Quantcast
Channel: QuranerAlo.com – কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট
Viewing all 514 articles
Browse latest View live

মাদকের ভয়ঙ্কর ছোবলে যুব সমাজ : প্রয়োজন ইসলামী চেতনা

$
0
0

লেখকঃ মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম

সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

urlইসলামের এটিও একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার প্রতি লক্ষ করে খাওয়াদাওয়ার জিনিসকে হালাল অথবা হারামে বিভক্ত করে দিয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, ধর্ম, ইজ্জত, জান, মাল ও বুদ্ধি এই পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের নিরাপত্তাই প্রকৃত নিরাপত্তা। মানবরচিত আইনে এই পাঁচ বিষয়ে নিরাপত্তার সঠিক ও কাংক্ষিত নিশ্চয়তা দিতে পারে না। বিবেক-বুদ্ধিকে সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা করার বিষয়ে ইসলামে যথেষ্ট উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়, ইসলামে নেশাগ্রস্ত বস্তুগুলো হারাম ঘোষণা করা ও নেশাখোর ব্যক্তির শাস্তির ব্যবস্থার মাধ্যমে।

ইসলামে ঘোষিত হারাম দ্রব্যগুলোর ওপর যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা-গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, এর মধ্যে সত্যিই ধ্বংসাত্মক পরিণতি রয়েছে। সাময়িক ও ছোটখাটো কোনো কল্যাণ থাকলেও তা সময়ের ব্যবধানে ক্ষতিরই কারণ হয়ে দেখা দেয়। যে দ্রব্য জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে দেয়, নেশা সৃষ্টি করে, ধ্বংস করে মানবীয় গুণাবলি এবং ধ্বংস করে দেয় সমাজ ও সভ্যতাকে, তা-ই মাদক। ইসলামে তা পুরোপুরি হারাম ঘোষণা করেছে। দেড় হাজার বছর আগেই প্রিয়তম রাসুল (সা.) অত্যন্ত দরদি ও কঠোর কণ্ঠে আহ্বান করেছেন, মাদক রুখে দাঁড়াও। সুস্থ সুন্দর সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলো।

কুরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি এবং ভাগ্যনির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো বর্জন করো, তাহলে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পারবে। শয়তান চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আলৱাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে চায়। তবু কি তোমরা নিবৃত হবে না?’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৯০ ও ৯১)।

‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত ২৯)।

‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫)।

‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের জন্য বাহন দান করেছি, তাদেরকে উত্তম রিজিক দান করেছি এবং অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা ইসরা, আয়াত ৭০)

হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রাযি.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাদকাসক্ত ১০ ধরনের ব্যক্তির ওপর অভিশাপ করেছেন। যথা-

১. যে ব্যক্তি মদ জাতীয় বস্তুর নির্যাস বের করে,

২. যে ব্যক্তি মদ প্রস্তুত করে,

৩. যে ব্যক্তি মদ পান করে,

৪. যে ব্যক্তি মদ পান করায়,

৫. যে ব্যক্তি মদ আমদানি করে,

৬. যার জন্য মদ আমদানি করা হয়,

৭. মদ বিক্রেতা,

৮. মদ ক্রেতা,

৯. অন্যকে সরবরাহকারী এবং

১০. মদের লাভের অংশ ভোগকারী।’ (ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ, ২, পৃষ্ঠা ১১২২, হাদিস নম্বর ৩৩৮১)

শুরুতে ইসলামের মাদকবিরোধিতা পাশ্চাত্য দেশগুলোতে উপহাসের ব্যাপার ছিল। তারা নেশায় বুঁদ হয়ে তুলে ধরেছে নিজেদের বেহায়াপনা, নোংরামি এবং নানা ধরনের সভ্যতাবিবর্জিত অমানসিক আচরণ এবং অশালীন কর্মকান্ড। তারা ইসলামের কল্যাণকর মহান বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল। পারেনি। উল্টো এখন সর্বস্তরে মাদকবিরোধী আন্দোলন শুর্ব হয়েছে। মাদকবিরোধী জনমত গঠনে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই নানা ফোরাম গড়ে উঠেছে। এসবের মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে, ইসলাম চিরসত্য সুমহান আদশের্র নাম। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ইসলামই মাদক র্বখে দাঁড়ানোর বির্বদ্ধে আহ্বান করেছিল। প্রথমে মাদকবিরোধী আদর্শিক এবং চিন্তার আন্দোলন শুর্ব করে, পরে সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ইসলাম মাদকের বির্বদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছে।

মদ-জাতীয় দ্রব্য সেবন করলে এর প্রতিক্রিয়া শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। মানবশরীরে স্নায়ুযন্ত্রটির রয়েছে ১৩০০ কোটি কন্ট্রোল র্বম। সেই কন্ট্রোল র্বম বা নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে গোটা দেহের কোটি কোটি সেনা ও প্রহরীকে নিয়ন্ত্রণ করে।

‘এ হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহ ছাড়া যারা রয়েছে তারা কী সৃষ্টি করেছে, আমাকে দেখাও।’ (সুরা লুকমান, আয়াত ১১)

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার কম্পিউটারের চেয়েও হাজার কোটি গুণ নিখুঁত এই ছোট্ট যন্ত্র। এর প্রতিটি কর্মতৎপর সেলের নাম নিউরন। প্রতি সেকেন্ডে শত শত নিউরন এসে ব্রেইনের প্রাথমিক স্তরে জমা হতে থাকে। এগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে, যাকে বলা হয় যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকক্ষ। মূল নিয়ন্ত্রকের আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার কোটি সেলে ছড়িয়ে দেয়। মদের মন্দ প্রভাব প্রথমত এই যন্ত্রের স্নায়ুকোষে দেখা দেয়। স্নায়ুকোষের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার মিলিয়ন। এই স্নায়ুকোষগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একবার নষ্ট হয়ে গেলে আর ঠিক হয় না বা নতুন করে তৈরি হয় না, যার ফলে মানুষ অতীতের ঘটনা স্মরণ রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং কোনো কাজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মদ ব্রেইনের টিস্যু সেলগুলোর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ কারণে মদ্যপায়ী ব্যক্তির বুদ্ধিবৃত্তি, হিতাহিত জ্ঞান পর্যায়ক্রমে লোপ পেতে দেখা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, এক গ্লাস অ্যালকোহল মগজের কিছু কোষ ধ্বংস করে বা মেরে ফেলে। মানুষ যতবার এই অ্যালকোহল পান করে ততবারই এই সর্বনাশ বা ক্ষতি বাড়তে থাকে।

আমেরিকার ইন্ডিয়ানা পুলিশের সংবাদ সংস্থা ইন্ডিয়ানা ইউনির্ভাসিটি মেডিক্যাল প্রফেসর ডাক্তার লোহর জয়ের একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, মদের নেশার প্রভাব সবচেয়ে বেশি ব্রেইনের ওপর পড়ে। তা পান করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তের সঙ্গে মিশে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পরিমাণে অল্প সেবন করলেও কু-প্রভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় শক্তি উৎপাদনযন্ত্র, যার নাম কালব বা হার্ট। মানবদেহের বাম পাশে সামনের দিকে পেটের একটু ওপরে এই ছোট্ট অংশটি হচ্ছে মানবদেহের সর্বাধিক জর্বরি অংশ। কালবের দৈর্ঘ্য ১২.৫ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৮.৫ সেন্টিমিটার। জন্মের সময় এর ওজন থাকে ২০-২৫ গ্রাম। পুর্বষের যৌবন বা বালেগ হওয়ার সময় ওজন হয় ৩১০ গ্রাম এবং মহিলার হয় ২২৫ গ্রাম। হৃদযন্ত্রটি প্রতি মিনিটে প্রায় ৭০টি স্পন্দনের মাধ্যমে ৫ লিটার রক্ত পরিচালনা করে। তাতে দেখা যায়, প্রতিদিন এক লাখ স্পন্দনের মাধ্যমে সাত হাজার ২০০ লিটার রক্ত পরিচালন করে। আলৱাহু আকবার! হৃৎপিন্ডের স্পন্দনের মাধ্যমে রক্ত শিরার মধ্য দিয়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা দৈনিক এক লাখ কিলোমিটার সমপরিমাণ। (আমেরিকার ক্যারোলিনা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ড. মালকিন কিন্সলি এবং তার সহকর্মী এ তথ্যগুলো প্রমাণ করেছেন।)

হৃৎপিন্ড থেকে ফুসফুস, এরপর ফুসফুস থেকে হৃদৎপিন্ড রক্ত আসা-যাওয়ার সময় লাগে ছয় সেকেন্ড। হৃৎপিন্ড থেকে ব্রেইন, এরপর আবার ব্রেইন থেকে হৃৎপিন্ডে আসতে সময় লাগে আট সেকেন্ড। হৃৎপিন্ড থেকে পায়ের আঙুল দিয়ে আবার হৃৎপিন্ডে ফিরে আসতে সময় লাগে আঠারো সেকেন্ড। এ সংখ্যা ও সময় নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট। হৃৎপিন্ডের চালিকাশক্তি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিত রূপে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা কামার, আয়াত ৪৯)।

এটা আলৱাহর কারিগরি, যিনি সবকিছু সুসংহত করেছেন।’ (সুরা নামল, আয়াত ৮৮)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এসব অভিনব যন্ত্র মানুষের মাঝে স্থাপন করে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছেন। মদ ওই যন্ত্রের দায়িত্ব পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। মদ সেবনের ফলে হৃৎপিন্ড সর্বশেষ মূল্যবান অনুভূতি যন্ত্রের মিলিত (ঠধষধহপপ) হওয়ার স্থানে ছাকনির কাজ দেয়। কিন্তু অ্যালকোহল এ নাজুক কাজটিকেও ব্যাহত করে। সরকারি মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাদকাসক্তির ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় দেখা দেয়। নেশার মাত্রার তারতম্য হলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। হৃৎপিন্ড অচল হয়ে গেলে দেহের অন্য সবকটি যন্ত্র চালু থাকলেও মূল মানুষটিকে আর জীবন্ত বলা যায় না। মদের ক্ষতিকর প্রভাব কলিজার ওপর আঘাত করে। মানুষের কলিজা ওই অনুভূতি গবেষণা কেন্দ্র, যা শরীরের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুকেও বিষের মতো অনুভূতিপ্রবণ করে তোলে। উভয় অঙ্গ পরস্পর একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত এবং এই অঙ্গ দুটি অনেক কঠিন কাজ সম্পাদন করে। (ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ, সুন্নাতে রাসুল (সা.) ও আধুনিক বিজ্ঞান)।

এই দুটি অঙ্গে অনুভূতিশীল বিশেষ ধরনের আবরণ থাকে। অ্যালকোহল পান করলে আবরণটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। এর মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে মদ বা অ্যালকোহলের ব্যবহারকেই ধরে নেওয়া হয়েছে। শরাব পানের কারণে কলিজা সংকুচিত হয়। রক্ত উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। তা ছাড়া কলিজার ওই শক্তি যার মাধ্যমে দেহ রক্ষাকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন প্রকার গ্লোবিন তৈরি, বিশেষ করে ওসসঁহড় এষড়নঁষরহ তৈরি হয়। মদ সেবনকারীদের দেহে তা ভয়াবহভাবে হ্রাস পায়। ফলে তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খর্ব হয়ে যায়। বর্তমান বিশ্বে সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টিকারী মরণব্যাধি এইডস, মদ পান করার কারণেও হয়ে থাকে। (মুহাম্মদ ওসমান গনী, আল্লাহর একত্ববাদ ও আধুনিক বিজ্ঞান ।)

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, যে মদ পান করে তার পাকস্থলীতে ধ্বংসাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি হয়। এমনকি তার পাকস্থলী প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে তার ক্ষুধা লাগে খুব কম। সে জন্য তাকে অল্প আহারে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তাই দিন দিন পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হয়। শরীর শুকিয়ে যায়, ওজন কমে যায়, যক্ষ্মা রোগের সৃষ্টি হয়। কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হয়। বার্ধক্য ত্বরাণ্বিত করে, যৌনশক্তি লোপ পাওয়াসহ অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি মদের কারণে দেখা দেয়। মাদকের বির্বদ্ধে ইসলামের আপসহীন আন্দোলনে আপনিও অংশ নিন। মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলুন।


কিভাবে নামাজের মধুরতা আস্বাদন করা যায়? পর্ব ১

$
0
0

কিভাবে নামাজের মধুরতা আস্বাদন করা যায়? পর্ব ১

http://www.suhaibwebb.com/personaldvlpt/how-to-taste-the-sweetness-of-prayer/ থেকে অনুবাদকৃত।

পরম করুনাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

সকল প্রশংসা ও শুকরিয়া আল্লাহ তায়ালার জন্যে, এবং অজস্র দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সকল নবী রাসুল গনের উপর|

বেশ কিছুদিন আগে, কুয়েতী দা’য়ী মিশারী আল-খারাজ এর উপস্থাপনায় ”كيف تتلذذ بالصلاة؟” নামে একটি আরবি প্রোগ্রাম প্রচারিত হয়েছিল যার মানে হলো: “কিভাবে নামাজের মধুরতা আস্বাদন করা যায়?” আমা…দের প্রায় সবারই নামাজের ‘খুশু’ কমবেশি হয়ে থাকে| খুশু কী? এটা আসলে অন্তরের বা মনের একটি অবস্থা যা নামাজে প্রশান্তি, গাম্ভীর্য ও বিনম্রতা বজায় রাখে; যা হৃদয় থেকে বর্ষিত হয়ে আমাদের আল্লাহর সামনে বিনম্র ও আম্ত্মসমর্পিত করে|

কোন কোন সময় নামাজে আমাদের আরাধনা এমন হয় যেনো আমরা প্রতিটা শব্দ কে ভেতর থেকে অনুভব করি; আবার অন্য সময় নামাজ শুধু নিয়ম মেনে উঠাবসা ছাড়া আর কিছুই হয় না| ইনশা-আল্লাহ, আমরা আগামী কিছুদিন নামাজের অতিগুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করব|

এক আনসারী ও এক মুহাজির এর কাহিনী:

সুনানে আবু দাউদ থেকে হাসান সনদে বর্ণিত; কোন একটি যুদ্ধের সময় নবী(সা:) দুজন পাহারাদার নিয়োগ করেন, তাদের একজন ছিলেন মুহাজিরীন, আরেকজন ছিলেন আনসার| একটা সময় আনসারী সাহাবী নামাজের জন্য উঠে পড়লেন অপরদিকে মুহাজিরীন সাহাবী তখন ক্লান্তিতে তন্দ্রা মতো এসেছিলেন| এই সময় প্রতিপক্ষের এক মুশরিক এই অবস্থা দেখে সুযোগ বুঝে আনসার সাহাবীর দিকে তীর ছুড়ে মারেন| এটা তাঁর গায়ে লাগে, কিন্তু তবুও কষ্ট করে তীর বের করে রক্তাক্ত অবস্থায় নামাজ চালিয়ে গেলেন| এটা দেখে ঐ মুশরিক আবার তীর নিক্ষেপ করলেন| আবারও আনসার সাহাবী তীরটি অপসারণ করে নামাজ চালিয়ে গেলেন| কিন্তু যখন তৃতীয় তীর আঘাত হানল; তিনি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না এবং তিনি রুকু এবং সেজদায় চলে গেলেন, এর মাঝে মুহাজিরীন সাহাবীর ঘুম ভেঙ্গে যায়(মুশরিক তা দেখে পালিয়ে যায়), এবং তাঁর সাথীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে চেঁচিয়ে উঠে বললেন “সুবহান-আল্লাহ! যখন প্রথম সে তোমাকে আঘাত করেছিলো আমাকে কেন ডাকলে না?” আনসারী সাহাবীর উত্তর ছিল, “আমি তখন এমন একটি সুরা তিলাওয়াত করছিলাম যা আমি ভালবাসি, আর আমি সেটা থামাতে চাচ্ছিলাম না|” আল্লাহ আকবার, আমাদের পক্ষে কী কল্পনা করা সম্ভব কী পরিমান আবেগ ও নিষ্ঠা ছিলো তাঁর নামাজে?

