই অপর মুসলিম ভাইয়ের কল্যাণ ও আল্লাহর আনুগত্য কামনা করা। সম্পদের মোহ, বংশ বা স্থান ইত্যাদির কোন সংশ্লিষ্টতা এক অপরের সম্পর্কের ও ভালোবাসার মানদণ্ড হবে না।

আল্লাহর জন্য ভালোবাসার কতিপয় ফজিলত :

. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা স্থাপনকারীদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন – “এক ব্যক্তি অন্য গ্রামে বসবাসকারী নিজ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হল। মহান আল্লাহ তার জন্য পথে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করে রাখলেন। যখন সে ফেরেশতা সে ব্যক্তির নিকটবর্তী হল, বলল তুমি কোথায় যাও ? সে বলল, এই গ্রামে বসবাসকারী আমার এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করা আমার উদ্দেশ্য। ফেরেশতা বলল, তার কাছে তোমার কোন পাওনা আছে কি-না ? সে বলল, না। কিন্তু আমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তখন ফেরেশতা বলে উঠল, নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত। মহান আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে ভালোবেসেছেন যে রকম তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসেছ।” (সহীহ মুসলিম:৪৬৫৬)

হাদিসে কুদসীতে আছে মহান আল্লাহ বলেন : “আমার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসা-কারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত।” (আহমদ:২১৭১৭)

. মহান আল্লাহর জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী আল্লাহর আরশের ছায়াতলে অবস্থান করবে, যে দিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘সাত ব্যক্তি, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর ছায়াতলে ছায়া দিবে, যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না…এবং দুজন ব্যক্তিকে, যারা আল্লাহর জন্য তারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করেছে, তাঁর ভালোবাসায় তারা একত্রিত হয়েছে, এবং তাঁর ভালোবাসায় তারা পৃথক হয়েছে‌।’ (বুখারী:৬২০)

রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন : “আল্লাহ কিয়ামত দিবসে বলবেন, আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ – যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না- আমি তাদের ছায়া দেব।” (সহীহ মুসলিম:৪৬৫৫)

. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ মাধ্যম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম:৮১)

এক বন্ধু আরেক বন্ধুর উপর প্রভাব বিস্তার করে বিধায় প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করাঃ 

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন : “মানুষ তার বন্ধুর রীতি-নীতির উপর পরিচালিত হয়, সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের উচিত, কে তোমাদের বন্ধু হবে এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা।” (তিরমিজি:২৩০০)

ভাল সাথির বেশ কিছু গুণাবলি

১) দীনদার ও তাকওয়াবান হওয়া। তাকওয়াবানের কিছু আলামত নিচে উল্লেখ করা হলঃ 

আল্লাহ প্রদত্ত অকাট্য বিধি-বিধান পালনে যত্নবান হওয়া। যেমন সালাত কায়েম, ভাল  কাজ বেশি করে করা এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।

গালিগালাজ, অভিশাপ, গীবত ইত্যাদি। থেকে নিজের জিহ্বাকে পরিচ্ছন্ন রাখা।

নিজ সাথিকে ভাল উপদেশ দেওয়া।

সজনদেরকে ভালোবাসা।

অশ্লীলতা ও পংকিলতা থেকে দূরে থাকা।

মাদক থেকে বেচে থাকা।

ভাল কাজে সহযোগিতা প্রদান, পাপের কাজে নিরুৎসাহিত করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন :—

“বন্ধুরা সেই দিন হয়ে পড়বে একে অপরের শক্র, মুত্তাকীরা ব্যতীত।” (43:67)

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন : “ঈমানদার ব্যতীত সাথি গ্রহণ করো না, মুত্তাকী ব্যতীত কেহ যেন তোমার খাবার ভক্ষণ না করে।” (তিরমিজি:৩২১৮)

২. বুদ্ধিমান হওয়া : নির্বোধকে সাথি হিসেবে গ্রহণে কোন কল্যাণ নেই। কেননা সেই লাভ করতে গিয়ে ক্ষতি করে বসবে।

৩. সুন্দর চরিত্রবান হওয়া: কেননা দুশ্চরিত্রবান সাথির অশুভ কর্মে তুমি আক্রান্ত হয়ে পড়বে, কষ্টে নিপতিত হবে।

. সুন্নত মোতাবেক চলা : সাথি বিদআতী হলে তোমাকে বিদআতের দিকে নিয়ে যাবে, তোমার চিন্তা চেতনাকে কলুষিত করবে,

ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের আদবসমুহ :

ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আদব রয়েছে যা মেনে চললেই আল্লাহর জন্য ভালোবাসার দাবি যথার্থ প্রমাণিত হবে। নীচে কতিপয় আদব উল্লেখ করা হল।

সালাম প্রদান ও হাসি-মুখে সাক্ষাৎ করা:

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন : “কোন ভাল কাজকে কখনো তুচ্ছ জ্ঞান করনা, এমনকি তা যদিতোমার ভাইয়ের সাথে হাসোজ্জ্বল চেহারায় সাক্ষাৎ করা ও হয়।” (সহীহ মুসলিম:৪৭৬০)

উপহার প্রদান: ভালোবাসা বৃদ্ধি ও মনোমালিন্য দূরীকরণে এর রয়েছে বিরাট প্রভাব।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা একে অপরকে উপহার প্রদান কর, তোমাদের পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।” (মুয়াত্তা:১৪১৩)

এক ভাই অপর ভাইয়ের জন্য দুআ করা: 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “কোন মুসলিম বান্দা যখন তার ভাইয়ের পিছনে তার জন্য দুআ করে তখন ফেরেশতা বলে উঠে তোমার জন্য ও অনুরূপ।” (সহীহ মুসলিম:৪৯১২)

অপর ভাইয়ের নিকট ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা:

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন : “মানুষ যখন তার ভাইকে ভালোবাসে সে যেন তাকে অবহিত করে যে, সে তাকে ভালোবাসে।” এবং তাকে বলবে: 

إني أحبك في الله

নিশ্চয় আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। জওয়াবে সে বলবে:

أحبك الذي أحببتني له

যে ব্যাপারে তুমি আমাকে ভালোবেসেছ সেটা তোমার নিকট পছন্দ হয়েছে।” (আবুদাউদ:৪৪৫৯)

দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা: যাতে কমও না হয় আবার বেশিও না হয় কম হলে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, বেশি হলে বিরক্ত হয়ে পড়বে।

সাহায্য করা ও প্রয়োজন মেটানো: ইহা তিন পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়ঃ

– সর্বোচ্চ পর্যায়: নিজের প্রয়োজনের উপর অপর ভাইয়ের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

মধ্যপর্যায়: আবেদন ছাড়া অপর ভাইয়ের এমন প্রয়োজন মেটানো যা নিজের প্রয়োজনের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না।

– নিম্ন পর্যায়: আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপর ভাইয়ের প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে দিবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রয়োজন পূরণ করে দিবেন।” (আল-বুখারী ৩/৯৮, মুসলিম ৪/১৯৯৬)

অপর ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখা, তার গোপনীয় বিষয় প্রকাশ না করা, উত্তম পন্থায় তাকে উপদেশ দেয়া, তার ইজ্জত-আব্রু সংরক্ষণ করা, ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, তার সাথে সুন্দর আচরণ করা।

আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সুধু তার জন্য ভালবাসার তউফিক দান করুক। আমিন

 

ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! (এক্সক্লুসিভ পোস্ট)

$
0
0

মূল- ড. আবু আমীনাহ্‌ বিলাল ফিলিপ্‌স্‌ | ভাষান্তর : আব্‌দ আল-আহাদ 

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য যিনি তার দ্বীনের পথে মানুষকে আহ্বানকারীদের অশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

“ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহ্‌র দিকে মানুষকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলেঃ আমি তো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।” (৪১:৩৩)

অতঃপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক প্রিয় নবী (সা) এর উপর যিনি আমাদের আদর্শ এবং যিনি বলেছেনঃ

“যে কেউ কোন ভাল কাজ করলে ভাল কাজে আহ্বানকারী ব্যক্তিও তার সমপরিমাণ পুণ্য লাভ করবে।”

 

মুসলিমরা জানে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাদেরকে একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামকে তাদের জীবন বিধান হিসেবে দান করে তাদের সম্মানিত করেছেন এবং একই সাথে ইসলামকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আরোপ করেছেন। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

(কোরআন) তোমার ও তোমার সম্প্রদায়ের জন্যে তা সম্মানের বস্তু; তোমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।[৪৩:৪৪]

 

তারা এটাও জানে যে, যদি তারা তাদের ইসলাম প্রচারের এই দায়িত্বকে পালন করে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মেনে চলার ক্ষেত্রে অন্যের হেদায়াতের কারণ হয় তাহলে তারা তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে এমন প্রতিদান প্রাপ্ত হবে যা তারা কল্পনাও করতে পারেনা। এ বিষয়ে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ

“তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ্‌র এই দান ও রহমতের (কোরআনের) প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিৎ; এটা পার্থিব সম্পদ হতে বহুগুণ উত্তম যা তারা সঞ্চয় করেছে।” [১০:৫৮]

এবং প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেনঃ

“আল্লাহ্‌ যদি কাউকে হেদায়াত দিয়ে পথ দেখান তাহলে এই হেদায়াত পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার চেয়েও বেশী মুল্যবান।”

 

এটা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের এক সুস্পষ্ট অনুগ্রহ যে তিনি তাঁর দ্বীনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার অগণিত পথ আমাদের সামনে উন্মোচিত করে দিয়েছেন। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করে তাদের স্রষ্টার কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ নিতে পারেন। মানুষকে ইসলামের পথে দা’ওয়াহ্‌ দিতে হবে এমন পদ্ধতিতে যা মানুষের কাছে সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং গ্রহণযোগ্য। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী একজন দা’ঈকে তাঁর দা’ওয়াহ্‌র পদ্ধতিও বদলানো লাগবে। আর ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন নবী নূহ্‌ (আ) এবং তাঁর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ।

 

একজন দা’ঈর দায়িত্ব হল মানুষকে ইসলামের পথে ডাকার সবরকম পন্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা। এতে করে দা’ওয়াহ্‌র কাজ করা তার জন্য অনেক সহজ হবে। একজন দা’ঈকে তার নিজ পরিবারের আপনজন থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বাড়ীতে কাজের লোকসহ প্রতিটি মানুষকেই ইসলামের দা’ওয়াহ্‌ দিতে হবে। তাকে জানতে হবে কোথায়, কখন এবং কিভাবে ইসলামের দা’ওয়াহ্‌ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানের তালিকায় থাকবে মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, জেলখানা, পার্ক, সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, হাজী ক্যাম্প, আবাসিক হোটেল, এয়ারপোর্ট, বাস টার্মিনাল, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং সেন্টার, বাজার এলাকা, অফিস আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া, খাবার হোটেল-রেস্তরা ইত্যাদি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমনঃ পাসপোর্ট অফিস, পোস্ট অফিস, পর্যটন কেন্দ্র, বিভিন্ন তথ্য প্রদানকারী সংস্থা ইত্যাদিও তার ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ক্ষেত্র হতে পারে।

 

ইসলামের দা’ওয়াহ্‌র কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে একে অন্যের কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র কাজে নিয়োজিত কর্মীরা আরো দক্ষ এবং সৃজনশীল হয়ে উঠবেন। ফলে দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রমকে আরো সফলভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। পারস্পারিক উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমের ইসলামের সত্যবাণীকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। মানুষকে দা’ওয়াহ্‌ দেয়ার ক্ষেত্রে একজন দা’ঈকে প্রয়োজনীয় সবরকম দা’ওয়াহ্‌ উপকরণকে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে কাজ করতে আগ্রহীদের নিয়োগ দিয়ে হবে। তাদের সাথে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি প্রিন্ট করে সেগুলো বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি ইসলামিক সিডি ও ভিসিডির কপি তৈরি করে সেগুলো বন্ধুমহলে এবং চারপাশের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

 

অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না কিভাবে ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র কাজ শুরু করবেন। অনেকেই আবার অজ্ঞতার ওজুহাতে দেখিয়ে কিছু না করেই দিন পার করে যাচ্ছেন। নিচে আমরা ৮০ টিরও বেশী উপায় সম্বলিত একটি পরামর্শ তালিকা দিচ্ছি। পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়ে আপনারা সহজেই ইসলামকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্লাহ্‌-

 

পরিবারে দা’ওয়াহঃ

১. পারিবারিক গ্রন্থাগারঃ পরিবারে সকল সদস্যদের বয়স বিবেচনা করে সে অনুযায়ী বাড়ীতে বিভিন্ন ইসলামিক বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা এবং ইসলামিক বক্তাদের লেকচারের সিডি-ভিসিডির একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলুন। আপনার আত্মীয় স্বজনদের বলুন তারা আপনার বাসা থেকে সেগুলো নিয়ে বাসায় পড়তে।

 

২. ওয়াল পোস্টারঃ বাড়ীতে একটি নির্ধারিত স্থানকে নোটিশ বোর্ডের মত পোস্টার লাগানোর জন্য ব্যবহার করুন। গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক লেকচার, বিভিন্ন প্রোগ্রামের সময়সূচী ইত্যাদি পরিবারের সবাইকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ওয়াল পোস্টারের স্থানটিকে ব্যবহার করুন।

 

৩. পারিবারিক শিক্ষার আসরঃ পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে কেউ একজন কোন একটি বই থেকে সকলের উদ্দেশ্যে পড়ুন এবং বাকিরা শুনুন।যেমন কিতাবুত তাওহীদ।   এক্ষেত্রে একসাথে বসে ইসলামিক লেকচার শুনতে পারেন অথবা কোরআনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আয়াত এবং গুরুত্বপূর্ণ হাদীসগুলোও মুখস্ত করতে পারেন।

 

৪. পারিবারিক প্রতিযোগিতাঃ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা রকম ইসলামিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন যা তাদেরকে ইসলাম মেনে চলার ক্ষেত্রে আরো বেশী অনুপ্রেরণা দেবে। পুরস্কার হিসাবে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণদের নামসমূহ পারিবারিক সম্মাননা তালিকার শীর্ষে রাখা যেতে পারে। তালিকার শীর্ষে নিজের নাম থাকাটাই তাদের কাছে অনেক বড় পুরস্কার মনে হবে।

 

৫.পারিবারিক ম্যাগাজিনঃ বাড়ীতে একটি পারিবারিক ম্যাগাজিন প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। এতে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যরা ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেল লিখবে। কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও তারা ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন প্রবন্ধ বা ছবি সংগ্রহ করে এই ম্যাগাজিনে প্রকাশ করতে পারে।

 

৬. ইসলামিক সমাজ কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণঃ সালাত আয়াদের জন্য মসজিদে যাবার সময়, ইসলামিক লেকচার শুনতে যাবার সময় অথবা কোন অসুস্থ কাউকে দেখতে যাবার সময় সাথে আপনার ভাই বা সন্তানদের নিয়ে যান। ইসলামি দাওয়াহ্‌র কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনগুলোতেও তাদেরকে আপনার সাথে নিয়ে যান।

 

৭. অন্যদের সামনে ভাল কাজঃ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সামনেও কিছু ভাল কাজ করুন যাতে তারা আপনাকে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাদের সামনে সালাত আদায় করুন, কোরআন তেলাওয়াত করুন, গরীব দুঃখীদের দান সাদাকা করুন ইত্যাদি।

 

মসজিদে দা’ওয়াহঃ

৮. দেয়াল ম্যাগাজিনে অংশগ্রহণঃ অধিকাংশ মসজিদের পেছনের দিকের দেয়ালে নোটিশ বোর্ড থাকে যা বিভিন্ন ধরনের ঘোষণা, ইসলামিক পোস্টার ইত্যাদি লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এই নোটিশ বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পোস্ট করতে পারেন অথবা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে সচেতন করে এমন তথ্যমূলক পোস্টার কিনে লাগাতে পারেন। কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও আপনারা প্রবন্ধ প্রিন্ট, করে আপনার এলাকার মসজিদে লাগাতে পারেন।

 

৯. মসজিদের সুযোগ সুবিধা এবং অনুষ্ঠানের উন্নয়নঃ মসজিদে দা’ওয়াতের কার্যক্রম এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মসজিদের পাঠাগার ও হিফয্‌খানার উন্নয়নের কাজে অংশগ্রহন করুন। দান বাক্সের মাধ্যমেও উক্ত কাজে সহায়তা করতে পারেন।

 