নামাজের মধুরতা:

নামাজ হল সর্বোত্তম ইবাদত| যখন কেউ নামাজ শেষ করার উদ্দেশ্যে সালাম ফেরায়(তাসলিম) তখন সে নিশ্চিত ভাবেই এক প্রশান্তি লাভ করে| ইবনে আল যাওজী নামাজের ব্যাপারে বলেন:
إنا في روضة طعامنا فيها الخشوع و شرابنا فيها الدموع

“আমরা এমন এক উদ্যানে অবস্থান করি যেখানে আমাদের খাদ্য হল খুশু আর পানীয় হল অশ্রু”
যে নামাজে পূর্ণভাবে আরাধনা করে তার আত্মা তার কাছে আর থাকেনা; যেমন ইবনে তায়মিয়্যাহ বলেন, তার রুহ আসলে আল্লাহর আরশের তাওয়াফ করতে থাকে|

কেউ একথা বলতে পারেন যে এরাতো আগের জামানার মানুষ| এখন কেউ এরকম অনুভব করেন না| কিন্তু এ কথা মোটেও সত্য নয়; যে কেউ নামাজের এই অমৃতসুধার সন্ধান পেতে পারে, আর এর জন্য দরকার নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং খুশু অর্জনের রহস্য উন্মোচন করা| আর এর মাধ্যমেই নামাজ হতে পারে আমাদের সব কিছুর সমাধান; সব দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি ও হতাশার ঔষুধ, এমন কিছু যার মাঝে আমরা পরম প্রশান্তি লাভ করি; এমন কিছু যা আমরা চাই কখনও শেষ না হোক|

চলুন তাহলে শুরু করি রহস্য উন্মোচন এবং আল্লাহর সাথে কথোপকথন|

১: প্রথমত আমাদের যে কাজটি করতে হবে সেটা হলো খুশু সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে| খুশু মানে শুধু এই না যে আপনি খুবই কষ্ট করে এমন মনোনিবেশ করেছেন যে আপনাকে আর ভিন্নমুখী করা সম্ভবই নয়| একাগ্রত হৃদয় বা মন হল খুশুর প্রথম স্তর| অনেকটা এরকম যে আপনি কেবল একটি বাড়ির দরজা খুলেছেন, এখনো পুরো বাড়িটা দেখা বাকি আছে| খুশুর গভীরতা অসীম|
অনেকেরই এটা মনে হয় যে মনকে একাগ্রত করা, নিজের চিন্তা চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করা খুবই কঠিন কাজ| এই ধারনাকে নির্মূল করতে নামাজে আসার সময়ই আমাদের নামাজের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আসতে হবে| ধরা যাক আমাদের প্রতি নামাজে ১০ মিনিট সময় লাগে| মানে দিনে ৫০ মিনিট; এক ঘন্টাও না| বাকি তেইশ ঘন্টা আমার দুনিয়ার জন্য| এই পঞ্চাশটা মিনিটও কী আমরা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য দিতে পারিনা? এইটুকু সময়েও কী আমরা দুনিয়ার জিনিস নিয়ে ভাববো?

নামাজ শুরুর আগে এই কথা গুলো মনে মনে ভাববেন, যাতে আমাদের নফস আমাদের এই বলে ধোঁকা দিতে না পারে যে “নামাজে মনোযোগ দেয়া খুবই কঠিন”-কারণ এটা খুবই সম্ভব একটা কাজ; মনে রাখা উচিত আল্লাহর সামনে দাড়ানোর আনন্দ/মিষ্টতা দুনিয়ার যেকোনো প্রলোভনের চেয়ে অনেক অনেক আকাঙ্ক্ষিত, অনেক সুখের| শুধু একবার তা অনুভব করলে আর কিছুতেই মন উদাস হবে না|

নামাজের গভীরতা:

নামাজের আসল স্বাদ আস্বাদনের অন্যতম একটি উপায় হলো; নামাজ বুঝে বুঝে পড়া| কী তিলাওয়াত করা হছে তা বোঝা ও তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা| ঐ প্রোগ্রামটিতে, মিশারী আল-খারাজি বলছিলেন: “চলুন পরিচয় করিয়ে দেই নামাজে আপনার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগীকে|” জানেন কাকে তিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন?

মসজিদের একটি স্তম্ভ(pillar)কে! জি হ্যাঁ, মসজিদের মাঝে দাড়িয়ে থাকা স্তম্ভ| যেকোনো স্তম্ভ; তা সে বাড়িতেই হোক, অফিসে হোক আর মসজিদেই হোক তা আপনার প্রতিযোগী|কেন?

কারণ যদি আপনি নামাজে দাড়িয়ে থাকেন, স্তম্ভ আপনার চেয়ে বেশি সময় দাড়িয়ে থাকে| যখন সিজদা
করেন, আপনার চেয়ে বেশি সময় ধরে সিজদাহ করে সেই স্তম্ভ| যখন তাসবীহ পরেন, এটা আপনার চেয়ে অনেক বেসি তাসবীহ পড়ে| কিভাবে? আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন:

وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ

“তাঁর পবিত্রতা তো বর্ণনা করছে সাত আকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে সব জিনিসই৷ এমন কোনো জিনিস নেই যা তাঁর প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে না, কিন্তু তোমরা তাদের পবিত্রতা ও মহিমা কীর্তন বুঝতে পারো না,” [সুরা বাণী ইসরাইল ১৭:৪৪]

এবং

أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَسْجُدُ لَهُۥ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ وَٱلشَّمْسُ وَٱلْقَمَرُ وَٱلنُّجُومُ وَٱلْجِبَالُ
وَٱلشَّجَرُ وَٱلدَّوَآبُّ وَكَثِيرٌۭ مِّنَ ٱلنَّاسِ ۖ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ ٱلْعَذَابُ

“তুমি কি দেখো না আল্লাহর সামনে সিজদানত, সবকিছুই যা আছে আকাশে ও পৃথিবীতে- সূর্য, চন্দ্র, তারকা, পাহাড়, গাছপালা, জীবজন্তু এবং বহু মানুষ ও এমন বহু লোক যাদের প্রতি আযাব অবধারিত হয়ে গেছে? আর যাকে আল্লাহ লাঞ্ছিত ও হেয় করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই আল্লাহ যা কিছু চান তাই করেন৷” [সুরা হাজ্জ ২২:১৮]

যদি আমরা পিলারকে জিগ্যেস করি, তোমরা কী বুঝো? তা কখনই উত্তর দিতে পারবে না| এখন যদি আমরা আমাদের জিগ্যেস করি- আমরা তাদের চেয়ে কতটা বেশি ভালো? যখন আমরা বলি “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদা” এর মানে কী? কিংবা তাহিয়্যাত(আত্তাহিয়াতু)ই বা কী বোঝায়? শুধু শাব্দিক অর্থই নয়; এগুলোর সুনির্দিস্ট অর্থ কী? এগুলো বলার কারণ ও উদ্দেশ্যই বা কী? ইনশা-আল্লাহ আগামী পর্বগুলোতে আমরা নামজের প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করব যাতে আমরা খুশু অর্জন করতে পারি|

শেষ কথা….

এ কথা বলা ঠিক হবে না যে “কিন্তু…আমি পারিনা!” আল্লাহ কিভাবে আমাদের খুশু অর্জনের কথা বলতে পারেন যদি তা অসম্ভবই হবে? আল্লাহ তায়ালা উদার; তাঁর উদারতার সীমা নেই, আমাদের কল্পনার বাইরে; আমরা যদি তাঁর দিকে এক পা অগ্রসর হই, তিনি আমাদের দিকে ছুটে আসবেন| আল্লাহ বলেন:

وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلْمُحْسِنِينَ

“যারা আমার জন্য সংগ্রাম- সাধনা করবে তাদেরকে আমি আমার পথ দেখাবো৷ আর অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশালীদেরই সাথে আছেন৷” [সুরা আনকাবুত ২৯:৬৯]

তাই বিসমিল্লাহ(আল্লাহর নামে) ও ইনশা-আল্লাহ, চলুন পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ আমাদের সবার খুশু বাড়িয়ে দেন এবং নামাজের প্রশ্নটিকে উপলব্ধি করার তৌফিক দেন| আমীন|

চলবে…ইনশাআল্লাহ

 

অন্যান্য পর্ব গুলো এই লিংক থেকে  পড়ুনঃ

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাওবা ও পাপমোচনকারী কিছু আমল পর্ব –১

$
0
0
light-of-hope1
সংকলন: মো: আব্দুল কাদের | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

তাওবা হলো অতীতের গুনাহের অনুশোচনা, দুনিয়ার কোন উপকারিতা অর্জন অথবা ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য নয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই সার্বক্ষণিকভাবে সে গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার উপর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। জবরদস্তির মাধ্যমে নয় বরং শরী‘আতের বিধি-নিষেধ তার উপর বহাল থাকবে ততক্ষণ স্বেচ্ছায় এ প্রতিজ্ঞা করবে। ইবাদতসমূহের মধ্যে তাওবা অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাওবার আবশ্যকীয়তা, ব্যাপকতা ও তাতে নিয়মানুবর্তিতার পরিমণ্ডল থেকে পাপী-তাপী যেমন বহির্ভূত নয়, তেমনি আল্লাহর ওলীগণ ও নবীগণও তার পরিসীমা থেকে বাইরে নন। এটি সর্বাবস্থায় সর্বত্র সকলের জন্য প্রযোজ্য। তাওবা মানুষের জীবনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

তাওবার পরিচয়

তাওবা (توبة) শব্দের তা (تا) বর্ণে যবর ওয়া (واو) বর্ণে সুকুন যোগে গঠিত হয়। আভিধানিক অর্থ পাপ থেকে ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা, প্রত্যাগমন করা ইত্যাদি। বিশেষ পদে অর্থ অনুতাপ, অনুশোচনা। ড. মুহাম্মদ  ড. হামিদ সাদিক বলেন:

التوبة: مصدر تاب ، الرجوع عن الذنب الندم على فعل الذنب ، وعقد العزم على عدم العودة إليه والتوجه إلى الله طلبا للمغفرة.

(‘তাবা (تاب) ক্রিয়া হতে তাওবা (توبة) হলো মাসদার। অর্থ পাপ থেকে ফিরে আসা। কৃতপাপের অনুশোচনা করা। পুনরায় না করার দৃঢ়সংকল্প করা।’ শব্দটি মহান সৃষ্টিকর্তার সত্তা ও তাঁর সৃষ্টিকুল বান্দাগণ উভয়ের সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার জন্য এ মর্মে যে, তিনি স্বীয় মাগফিরাত (মার্জনা) ও রাহমাত (করুণা) সহকারে বান্দাহদের প্রতি করুণা দৃষ্টি প্রদান করেন অর্থাৎ তিনি বান্দাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ ١٠٤ ﴾ [التوبة: ١٠٤]

‘তিনি স্বীয় বান্দাদের তাওবা কবুল করেন।’[1] এতে এ অর্থের প্রকাশ ঘটায় মূলত আল্লাহ তা‘আলার সাথে এই ক্রিয়াটির সম্বন্ধ স্থাপন তাঁর ক্ষমা-মাগফিরাত ও দয়া-রাহমাতের বহিঃপ্রকাশ। তবে উভয়টির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য শব্দটি আল্লাহর সাথে সম্বন্ধিত হলে আল-কুরআনে তা على সংযোজক صلة সহকারে ব্যবহৃত হয়। যাতে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সমুন্নত অবস্থান প্রকাশ পায়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ ثُمَّ تَابَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡ﴾ [المائ‍دة: ٧١]

 ‘অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হলে তাদের তাওবা কবুল করলেন।’[2]

কারও কারও মতে তাওবা অর্থ অনুতাপের সাথে পাপ পরিহার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [النور: ٣١]

‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’[3]

মুফতী মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান বলেন:

التوبة: هو الرجوع إلى الله بحل عقد الإصرار عن القلب ثم القيام بكل حقوق الرب.

‘অন্তর হতে গোনাহ না করার সংকল্পের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা। অতঃপর প্রতিপালকের যাবতীয় বিধানকে পালন করা।’[4]

‘আইনুল ইলম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে:

التوبة تنزيه القلب عن الذنب وقيل الرجوع من البعد إلى القرب وفى الحديث: الندم هى التوبة.

‘তাওবার সংজ্ঞা হলো অন্তরালে পাপ মুক্ত করা। কারও কারও মতে দূরত্ব হতে নিকটে প্রত্যাবর্তন করা। কারণ, ‘অনুশোচনাই’ তাওবা।[5]

মুহাম্মাদ আলী আত-থানভী (রহ.) বলেন:

الندم على معصية من حيث هى معصية، مع عزم أن ألا يعود إليها إذا قدر عليها

কোনো পাপকাজে সেটি যে পাপ এ অনুভূতিতে অনুশোচনা করার সাথে সাথে সুযোগ পেলেও আর কখনোও না করার দৃঢ় সংকল্প করা।[6]

মাজমা‘উস সুলুক গ্রন্থে বর্ণিত আছে,

التوبة شرعا هى الرجوع إلى الله تعالى مع دوام الندم وكثرة الاستعفار

শরী‘আতের পরিভাষায় তাওবা হলো স্থায়ী অনুশোচনা ও অধিক ক্ষমা প্রার্থনার সাথে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি প্রত্যাবর্তন করা। কারও কারও মতে তাওবা মূলত অনুশোচনা অর্থাৎ তাওবার বৃহৎ স্তম্ভই হলো অনুশোচনা।[7]

 

তাওবা সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা

আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনগণকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন:

﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [النور: ٣١]

“হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারে।”[8]

আল্লাহ তা‘আলা অপর আয়াতে বলেন:

﴿إِنَّمَا ٱلتَّوۡبَةُ عَلَى ٱللَّهِ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسُّوٓءَ بِجَهَٰلَةٖ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٖ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَتُوبُ ٱللَّهُ عَلَيۡهِمۡۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمٗا ١٧ ﴾ [النساء: ١٧]

“আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তাওবা কবুল করবেন যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে, ওরাই তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবূল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”[9]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন: অত্র আয়াতাংশ: ﴿ إِنَّمَا ٱلتَّوۡبَةُ عَلَى ٱللَّهِ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسُّوٓءَ بِجَهَٰلَةٖ﴾ এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে, মু’মিনগণের মধ্যে যারা অসতর্কতাবশত গুণাহর কাজ করে অবিলম্বে যথা সময় যদি তারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাদের ছাড়া অন্য কারও তাওবা কবুল করেন না। অর্থাৎ যে সকল লোক তাদের মহান প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান রাখে তারা ভুলবশতঃ গুনাহর কাজ করার পর যদি যথাসময়ে সে গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হয়ে তাওবা করে এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ অনুযায়ী চলার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এমনিভাবে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে যে, সে মৃত্যু পর্যন্ত কৃত পাপ কার্য দ্বিতীয়বার করবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করেন, এদের ব্যতীত অন্য কারও গুনাহ ক্ষমা করেন না। অত্র আয়াতে من قريب দ্বারা এ কথাই বুঝায়।[10]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ ٨ ﴾ [التحريم: ٨]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর বিশুদ্ধ তাওবা; তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যারা পাদদেশে নদী প্রবাহিত।”[11]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى ٱللَّهِ وَيَسۡتَغۡفِرُونَهُۥۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٧٤ ﴾ [المائ‍دة: ٧٤]