১০. ইসলামিক বই-পুস্তক এবং অডিও/ ভিডিও সিডি/ডিভিডি সরবরাহঃ বিভিন্ন ইসলামিক কল্যাণমূলক সংগঠন থেকে গুরুত্বপূর্ণ বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, ইসলামিক লেকচার, প্রামাণ্যচিত্রের অডিও/ভিডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি সংগ্রহ করে মসজিদের বিভিন্ন স্থানে রাখুন যাতে মুসল্লিদের দৃষ্টিগোচর হয়। যেমনঃ কোরআনের পাশাপাশি তার একাধিক অনুবাদসহ তাফসীর গ্রন্থগুলো মসজিদের সেলফে রাখা যেতে পারে।

 

১১. মসজিদে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা অনুষ্ঠান সম্পর্কে লোকজনকে জানানোঃ মসজিদে কখন কোন বিষয়ের উপর লেকচারের আয়োজন করা হয়েছে অথবা কোন সময় কোরআন শিক্ষার ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইত্যাদি জানিয়ে মসজিদের নোটিশ বোর্ড কিংবা দরজায় বিজ্ঞাপন দিন।

 

১২. লেকচারের আয়োজন করাঃ আপনার পরিচিত বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন আকীদার বক্তাদের লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করে মসজিদে নিয়ে আসুন। এক্ষেত্রে অন্যান্য দা’ওয়াহ্‌ সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে আথবা কুরআনের আলো ওয়েবসাইট থেকেও ভিডিও লেকচার সংগ্রহ করে, প্রোজেক্টরের মাধ্যমে লোকদের দেখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।

 

১৩. জুম’আর খুৎবা পর্যালোচনাঃ জুম’আর দিন ইমাম যে খুৎবা দেন তার বিষয়বস্তু নিয়ে লোকজনের সাথে পর্যালোচনা করুন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুৎবার প্রাসঙ্গিকতা বিচার করে তা বাস্তবায়নের জন্য লোকদের উৎসাহিত করুন।

 

১৪. মসজিদ কমিটিতে অংশগ্রহণঃ ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র পাশাপাশি অন্যান্য কল্যাণমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করার জন্য মসজিদ কমিটির কর্মী হিসেবে অংশগ্রহন করুন।

 

১৫. ইমামের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুনঃ আপনার মসজিদের ইমামের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনি তাকে Youtube অথবা আমাদের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন লেকচার তাকে দেখাতে পারেন বা শোনাতে পারেন। Youtubekhalifahklothing, shaykha, quraneralo – এই চ্যানেলগুলোতে অনেক ভালো ইংলিশ/বাংলা লেকচার পাবেন। এই লেকচার গুলো তাদের দেখাতে পারেন। তারা এই লেকচার গুলো নিয়ে জুম্মা তে খুৎবা দিতে পারবেন। (উপরের চ্যানেলগুলো দেখার জন্য নির্দিষ্ট চ্যানেলটির উপর ক্লিক করুন)

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দা’ওয়াহঃ

১৫. সকালের পিটি-প্যারেডঃ বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ যেমনঃ ইসলামিক বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন, লেকচারের অডিও/ ভিডিও সিডি ইত্যাদি প্রস্তুত রাখুন এবং সকালের পিটি প্যারেডে পরিস্থিতি বুঝে কাজে লাগান।

 

১৬. স্কুলের নোটিশ বোর্ডঃ এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ এর পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামিক লেকচার, সভা-সেমিনার ইত্যাদির বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য আকর্ষণীয় সব পোস্টার তৈরি করে সেগুলো নোটিশ বোর্ডে লাগিয়ে দিতে পারেন।

 

১৭. নাট্য কর্মকাণ্ডঃ ইসলামিক ভাবধারা এবং ইসলামিক মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করে এমন নাটক মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করুন।

 

১৮. বক্তৃতা-ভাষণঃ স্কুলে ইসলামের বিশেষজ্ঞ বক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে ছাত্ররা যাতে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে করে ছাত্ররা তাদের করা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর গ্রহণযোগ্য উত্তর পেলে ইসলাম তাদের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে।

 

১৯. বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানঃ স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক এবং কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন ইসলামিক এবং শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন। বিজয়ীদের মাঝে ইসলামিক পুরস্কার বিতরণ করুন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানগুলোতে দা’ওয়াহ্‌র গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপন করুন।

 

২০. ছাত্রদের স্বার্থরক্ষাঃ ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ, পরামর্শ, অভিযোগ ইত্যাদি সংগ্রহ করে সেগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করুন। বিশেষ করে ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে তাদের পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তা দিন।

 

২১. ইসলামিক গ্রন্থাগারঃ স্কুলের সাধারন গ্রন্থাগারকে ইসলাম বিষয়ক বই-পুস্তকের একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তুলতে “ইসলামিক স্টাডিজ” বিভাগকে সহায়তা করুন। এখানে ইসলামিক সাহিত্যের পাশাপাশি রাসূল (সা) এর সাহাবীদের (রা) এবং ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ মুসলিমদের জীবনচরিতগুলোও যাতে পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা করুন।

 

২২. বিভিন্ন প্রচার-প্রদর্শনীঃ স্কুল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত বিভিন্ন বইমেলা, ভিডিও প্রদর্শনী কিংবা বিভিন্ন মাদক বিরোধী প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করুন।

 

২৩. ইসলামিক সপ্তাহ উদ্‌যাপনঃ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করুন যেন তারা বছরে একটি দিন ইসলামিক সপ্তাহ হিসেবে উদ্‌যাপনের অনুমতি দেয়। এমন অনুষ্ঠানগুলোতে নানা রকম ইসলামিক প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। ইসলাম সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারনা দূর করে এমন স্লোগান খোচিত আকর্ষণীয় পোস্টার, ক্যালেন্ডার, আরবি ভাষা শিক্ষার সফটওয়্যার, কোরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সম্বলিত সফটওয়্যার, কোরআনের তেলাওয়াত, ইসলামিক লেকচার, প্রামান্যচিত্রের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি হবে প্রদর্শনীর প্রধান আকর্ষণ।

 

২৪. গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দা’ওয়াহঃ ছুটিতে পড়াশোনার চাপ কম থাকলে সময়টা কাটাতে পারেন বন্ধুমহলে সামনে ইসলামকে তুলে ধরার মাধ্যমে। তাদের সাথে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করুন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের কি মত তা জেনে নিয়ে ইসলামে এসবের সমাধান কি তা তাদের সাথে শেয়ার করুন।

 

কর্মক্ষেত্রে দা’ওয়াহঃ

২৫. দা’ওয়াহ্‌ পোস্টারঃ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া পোস্টার তৈরি করে অফিসের নোটিশ বোর্ডে লাগিয়ে দিন। কোথাও কোন ইসলামিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলে সেটাও বিজ্ঞাপন আকারে নোটিশ বোর্ডে লাগাতে পারেন।

 

২৬. নিজের বসার টেবিলঃ আপনার অফিসের টেবিলে সবসময় কিছু না কিছু দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ রাখুন। যেমনঃ ইসলামিক পুস্তিকা, ম্যাগাজিন, কোরআনের উপদেশ সম্বলিত পেপার ওয়েট ইত্যাদি। এতে করে আপনার সহকর্মীরা থেকে শুরু করে আপনার ক্লায়েন্টসদের সকলের নজরে পড়বে ব্যাপারটি। ফলে তাদের সাথে মুখের কথা খরচ না করেই অনেকখানি দা’ওয়াহ্‌র কাজ হয়ে যাবে। আপনাকে দেখে তারাও দা’ওয়াহ্‌র কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।

 

২৭. ইসলামিক লেকচারের সিডি/ডিভিডি বিতরণঃ সহকর্মীদের চালচলন, কথাবার্তা, বয়স ইত্যাদি বিবেচনা করে তাদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক লেকচারগুলো বিতরণ করুন। বিশেষ করে এমন

ধরনের লেকচার তাদের কে শুনতে বা দেখতে দিন যেগুলোর বিষয়বস্তু বা শিরোনাম অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং যেগুলো বস্তুবাদী মানব জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে।

 

২৮. আমন্ত্রণ জানানঃ সহকর্মীদের আমন্ত্রণ করে ইসলামিক আলোচনা অনুষ্ঠান এবং সভা-সেমিনারে নিয়ে যান। তাদেরকে বিভিন্ন ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনগুলোতেও সাথে করে নিয়ে যান।

 

২৯. জামা’য়াতে সালাত আদায় করুনঃ সহকর্মীদের সাথে নিয়ে অফিসে একসাথে সালাত আদায় করুন অথবা তাদেরকে সাথে নিয়ে পাশের কোন মসজিদেও সালাত আদায়ের জন্য যেতে পারেন।

 

৩০. ইসলামিক আচার-অনুষ্ঠানঃ বিভিন্ন সভা সমাবেশের আয়োজন করুন এবং ইসলামের দা’ঈদেরকে অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রণ করুন। অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি ও বক্তব্য দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে ইসলামকে জানার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি করবে।

 

৩১. উন্মুক্ত আলোচলাঃ দুপুরের খাবার কিংবা চা বিরতির সময়টা খোশগল্পে না কাটিয়ে ইসলামিক আলোচনার উপলক্ষ হতে পারে।

 

৩২. ইসলামিক উদ্যোগঃ ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র সাথে যারা সক্রিয়ভাবে জড়িত তাদেরকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ হাতে নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করুন।

 

৩৩. ইসলামিক দৃষ্টান্তঃ কর্তব্যপালণ এবং কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে শতভাগ আন্তরিক হউন। আপনার প্রতিটি কর্মই সাধ্যমত করার চেষ্টা করুন এবং অন্যদের চোখে প্রমাণ করুন আপনি যা করেছেন একজন ভাল মুসলিম বলেই তা করেছেন। আর এভাবেই তাদেরকে বোঝান ইসলাম কিভাবে মানুষকে সত্যকার অর্থে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গোড়ে তোলে।

 

দাওয়াহ্‌র কিছু সাধারন পন্থাঃ

৩৪. দা’ওয়াহ্‌ পোস্টারঃ অত্যন্ত দৃষ্টি-আকর্ষক এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী ব্যবহার করে পোস্টার তৈরি করুন। সামাজিক জীবনের বিভিন্ন বাস্তবিক মুহূর্তের চিত্র তুলে ধরে সেই পরিস্থিতিতে কিভাবে দা’ওয়াহ্‌ দেয়া যায় তা তুলে ধরুন। পোস্টারগুলোতে মানুষের চিন্তা উদ্রেককারী ইসলামিক স্লোগান লিখে দিন এবং সেগুলোকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টাঙানোর ব্যবস্থা করুন।

 

৩৫. ইসলামিক শুভেচ্ছা কার্ডঃ বিভিন্ন শুভেচ্ছাবাণী সম্বলিত কার্ড ছাপিয়ে সেগুলো বিতরণ করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন কিংবা অনুষ্ঠানের তারিখ দিয়ে কার্ড ছাপিয়ে সেগুলোও বিতরণ করা যেতে পারে। কার্ডগুলোতে মনোরম অক্ষরে ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয় যেমনঃ সুদ, ঘুষ, পরচর্চা, প্রতারণা ইত্যাদির কুফল উল্লেখ করুন।

 

৩৬. দা’ওয়াহ্‌ এ্যালবামঃ পরকাল সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চারকারী এবং তাদের মনে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে এমন সব ছবি সংগ্রহে রাখুন। ছবিগুলো আপনাদের দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনের দর্শনার্থীদের জন্য ব্যবহার করুন অথবা উপহার হিসেবে সেগুলো তাদেরকে দিতেও পারেন।

 

৩৭. বিয়ের কার্ডঃ বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ পৌঁছে দেয়ার জন্য ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র প্রচারপত্রের উল্টো পিঠ বিয়ের কার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, যে এলাকার লোকজন বিয়ের অনুষ্ঠানে অনৈসলামিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় সে এলাকার লোকজনদের দা’ওয়াহ্‌ দেয়ার জন্য “ইসলামে বিয়ে অনুষ্ঠানের ‘আদাব” শীর্ষক পুস্তিকা বিয়ের কার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন।

 

৩৮. টাইপিং এবং রিভিশনঃ হয়ত কোন কাউকে ইসলামের দা’ওয়াহ্‌ দিতে চাচ্ছেন কিন্তু সরাসরি কিছু বললে কাজ হবে না। সেক্ষেত্রে যা করতে পারেন তা হল, তাকে দিয়ে ইসলামিক কোন আর্টিকেল লেখান বা লেখা আর্টিকেল তাকে প্রুফ রিডিং এর জন্য দিন। এমনি এমনি হয়ত পড়ত না কিন্তু অনুরোধ করে কাজটি করতে বললে করবে এবং এক্ষেত্রে দুই কাজই হবে। লিখতে গিয়ে বা প্রুফ রিডিং করতে গিয়ে সে মনোযোগ দিয়ে পড়বে এবং ইসলামের দাওয়াহ্‌র কাজও হবে।

 

৩৯. মোবাইলের মাধ্যমে দাওয়াহঃ আপনার মোবাইল এবং ই-মেইল কন্ট্যাক্ট লিস্টের সকলকে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন ও অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে এবং মনে করিয়ে দিয়ে মেসেজ পাঠান। ইসলামে দা’ওয়াহ্‌র গুরুত্ব উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত আর্টিকেল লিখে তাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন। আমাদের ওয়েবসাইটের সব আর্টিকেল ইমেইল করে পাঠাতে পারেন।

 

৪০. ইন্টারনেট দা’ওয়াহঃ বিভিন্ন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট যেমনঃ Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে ইসলামি প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার শেয়ার  করুন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ।  ইন্টারনেটে এমন অসংখ্য চ্যাট রুম/ব্লগ আছে যেগুলোতে ইসলামের কুৎসা রটনা করা হচ্ছে, ইসলামের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এমন চ্যাট রুম/ ওয়েবসাইট গুলোতে আলোচনায় অংশ নিন এবং তাদের মিথ্যাচারকে খণ্ডন করুন।

 

৪১. গণমাধ্যমে দা’ওয়াহঃ রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য ইসলামিক অনুষ্ঠান নির্মাণ করে সেগুলো সম্প্রচারের ব্যবস্থা করুন। অনুষ্ঠানগুলো সম্প্রচারের আগেই সেগুলোর প্রচার সময় এবং চ্যানেলের নাম উল্লেখ করে ব্যপক প্রচারণা চালান। এক্ষেত্রে পূর্বোল্লিখিত পদ্ধতিতে পোস্টারের মাধ্যমে তা করতে পারেন। ফেইসবুকের সাইডবারেও আকর্ষণীয় ইমেজ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। স্থানীয় সংবাদপত্রেও ইসলাম বিষয়ক আর্টিকেল লিখে পাঠান।

 

৪২. স্টিকারের মাধ্যমে দা’ওয়াহঃ সালাত আদায় করা, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, দুস্থদের সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানুষকে মনে করিয়ে দেয় এমন মেসেজ লিখে স্টিকার আকারে সেগুলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ পাবলিক যানবাহন যেমনঃ বাস, ট্রেন ইত্যাদিতে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। স্টিকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দো’য়া যেমনঃ বাড়ীর বাইরে যাওয়ার দো’য়া, বাড়ীতে প্রবেশের দো’য়া, টয়লেটে প্রবেশের দো’য়া ইত্যাদি লিখে মানুষের মাঝে বিতরণ করুন যাতে তারা সেগুলো বাড়ীর যথাস্থানে লাগিয়ে রাখতে পারে। আবাসিক হোটেলের মালিকদের অনুমতি নিয়ে হোটেলের রুমগুলোতে সালাতের জন্য কিব্‌লা উল্লেখ করে আকর্ষণীয় স্টিকার লাগাতে পারেন।

 

৪৩. সালাত এবং সাওমের (রোজা) সময়সূচী প্রচারঃ সালাতের সময়সূচী এবং রমজান মাসে ইফতারের সময়সূচী ছাপিয়ে সেগুলোকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানোর ব্যবস্থা করুন। এতে করে মুসল্লীদের এবং যারা রোজা রাখেন তাদের অনেক উপকার হবে। এতে করে সালাতের ব্যাপারে অন্যান্যদেরও স্মরণ করিয়ে দেয়া যাবে।

 

৪৪. দিনপঞ্জি এবং কর্মসূচীঃ গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক দিন এবং কর্মসূচীর তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করে আকর্ষণীয় দিনপঞ্জি ছাপিয়ে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করুন।

 

৪৫. কলিং কার্ডঃ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে ব্যালেন্স রিচার্জ কার্ডের উপরে দা’ওয়াহ্‌ মেসেজ লিখে সেগুলো দোকানে দোকানে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করুন।এতে করে ব্যালেন্স রিচার্জ কার্ডের মাধ্যমেও কাস্টোমারদের কাছে ইসলামের দা’ওয়াহ্‌ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।

 