“তবে কি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[12]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন: “এই দুই কাফির দল, যাদের একদল বলে, মরিয়ম-তনয় মাসীহ-ই আল্লাহ; আরেক দল বলে, আল্লাহ তিনজনের মধ্যে একজন। তারা কি তাদের এ উক্তি থেকে ফিরে আসবে না? করবে না তাওবা এরূপ কুফরী কথাবার্তা থেকে? প্রার্থনা করবে না এজন্য আল্লাহর ক্ষমা? যে সকল বান্দা তাওবা করে এবং অবাধ্যতা পরিহার করে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যে ফিরে আসে, তিনি তাদের অপরাধ ক্ষমা করেন। সেই সাথে আল্লাহ তা‘আলার অপছন্দ কাজ পরিহার করে পছন্দজনক কাজের দিকে ফিরে আসে, তাদের তাওবা ও প্রত্যাবর্তনকে তিনি কবুল করে নেন। ফলে নিজ কৃপায় তাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ هُوَ يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَأۡخُذُ ٱلصَّدَقَٰتِ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٠٤ ﴾ [التوبة: ١٠٤]

“তারা কি জানে না যে, আল্লাহ তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সাদাকা গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[13]

মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন: এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে একটা ঘোষণা। মুনাফিকদের মধ্য হতে কেউ তাওবা করলে তার সে তাওবা কবুল করা হয় তাদের সাদাকা গ্রহণ করা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইখতিয়ারাধীন নয়। যারা মু’মিনগণের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে যোগদান হতে পিছিয়ে থাকার পর নিজেদেরকে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে এবং বলে, যে পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আমাদেরকে মুক্ত করেন, আমরা নিজেরা নিজেদেরকে মুক্ত করব না, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিজেদের পেশকৃত সাদাকাহ গ্রহণের অুনরোধ জানায়, তারা কি জানে না যে, তা করবার ইখতিয়ার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নেই। জানে না তারা যে, সেটা কেবল আল্লাহ তা‘আলার ইখতিয়ারাধীন? আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তার বান্দার তাওবা কবুল করেন কিংবা প্রত্যাখ্যান করেন। কোন বান্দা সাদাকা পেশ করলে আল্লাহ তা‘আলাই ইচ্ছা হলে তা গ্রহণ করেন অথবা রদ করেন। এ বিষয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন ইখতিয়ার নেই। কাজেই, তারা আল্লাহ তা‘আলার অভিমুখী হয়ে তাওবা করতে হবে এবং তাঁর সমীপেই সাদাকা নিবেদন করতে হবে। আর এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিই তাদের লক্ষ্য হয়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কারও সন্তুষ্টি নয়। তাদের উচিত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবা করা এবং নিজেদের সাদাকা দ্বারা তাঁকেই খুশি করার চেষ্টা করা। তারা কি জানে না যে, ﴿ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ﴾  আল্লাহ তা‘আলাই তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু? অর্থাৎ বান্দাগণ যখন তাওবা করে ও তাঁর অভিমুখী হয় তখন তিনি তাতে সাড়া দেন এবং তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন। তারা যখন তাঁর অভিমুখী হয় ও তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তখন তিনি তাদের প্রতি দয়া করেন এবং তাদেরকে শাস্তি হতে অব্যাহতি দান করেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَعۡفُواْ عَنِ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ وَيَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُونَ ٢٥ ﴾ [الشورى: ٢٥]

তিনিই তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন এবং তোমরা যা কর তিনি তা জানেন।”[14]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [النساء: ١١٠]

‘যে গোনাহ করে কিংবা নিজের উপর যুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।’[15]

আল্লাহর রহমত অবারিত

বহু মানুষ নানা ধরনের গোনাহে লিপ্ত। এদেরকে যখন বলা হয়, তোমরা তওবা করে তখন এরা বলে, আমি এ থেকে কেন তওবা করব? তওবা করে করবটা কি (শুনি)! আমার গোনাহ অনেক ও বিশাল। এদের উদ্দেশ্যে বলব: মহান আল্লাহ বলেন: “আত্মার প্রতি যুলুমকারী আমার বান্দারা। তোমরা আল্লাহর  রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তিনি সকল গোনাহ মাফ করে দেবেন। কেননা তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” (সূরা যুমার:৫৩)

সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উপরোক্ত: আয়াতে কারীমাই আমার কাছে দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু তার চেয়ে সেরা।

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: أكثراية فى القران فرحابهذه الاية المبا ركة কুরআনে বর্ণিত সর্বাধিক খুশীর আয়াত এটি।

মহান আল্লাহ  বলেন:

 ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ ٢٢٢ ﴾ [البقرة: ٢٢٢]

“মহান আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।” (সূরা আল বাকারা: ২২২)

আরও আল্লাহ বলেন:

  ﴿ وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [النساء: ١١٠]

“যে গোনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ঠ করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় পায়।” (সূরা আন নিসা: ১১০)

আল্লাহ আরও বলেন:

﴿ ۞نَبِّئۡ عِبَادِيٓ أَنِّيٓ أَنَا ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٤٩ وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ ٱلۡعَذَابُ ٱلۡأَلِيمُ ٥٠ ﴾ [الحجر: ٤٩،  ٥٠]

“আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন, আমি অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু, আর আমার আযাব হচ্ছে পীড়াদায়ক আযাব।” (সুরা হিজর: ৪৯-৫০)

 

তাওবা সম্পর্কে হাদীসের বর্ণনা

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ، وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً ».

“বরকতম আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকতে থাকবে এবং আমার থেকে (ক্ষমা লাভের) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত বেশিই হোক, আমি তোমাকে ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহর স্তুপ আকাশের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! যদি তুমি গোটা পৃথিবী ভর্তি গুনাহ্ নিয়েও আমার কাছে আস এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহলে আমিও তোমার নিকট পৃথিবী ভর্তি ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব।[16]

এ হাদীসে ক্ষমা প্রার্থনার দ্বারা তাওবার সাথে ক্ষমা বুঝানো হয়েছে নচেৎ তাওবা বিহীন ক্ষমা প্রার্থনা করা দ্বারা গুনাহ মাফ হওয়াকে আবশ্যক করে না। জুন্নুন মিসরীর মতে এটা  মিথ্যা তাওবা।

আগার আল-মুযানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يا أيها الناس توبوا إلى الله ، فإني أتوب في اليوم إليه مائة مرة»

“হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহর নিকট তাওবা কর, আর আমিও দৈনিক একশত বার তাঁর নিকট তাওবা করি।”[17]

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«التائب من الذنب كمن لا ذنب له».

“যে ব্যক্তি পাপ থেকে তাওবা করে সে এমন হয়ে যায়, যেন তার কোন পাপই নেই।”[18]

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«كل ابن آدم خطاء وخير الخطائين التوابون»

“মানুষ মাত্রই পাপী, আর পাপীদের মধ্যে তাওবাকারীরাই উত্তম।[19]”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

« لله أشد فرحا بتوبة عبده المؤمن».

“আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবার কারণে অধিকতর আনন্দিত হন[20]।”

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলু­ল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لله أفرح بتوبة أحدكم من أحدكم بضالته إذا وجدها».

“তোমাদের কেউ তার হারানো মাল পুনঃপ্রাপ্তিতে যতটা আনন্দিত হয়, তোমাদের কারো তাওবায় (ক্ষমা প্রার্থনায়) আল্লাহ তার চেয়ে অধিক আনন্দিত হয়।”[21]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:[22]

«والذى نفسى بيده لو لم تذنبوا لذهب الله بكم، ولجاء بقوم يذنبون ، فيستغفرون الله ، فيغفرلهم».

“সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। তোমরা যদি গোনাহ না করতে তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিতেন। অতঃপর এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যারা গোনাহ করতো অতঃপর তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করতেন।”

 


[1] সুরা আত তাওবা:১০৪।
[2] সূরা আল-মায়েদাহ:৭১।
[3] সূরা আন-নূর:৩১।
[4] কাওয়ায়িদুল ফিকহ,পৃ ২৩৯-২৪০।
[5] প্রাগুক্ত,পৃ ২৪০।
[6] কাশশাফু ইসতিলিহাতিল ফুনুন,খ.১, পৃ. ২১৮।
[7] প্রাগুক্ত।
[8] সূরা আন-নূর : ৩১।
[9] সুরা আন-নিসা : ১৭।
[10] তাবারী, পৃ.১১২
[11] সূরা তাহরীম: ৭।
[12] সূরা আল-মায়েদাহ: ৭৪।
[13] সূরা আত-তাওবা: ১০৪।
[14] . সূরা শূরা, ৪২:২৫।
[15]. সূরা আন-নিসা, ৪:১১০।
[16]. মুহাম্মদ ইবন ‘ঈসা আত-তিরমিযী, জামি‘উত-তিরমিযী (দিমাশক: মাকতাবাতু ইবন হাজর, ১ম সংস্করণ, ১৪২৪ হি./২০০৪ খ্রি.), কিতাবুদ-দাওয়াহ, বাবু ফি ফাযাইলিত-তাওবাহ ওয়াল-ইস্তিগফার, হাদীস নং ৩৫৪০, পৃ. ৯৯৩-৯৯৪।
[17] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২৭০২।
[18] ইবন মাজাহ: ৪২৫০।
[19] জামে তিরমিযি, হাদীস নং২৪৯৯।
[20] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং২৭৪৪।
[21] জামে তিরমিযি, হাদীস নং২৪৯৯।
[22] সহীহ মুসলিম, কিতাবুত-তাওবাহ বাবু সুকুতিয-যুনুবি বিল-ইসতিগফারি ওয়াত-তাওবাহ, হাদীস নং ২৭৪৯/১১, পৃ. ১১৮৩।

শুধু তোমাকে বলছি… (আর কাউকে বোলো না, প্লীজ!)

$
0
0

sealed letterরচনাঃ নায়লা নুজহাত

ঘটনা ১

“আপা, নামেন।”
চমকে রিকশাওয়ালার দিকে তাকালো মিলা। চলে এসেছে? এতো তাড়াতাড়ি? হবেও বা। বাসা থেকে বেরিয়েছে কেমন একটা ঘোরের মাঝে, রিকশাও ঠিক করেছে কিছু না বুঝেই।

ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে পুরনো রঙ উঠে যাওয়া লোহার গেট ঠেলে বাসার উঠোনে এসে দাঁড়ালো মিলা। রোজিনা খালা কি আছেন বাসায়? একটা ফোন করে আসতেও মনে নেই। বহুদিন ধরে স্বামীর সাথে সমস্যা চলছে, কাউকে বলেনি, নিজের মাকেও না। কেই বা বুঝবে তাকে? আজ যখন অসহ্য হয়ে বেরিয়ে এসেছে বাসা থেকে, তখন এই সহজ সরল মহিলার কথাই মনে এসেছে।

“এসো মা, এসো। তোমার চেহারা অমন হয়ে আছে কেন?”

“খালা, আমি কি আপনাকে কিছু কথা বলতে পারি? কিন্তু কথা দিতে হবে আপনি কাউকে বলবেন না, প্লীজ?”

চোখের পানি আর বাঁধ মানেনি। খালাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ধরে কাঁদল মিলা। বলে ফেলল সব কথা। অনেকক্ষণ ধরে বুঝালেন মহিলা মিলাকে। বহুদিন পর যেন কেউ মিলাকে ভালবাসল

কবে এই মহিলার সাথে পরিচয় হয়েছিলো যেন? মিলার মনে নেই। তার বাবা মায়ের পরিচিত, খুব ঘনিষ্ঠ। বিশ্বস্ত। তাই তো উনার কাছেই ও ছুটে এসেছে। ছোট্ট করে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল মিলা।

হাল্কা মন নিয়ে বাসায় ফিরেছিল সেদিন মিলা। রোজিনা খালার দেয়া উপদেশগুলোও ভুলেনি। সত্যি বলতে তার সংসারটাও টিকে গিয়েছে।

একদিন সে আর তার স্বামী রাত করে বাসায় ফিরছিল। পথে স্বামীর এক বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধুটি খুব অবাক চোখে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। কুশল পর্বের আগেই বলে বসলো, “যাক বাবা, তোরা একত্রে আছিস তাহলে এখনো?” অবাক হয়ে মিলার স্বামী প্রশ্ন করলেন “মানে?”

“না মানে ইয়ে ওই রোজিনা অ্যান্টি আছেন না? আরে ওই যে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন? তিনি বলছিলেন যে মিলার স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে।”

স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মিলা। শুনতে পায় না স্বামী প্রশ্ন করছেন রোজিনা অ্যান্টি ব্যাপারটা কিভাবে জানলো। শুনতে পায়না স্বামীর বন্ধু সেই মহিলার থেকে শোনা পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করছেন।

এক মূক অভিমানে স্তব্ধ হয়ে থাকে সাংসারিক বুদ্ধিতে কাঁচা মিলা। অতি বোকা মিলা।

ঘটনা ২

মেয়েটি কাঁদছিল। পাশে এসে বসলো তার বান্ধবী সোহানা।

“এই লাবনী, এই। কাঁদছিস কেন?”

আচ্ছা মেয়ে তো! কাঁদছে, অথচ বলবে না কী হয়েছে! “চল আমার বাসায় যাবি। অ্যান্টিকে কল করে বলে দে। বিকেলে পৌঁছে দিয়ে আসবো চল! একসাথে দুপুরে খাব, গল্প করব, দেখবি মন ভাল হয়ে গিয়েছে।”

সোহানাদের বাড়িটা খুব সুন্দর। ওর মা খুব আদর করেন লাবনীকে। সেই ছোটবেলা থেকেই পরিচয়, কত এসেছে! দুপুরে খাওয়ার পর একথা সেকথা বলতে বলতে একসময় বলেই ফেলল লাবনী তার সমস্যার কথা। একজনকে ভালবাসে। তার সাথে বাবা মা বিয়ে দিবেন না। সোহানার জন্য এসব কোনও ব্যাপার না– ও কোনদিনও সিরিয়াস না এসব নিয়ে। আর কি অদ্ভুত মেয়েটা, হাসি ঠাট্টা করে লাবনীরও মনের দুঃখ কখন কাটিয়ে দিল লাবনী টেরও পায়নি।

বাসায় ফেরার সময় সোহানার হাত ধরে বলল, “কাউকে বলিস না রে। আমাদের ফ্রেন্ডদেরও না”

……………………………………..

আজ লাবনীর বিয়ে। না, বাবা মা কে কষ্ট দিতে পারেনি সে। চুপচাপ বসেছিল। বান্ধবীরাও এসেছে সবাই। তাদের হৈ চৈ ওর কানে যেন প্রবেশ করতে পারছে না। এমন সময় কে যেন ওর হাত চেপে ধরল। চমকে তাকিয়ে দেখে রিতার আম্মা। রিতাও সোহানির মতই ওর বাল্য বান্ধবী। মহিলা ফিস ফিস করে বললেন, “মা, এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত বুঝে শুনে নিয়েছ তো?”

অ্যান্টি ভুল কিছুই বলেননি। তবু লাবনীর মনেহল কে যেন তার অন্তরে ছুরি চালিয়ে দিল। সোহানা? হ্যাঁ, সোহানাই। তাকে ছাড়া তো আর কাউকে বলেনি সে?

“এই কি করছিস সব মেক আপ নষ্ট হয়ে যাবে যে!” আরেকবার চমকে ওঠে লাবনী। এবার তার প্রানপ্রিয় বান্ধবী সোহানার স্পষ্ট কথায়। তাই তো, সে নিজেই বুঝতে পারেনি এতক্ষন ধরে যে সে কাঁদছে!

বিশ্বাস ভেঙ্গে যাওয়ার যন্ত্রণায় কাঁদছে!

ঘটনা ৩

অফিস থেকে এসে ফ্রেস হয়ে মাত্র রুমা ল্যাপটপটা অন করে বসেছে। এমন সময় ফোন। “আপা, আমি ঊর্মি।” কে? ও আচ্ছা, ওই যে সেদিন রুমাদের অফিসে এসেছিলো, তার এক জুনিয়রের বউ।

“আপা শুনছেন? আমি একটু বিপদে পড়েছি, আপনাকে সেদিন দেখেই বড় ভাল লেগেছিল, বড় আপন মনে হয়েছিল, তাই আপনাকেই বলছি। কাউকে বলবেন না প্লীজ। আপা জানেন, আমার স্বামী…”

মেয়েটির সাথে কথা বলে ফোনটা রেখে একটু চা করতে রান্না ঘরে গেল রুমা। মাথাটা ধরে গিয়েছে। না, মেয়েটার কথায় না। এমন করে মনের কথা অনেকেই বলে থাকে তাকে। কেন টা সে নিজেও জানেনা। মাথা ধরেছে একথা ভেবে যে আজকাল মেয়েগুলো এত বোকা হয় কেন? চিনে না, জানে না এমন মানুষকেও আপন ভেবে মনের কথা সব বলে দেয়। রুমা জানে রুমা আর কাউকে বলবে না। কিন্তু তার জায়গায় অন্য কেউ হলে?

চা খেতে খেতে আবার একই প্রশ্ন করলো নিজেকে রুমা। মেয়েগুলো এত বোকা কেন?

———————————————————————————————————-

উপরের ঘটনা গুলো গল্পাকারে লিখলেও এসবই বাস্তব ঘটনা, বিভিন্ন সময়ে এমনটা হয়ে থাকে, হতে দেখেছি অথবা এমনটা হওয়ার দরুন কাউকে কষ্ট পেতে দেখেছি। সাধারণত যারা নিজেরা ভালো, তারাই এসমস্ত কষ্ট গুলো পায়। কারণ তারা নিজেরাও অপরের মাঝে ভালটাই দেখতে পায়। তারা জানে বিশ্বাস মানুষই মানুষকে করে, আর মানুষই মানুষের বিশ্বাস রাখে। তারা জানে কেউ কাউকে কথা দিলে সে কথা ভাঙ্গা যায়না। নিজেরা প্রাণ দিয়ে হলেও নিজেদের দেয়া কথা রাখে বলেই অন্যের দেয়া কথাকেও প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করে। এমন ভালো মানুষ হয়ে জন্মানোটা বর্তমান জগতে আসলে ভালোত্ব না, রীতিমত পাপ। আর হ্যাঁ, সেই পাপের মাসুল তাদের দিতে হয় নিজেদের অন্তরের রক্তক্ষরন দিয়ে।

আমার সেই সব পাপী বোনদের বলছি। যারা মানুষকে বিশ্বাস করে কিছু বলার মত পাপটা করেছ অথবা করতে চলেছ। একটা কথা কি জানো আপু, সব মানুষই মানুষ। মানবিক দুর্বলতা সবারই থাকে। এই যে গল্পে যাদের কথা লিখেছি, এরাও কিন্তু কেউই পুরোপুরি খারাপ না। কিন্তু তাদের এমন কিছু দুর্বলতা আছে যা অপরের জন্য ক্ষতিকর। হয়ত তারা নিজেরাও তা জানেনা। তাই আমি বলি কি, এই পৃথিবীতে মানুষকে ভালবাসবে। তাদের সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবে। বিশ্বাসও করবে। শুধু নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্বাস করে বসবে না। কারণ হয়ত কোনও এক দুর্বল মুহূর্তে তারা ভুলে যাবে তোমাকে দেয়া কথা। ভুলে যাবে কথাটি ছড়ালে তোমার ক্ষতি হতে পারে। হয়ত সবাই তারা খুব ভালো। তবু শয়তান হয়ত তাদেরকে ভুলিয়ে দিবে। তুমি তো জানো, বোন, যে শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু, জানো না? একজন মানুষ যত ভালই হোক, মনে রাখবে যে সে তারপরও একজন মানুষই। মানুষটা খুব ধার্মিক হতে পারে, খুব পরিচিত বান্ধবী হতে পারে— তবুও সেও মানুষ। তাই এমন কথা কাউকে বলবে না যা কোনও কারণে পাঁচ কান হলে তুমি সহ্য করতে পারবে না। আর যদি খুব বলতে ইচ্ছা করে, নিজের মা কে বলবে, বোন কে বলবে। তাঁরা যদি বকেনও, তবু তাঁদের কাছেই তুমি সবচেয়ে নিরাপদ। তাঁরা যে তোমাকে “তুমি” হিসেবে দেখেন না। তাঁরা তোমাকে দেখেন তাঁদেরই এক অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হিসেবে!

আর হ্যাঁ। সবচেয়ে মজার কথাটা তো বলিইনি। তুমি কি জান, এমন একজন বন্ধু আছেন যাকে কিছু বলতে তোমার তাঁকে খুঁজতে হবে না, তুমি বললেই তিনি শুনবেন? তুমি কি জানো, তোমার বলতেও হবে না, তোমার চোখের প্রতিটা পানির হিসেব তিনি নিজেই রাখেন? তুমি কি জানো, এমন একজন আছেন যিনি তোমার দোষ অপরকে বলে বেড়াবেন না? তিনি যে তোমার প্রতিটা কথা শোনার জন্য সদা প্রস্তুত, তা কি তুমি জানো?

এত বিশ্বস্ত, এত আপন, এত কাছের তোমার সেই রব কে ফেলে আর কার কাছে যাবে তুমি ভালবাসা খুঁজতে, খুঁজতে আশ্রয়? আর কেনই বা যাবে বোন?

বোনেরা আমার, আমাদের জন্য আমাদের রব আছেন। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আমরা যেন তাঁর কাছেই আমাদের অন্তরের প্রশান্তি খুঁজি। তাঁর সৃষ্টির কাছে না, যারা নিজেরাই তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থী। নিজেদের ভুলে নিজেদের যেন আমরা অসম্মান করে না বসি। আমাদের সম্মানটা যে আমাদের কাছে আমাদের জীবনের চেয়েও দামী!

আমীন!

মানুষের উপর জিনের আছর : কারণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায় -১

$
0
0

লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সম্পাদনা : আবু শুআইব মুহাম্মদ সিদ্দিক

প্রথম কথা

একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে বসা ছিলাম। তার স্ত্রীও একজন ভাল ডাক্তার। উভয়ে ধর্মপ্রাণ। হজ করেছেন এক সাথেই। দুটো মেয়েকেই তানজীমুল উম্মাহ মাদরাসাতে ভর্তি করিয়েছেন। আমাকে বললেন, তানজীমুল উম্মাহ মাদরাসা আরবী মিডিয়ামের স্কলাস্টিকা তাই না? আমি বললাম, হ্যা। উদ্দেশ্য তার উৎসাহকে স্বাগত জানানো। মানে তারা দুটো সন্তানকেই মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে গর্ববোধ করেন। কতখানি ধর্মপ্রাণ হলে এমন হতে পারে তা আপনার ভেবে দেখার বিষয় বটে। রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে আমার সাথে গল্প করছেন। শুধু আমার সাথেই নয়। আলেম-উলামাদের কাউকে কাছে পেলে আন্তরিকতার সাথেই আলাপ করেন। জানতে চান। জানাতে চান।

একজন মহিলা আসল, সাথে তার মেয়ে।  সে  রোগের বিবরণ দিয়ে বলল, কয়েকদিন আগে ওকে জিনে আছর করেছিল। ওঝা-ফকিরেরা জিন তাড়িয়েছে। এ কথা শুনে ডাক্তার সাহেব রেগে গেলেন। বললেন, কিসের জিন? জিন বলতে কিছু আছে নাকি? জিন আবার মানুষকে ধরে নাকি? যত সব অন্ধ বিশ্বাস! জিন-ভূত বলতে কোন কিছু নেই। জিনে মানুষ ধরে না। মানুষকে আছর করে না। এটা মানসিক রোগ দ্বারা সৃষ্ট একটি কল্পনা। এ কল্পনার কারণে সৃষ্টি হয়েছে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা।

তার আবেগ কমে গেলে আমি তাকে এ বিষয়টি বুঝাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু এতে তার কোন আগ্রহ দেখলাম না। আমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলেই সে অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা করে। আমি বুঝলাম, এ বিষয়ে আলোচনা তার পছন্দ নয়। সে যা বুঝেছে, সেটাকেই সে চুরান্ত বলে বিশ্বাস করে নিয়েছে। বিশ্বাসটা যে সংশোধন করার প্রয়োজন এটা তিনি বুঝতে চাচ্ছেন না।

আসলে কি জিন আছে? জিন কী? ইসলাম কী বলে? জিনদের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা ইসলামে কতখানি গ্রহণযোগ্য? জিন কি মানুষকে আছর করে? এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব এ প্রবন্ধে।

 যে সকল বিষয় এখানে আলোচনা করব সেগুলো হল:

এক.  জিনের পরিচয়
দুই.  জিনের প্রকার
তিন.  জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাস ঈমানের দাবি
চার.  জিন কি মানুষকে আছর করে?
পাঁচ.  জিন ও ভূতের মধ্যে পার্থক্য
ছয়.  মানসিক রোগী আর জিনে-ধরা রোগীর মধ্যে পার্থক্য
সাত.  কি কারণে জিন চড়াও হয়?
আট.  জিনের আছরের প্রকারভেদ
নয়.  জিনের আছর থেকে বাঁচতে হলে যা করতে হবে
দশ.  জিনের আছরের চিকিৎসা
এগার.  জিনের অধিকার রক্ষায় আমাদের করণীয়

১) জিনের পরিচয়

জিন আল্লাহ তাআলার একটি সৃষ্টি। যেমন তিনি ফেরেশ্‌তা, মানুষ সৃষ্টি করেছেন তেমনি সৃষ্টি করেছেন জিন। তাদের বিবেক, বুদ্ধি, অনুভূতি শক্তি রয়েছে। তাদের আছে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা। তাদের মধ্যে আছে ভাল জিন ও মন্দ জিন। আল কুরআনে  জিনদের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে:

আর নিশ্চয় আমাদের কতিপয় সৎকর্মশীল এবং কতিপয় এর ব্যতিক্রম। আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত। (সূরা আল জিন : ১১)

এ গোষ্ঠির নাম জিন রাখা হয়েছে, কারণ জিন শব্দের অর্থ গোপন। আরবী জিন শব্দ থেকে ইজতিনান এর অর্থ হল ইসতেতার বা গোপন হওয়া। যেমন আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন :

فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ

অতঃপর যখন রাত তার উপর আচ্ছন্ন হল … (সূরা আল আনআম : ৭৬)

এখানে জান্না অর্থ হল, আচ্ছন হওয়া, ঢেকে যাওয়া, গোপন হওয়া।

তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকে বলেই তাদের নাম রাখা হয়েছে জিন। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:

নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখ না। (সূরা আল আরাফ : ২৭)

জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন দিয়ে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলেন:

আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। (সূরা আল হিজর : ২৭)

এ আয়াত দ্বারা আমরা আরো জানতে পারলাম যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ সৃষ্টি করার পূর্বে জিন সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে:

আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। আর এর পূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। (সূরা আল হিজর : ২৬-২৭)

আল্লাহ তাআলা যে উদ্দেশ্যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন সে-ই উদ্দেশ্যেই জিনকে সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বলেন:

আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদাত করবে। (সূরা আয যারিয়াত : ৫৬)

জিনদের কাছেও তিনি নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেন। তিনি বলেন:

হে জিন ও মানুষের দল, তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের নিকট রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করত এবং তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা ছিল কাফির। (সূরা আল আনআম : ১৩০)

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বিচার দিবসে মানুষের যেমন বিচার হবে তেমনি জিন জাতিকেও বিচার ও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।

তারা বিবিধ রূপ ধারণ করতে পারে বলে হাদীসে এসেছে। এমনিভাবে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে বলে আল কুরআনের সূরা আন নামলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আসমানী কিতাবে যারা বিশ্বাসী-ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমান- তারা সকলে জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। তারা কেউ জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। পৌত্তলিক, কতিপয় দার্শনিক, বস্তুবাদী গবেষকরা জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। দার্শনিকদের একটি দল বলে থাকে, ফেরেশ্‌তা ও জিন রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। সুন্দর চরিত্রকে ফেরেশ্‌তা আর খারাপ চরিত্রকে জিন বা শয়তান শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়। অবশ্য তাদের এ বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহর সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

২) জিনের প্রকার

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেছেন :

জিন তিন প্রকার। এক. যারা শূন্যে উড়ে বেড়ায়। দুই. কিছু সাপ ও কুকুর। তিন. মানুষের কাছে আসে ও চলে যায়।

(সূত্র : তাবারানী। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ আল জামে আস সাগীর, হাদীস নং ৩১১৪, আবু সালাবা আল খাশানী রা. থেকে বর্ণিত।) (মুজামু আলফাজ আল-আকীদাহ)

জিন বিভিন্ন প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। কিন্তু তাদের একটি গ্রুপ সর্বদা সাপ ও কুকুরের বেশ ধারণ করে চলাফেরা করে মানব সমাজে। এটা তাদের স্থায়ী রূপ।

৩) জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাস ঈমানের দাবী

একজন মুসলিমকে অবশ্যই জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হবে। যদি সে জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে, তাহলে সে মুমিন থাকবে না। জিনের অস্তিত্ব স্বীকার ঈমান বিল গাইব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনের প্রায় পঞ্চাশ বার জিনের আলোচনা করেছেন। জিনজাতির সৃষ্টি, সৃষ্টির উদ্দেশ্য, তাদের ইসলাম গ্রহণ, মানুষের পূর্বে তাদের সৃষ্টি করা, ইবলীস জিনের অন্তর্ভূক্ত, সূরা আর রাহমানে জিন ও মানুষকে এক সাথে সম্বোধন, নবী সুলাইমান আলাহিসসালাম  এর আমলে জিনদের কাজ-কর্ম করা, তাদের মধ্যে রাজমিস্ত্রী ও ডুবুরী থাকার কথা, তাদের রোজ হাশরে বিচার শাস্তি ও পুরস্কারের সম্মুখীন হওয়া ইত্যাদি বহু তথ্য আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উল্লেখ করেছেন। তাদের সম্পর্কে বলতে যেয়ে সূরা আল-জিন নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন। তাই কোন মুসলমান জিনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে আল্লাহর কালামকে অস্বীকার করার মত কাজ করতে পারে না। তেমনি জিনকে রূপক অর্থে ব্যবহার করার কথাও ভাবতে পারে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা এটাই। বিভ্রান্ত ও বিলুপ্ত মুতাযিলা ও জাহমিয়্যা সমপ্রদায় জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না।

৪) জিন কি মানুষকে আছর করে?