৪৬. পোস্ট কার্ডঃ প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য ব্যবহার করে আকর্ষণীয় পোস্ট কার্ড ডিজাইন করুন। পোস্ট কার্ডের উল্টো পিঠে ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ সম্পর্কিত মেসেজ লিখে সেগুলো ছাপানোর ব্যবস্থা করুন। উদাহরণস্বরূপ, কোন খেজুর বাগানের মনোরম দৃশ্যকে ব্যাকগ্রাউন্ড করে তার উপর কোরআনে বর্ণিত “পানি চক্র” সম্পর্কিত আয়াতের উদ্ধৃতি দিতে পারেন।

 

৪৭. দা’ওয়াহ্‌ ব্রিফকেইসঃ বিশেষ ধরনের একাধিক পকেট বিশিষ্ট ব্রিফকেইস কিনে তা কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করুন। একাধিক পকেটওয়ালা এমন ব্রিফকেইস বিভিন্ন ধরনের লিফলেট, পুস্তিকা, গুরুত্বপূর্ণ লেকচারের অডিও-ভিডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি বহনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।

 

৪৮. পত্রিকার চাঁদাঃ উপহার হিসেবে কাউকে ইসলামিক কোন পত্রিকার চাঁদা পরিমাণ টাকা পাঠিয়ে দিতে পারেন অথবা পত্রিকার চাঁদা পরিমাণ টাকা কোন দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনকে পাঠিয়ে দিতে পারেন ফলে তারাই পত্রিকাটি গ্রাহকের কাছে উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দেবে।

 

৪৯. পঠিত বই-পুস্তক এবং পত্র-পত্রিকা সংগ্রহঃ পড়া হয়ে গেছে এমন বই-পুস্তক এবং পত্র-পত্রিকা সংগ্রহের একটি উদ্যোগ হাতে নিন। সেগুলো সংগ্রহ করে এমন সব এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করুন যেখানকার লোকেরা সেগুলো এখনও পড়ার সুযোগ পাইনি।

 

৫০. পুস্তিকা-প্রচারপত্রঃ গুরুত্বপূর্ণ বই বা লেকচারে ভিডিও সিডি/ডিভিডি থেকে নির্বাচিত অংশ ছাপিয়ে পুস্তিকা বা প্রচারপত্র আকারে প্রকাশ করুন। বিভিন্ন উপলক্ষে এমনটি করা যেতে পারে। যেমনঃ হজ্ব মৌসুমে, লম্বা ছুটির ভেতরে, প্রবাসী শ্রমিকদের উপলক্ষে, বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে, রমজান মাস কিংবা ঈদ উপলক্ষে।

 

৫১. বিভিন্ন বিলের রশিদঃ সাধারন ব্যবহার্য বিল যেমনঃ টেলিফোন বিল, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি বিলের রশিদের উল্টো পীঠে সংক্ষিপ্ত দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক বিবৃতি এবং কোরআনের উপদেশবাণী লিখে তা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিন।

 

৫২. ইসলামিক স্লোগানঃ মানুষের নজর কাড়ে এমন সব আকর্ষণীয় স্লোগান বা বক্তব্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমনঃ ক্যালেন্ডার, শপিংব্যাগ, গাড়ির সানস্ক্রীন ইত্যাদিতে লিখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই শপিংব্যাগ বা গাড়ীর সানস্ক্রীন এর প্রস্তুতকারক কোম্পানির অনুমতি নিতে হবে।

 

৫৩. খোলা চিঠিঃ বিভিন্ন বয়সের মানুষকে পাঠক হিসেবে কল্পনা করে চিঠি লিখুন। মনে করুন, আপনার চিঠির পাঠক হতে পারে মসজিদের পাশের বাড়ীর কেউ অথবা সেই মসজিদের ইমাম, কিংবা একজন পাবলিক স্পিকার, একজন ডাক্তার, একজন শিক্ষক, একজন ছাত্র, একজন প্রকাশক, একজন বাবা, একজন মা, একজন স্বামী, একজন স্ত্রী, একজন চাকুরিদাতা, একজন ব্যবসায়ী, একজন ভোক্তা/ক্রেতা, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন কারাবন্দী কয়েদী অথবা একজন মুসাফির। আপনার পাঠককে উদ্দেশ্য করে তার অনুভূতিতে নাড়া দেয় এমন ভাষায় তাকে ইসলামের পথে ডাকুন।

 

৫৪. সাধারন প্রতিযোগিতাঃ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সাধারন জ্ঞানের প্রতিযোগিতা আয়োজন করুন। এক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের বয়সের কথা মাথায় রেখে বয়সের সাথে মানানসই বিভিন্ন ইসলামিক পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করুন। পুরুস্কার হিসেবে বিজয়ীদের মধ্যে ইসলামিক বই, লেকচারের সিডি-ভিসিডির সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি বিতরণ করুন।

 

৫৫. সাধারন প্রকাশনাঃ আগে হয়ত ইসলাম মেনে চলত না অথবা বিপথে চলে গিয়েছিল পরে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন হেদায়াত দান করেছেন এমন মানুষদের গল্প বা তাদের স্বীকারোক্তিমূলক কথাকে গল্প আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। এধরনের প্রকাশনায় নিয়মিত বিভাগ হিসেবে আরো যা থাকতে পারে তা হল কবিতা, নাটক, ছোট গল্প, ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনা, বিখ্যাত লোকদের জীবনী, আন্তর্জাতিক রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট, আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন অবদান ও  আবিস্কারের উপর প্রবন্ধ। প্রকাশনায় এসকল বিভাগ রাখার উদ্দেশ্য হল সেসব পাঠকদের ধরে রাখা যারা হয়ত পুরোপুরি ইসলামিক পত্রিকা পড়তে আগ্রহী নন।

 

৫৬. বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ বিতরণঃ ইসালামের দা’ওয়াহ্‌ পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত সংগঠনগুলো নিয়ম করে সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক পুস্তিকা, ক্রোড়পত্র, লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি পৌঁছে দিতে পারে। এমন কাজ স্কুলগুলোতেও করা যেতে পারে।

 

৫৭. প্রোডাকশন কোম্পানীঃ বড় ধরনের অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করে থাকে এমন কমিউনিটি সেন্টার বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। তাদের সহযোগিতায় উপস্থিত অতিথিদের মাঝে দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ যেমনঃ দা’ওয়াহ্‌ পুস্তিকা, বিখ্যাত বক্তাদের আকর্ষণীয় লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি বিতরণের ব্যবস্থা করুন।

 

৫৮. দা’ওয়াহ্‌র কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ীঃ দা’ওয়াহ্‌র কাজে ব্যবহারের জন্য হালকা দামের খোলা জীপ গাড়ী কিনতে পারেন। গাড়ীতে দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক এবং উৎসাহমূলক শব্দগুচ্ছ বা বাক্য লিখে দিন। জনসমাগম বেশী হয় এমন জায়গায় গাড়ী পার্ক করে লোকজনের মাঝে পূর্বোল্লিখিত দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ যেমনঃ দা’ওয়াহ্‌ পুস্তিকা, বিখ্যাত বক্তাদের আকর্ষণীয় লেকচারের সিডি-ভিসিডি ইত্যাদি বিতরণ করুন

 

৫৯. বিশালাকৃতির বিল বোর্ডঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ন বিজ্ঞাপন বা বিল বোর্ড টাঙিয়ে সেগুলোতে দা’ওয়াহ্‌ মেসেজ এবং ইসলামিক অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়ার ব্যবস্থা করুন। বিশালাকৃতির বিল বোর্ডগুলো সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবে। আজকাল রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্যের কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপনের জায়গায় ইসলামিক বিল বোর্ড দেখা গেলে তা লোকজনের মাঝে বৈপ্লবিক সাড়া জাগাবে।

 

৬০. ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজনঃ দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনগুলো কিশোর এবং যুবকদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন শারীয়াহ্‌ সম্মত খেলাধুলার আয়োজন করতে পারে। এমন অনুষ্ঠানগুলোতে বিজয়ীদেরসহ দর্শকদের মাঝে দা’ওয়াহ্‌ সংশ্লিষ্ট উপকরণ পুরস্কার হিসেবে বিতরণ করা যেতে পারে।

 

৬১. বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানঃ ইসলামের জন্য কাজ করতে আগ্রহী এমন ডাক্তারদের দিয়ে কোন সমমনা প্রাইভেট ক্লিনিকের অধিনে সাধারন মানুষদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করুন। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের মানুষদের সুবিধা দেয়া যেতে পারে। যেমনঃ নতুন মুসলিম হয়েছে অথবা যারা ইসলাম গ্রহনে আগ্রহী ইত্যাদি।