এর উত্তর হল, অবশ্যই জিন মানুষকে আছর করতে পারে। স্পর্শ দ্বারা পাগল করতে পারে। মানুষের উপর ভর করতে পারে। তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তার জীবনের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম ব্যাহত করতে পারে। এটা বিশ্বাস করতে হয়। তবে এ বিষয়টি কেহ অবিশ্বাস করলে তাকে কাফের বলা যাবে না। সে ভুল করেছে, এটা বলা হবে।জিন যে মানুষকে আছর করে তার কিছু প্রমাণ: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ

যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় দাড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। (সূরা আল বাকারা : ২৭৫)

এ আয়াত দ্বারা যে সকল বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝা যায়:

এক. যারা সূদ খায় তাদের শাস্তির ধরণ সম্পর্কে ধারণা।

দুই. শয়তান বা জিন মানুষকে স্পর্শ দ্বারা পাগলের মত করতে পারে।

তিন. মানুষের উপর শয়তান বা জিনের স্পর্শ একটি সত্য বিষয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

চার. জিন-শয়তানের এ স্পর্শ দ্বারা মানুষ যেমন আধ্যাত্নিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি শারীরিক দিক দিয়েও অস্বাভাবিক হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর যে পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী। (সূরা যুখরুফ : ৩৬)

এ আয়াত দ্বারা যা স্পষ্ট হল : মহান রাহমান ও রহীম আল্লাহ তাআলার জিকির থেকে বিরত থাকা জিন শয়তানের স্পর্শ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একটি কারণ।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে। (সূরা সাদ : ৪১)

এ আয়াত দ্বারা আমরা স্পষ্টভাবে বুঝলাম:

এক. শয়তান নবী আইউব আলাহিস সালামকে স্পর্শ করে শারীরিক রোগ-কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল।

দুই. তিনি শয়তানের স্পর্শ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছেই প্রার্থনা করেছিলেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়। (সূরা আল আরাফ : ২০১)

এ আয়াত থেকে যা বুঝে আসে তা হল:

এক. যারা মুত্তাকী বা আল্লাহ ভীরু তাদেরকেও জিন বা শয়তান স্পর্শ করতে পারে। তারা মুত্তাকী হয়েও জিন বা শয়তানের আছরে নিপতিত হতে পারে।

দুই. যারা মুত্তাকী তাদের শয়তান বা জিন স্পর্শ করলে তারা আল্লাহ-কেই স্মরণ করে। অন্য কোন কিছুর দ্বারস্থ হয় না।

তিন. মুত্তাকীগণ জিন বা শয়তান দ্বারা স্পর্শ হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে তাদের সত্যিকার দৃষ্টি খুলে যায়

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা আল আরাফ : ২০০)

এ আয়াতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল:

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও জিন-শয়তান আছর করতে পারে।

দুই. জিন আছর করলে বা শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিন. সূরা আল ফালাক ও সূরা আন-নাছ হল জিন শয়তানের আছর থেকে আশ্রয় প্রার্থনার অতি মুল্যবান বাক্য। এ আয়াতের তাফসীর দ্বারা এটা প্রমাণিত।

হাদীসে এসেছে – আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, অবশ্যই শয়তান মানুষের রক্তের শিরা উপশিরায় চলতে সক্ষম। ( বুখারী ও মুসলিম)

হাদীসে আরো এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  একদিন বললেন, গত রাতে একটি শক্তিশালী জিন আমার উপর চড়াও হতে চেয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল আমার নামাজ নষ্ট করা। আল্লাহ তার বিরুদ্ধে আমাকে শক্তি দিলেন। ( বুখারী, সালাত অধ্যায়)

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত নাসায়ীর বর্ণনায় আরো এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, আমি তাকে ধরে ফেললাম। আছার দিলাম ও গলা চেপে ধরলাম। এমনকি তার মুখের আদ্রতা আমার হাতে অনুভব করলাম।

এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম :

এক. জিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও আছর করতে চেয়েছিল।

দুই. জিনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ নষ্ট করার জন্য তাঁর কাছে এসেছিল।

তিন. ইফরীত শব্দের বাংলা অর্থ হল ভূত। জিনদের মধ্যে যারা দুষ্ট ও মাস্তান প্রকৃতির তাদের ইফরীত বলা হয়।

চার. জিন দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কোন ভয় পাননি। তিনি তার সাথে লড়াই করে পরাস্ত করেছেন।

পাঁচ. জিনদের শরীর বা কাঠামো আছে যদিও তা সাধারণত আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না।

 পর্ব ২ পর্ব ৩

বইঃ আবু বকর (রাঃ) সম্পর্কে ১৫০ টি শিক্ষণীয় ঘটনা

$
0
0

HBOOK007সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃরাসুলুল্লাহ ( ﷺ ) এর পর এ পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন খুলাফায়ে রশিদীন (রাঃ) তাদের মধ্যে প্রথম খলীফা ছিলেন আবু বকর (রাঃ)। তাঁর জীবনী ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মানবজাতির ইতিহাস আবু বকর (রাঃ) এর সম্মান, মর্যাদা, একনিষ্ঠতা, জিহাদ, এবং দাওয়াত এর এক চিরন্তন সাক্ষী। লেখক তার এই বইয়ে আবু বকর (রাঃ) এর জীবন, চরিত্র, মর্যাদা সহ এমন ১৫০ টি  শিক্ষণীয়  বিষয়ের উপর দলীলভিত্তিক আলোচনা করেছেন। বইটি একজন দায়ী, খতীব সহ সাধারণ পাঠক, উলামায়ে কেরাম, ইসলামী চিন্তাবিদ, ও সর্বস্তরের জ্ঞানপিপাসুদের উপকারে আসবে বলে আমরা আশা করি।

আবু বকর (রাঃ) সম্পর্কে ১৫০ টি শিক্ষণীয় ঘটনা – QA Server

আবু বকর (রাঃ) সম্পর্কে ১৫০ টি শিক্ষণীয় ঘটনা – Mediafire

সময় ব্যবস্থাপনা –আপনার ফলপ্রসূ ও চৌকস জীবনের চাবিকাঠি

$
0
0

মূল : আবু প্রোডাক্টিভ । ভাষান্তর : মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ । সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

The_Time_Traveler_by_xetobyte

আমার পুরনো এক বন্ধু আমাকে একবার বলেছিল, “একটা পুরান কথা (myth) ইদানীং খুব চলছে। কথাটা এমন : “সময়কে ঠিকমতো গুছিয়ে নিতে পারলে, তোমার দ্বারা সবই সম্ভব!” আজ থেকে চার বছর আগে শুনেছি এই কথাটা। কিন্তু আজ আর বিশ্বাস করি না যে, কথাটা কোনো পুরান কথা।

সময়-ব্যবস্থাপনা (time management) এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই অনেক কথা শুনে থাকি। যথাযথ সময় ব্যবস্থাপনার জন্য মাঝে মাঝে মানুষের কাছে অনেক বকুনিও শুনতে হয় আমাদের। কিন্তু সময়-ব্যবস্থাপনার কার্যকর কোনো পদ্ধতি নিয়ে খুব একটা শোনা যায় না!

কীভাবে সময়-ব্যবস্থাপনা করা যায় তা বুঝতে হলে, প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে সময়-ব্যবস্থাপনা বিষয়টা আসলে কী। সময়-ব্যবস্থাপনা আসলে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো বিষয় নয়। কেননা ব্যবহারিক অর্থে, যার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই, আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না! (আপনি কি সময়ে ধরে রাখতে কিংবা দ্রুত পার করতে পারেন?!)- সময়-ব্যবস্থাপনা হচ্ছে নিজেকে এমন ভাবে পরিচালনা করা যাতে, আমরা যে সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ সেই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এমনটি আসলে কীভাবে করা যায়?

বিখ্যাত বই “The Effective Executive” (পড়ে দেখার জোরালো আবেদন রইলো) এর লেখক পিটার ড্রাকার, সময়-ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণের সুপারিশ করেন। বইটির যে অধ্যায়ে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন, তিনি সেই অধ্যায়টার নাম দিয়েছেন: “নিজের সময়কে জানুন” :

১. আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন।

২. নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন।

৩. হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন।

এবার চলুন, একজন চৌকস মুসলিমের প্রত্যাহিক জীবনরীতির আলোকে উপরোক্ত ধাপ তিনটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন :

কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে নিজের সময়কে লিপিবদ্ধ করুন। আমি এখানে সত্য কথাটাই বলল, এক সপ্তাহে আপনি কত সময় অপচয় করেন তা উপলব্ধি করার জন্য বুকে সাহস থাকা চাই। তবে নিজের সাথে সত্যবাদীর মতো আচরণ করাটাই হলো প্রতিকারের প্রথম পদক্ষেপ। সময় লিপিবদ্ধ করার দুই ধরণের পদ্ধতি আছে :

১. সাথে একটি ডাইরি রাখুন এবং প্রতি ঘন্টায় কী কী করলেন, তা লিখে রাখুন।

২. যখন আপনার সময় বিশ্লেষণ করবেন, তখন আপনার বন্ধু/প্রতিবেশী/স্বামী বা স্ত্রীকে সাক্ষী রাখুন। (কারণ আমরা যখন সময় লিপিবদ্ধ করি, তখন সততার সাথেই তা করি। কিন্তু শেষে গিয়ে নিজেই নিজেকে ধোঁকা দিয়ে বসি।)

নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন।

আশা করছি, সময় বিশ্লেষণের পর একটা দুঃখবোধ আপনাকে পেয়ে বসবে! ভাববেন, আমরা এমন অনেক কিছুই করি যা একেবারেই ঝেড়ে ফেলা যায়। আপনার এখন মনে হবে : সকালবেলা কফি খাওয়ার অজুহাতে ক্যাফেতে বসে একঘণ্টা সময় বৃথা নষ্ট না করে বাড়িতেই কফি বানিয়ে খাওয়া যেতো না? কফি খেতে খেতে ই-মেইলগুলোও কি পড়া যেতো না? টিভির চ্যানেল হাতড়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রতিদিন দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করা কি আমাদের জন্য সত্যিই জরুরি? আমরা কি এসব থেকে সময় বাঁচাতে পারি না? (সাধবান! আল্লাহর জন্য বরাদ্দ সময় বাঁচাতে যাবেন না! “সময় বাঁচানো”-র নামে কিছু লোক মসজিদে সালাত আদায় করতে যায় না। এই রকম সময় বাঁচনো নিষ্ফল কর্ম। মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। অতএব, সময় বাঁচানোর নামে দ্বীনের কাজের সময় কমাতে যাবেন না। দ্বীনের জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় না করার দায়ে আমরা ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত। তাই পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে আমরা যেন সময় বাঁচানোর অজুহাতকে ক্ষেত্রে ব্যবহার না করি।)

হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন

যখন আপনি কঠিন কিছু নিয়ে কাজ করছেন এবং পুরোপুরি কাজের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে আছেন, ঠিক তখনই একটা ফোন কল বা ই-মেইল কিংবা মেসেজ এলার্ট কি বিরক্তিকর নয়?! এই তৃতীয় ধাপ বা কৌশলটিতে মূলত যা বলা হচ্ছে তা হলো, আপনাকে সময় ভাগ করে নিতে হবে এবং তা করতে হবে আপনার জন্য সম্ভব্য সর্বোচ্চ সময় খণ্ডে। (অনেকের মতে, এক নাগাড়ে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব। তবে এই ৯০ মিনিট হতে হবে বিরতিহীন)। সামান্য পরিমাণ কাজ করে সর্বোচ্চ পরিমাণ ফলাফল লাভ করতে এই পদ্ধতি সহায়তা করবে। কারণটা খুব সহজ। আর তা হলো, আপনি এভাবে কাজ করলে একটি কাজের প্রতি আপনার সবটুকু মনোযোগ কাজে লাগে নিবিড়ভাবে এবং নির্বিঘ্নে। এক ঘন্টার একটি কাজ করতে আপনার ৪ ঘণ্টা লেগে যাবে যদি প্রতি ১০-১৫ মিনিটে আপনি বিরতি নেন বা বাধা প্রাপ্ত হন।

আজ এ পর্যন্তই। আশা করছি, সময়-ব্যবস্থাপনার পুরান কথাটিকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, তা বুঝতে এ লেখা আপনাকে সহায়তা কবে।

English Version

ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা

$
0
0

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আজিবার রহমান | ওয়েব সম্পাদনাঃ শাবাব শাহরিয়ার খান

Pics 3

জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে মানুষকে উপার্জনের নানাবিধ পথ বেছে নিতে হয়। ইসলামের দিকনির্দেশনা হ’ল হালাল পথে জীবিকা উপার্জন করা। হারাম পথে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগী করলে তা আল্লাহ্র নিকট গৃহীত হবে না। কারণ ইবাদত কবুলের আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল হালাল উপার্জন। [১] ক্বিয়ামতের ময়দানে বনু আদমকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে এবং এর যথাযথ উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোন মানুষ সামান্য পরিমাণ সামনে অগ্রসর হ’তে পারবে না। তান্মধ্যে একটি হ’ল ‘সে কোন পথে অর্থ উপার্জন করেছে’। [২] বুঝা গেল, অর্থ-সম্পদ হালাল পথে উপার্জন করতে হবে, অন্যথা ক্বিয়ামতের ভয়াবহ দিনে মুক্তির কোন পথ খোলা থাকবে না। আর হালাল পথে অর্থ-সম্পদ উপার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম হ’ল সততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা। রাসূলুল­াহ (ছাঃ)-কে সর্বোত্তম উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,

 أَطْيَبُ الْكَسْبِ عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ، وَ كُلُّ بَيْعٍ مَبْرُوْرٍ 

‘নিজ হাতে কাজ করা এবং হালাল পথে ব্যবসা করে যে উপার্জন করা হয় তা-ই সর্বোত্তম’। [৩]

ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের গুরুত্ব ইসলামে অনস্বীকার্য। সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে বৈধ পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করতে ইসলাম বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। মহান আল্লাহ বলেন,

 يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ’ (নিসা ২৯)

আল্ল­াহ আরো বলেন,

 فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ 

‘যখন ছালাত শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ্র অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর’ (জুম‘আ ১০)

সুতরাং জীবিকা উপার্জনের উত্তম পেশা হিসাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উল্লিখিত আয়াতে ছালাতের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের পরই ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করলে পরকালীন জীবন কল্যাণময় হবে মর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

التَّاجِرُ الصَّدُوْقُ الْأَمِيْنُ مَعَ النَّبِيِّيْنَ والصِّدِّقِيْنَ وَ الشُّهَدَاءِ،

‘সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী ক্বিয়ামতের দিন নবী, ছিদ্দীক্ব এবং শহীদগণের সাথে থাকবে’ [৪]

ব্যবসা-বাণিজ্য জীবিকা উপার্জনের সর্বোত্তম পেশা হওয়ায় মহানবী (ছাঃ), খুলাফায়ে রাশেদীনসহ অধিকাংশ ছাহাবী এর মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কুরআনের বাণী এবং মহানবী (ছাঃ)-এর হাদীছ দ্বারা উৎসাহিত হয়ে ছাহাবীগণ জীবন-জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। এমনকি ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ঐ সকল ব্যবসায়ী ছাহাবীর মাধ্যমেই অবিমিশ্র-নির্ভেজাল ইসলামের আগমন ঘটে। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ব্যবসা-বাণিজ্য। সুতরাং ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারী ইত্যাদির উপস্থিতি অতীব যরূরী।

সততার সাথে হালাল উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি উৎসাহিত করে মহান আল্লাহ বলেন,

 وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا،

 ‘আল্ল­াহ ব্যবসাকে হালাল এবং সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২৭৫)

এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, ইসলাম উপার্জনের পেশা হিসাবে হালাল পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যেমন উৎসাহ দিয়েছে, তেমনি অবৈধ পথে অর্থ-সম্পদ উপার্জন করতেও নিষেধ করেছে। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়া গেলেও এর শেষ পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই অন্যায়, যুলুম, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, মুনাফাখোরী, কালোবাজারী, মওজুদদারী ইত্যাদি অবৈধ ও ইসলাম বিরোধী কার্যাবলী পরিহার করে সততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে। রাসূলুল­াহ (ছাঃ) বললেন,

 إِنَّ التُّجَّارَ يُبْعَثُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فُجَّارًا إِلاَّ مَنِ اتَّقَى اللهَ وَبَرَّ وَصَدَقَ 

‘ক্বিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসাবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্ল­াহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত’। [৫]

ক্বিয়ামতের ময়দানে কঠিন শাস্তি হ’তে মুক্তি পেতে হ’লে আল্ল­াহভীতি সহকারে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে। কাউকে সামান্যতম ঠকানোর মানসিকতা অন্তরে পোষণ করা যাবে না। তাছাড়া মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মওজুদ করে রেখে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে মুনাফা লাভের প্রবণতা থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

 مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ 

‘যে মওজুদদারী করে সে পাপী’ [৬]

ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করলে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যবসায়ীদেরকে মিথ্যা পরিহার করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশিষ্ট ছাহাবী ওয়াসিলা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) আমাদের কাছে আসতেন এবং বলতেন,

 يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ

 ‘হে বণিক দল! তোমরা মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কারবার থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে’। [৭]

পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সকল ব্যবসায়ীকে মিথ্যা কসম বর্জন করতে হবে। কারণ তা ইসলামে নিষিদ্ধ। আবু কাতাদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِى الْبَيْعِ فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ

 ‘ব্যবসার মধ্যে অধিক কসম খাওয়া হ’তে বিরত থেকো। এর দ্বারা মাল বেশী বিক্রি হয়, কিন্তু বরকত বিনষ্ট হয়ে যায়’ [৮]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,

‘অধিক কসম খাওয়ার প্রবণতা ব্যবসায়ের কাটতি বাড়ায়, কিন্তু বরকত দূর করে দেয়’। [৯]

মিথ্যা কসমকারী ব্যবসায়ীদের কঠোর পরিণতি সম্পর্কে অন্য আরেকটি হাদীছে সাবধান বাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

 ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ خَابُوْا وَخَسِرُوْا مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ

 ‘তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্ল­াহ কিবয়ামতের দিন কথা বলবেন না ও তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও  করবেন না।  তাদের  জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আবূ যার বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! কারা নিরাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত?