 

৬২. মহিলাদের জন্য কোর্সের আয়োজনঃ মহিলাদের উদ্দেশ্যে এমন সব কল্যাণধর্মী কোর্সের আয়োজন করুন যে ব্যাপারে তারা স্বভাবতই তারা আগ্রহ বোধ করে। যেমনঃ রান্না-বান্না, গারাস্থ্য অর্থনীতি, সন্তান প্রতিপালন, দাম্পত্য জীবন, গৃহ ব্যবস্থাপনা, গৃহকর্ম ও গৃহকর্মী, দাম্পত্য প্রস্তুতি, স্তন্যদান, শিশুদের রোগবালাই, গৃহ নিরাপত্তা, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি। এইসব কোর্সের পাঠ্যসূচীর বই-পুস্তকের ভিতর দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক মেসেজ সন্নিবেশ করুন।

 

৬৩. সাহায্য মেলাঃ তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে “চ্যারিটি ফেয়ার”, “চ্যারিটি ফীস্ট” ইত্যাদি নামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে তাদের সাধ্যমত আর্থিক অনুদান দেয়ার চেষ্টা করবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা নারী বিষয়ক ইসলামিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে পারেন।

 

৬৪. সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানঃ ইসলামিক স্কলার, দা’ঈ, দা’ওয়াহ্‌ সংগঠন, ইসলামিক পত্রিকা, ইসলামিক ওয়েবসাইট, ইসলামিক সিডি-ভিসিডির দোকান ইত্যাদি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজ নিজ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা পদক প্রদান উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। অনুষ্ঠানে ইসলামে দা’ওয়াহ্‌র গুরুত্ব তুলে ধরে উপস্থিত সাধারনের জন্য বক্তব্যের ব্যবস্থা রাখুন। এতে করে সাধারন মানুষ দা’ওয়াহ্‌র গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হবে।

 

৬৫. দা’ওয়াহ্‌ নির্দেশিকাঃ দেশে বেড়াতে আসা বিদেশী পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে দা’ওয়াহ্‌ গাইড বা ট্যুরিষ্ট গাইড প্রকাশ করুন। এই গাইডে যেসব বিষয় স্থান পেতে পারে তা হল বিভিন্ন জায়গার ইসলামিক সংগঠন বা দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনের ঠিকানা, ইসলামিক গ্রন্থাগার, স্টুডিও, বিখ্যাত মসজিদ, ইসলামিক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকেশন, বর্তমানে অনুষ্ঠিতব্য দা’ওয়াহ্‌ কনফারেন্স এর সময়সূচী, স্থানীয় ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের ঠিকানা ইত্যাদি।

 

৬৬. ইসলামিক প্রদর্শনীঃ সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগের সহায়তায় বড় বড় ইসলামিক বুকস্টল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে ইসলামিক প্রদর্শনীর আয়োজন করুন। এমন প্রদর্শনীতে ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রমের সাথে সমমনা স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন কোম্পানির স্টল থাকবে যেখানে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর এমন কিছু তুলে ধরবে যা ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র প্রচার-প্রসারে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।

 

৬৭. দা’ওয়াহ্‌ ওয়েবসাইটঃ দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রম চালানোর জন্য সব রকম চাহিদা মেটাতে পারে এমন দা’ওয়াহ্‌ ওয়েবসাইট নির্মাণ করুন। এই ধরনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সবরকম দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ সরবরাহ করা হবে। ফলে ওয়েবসাইটগুলো ইসলামিক বিশেষজ্ঞ বোর্ড এর ন্যায় ভুমিকা পালন করবে। এখানে দা’ওয়াহ্‌ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলোচনাও স্থান পাবে। দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর সেকশনও থাকবে।

 

৬৮. ইফ্‌তার পার্টি আয়োজনঃ দা’ওয়াহ্‌ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রমজান মাসে ইফ্‌তার পার্টির আয়োজন করুন এবং অন্যান্যদের ইফ্‌তার পার্টিতে অংশগ্রহণ করুন। ইফ্‌তার অনুষ্ঠানে সাওম বা রোজার অসাধারণ উপকারিতা এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য এর তাৎপর্য তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিন। অথবা সপ্তাহের যে কোন দুটি দিনকে নির্ধারণ করে ঐ দিনগুলোতে অন্যান্য যারা দা’ওয়াহ্‌র কাজ করছে তাদের সাথে মিলিত হয়ে পারস্পারিক মতবিনিময়ের অয়োজন করুন। এ কাজটি সারা বছর ধরেই চালিয়ে যান।

 

৬৯. হজ্ব এবং ‘উমরাঃ হজ্ব অথবা উমরা করতে যাচ্ছেন এমন মানুষদের এবং বিশেষ করে নতুন মুসলিমদের হজ্ব সফর সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে যথা সম্ভব সহায়তা করুন। ইসলামের দা’ওয়াহ্‌র কাজে

তাদের স্পৃহাকে উজ্জীবিত রাখার উদ্দেশ্যে হজ্বের পূর্বে, হজ্ব পালনের সময় এবং হজ্ব পরবর্তী কি ধরনের ভুমিকা তাদের হওয়া উচিৎ তা তুলে ধরে হজ্ব গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করুন।

 

৭০. যাতায়াত যানবাহনঃ অনেকেই দূরবর্তী কোন ইসলামিক অনুষ্ঠান, অথবা কোন দা’ওয়াহ্‌ অফিসের কোন কোর্সে যোগদানের জন্য যেতে চান কিন্তু যাতায়াত সুবিধা না থাকায় যেতে পারেন না। এক্ষেত্রে আপনি ইসলামের স্বার্থে নিজের গাড়ীতে করে এবং একটু সময় খরচ করে এমন লোকজনকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিন।

 

৭১. দা’ওয়াহ্‌ বিপণীঃ বিভিন্ন জায়গায় দা’ওয়াহ্‌ বিপণী স্থাপন করুন। এই বিপণীগুলো বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ সংগ্রহের কাজ করবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ দা’ওয়াহ্‌ উপকরণ হিসেবে ইসলামিক বই-পুস্তক, সিডি-ভিসিডি’র কপি ইত্যাদি দিতে চাইলে সেগুলো গ্রহন করবে। সংগৃহীত দা’ওয়াহ্‌ উপকরণগুলো নামমাত্র দামে মসজিদ-মাদ্রসা এবং স্কুল-কলেজগুলোতে সরবরাহ করতে হবে।

 

৭২. দা’ওয়াহ্‌ কার্যালয়ঃ স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ কার্যালয় স্থাপন করুন। অন্যান্যদেরও কার্যালয়গুলোতে নিয়ে যান। কার্যালয়গুলোর বিভিন্ন প্রোগ্রামে শরিক হউন। যারা সেখানে ইসলামের দা’ওয়াহ্‌র কাজে নিয়োজিত আছেন তাদের সহায়তা করুন, উৎসাহ দিন।

 

৭৩. মানুষের জন্য দো’য়া করুনঃ মানুষকে ইসলামের পথে ডাকার অংশ হিসেবে তাদের জন্য বিভিন্ন সময়ে দো’য়া করুন। যেমনঃ হয়ত কাউকে কোন হারাম কাজে লিপ্ত হতে দেখলে তাকে বলুন, “আল্লাহ্‌ আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন।” অথবা কেউ কোন ভাল কাজ করলে তার জন্য বলুন, আল্লাহ্‌র কাছে দো’য়া করি তিনি যেন আমাদের সবাইকে জান্নাতে তাঁর রাসূলের (সা) কাছাকাছি রাখেন।” অথবা কোন ছাত্রের জন্য দো’য়া করলে বলুন, “আল্লাহ্‌ আপনাকে ইহকাল এবং পরকালের উভয় পরীক্ষায় সাফল্য দান করুন।”

 

৭৪. ব্যক্তিগত সাক্ষাৎঃ সালাত আদায়ের ব্যপারে উদাসীন বা একবারেই সালাত আদায় করে না এমন লোকদের সাথে সরাসরি দেখা করুন। আযানের সময় হয়ে এসেছে এমন সময় তাদের সাথে দেখা করুন যাতে করে তাদেরকে সাথে নিয়ে মসজিদে যেতে পারেন।

 

৭৫. ইসলাম গ্রহণের ঘোষণাঃ সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী মুসলিমদের জুম’আর মসজিদে নিয়ে আসুন। সালাত শেষে তাদের মুখ থেকেই শুনুন কিভাবে বা কেন তারা ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিল। ইসলামের কোন কোন দিক তাদেরকে বেশী আকর্ষণ করেছে। তাদের কাছ থেকে শোনার পর উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে দা’ওয়াহ্‌র বিভিন্ন উপায় তুলে ধরে কিছু বলুন যা তাদের কাজে আসবে। ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি কোন মহিলা হলে তাকে কোন গার্লস স্কুল বা কোন মহিলা সংস্থায় নিয়ে যান এবং সেখানে তার ম্নুখ থেকে ইসলাম গ্রহণের কাহিনী শুনুন । এতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।

 

৭৬. সাধারণ যানবাহনঃ আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক পোস্টার, স্টিকার, অডিও সিডি/ডিভিডি ইত্যাদি ছাপিয়ে এবং তৈরি করে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট যানবাহনের মালিক সমিতির কাছে সরবরাহ করুন। এগুলো তারা তাদের বাস, প্রাইভেট কার, মোটর বা ট্যাক্সি ক্যাব ইত্যাদিতে ব্যবহার করবে। মাঝে মাঝে ইসলামিক দা’ওয়াহ্‌র কাজে সহযোগিতার জন্য তাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন।

 

৭৭. দা’ওয়াহ্‌ বুথঃ শহরের বড় বড় শপিং মল, সুপার মার্কেট এলাকা, নিউমার্কেট এলাকা ইত্যাদি যে স্থানগুলোতে প্রচুর জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে দা’ওয়াহ্‌ বুথ স্থাপন করুন। এই দা’ওয়াহ্‌ বুথ বা দা’ওয়াহ্‌ স্টলগুলোর টেবিলে দা’ওয়াহ্‌ বিষয়ক ক্লিপ্স দেখানোর জন্য রাখতে হবে বড় পর্দার টেলিভিশন। সাথে থাকবে নজরকাড়া প্রচ্ছদের সব দা’ওয়াহ্‌ সংশ্লিষ্ট ইসলামিক বই-পুস্তক, দা’ওয়াহ্‌ পত্রিকা, অডিও ক্যাসেট, ভিডিও, সিডি, ভিসিডি ইত্যাদির অনন্য সমাহার যা উপস্থিত দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।

 

৭৮. টেলিফোন দা’ওয়াহঃ আপনার মোবাইল বা টেলিফোনের ওয়েলকাম টিউন হিসেবে বিভিন্ন দা’ওয়াহ্‌ মেসেজ ব্যবহার করুন। কোন কলার আপনাকে কল করলে তিনি তা শুনতে পাবেন। ফোনকলটি রিসিভ না করা পর্যন্ত কলার মেসেজটি শুনতে থাকবেন। ওয়েলকাম টিউনটি হতে পারে, “সম্মানিত কলার, আপনি আজকে সালাত আদায় করেছেন তো? কারণ সালাতই হল একজন কাফির ও মুসলিমের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয়।” এছাড়া মোবাইল এবং টেলিফোনের মাধ্যমে দাওয়াহ্‌ সেন্টার থেকে লোকজন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পারেন।

 

৭৯. আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্সঃ আরবি ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু করুন। এই কোর্সগুলো কথোপকথনমূলক (কনভারসেশনাল) আরবি ভাষা এবং আরবি ব্যকরনের উপর গুরুত্ব দিতে পারে। এক্ষেত্রে আরবি ব্যকরনের জ্ঞান কোরআন বুঝে পড়তে সাহায্য করবে। সরাসরি কোর্সের বদলে ধারণকৃত ক্লাস লেকচার প্রোজেক্টরে দেখানোর মাধ্যমেও আরবি ভাষা শেখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কাজটি নিজের বাড়ী কিংবা কর্মক্ষেত্রে যেখানে সুবিধা করা যেতে পারে।

 

৮০. ইসলামিক কোর্সঃ তাওহীদ, শির্‌ক, বিদ্‌য়া’হ্‌, হালাল-হারাম, ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য, ইসলামে দাম্পত্য জীবন, ইসলামে নারী অধিকার, বিয়ে অনুষ্ঠানের ‘আদব ইত্যাদিসহ আকীদাহ্‌গত বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইসলামিক কোর্সের আয়োজন করুন। কোর্সগুলো স্থানীয় মসজিদ বা দা’ওয়াহ্‌ সংগঠনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এছাড়া যারা ইসলামের দা’ঈ হিসেবে কাজ করতে চাই তাদের জন্য দা’ওয়াহ্‌ ট্রেনিং কোর্সের আয়োজন করুন।

 

৮১. দা’ওয়াহ্‌ দিবসঃ উন্মুক্ত দা’ওয়াহ্‌ দিবসের আয়োজন করুন এবং এতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখুন। অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ, দেশী-বিদেশী সকলশ্রেণীর মানুষদের জন্য সুব্যবস্থা রাখুন। দা’ওয়াহ্‌ দিবস অনুষ্ঠানের একমাস আগে থেকেই স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সকল জায়গায় মৌখিক ঘোষণা এবং পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারনা চালিয়ে তা সকলকে জানিয়ে দিন যাতে করে দা’ওয়াহ্‌ দিবসের আয়োজন মানুষের মুখে মুখে প্রচার লাভ করে।

 

পরিশেষে, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে আমরা এই দো’য়া করি তিনি যেন আমাদের প্রত্যেককে তাঁর দ্বীনের দা’ঈ হিসেবে কবুল করে নেন এবং তাঁর জান্নাতে আমাদেরকে সেই সমস্ত সৎকর্মশীলদের পাশে স্থান দেন যারা তাঁর দ্বীনকে সঠিকভাবে পালন করে গেছেন।

English Version

আল্লাহর পথে দাওয়াত – পর্ব ১  | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪

 

অনুগ্রহ করে আপনার আইডিয়া শেয়ার করুন আমাদের সাথে, কমেন্ট সেকশনে। 

স্বামীর যেসব গুণাবলীর কারণে স্ত্রীরা তাদের ভালোবাসেন

$
0
0

আমরা জানি,আমাদের মাঝে সে ব্যক্তি ভালো যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো। একজন পুরুষ ভালো জীবনসঙ্গী হিসেবে তার স্ত্রীর কাছে ভালো স্বামী হতে পারেন নানান উপায়ে। স্ত্রীর কাছে স্বামীরা যেসব গুণাবলীর কারণে ভালো হয় তার মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু গুণ হলো —

read-copy

১) স্ত্রীর প্রতি তিনি সুন্দর ব্যবহার করেন। উত্তম শব্দ ব্যবহার করে কথা বলেন। তার প্রতি তিনি নম্র ও দয়ার্দ্র থাকেন।

২) জীবনসঙ্গিনীর অধিকারের বিষয়গুলো তিনি অবহেলা করেন না, তা পরিপূর্ণভাবে পূরণ করতে চেষ্টা করেন।

৩) বাইরে নানান কাজে থাকলেও অন্য কোন মহিলার ব্যাপারে তিনি আগ্রহী হন না। দৃষ্টিকে সংযত রাখেন, হৃদয়েকেও অত্যন্ত সচেতনভাবে সতর্ক রাখেন।

৪) নিজে ইসলাম শিখেন নিয়মিত, স্ত্রীকে নিয়ে শিখেন এবং তাকে উৎসাহিত করেন। দু’জনে মিলে ইসলামকে পালনের চেষ্টা করেন।

৫) জীবনসঙ্গিনী যখন খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, তিনি শক্ত অবলম্বন হয়ে তার পাশে থাকেন।

৬) যদি তার স্ত্রী কখনো তাকে কষ্ট বা আঘাত দিয়ে ফেলে, তিনি নিজেকে শান্ত রাখেন। খেপে যান না কেননা তিনি ধরেই নেন স্ত্রী হয়ত তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিতে চাননি, অসতর্কতায় এমনটি হয়ে গেছে।

৭) জীবনসঙ্গিনীর ছোট ছোট ভুলগুলো তিনি এড়িয়ে যান এবং তার ভালো কাজগুলোকে উৎসাহিত করেন। তার পরিশ্রমের কাজগুলোর ব্যাপারে প্রশংসা করেন।