তিনি বললেন, টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারী, উপকার করে খোটা প্রদানকারী এবং ঐ ব্যবসায়ী যে মিথ্যা শপথ করে তার পণ্য বিক্রি করে’। [১০]

মিথ্যা কসমকারী ব্যবসায়ী এতই ঘৃণিত যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্ল­াহ তার দিকে ফিরেও তাকাবেন না। প্রখ্যাত ছাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,

জনৈক বেদুঈন একটি ছাগী নিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি ছাগীটি তিন দিরহামে বিক্রি করবে? লোকটি বলল, আল্লাহ্র কসম! বিক্রি করব না। কিন্তু সে পরে সেই মূল্যেই ছাগীটি বিক্রি করে দিল। আমি এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্র (ছাঃ)-এর কাছে এসে উল্লে­খ করলাম। তিনি আমার কথাগুলো শুনে বললেন,

بَاعَ آخِرَتَهُ بِدُنْيَاهُ 

‘লোকটি  দুনিয়ার বিনিময়ে তার পরকালকে বিক্রি করে দিয়েছে’ [১১]

ব্যবসা-বাণিজ্যের ন্যায় একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। দ্রব্যের কোন দোষ-ত্রুটি থাকলে ক্রেতার সম্মুখে তা প্রকাশ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবে এবং তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। কোন প্রকার গোপনীয়তার আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না।  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পণ্যে ভেজাল দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيْهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ، قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ أَفَلاَ جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّىْ

 ‘একদা নবী করীম (ছাঃ) কোন এক খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্যস্তূপে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে দেখলেন তার হাত ভিজে গেছে। তিনি বললেন, হে খাদ্যের মালিক! ব্যাপার কি? উত্তরে খাদ্যের মালিক বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! বৃষ্টিতে উহা ভিজে গেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, ‘তাহ’লে ভেজা অংশটা শস্যের উপরে রাখলে না কেন? যাতে ক্রেতারা তা দেখে ক্রয় করতে পারে। নিশ্চয়ই যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়’। [১২]

রাসূলুল্ল­াহ (ছাঃ) আরো বলেন,

اَلْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا

 ‘ক্রেতা বিক্রেতা যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়, ততক্ষণ তাদের চুক্তি ভঙ্গ করার ঐচ্ছিকতা থাকবে। যদি তারা উভয়েই সততা অবলম্বন করে ও পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহ’লে তাদের পারস্পরিক এ ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং পণ্যের দোষ গোপন করে তাহ’লে তাদের এ ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত শেষ হয়ে যাবে’ [১৩]

প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ক্রয়ের ইচ্ছা না থাকলে কেবলমাত্র আসল ক্রেতাকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী করে দেওয়া ইসলামে মারাত্মক অপরাধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

 لاَ تَنَاجَشُوْا 

 ‘তোমরা ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়ার লক্ষ্যে ক্রেতার মূল্যের উপর মূল্য বৃদ্ধি করে ক্রেতাকে ধোঁকা দিয়ো না’। [১৪]

কারণ তা ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি যত সামান্যই হোক ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তা বর্জন করা উচিত। ব্যবসা-বাণিজ্যের ন্যায় একটি মহৎ পেশায় নিয়োজিত লোকদের বৈশিষ্ট্য তেমন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে হাসান বিন ছালিহর ক্রীতদাসী বিক্রয়ের ঘটনাটি একটি অনন্য উদাহরণ।

হাসান বিন ছালিহ একটি ক্রীতদাসী বিক্রয় করলেন। ক্রেতাকে বললেন, মেয়েটি একবার থুথুর সাথে রক্ত ফেলেছিল। তা ছিল মাত্র একবারের ঘটনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার ঈমানী হৃদয় তা উল্লে­খ না করে চুপ থাকতে পারল না, যদিও তাতে মূল্য কম হওয়ার আশংকা ছিল। [১৫]

সুতরাং ক্রেতা বিক্রেতা উভয়কে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহ’লে ইহ-পরকালে কল্যাণ ও মুক্তিলাভ সম্ভব হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওযন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নেওয়ার সময় বেশী নেওয়া এবং দেওয়ার সময় কম দেওয়া ইসলামে মারাত্মক অপরাধ। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের ধ্বংস অনিবার্য। মহান আল্লাহ বলেন,

وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِيْنَ، اَلَّذِيْنَ إِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ، وَإِذَا كَالُوْهُمْ أَوْ وَزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ، أَلاَ يَظُنُّ أُولَئِكَ أَنَّهُمْ مَبْعُوْثُوْنَ، لِيَوْمٍ عَظِيْمٍ، يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ

‘যারা ওযনে কম দেয় তাদের জন্য ধ্বংস। তারা যখন লোকদের কাছ থেকে কিছু মেপে নেয়, তখন পুরাপুরি নেয়। আর যখন তাদের মেপে বা ওযন করে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি ভেবে দেখে না যে, তারা সেই কঠিন দিনে পুনরুত্থিত হবে, যেদিন সকল মানুষ স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে দন্ডায়মান হবে’ (মুতাফ্ফিফীন ১-৫)

আল্ল­াহ অনত্র বলেন,

 وَأَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلاَ تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ

‘তোমরা ন্যায্য ওযন কায়েম কর এবং ওযনে কম দিয়ো না’ (আর-রহমান ৯)

বুঝা গেল যে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ওযনে কম-বেশী করা গুরুতর অপরাধ। এতে এক শ্রেণীর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এক শ্রেণীর মানুষ সাময়িকভাবে লাভবান হয়, যা ইসলামে কাম্য নয়।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীকে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে, অবৈধ উপার্জন ও লোভ-লালসাকে সংবরণ করতে হবে। আর এটাই ইসলামের দাবী। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে ইহকালে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন ও পরকালে মুক্তি লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন!!

 . মুসলিম; মিশকাত হা/২৭৬০ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়।
 . তিরমিযী, হা/২৪১৬, হাদীছ ছহীহ।
 . আহমাদ, মিশকাত হা/২৭৮৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬০৭।
 . তিরমিযী, হা/১২০৯; হাদীছ ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৮২।
 .  তিরমিযী, হা/১২১০; ইবনু মাজাহ হা/২১৪৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৫৮।
 . মুসলিম হা/৪২০৬।
 . ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৭৯৩।
 . মুসলিম, মিশকাত হা/১৬০৭, ২৭৯৩।
 . মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭৯৪।
 ১০. মুসলিম, হা/১০৫; মিশকাত হা/২৭৯৫।
 ১১. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬৪।
 ১২. মুসলিম; মিশকাত হা/২৮৬০।
 ১৩. বুখারী, হা/২০৭৯; মুসলিম হা/১৫৩২।
 ১৪. বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১৫৮১।
 ১৫. ইসলামে হালাল হারামের বিধান, পৃঃ ৩৪০।

আমার জীবনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন –একজন মুসলিম বোনের গল্প!

$
0
0

অনুবাদঃ   হামিদা মুবাশ্বেরা | ওয়েব সম্পাদনাঃ  মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

আজ আমি আপনাদের সাথে আমার হিজাব শুরু করার আগের ও পরের জীবনের কথা শুনাতে চাই। আমি ২০ বছর বয়সী একজন মুসলিম মেয়ে যার জন্ম আরব উপসাগরীয় এলাকায়-ইসলামের আদি জন্মভূমিতে।আমি বিশ্বাস করতাম হিজাব তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।যদিও আমার মা হিজাব পড়তেন, তিনি আমাকে বা আমার বোনকে তা পড়ার ব্যাপারে জোর করেন নি। তিনি মনে করতেন কাজটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করা উচিত, নতুবা তার আওতার বাইরে চলে গেলেই আমরা হিজাব পড়া ছেড়ে দিব। আমি মনে করি ধারণাটা কিছু মাত্রায় সঠিক।

 

অথবা আমরা যখন বড় হব তখন হিজাব পড়াটাকে আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হবে। কারণ সারাজীবন ধরে একটি বিষয়ে অভ্যস্ত হওয়া আর তারপর হঠাৎ করে সেটা বদলে ফেলা খুব কঠিন। মন পরিবর্তন করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। যাই হোক, নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে আমি খুবই ভালবাসতাম যেহেতু আমি দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ছিলাম।আর এটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন অংশ।আমি দামী দামী জামা-কাপড় কিনতে, সেগুলো দিয়ে নিজেকে সাজাতে খুবই পছন্দ করতাম। সবাই যখন আমার দিকে তাকাত এবং বিশেষভাবে চিহ্নিত করত, ব্যাপারটা আমি চরমভাবে উপভোগ করতাম। আমি ভালবাসতাম প্রশংসা শুনতে –বাহ মেয়েটাতো দারুণ সুন্দরী।

 

আমার মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ হবার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য আমি আমেরিকাতে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেখানে আমি একটি বিষয় লক্ষ করলাম যা আগে কখনও দেখিনি। তা হল মুসলিম সমাজ এবং সম্প্রদায়। এ এক অসাধারণ সমাজ আদর্শ মুসলিমদের নিয়ে যারা ইসলাম পালন করছে আমি যেভাবে অভ্যস্ত তার তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মাত্রায়। আরব উপসাগরীয় এলাকার মুসলিমরা জন্মগতভাবে মুসলিম। তাদের কোন প্রশ্ন করতে হয়না কারণ সব কিছুই খুব সুস্পষ্ট। আমাদের নিজেদের ঈমান নিয়ে এবং কিভাবে আল্লাহতে বিশ্বাস করতে হবে এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হয় নি কারণ আমরা বেড়েই উঠেছি মুসলিম হিসেবে এবং আমাদের চারপাশের সবাই ছিল মুসলিম।  প্রকৃত ইসলামের স্বরূপ কেমন এটা এবং সব ধরণের ধর্মাবলম্বী সম্বলিত একটি মিশ্র সমাজে বাস করার অনুভূতি কেমন সে সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই ছিল না। আমি উপলব্ধি করলাম উপসাগরীয় লোকজন বিশুদ্ধ ধর্ম পালন করত না, যা করত তা হল ধর্ম এবং সংস্কৃতির এক ধরণের মিশ্রণ।আমি আবিষ্কার করলাম-অনেক কিছু, যাকে আমি ইসলামিক বলে মনে করতাম, আসলে সাংস্কৃতিক বিশ্বাস এবং সেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চরম ভুল!আমি জানলাম যে বিশুদ্ধ ইসলাম সেটা না যার মাঝে আমরা বেড়ে উঠেছি বরং তা ছিল অর্থহীণ বিষয়ে পূর্ণ যা বহুদিন ধরে আমাদের সংস্কৃতির অংশ। বিশুদ্ধ ইসলামের শিক্ষার উৎস শুধুই ক্বুরআন ও সুন্নাহ।

 

যখন আমেরিকার লোকজন জানতে পারল যে আমি মুসলিম, তখন তারা সবসময় ইসলামের ব্যাপারে আমাকে নানা ধরণের প্রশ্ন করত। অধিকাংশ সময়েই আমি তাদের সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম না। ফলে আমি বিভিন্ন ইসলামী বই এবং ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করা শুরু করলাম-বিশুদ্ধ ইসলাম জানার আশায়। আমার অবস্থা ছিল এমন ব্যক্তির মত যে কখনও ইসলামের কথা আগে শোনেনি। আমি অনেক কিছু জানতে পারলাম যা আমি আগে জানতাম না।আমি মসজিদে যাওয়া শুরু করলাম এবং প্রচুর ভাই বোনদের সাথে ইসলামিক বিষয়ে কথা বলা ও আলোচনায় অংশ নিতে লাগলাম। আমি শপথ করে বলতে পারি যে আমার নিজের দেশে আমি কখনও কোন মসজিদে যাই নি এবং সেটার কথা চিন্তাও করিনি। যদিও আমার দেশে হাজার হাজার মসজিদ ছিল।আমি ছাড়া মসজিদের সমস্ত বোনরা হিজাব করত।আমি বাদে আর সবাই ছিল আমেরিকান। তারা আমার ব্যাপারে খুবই উদার ছিল আর সেজন্য আমি তাদের খুবই সম্মান করি। আমি এটা নিয়ে সবসময়ের জন্য ভাবা শুরু করলাম এবং আমার হিজাব পড়া নিয়ে প্রচুর স্বপ্ন দেখতে লাগ্লাম।আমি হঠাৎ এক অচেনা অনুভূতির সম্মুখীন হতে লাগলাম- আর তা হল কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে তা উপভোগ করার বদলে আমার বিতৃষ্ণা বোধ হতে থাকল। আমার নিজেকে একটা ছবির মত মনে হত যার কোন ব্রেন বা হৃদয় বলতে কিছু নেই। পরিশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম হিজাব শুরু করলাম। এটা আমার জীবনের নেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত। জীবনে প্রথমবারের মত আমি অনুভব করলাম যে আমি একজন দৃঢ় চিত্তের মানুষ।আমি যা বিশ্বাস করি সে অনুযায়ী কাজ করি।চারপাশের মানুষ আমার ব্যাপারে কি বলল বা আমার দিকে কিভাবে তাকাল, আমি তা গ্রাহ্য করি না।

 

হিজাব পড়ার পর প্রথম দিনটি ছিল সবচেয়ে সুন্দর। আমি এত সুখী আর উদার জীবনে আর কখনও বোধ করি নি যেমনটি করেছিলাম সেদিন। আর বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের জন্য অবিশ্বাস্য ছিল যে আমি আসলেও এটা করতে পারব এবং প্রত্যেকে বলেছিল যে আমার এটা বেশী দিন স্থায়ী হবে না। সম্ভবত তাদের এই অনুমান অনেকগুলো কারণের মাঝে একটি যা আজও আমাকে হিজাব পড়া অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সাহায্য করেছে। আমার নিজের সাথে এজন্য যুদ্ধ চালাতে হয়েছে। আমার আমি সবসময়ই দুনিয়ার এই জীবনটাকে খুব ভালবাসে এবং তাকে সর্বোত্তমরূপে ভোগ করতে চায়। কিন্তু তখন সময় এসেছিল তাকে থামানোর এবং আমি তা করেছিলাম।কিছুদিন পর থেকে সবাই আমাকে সম্মানের চোখে দেখা শুরু করল যেভাবে তারা আগে কখনও দেখেনি। সবাই আমাকে চরমভাবে বিশ্বাস করা শুরু করল এই কারণে যে তারা জানত আমি একজন ধার্মিক ব্যক্তি। কি তাদের মাঝে এই ধারণার জন্ম দিল?   -হিজাব

 

আমি এখন যে কোন জায়গায় যেতে পারি এবং কেউ আমার দিকে এমনভাবে তাকায় না যে আমি একটা ছবি বা প্রাণহীণ পুতুল।তবে আমি এখনও সুন্দর করে পোশাক পড়ি এবং সাজগোজ করি, যখন আমি শুধু আমার বোনদের মাঝে থাকি আর দেখা গেল সেটা আরও বেশি মজা- নির্মল বিনোদন।

 

আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ হিজাব বাধ্যতামূলক করেছেন আমাদের সাহায্য করার জন্য, আমাদের জীবনকে সহজতর করার জন্য। এটা নারী ও পুরুষের মাঝে সম্মানজনক সেতুবন্ধনের সাহায্য করে। তাছাড়াও এটা হল নিজের সৌন্দর্য শুধু নিজের কাছে এবং যাদের কাছে আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন শুধু তাদের কাছেই তুলে ধরার ব্যাপার।এটা অন্য সকল ধর্মের মত একটি চিহ্ন বা স্মারক যে আমি একজন মুসলিম। যেমন ইহুদীরা তাদের মাথার উপর একটা ছোট কাপ পড়ে আর খ্রিস্টানরা পরে ক্রস।তাদের কেউই জনসম্মুখে এটা পড়তে লজ্জিত বোধ করে না। কোন মানুষ এব্যাপারে খারাপ ধারণাও পোষণ করে না।

 

একটা মেয়ে হিজাব পড়ে যেন এটা তাকে ভুল বা হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়া থেকে বাঁচায়। যে মেয়েটা হিজাব পড়ে সে এমন দৃঢ়চিত্ত হয় যে, যে কোন কিছু করতে পারে এবং জীবনের পথে যে কোন সমস্যা মোকাবিলা করতে পারে।  তোমার চারপাশের সবাই তোমাকে বিশ্বাস করবে কারণ তুমি নিজেকে বিশ্বাস কর। তুমি কি জান না যে তোমার বাহ্যিক দিক খুব গুরুত্বপূর্ণ? তুমি কি জান না তা খুব মূল্যবান? তুমি যে সুন্দর এটা বলার জন্য তোমার কাউকে প্রয়োজন নেই, কারণ তুমি তা জান। আর তোমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকার জন্যও তোমার কাউকে দরকার নেই যেন তুমি একটা সুন্দর ছবি না চিত্রকর্ম, কারণ তুমি একজন মানুষ।
English Version 

যে ৮ টি বিষয় আপনার দাম্পত্য জীবনকে অশান্তিময়, দুর্বল এবং অকার্যকর করতে থাকে

$
0
0

যে ৮ টি বিষয় আপনার দাম্পত্য জীবনকে অশান্তিময়, দুর্বল এবং অকার্যকর করতে থাকে: 

১) খারাপ ব্যবহার করা : তাকে এমন কিছু নিয়ে ঠাট্টা করা যাতে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমন ধমক দেয়া যা অন্যদের সামনে তার অসম্মান হয়ে যায়। তাকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।

২) উপেক্ষা করা : তার পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা তার কথাবার্তাকে গোণায় না ধরা বা পাত্তা না দেয়া। হয়ত সে সালাম দিয়েছেন আপনাকে, আপনি উত্তর দিলেন না। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে হয়ত সে কিছু বলছে কিন্তু আপনি বিশেষ কারণ ছাড়াই তার কথার পাত্তা দিচ্ছেন না।

৩) মিথ্যা বলা : কিছুতেই মিথ্যা বলা সঠিক নয়। আল্লাহ মিথ্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের এই ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করুন। মিথ্যা আপনাদের পারস্পারিক বিশ্বাসকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিবে।

৪) কথা দিয়ে কথা না রাখা : কথা দিয়ে কথা রাখা বা ওয়াদা রক্ষা করা একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। বিষয়টি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

৫) এড়িয়ে চলা : অনেকদিন পর দেখা হলে বন্ধুদেরকে বা ভাইদের আমরা জড়িয়ে ধরি, কোলাকুলি করি। আপনার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না? পারবেন, অস্বস্তি লাগলেও তা ভেঙ্গে ফেলুন। ভালোবাসার প্রকাশ থাকা খুবই প্রয়োজন।

৬) সন্দেহ ও গীবত করা : কখনো সন্দেহ করতে যাবেন না। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে। আপনার জীবনসঙ্গী আপনার খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি। কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। আর মনে রাখবেন, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ হিসাব দিবে। তাই সন্দেহ দূর করুন। স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের চাদরস্বরূপ, ছোট-খাটো ভুলত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা নিয়ে অন্যদের কাছে বলে বেড়াবেন না, গীবত করবেন না।

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেছেন :

হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” — [আল হুজুরাত, ৪৯ : ১২]

৭) খুব বেশি ব্যস্ততা : অপরজনের জন্য কিছু সময় রাখবেন। পারস্পরিক কথাবার্তা আর সময়গুলো সম্পর্ককে প্রগাঢ় করে। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা সময় তিনি পাওয়ার অধিকার রাখেন। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

৮) সালাত এবং অন্যান্য ইবাদাত না করা : যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত না করে, নামাজ না পড়ে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নন। নিয়মিত নামাজ না পড়া, অশ্লীল কাজ, হারাম উপার্জনগুলো থেকে সরে না আসার কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে গেছে। আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনে অলসতা-উপেক্ষা করার কারণে মুসলিম সংসারে অত্যন্ত দ্রুত ভাঙ্গন ধরে যায়।

আল্লাহ আমাদেরকে ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আমাদের সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমাদের পরিবারগুলোতে রাহমাত এবং বারাকাহ দান করুন।

আল্লাহ্‌ভীরু জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী খুজতে ভিজিট করুন

http://bd.purematrimony.com/ –Pure Matrimony Bangladesh

প্রবন্ধটি নেওয়া হয়েছে “দাম্পত্য টিপস” ওয়েবসাইট থেকে

প্রশ্নোত্তরে মৌলিক ইসলাম শিক্ষা

$
0
0

সুপ্রিয় ভাই , আমরা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করব।আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

১ম প্রশ্নঃ আমার, আপনার এবং পৃথিবীর সব কিছুর স্রষ্টা ও পালনকর্তা কে?
উত্তরঃ আমার, আপনার এবং সারা জাহানের একমাত্র স্রষ্টা ও পালনকর্তা হলেন মহান আল্লাহ। তিনি দয়া করে আমাকে সহ পৃথিবীর প্রতিটি বস’ সৃষ্টি করেছেন এবং সবকিছু লালন-পালন করছেন।
২য় প্রশ্নঃ আমাদের দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার নাম কী?
উত্তরঃ আমাদের দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার নাম হল ইসলাম। ইসলাম মানে হল, আল্লাহকে ভয় করে, তাঁর প্রতি ভালবাসা রেখে এবং তাঁর কাছেই আশা ও আকাংখা নিয়ে পরিপূর্ণভাবে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
৩য় প্রশ্নঃ আমরা কিভাবে আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারি?
উত্তরঃ আমরা এ বিশাল সৃষ্টিজগতের দিকে তাকালে আল্লাহর পরিচয় পাই। ঐ সুবিশাল আকাশ, এই বিস্তীর্ণ পৃথিবী, চাঁদ, সুরুজ, দিন ও রাতের আবর্তন ইত্যাদির দিকে গভীরভাবে তাকালে বুঝতে পারি এ বিশ্বচরাচর একাকি সৃষ্টি হয়ে যায়নি। বরং এসবের পেছনে রয়েছে একজন সুনিপুন স্রষ্টার হাত। আর তিনি হলেন, মহান আল্লাহ তা’আলা।
৪র্থ প্রশ্নঃ আল্লাহ কোথায় আছেন?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা সাত আসমানের উপর আরশে আযীমে অবস্থান করেন। তিনি তাঁর সব সৃষ্টি থেকে আলাদা।
৫ম প্রশ্নঃ আল্লাহ কি সত্বাগতভাবে আমাদের সাথে থাকেন?
উত্তরঃ আল্লাহ স্বীয় সত্বায় আরশে আযীমের উপর অবস্থান করেন। কিন্তু তাঁর জ্ঞান আমাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছে। তিনি সব কিছু দেখছেন। সব কিছু শুনছেন। তার শক্তি এবং ক্ষমতা সব জায়গায় বিরজমান। আল্লাহ তা’আলা মূসা ও হারুন (আলাইহিমাস সালাম) কে লক্ষ্য করে বলেন, “তোমরা ভয় পেওনা। আমি তোমদের সাথে আছি। সব কিছু দেখছি এবং শুনছি।” (সূরা ত্বাহাঃ ৪৬)
৬ষ্ঠ প্রশ্নঃ আল্লাহর ওলী কারা?
উত্তরঃ ওলী শব্দের অর্থ, আল্লাহর প্রিয়পাত্র বা বন্ধু। তারাই আল্লাহর প্রিয়পাত্র হন যারা সত্যিকার ভাবে আল্লাহকে ভয় করে জীবন পরিচালনা করেন, সৎ আমল করেন, তাঁর আদেশগুলো বাস-বায়ন করেন এবং নিষেধকৃত বিষয়গুলো থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং কুরআন ও হাদীসকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখেন।
৭ম প্রশ্নঃ কী পদ্ধতিতে আমাদের আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করা উচিৎ?
উত্তরঃ আমাদের কর্তব্য হল, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগী করব যাতে সবটুকু ইবাদত শুধু তাঁর জন্যই নিবেদিত হয়। অন্য কোন সৃষ্টিকে তাঁর সাথে শরীক বা অংশিদার করা না হয়।
৮ম প্রশ্নঃ কী দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে নবীদেরকে প্রেরণ করেছিলেন?
উত্তরঃ যুগে যুগে সকল নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণের উদ্দেশ্য হল, তারা মানুষকে এ আহবান করবেন যে, মানুষ যেন কেবল আল্লাহর ইবাদাত করে এবং তার সাথে অন্য কাউকে শরীক না করে।
আরো উদ্দেশ্য হল, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট অজ্ঞতার অযুহাত পেশ করতে না পারে।
৯ম প্রশ্নঃ ইসলাম কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিয়ে পরিপূর্ণভাবে তার আনুগত্য করা এবং শির্‌ক ও শিরকপন্থীদের থেকে সর্ম্পক ছিন্ন করাকেই ইসলাম বলে।
১০ম প্রশ্নঃ ইসলামের মূল স্তম্ভ কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ ইসলামের মূল স্তম্ভ ৫টি। সেগুলো হলঃ
১) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল- এ কথার স্বীকৃতি প্রদান করা।
২) নামায প্রতিষ্ঠা করা।
৩) যাকাত আদায় করা।
৪) রামাযান মাসে রোযা পালন করা।
৫) যে ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম তার জন্য হজ্জ সম্পাদন করা।
১১তম প্রশ্নঃ ঈমান কাকে বলে?
উত্তরঃ অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়নকে ঈমান  বলে।
১২তম প্রশ্নঃ ঈমান কি বাড়ে ও কমে?
উত্তরঃ হাঁ। কথা ও কাজ অনুযায়ী ঈমান বাড়ে ও কমে।
১৩তম প্রশ্নঃ ঈমান বাড়ে ও কমে এ কথার অর্থ কী?
উত্তরঃ একথার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি যত বেশী আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং ভাল কাজ করবে তার ঈমান তত বৃদ্ধি পাবে। আর যে যত পাপ ও অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়বে তার ঈমান তত কমবে।
১৪তম প্রশ্নঃ ঈমানের মূল স্তম্ভ কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ ঈমানের মূল স্তম্ভ ৬টি। সেগুলো হলঃ
১) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ২) ফেরেশ্‌তাগণের প্রতি বিশ্বাস ৩) আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস ৪) নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস ৫) পরকালের প্রতি বিশ্বাস ৬) ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস।
১৫তম প্রশ্নঃ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ কী?
উত্তরঃ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হচ্ছে, এ বিশ্বাস করা যে  আল্লাহ তা’আলা রিযিক দাতা, সৃষ্টিকর্তা, সব কিছুর পরিচালক, আসমান ও যমিনের সমস্ত রাজত্ব এবং কর্তৃত্ব তাঁর হাতে। সমস্ত সৃষ্টি তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার একমাত্র অধিকারী; অন্য কেউ নয়। তাঁর রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর নাম এবং তিনি অসংখ্য পরিপূর্ণগুণের অধিকারী।
১৬তম প্রশ্নঃ ফেরেশ্‌তা কারা?
উত্তরঃ তারাঁ আল্লাহর এমন এক সৃষ্টি যাদেরকে তিনি নূর (আলো) দ্বারা সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে যে কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন বা যে সব কাজ করতে আদেশ করেছেন তা পরিপূর্ণভাবে পালন করেন। তাতে বিন্দুমাত্র অবাধ্যতা করেন না।