৮) ঘরের কাজগুলোতে স্ত্রীকে সাধ্যমতন সাহায্য করেন। তার জন্য কাজ ফেলে রেখে দেন না।

৯) সন্তানদেরকে ইসলামিক জ্ঞানে এবং আচরণে বড় করার ব্যাপারে সচেতন থাকেন। সন্তানদের ইসলামিকভাবে বড় করা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আলাপ করে স্ত্রীর সাথে। বাবা-মায়ের আচরণ সন্তানদের প্রভাবিত করে, তাই বাবা-মায়েরা নিজেরাও সচেতন থাকেন নিজেদের ব্যক্তিগত চরিত্র, স্বভাব এবং আচরণ নিয়ে।

১০) কোন কারণে মনোমালিন্য হলেও ঘরের বাইরে কখনো দু’জনে আলাদা হন না, স্ত্রী বাইরে যাবার প্রয়োজন হলে সবসময় তাকে সঙ্গ দেন। মাঝে-মাঝেই দু’জনে মিলে ঘুরতে যান যেন স্ত্রী কিছুটা সময় তার সঙ্গ পেয়ে আনন্দিত হয় যা তাদের সম্পর্ককে প্রগাঢ় করবে।

আল্লাহ্‌ভীরু জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী খুজতে ভিজিট করুন

http://bd.purematrimony.com/ –Pure Matrimony Bangladesh

প্রবন্ধটি নেওয়া হয়েছে “দাম্পত্য টিপস” ওয়েবসাইট থেকে

প্রতিবেশীর অধিকার ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব

$
0
0

আমরা আজ যে সমাজ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত তাতে আমাদের অনুভূতিগুলোও দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখাই যেন আজকালকার যুগের সবার চিন্তাধারার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইট পাথরের দালানে থাকা আমরাও যেন অনুভূতিহীন কলের পুতুল। পাশের দরজার প্রতিবেশীর বিপদে আপদে, তাদের সুখ দুঃখের সঙ্গী হওয়া তো আজকাল দুরের কথা, কেউ কাউকে চিনিই না অনেক সময়। এরপরও কি আমরা দাবী করতে পারি আমরা সত্যিকারের মুসলমান? আসুন দেখি প্রতিবেশীদের অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল আমাদেরকে কি বলেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا

অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না, এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। ( সূরা নিসা: ৩৬)

এই সম্পর্কিত হাদিস সমূহ-

১) ইবনে উমার ও আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জিব্রাইল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।” (সহীহুল বুখারী ৬০১৪ ও মুসলিম ২৬২৪)

২) আবূ যার (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “হে আবূ যার! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমান বেশী কর। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমত পৌছে দাও। (মুসলিম ২৬২৫)

৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না।” (সহীহুল বুখারী ৬০১৬)

৪) মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে  থাকে না। উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হক না কেন। (সহীহুল বুখারী ২৫৬৬ ও মুসলিম ১০৩০)

৫) উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ ইত্যাদি) গাড়তে নিষেধ না করে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন, কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ)কে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব)। (সহীহুল বুখারী ২৪৬৩,৫৬২৭ ও মুসলিম ১৬০৯)

৬) উক্ত রাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।” (সহীহুল বুখারী ৬০১৮,৩৩৩১, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮)

৭) আবূ শুরায়হ খু্যায়ী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার কর। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।” (সহীহুল বুখারী ৬০১৯,৬১৩৫, মুসলিম ৪৮)

৮) আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে।(যদি দু’জনকেই দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে) আমি তাঁদের মধ্যে কার নিকট হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’ তিনি বললেন, “যার দরজা তোমার বেশী নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)।” (সহীহুল বুখারী ৬০২০,২২৫৯, আবূ দাউদ ৫১৫৫)

৯) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সর্ব উওম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উওম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্ব উওম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উওম।” (তিরমিযী ১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৩০, দারেমী ২৪৩৭)

এখনো কি আমরা আমাদের প্রতিবেশীর ভালমন্দের খবর নেব না?

বইঃ হাদীসের নামে জালিয়াতি –প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা

$
0
0

hadiser name jaliyati

লিখেছেনঃ ড. খোন্দকার আব্দুলাহ জাহাঙ্গীর

{পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম. এ. (রিয়াদ), এম.এম. (ঢাকা)
অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া}

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ কুরআন কারীমের পরে রাসূলুলাহ (সাঃ)-এর হাদীস ইসলামী জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থার দ্বিতীয় ভিত্তি। মুমিনের জীবন আবর্তিত হয় রাসূলুলাহ (সাঃ)-এর হাদীসকে কেন্দ্র করে। হাদীস ছাড়া কুরাআন বুঝা ও বাস্তাবায়ন করাও সম্ভব নয়। হাদীসের প্রতি এই স্বভাবজাত ভালবাসা ও নির্ভরতার সুযোগে অনেক জালিয়াত বিভিন প্রকারের বানোয়াট কথা ‘হাদীস’ নামে সমাজে প্রচার করেছে। সকল যুগে আলিমগণ এসকল জাল ও বানোয়াট কথা নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করে মুসলমানদেরকে সচেতন করেছেন।

আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে হাদীসের পঠন, পাঠন ও চর্চা থাকলেও সহীহ, যয়ীফ ও বানোয়াট হাদীসের বাছাইয়ের বিষয়ে বিশেষ অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। যুগ যুগ ধরে অগণিত বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা হাদীস নামে আমাদের সমাজে প্রচারিত হয়েছে ও হচ্ছে। এতে আমরা রাসূলুলাহ (সাঃ)-এর নামে মিথ্যা বলার কঠিন পাপের মধ্যে নিপতিত হচ্ছি। এছাড়াও দুইভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। প্রথমত, এ সকল বানোয়াট হাদীস আমাদেরকে সহীহ হাদীসের শিক্ষা, চর্চা ও আমল থেকে বিরত রাখছে। দ্বিতীয়ত, এগুলির উপর আমল করে আমরা আলাহর কাছে পুরস্কারের বদলে শাস্তি পাওনা করে নিচ্ছি।

এই পুস্তকের প্রথম পর্বে হাদীসের পরিচয়, হাদীসের নামে মিথ্যার বিধান, ইতিহাস, হাদীসের নির্ভুলতা নির্ণয়ে সাহাবীগণ ও পরবর্তী মুহাদ্দিসগণের নিরীক্ষা পদ্ধতি, নিরীক্ষার ফলাফল, মিথ্যার প্রকারভেদ, মিথ্যাবাদী রাবীগণের শ্রেণীভাগ, জাল হাদীস নির্ধারণের পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি এই আলোচনা পাঠকের মনের দ্বিধা ও অস্পষ্টতা দূর করবে এবং হাদীসের নির্ভুলতা রক্ষায় মুসলিম উম্মাহর অলৌকিক বৈশিষ্ট্য পাঠকের কাছে স্পষ্ট হবে।

দ্বিতীয় পর্বে আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিনড়ব ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও জাল হাদীসের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, জাল হাদীসের বিষয়ে লেখকের মূলত নিজের কোনো মতামত উলেখ করা হয়নি। দ্বিতীয় হিজরীর তাবেয়ী ও তাবে- তাবেয়ী ইমামগণ থেকে শুরু করে পরবর্তী যুগের অগণিত মুহাদ্দিস রাসূলুলাহ (সাঃ)-এর নামে প্রচারিত সকল হাদীস সংকলন করে, গভীর নিরীক্ষা ও যাচাইয়ের মাধ্যমে সে সকল হাদীস ও রাবীদের বিষয়ে যে সকল মতামত প্রদান করেছেন লেখক মূলত সেগুলির উপরেই নির্ভর করেছেন এবং তাঁদের মতামতই উল্লেখ্য করা হয়েছে।

পাঠকদের কম্পিউটারে পড়ার সুবিধার্থে বইটিতে Interactive Link অ্যাড করেছে কুরআনের আলো টিম। মানে আপনি যখন সূচীপত্র থেকে কোন বিষয় পড়তে চাবেন, তখন আপনাকে কষ্ট করে বিষয়টা খুঁজতে হবে না। আপনি সুধু বিষয়টির উপর ক্লিক করলেই, আপনাকে সেই বিষয়টি তাৎক্ষণিক দেখাবে। আবার বইটির উপরে Contents এ ক্লিক করলে, আপনাকে সূচীপত্রে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।

 

হাদীসের নামে জালিয়াতি – QuranerAlo Server

হাদীসের নামে জালিয়াতি – Mediafire

 

 বইটি ভালো লাগলে অবশ্যই একটি Hard Copy সংগ্রহ করে, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করুন।

Viewing all 514 articles
Browse latest View live