১৭তম প্রশ্নঃ আসমানী গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ কী?
উত্তরঃ নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হল, আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে অনেক নবী প্রেরণ করেছেন যেমন, নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা, (আলাইহিমুস সালাম) প্রমূখ । তাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির দিকনির্দেশনার জন্য আসমানী গ্রন্থ নাজিল করেছেন। যেমন, তাওরাত, ইন্‌জিল, যাবূর,ইত্যাদি। নবীগণ তাদের সমসাময়িক মানবগোষ্ঠিকে এক আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য আহবান করেছেন এবং শিরক করা থেকে নিষেধ করেছেন।
নবী-রাসূলদের ধারাবাহিকতার সব শেষে আগমন করেছেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাঁর প্রতি আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করেছেন আল কুরআন। এ কুরআনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল আসমানী গ্রন্থকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। তিনি এ কুরআনকে পরিপূর্ণভাবে বাস্ববায়ন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের নবুওয়তী যিন্দেগীতে। তাই যে কোন ইবাদত অবশ্যই হতে হবে কুরআনের শিক্ষা এবং নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহ তথা তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে।
১৮তম প্রশ্নঃ পরকালে বিশ্বাসের অর্থ ?
উত্তরঃ পরকালে বিশ্বাসের অর্থ হল, একথা বিশ্বাস করা যে, মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা প্রতিটি জিনিসের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ দিয়েছেন। সে মেয়াদ শেষ হলে সবাইকে অবশ্যই মৃত্যু বরণ করতে হবে। এরপর আল্লাহ সকলকে কবর থেকে পূণরুত্থিত করবেন এবং কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ নেয়ার পর প্রত্যেককে তাদের কাজের যথোপযুক্ত প্রতিদান দিবেন। ভাল কাজের বিনিময়ে তাদেরকে দেয়া হবে ভাল প্রতিদান। আর পাপ ও অন্যায়ের বিনিময়ে প্রদান করবেন কঠিন শাস্তি।
আমাদেরকে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যে মহান স্রষ্টা এ সুন্দর দেহাবয়বকে যেমনিভাবে প্রথমবার সৃজন করেছেন তিনি পূণরায় তাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
১৯তমঃ ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রাত বিশ্বাসের অর্থ কী?
উত্তরঃ এর অর্থ হল, এ জীবনে ভাল-মন্দ যাই ঘটুক না কেন এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তা অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা ও পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে। কারণ, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা’আলা প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত শুক্ষভাবে অনেক পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন।
২০তম প্রশ্নঃ “লা-ইলাহা ইল্লালাহ” এর ব্যাখ্যা কী?
উত্তরঃ ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ অর্থ হল, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নাই। বরং যাবতীয় ইবাদাত ও উপাসনা পাওয়ার একমাত্র হকদার তিনি। তিনি ব্যতিরেকে যত কিছুর ইবাদত করা হচ্ছে সবই মিথ্যা এবং ভ্রান্ত।
২১তম প্রশ্নঃ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর ব্যাখ্যা কী?
‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর ব্যাখ্যা হল, নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন করা। তিনি যে সকল সংবাদ ও তথ্য দান করেছেন সেগুলোকে নির্ভূল ও সত্য বলে মেনে নেয়া। তিনি যেসকল বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন বা সতর্ক করেছেন সেগুলো থেকে বিরত থাকা এবং তাঁর দেখানো পদ্ধতি ব্যতিরেকে ইবাদত না করা।
২২তম প্রশ্নঃ ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ এর কোন শর্ত আছে কী?
উত্তরঃ তাওহীদের স্বীকৃতি জ্ঞাপক এই মহান বাণীটির জন্য ৮টি শর্ত রয়েছে। সে শর্তগুলো হলঃ
১) ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ এর অর্থ জেনে-বুঝে  স্বীকৃতি দেয়া। এর অর্থ বা তাৎপর্য না বুঝে পাঠ করলে কোন লাভ হবে না।
২) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে স্বীকৃতি দেয়া। এতে কোন সন্দেহ ও অস্পষ্টতা রাখা যাবে না।
৩) নির্ভেজাল মনে স্বীকৃতি দেয়া। কোন শিরকী ধ্যান-ধারণা নিয়ে পাঠ করলে কোন লাভ নেই।
৪) সত্য মনে করে স্বীকৃতি দেয়া। কপটতা থেকে মুক্ত থাকা অপরিহার্য।
৫) ভালবাসা সহকারে স্বীকৃতি দেয়া। মনের মধ্যে ঘৃণা বা ক্রোধ জমা রেখে স্বীকৃতি দিলে কোন উপকার হবে না।
৬) পূর্ণ আনুগত্যের মন-মানষিকতা নিয়ে স্বীকৃতি দেয়া। পরিত্যাগ করার বা অমান্য করার মানষিকতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
৭) মনেপ্রাণে নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করা। এ বিষয়ে কোন প্রতিবাদ করা বা প্রশ্নতোলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
৮) আল্লাহ ছাড়া অন্য যত কিছুর ইবাদাত করা হচ্ছে সব অস্বীকার করা।
২৩তম প্রশ্নঃ আল্লাহা তা’আলা আমাদেরকে যে সব বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বড়?
উত্তরঃ সে বিষয়টি হল তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
২৪তম প্রশ্নঃ তাওহীদ কী?
উত্তরঃ তাওহীদ হল, একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা এবং আল্লাহ তা’আলা নিজে কুরআনে বা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে তার যে সকল নাম ও গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলোকে কোনরূপ ব্যাখ্যার আশ্রয় না নিয়ে সহজভাবে মেনে নেয়া।
২৫তম প্রশ্নঃ তাওহীদ কত প্রকার?
উত্তরঃ তাওহীদ তিন প্রকারঃ ১) তাওহীদুর রুবূবিয়া ২) তাওহীদুল উলূহিয়া ৩) তাওহীদুল আসমা ওয়াস্‌ সিফাত।
২৬ তম প্রশ্নঃ ‘তাওহীদুর রুবূবিয়া’ কাকে বলে?
উত্তরঃ সৃষ্টি করা, রিযিক দান করা, বৃষ্টি বর্ষণ, জীবন দান, মৃত্যু দান ইত্যাদি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক মনে করাকে তাওহীদে রুবূবিয়া বলা হয়।
২৭তম প্রশ্নঃ ‘তাওহীদুল উলূহিয়া’ কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ, দু’আ, মানত ইত্যাদি বান্দার যত প্রকার ইবাদত-বন্দেগী হতে পারে সবকিছুর একমাত্র অধিকারী আল্লাহকে মনে করাকে তাওহীদে উলূহিয়া বলা হয়।
২৮তম প্রশ্নঃ ‘তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত’ কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা নিজে কুরআনে অথবা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে আল্লাহর পরিচয় সর্ম্পকে যে সব কথা বলেছেন সেগুলো মনে প্রাণে মেনে নেয়া। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর কোন গুণকে অস্বীকার করা যাবে না বা  তাতে কোন শব্দগত বা অর্থগত বিকৃতী সাধন করা যাবে না। কিংবা সেগুলোর কোন ধরণ বা আকৃতি কল্পনা করা যাবেনা। বরং এ বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, এ সমস্ত গুণাবলী অবশ্যই সত্য কিন্তু তা মহান আল্লাহর জন্য যেমন হওয়া উচিৎ তেমনই।
২৯তম প্রশ্নঃ ইবাদাত বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা যে সমস্ত কথা বা কাজে খুশী হন চাই তা প্রকাশ্য হোক বা অপ্রকাশ্য হোক তাকে ইবাদাত বলে।
৩০তম প্রশ্নঃ ইবাদতের কোন শর্ত আছে কি?
উত্তরঃ ইবাদতের কয়েকটি শর্ত রয়েছে। সেগুলো হলঃ
১) ইখলাস থাকা অর্থাৎ যে কোন কাজ নির্ভেজাল চিত্তে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কাজ করা।
২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখানো পদ্ধতি অনুসারে সে কাজটি করা।

৩১তম প্রশ্নঃ ইবাদাতের কতিপয় উদাহরণ দিন।
উত্তরঃ নামায রোযা, হজ্জ, যাকাত, ভয়, আশা, সাহায্য চাওয়া, বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা ইত্যাদি যে সব কাজ আল্লাহ তা’আলা আমদেরকে করার জন্য আদেশ প্রদান করেছেন সবই আল্লাহর ইবাদাত।
৩২তম প্রশ্নঃ আল্লাহ তা’আলা আমদেরকে যে সব কাজ থেকে নিষেধ করেছেন সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ কোনটি?
উত্তরঃ সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং মারাত্মক হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্‌ক করা।
৩৩তম প্রশ্নঃ শির্‌ক কী?
উত্তরঃ কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা শির্‌ক। যেহেতু মহান আল্লাহ তো আমাকে, আপনাকে তথা সমগ্র বিশ্বকে একাই সৃষ্টি করেছেন।
৩৪তম প্রশ্নঃ শির্‌ক কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ শির্‌ক তিন প্রকারঃ ১) বড় শির্‌ক ২) ছোট শির্‌ক ৩) গোপন শির্‌ক।
৩৫তম প্রশ্নঃ বড় শির্‌ক বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ কোন ইবাদাত যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর নামে করা হয় তবে সেটা হল বড় শির্‌ক। কোন মুসলমান এ শির্‌ক করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় এবং তার পূর্বের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায়। এমনকি তাওবা না করে এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
৩৬তম প্রশ্নঃ বড় শির্‌ক কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ বড় শির্‌ক চার প্রকার। তা হলঃ
১) দু’আর ক্ষেত্রে শির্‌ক করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট কিছু চাওয়া বা  বিপদাপদ থেকে রক্ষা পওয়ার জন্য দুআ করা বড় শিরক।
২) নিয়তের ক্ষেত্রে শির্‌ক করা। ইবাদাত করতে গিয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করা।
৩) ইবাদাতের ক্ষেত্রে শির্‌ক। আল্লাহর আদেশ বাস্ববায়ন করার পরিবর্তে কোন পীর, ওলী-আওলিয়া বা অন্য কোন সৃষ্টির উপাসনা করা।
৪) ভালোবাসার ক্ষেত্রে শির্‌ক। যে ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ভালবাসা পাওয়ার  উপযুক্ত সে ক্ষেত্রে তাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করা।
৩৭তম প্রশ্নঃ ছোট শির্‌ক কী?
উত্তরঃ যে কাজ করলে বড় শিরকে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেটাই ছোট শির্‌ক। যেমন, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বা মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্যে কিংবা দুনিয়াবী কোন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কোন নেক কাজ করা হলে তা ছোট শিরকে রূপান্তুরিত হয়।
এ জাতীয় কাজ করলে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হবে না বটে কিন্তু সে অবশ্যই একটি বড় ধরণের পাপ সম্পাদন করল। এ জন্য যে কোন ভাল কাজ করার আগে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করার ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে।
৩৮তম প্রশ্নঃ গোপন শির্‌ক কী?
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত তাকদীরের ব্যপারে অসন্তোষ প্রকাশ করাই হল গোপন শির্‌ক।
৩৯তম প্রশ্নঃ গোপন শির্‌কের প্রমাণ কী?
উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “গভীর রাতে একখণ্ড কালো পাথরের উপর দিয়ে একটি কালো পিঁপড়া হেঁটে গেলে তার পায়ের যে আওয়াজ হয় তার চেয়ে আরো বেশী নীরবে আমার উম্মতের মধ্যে গোপন শির্‌ক প্রবেশ করবে।”
৪০তম প্রশ্নঃ কুফুরী কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ কুফরী দুপ্রকারঃ
১) বড় কুফরী। যেমন, কেউ আল্লাহ অসি-ত্বকে অস্বীকার করলে বা ইসলামী আদর্শকে ঘৃণা করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এ জতীয় কুফুরী করার কারণে মানুষ ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যায়।
২) ছোট কুফরী। যেমন, কেউ আল্লাহকে অস্বীকার করল না কিন’ সে আল্লাহর কোন অবদানকে অস্বীকার করল। এ ক্ষেত্রে সে ইসলাম থেকে বের হবে না কিন’ তা অবশ্যই বিরাট গুনাহের কাজ করল।
৪১তম প্রশ্নঃ বড় কুফরী কয় প্রকার?
উত্তরঃ বড় কুফরী পাঁচ প্রকারঃ
১) অস্বীকার করার মাধ্যমে কুফুরী করা। আল্লাহ, রাসূল, ফেরেশ্‌তা, ইসলামী কোন বিধান যেমন, নামায, পর্দা ইত্যাদি বিষয়কে সরাসরি অস্বীকার করা বড় কুফুরী। যার কারণে একজন মানুষ নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।
২) অহংকারের মাধ্যমে কুফুরী করা। যেমন, ইসলাম একটি ‘চিরন্তন সত্য জীবন ব্যবস্থা’ এ কথা জানার পরও অহংকার বশতঃ ইসলাম বা ইসলামের রীতি-নীতিকে এড়িয়ে চলা।
৩) সন্দেহ পোষণ করা।
৪) অবাধ্যতা করার মাধ্যমে কুফুরী করা।
৪) মুনাফেকী করা তথা মনের মধ্যে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ লুকিয়ে রেখে বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশ করা। এটা জঘণ্যতম কফুরী।
৪২তম প্রশ্নঃ মুনাফেকী কয় প্রকার?
উত্তরঃ ১) বিশ্বাসগত ২) কর্মগত।
৪৩তম প্রশ্নঃ বিশ্বাসগত মুনাফেকীর অর্থ কী? তা কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ বিশ্বাসগত মুনাফেকীর অর্থ হল, মূলত সে ইসলামকে বিশ্বাসই করেনা। বরং বাহ্যিকভাবে ইসলামকে মেনে চলে মনে হলেও বিশ্বাসগতভাবে সে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী। ইসলামের ক্ষতি করার জন্য সে এ বেশ ধারণ করেছে।
মুনাফেকী ছয় প্রকার। যেমনঃ
১) আল্লাহ ও রাসূলকে অস্বীকার করা।
২) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত জীবনাদর্শ ইসলাম এবং ইসলামের মৌলগ্রন্থ কুরআনকে অস্বীকার করা।
৩) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ঘৃণা করা।
৪) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত জীবনার্দশকে ঘৃণা করা।
৫) ইসলামকে অপমান করা হলে বা ইসলামের পতন হলে মনে মনে আনন্দিত হওয়া।
৬) ইসলামের বিজয় বা ইসলামের বিস্তার লাভ করাকে অপছন্দ করা।
৪৪তম প্রশ্নঃ কর্মগত মুনাফেকীর বৈশিষ্টগুলো কী কী?
উত্তরঃ কর্মগত মুনাফেকীর চারটি বৈশিষ্ট রয়েছে। সেগুলো হলঃ
১) কথায় কথায় মিথ্যা বলা।
২) ওয়াদা ভঙ্গ করা বা কথা দিয়ে কথা না রাখা।
৩) আমানতের খেয়ানত করা।
৪) ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা।
৪৫তম প্রশ্নঃ শির্‌কে লিপ্ত থাকা অবস্থায় কি কোন আমল গ্রহণযোগ্য হবে?
উত্তরঃ শির্‌কে লিপ্ত থাকা অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার কাছে কোন আমল গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ “তারা যদি শির্‌ক করত তবে তারা যত আমল করেছিল সব বরবাদ হয়ে যেত।” (সূরা আন’আমঃ ৮৮)
আল্লাহ আরো বলেন, “আল্লাহ তা’আলা তাঁর সাথে শিরক করাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন না এবং এর নিন্মস্তরের যে কোন অপরাধ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। যে শির্‌ক করল সে (হেদায়েতের পথ থেকে) অনেক দূরে ছিটকে পড়ল।”  (সূরা নিসাঃ ১১৬)
৪৬তম প্রশ্নঃ ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় দশটি। যথাঃ
১) ইবাদতে ক্ষেত্রে শির্‌ক করা।
২) মুশরিকদেরকে মুশরিক মনে না করা বা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদেরকে সঠিক পথের অনুসারী মনে করা।
৩) আল্লাহ তা’আলার নিকট পৌঁছার উদ্দেশ্যে কোন ‘মাধ্যম’ ধরে তার নিকট  দুআ করা বা তার নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা অথবা তার উপর পরকালে নাজাত পাওয়ার ভরসা করা।
৪) এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শের চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির মতাদর্শ উত্তম বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত জীবন ব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ শ্রেয়।
৫) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশিত কোন বিষয়কে মনে মনে ঘৃণা করা যদিও সে তা পালন করে।
৬) দ্বীন-ইসলামের কোন বিষয়কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা হেয় মনে করা।
৭) যাদু করা অথবা যাদু-তাবিজ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার মনের মিলন কিংবা বিচ্ছেদ ঘটানো।
৮) মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমুসলিমদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা।
৯) এ বিশ্বাস করা যে, বিশেষ কিছু  ব্যক্তি রয়েছে যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীয়ত মেনে চলতে বাধ্য নন।
১০) ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে চলা, ইসলাম শিক্ষা না করা এবং ইসলাম অনুযায়ী আমল না করা।
৪৭তম প্রশ্নঃ এমন তিনটি বিষয় রয়েছে যেগুলো সর্ম্পকে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক। সে বিষয় তিনটি কী?
উত্তরঃ সে তিনটি বিষয় হলঃ ১) আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ২) দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ৩) নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্ম্পকে জ্ঞানার্জন করা।
৪৮তম প্রশ্নঃ তাগুত কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহ ছাড়া যত কিছুর ইবাদাত করা হয় সবই তাগুতের অন্তর্ভূক্ত।
৪৯তম প্রশ্নঃ তাগুত কতটি এবং মূল তাগুতগুলো কী কী?
উত্তরঃ তাগুতের সংখ্যা অনেক। তবে সেগুলোর মধ্যে প্রধান হল ৫টি।
৫০তম প্রশ্নঃ প্রধান প্রধান তাগুতগুলো কী কী?
উত্তরঃ সেগুলো হলঃ
১) শয়তান।
২) যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা হলেও তার কোন প্রতিবাদ করেনা বা তাকে ঘৃণা করেনা বরং তাতে রাজি থাকে।
৩) যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদতের দিকে মানুষকে আহবান করে এবং এজন্য কাজ করে।
৪) যে ব্যক্তি ইলমে গায়ব তথা অদৃশ্যের খবর দিতে পারে বলে দাবি করে ।
৫) যে শাষক আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন না।

অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদী আরব
দাঈ ও গবেষক, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব

সীরাহ কেন পড়া উচিৎ? –তিনি ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি –প্রথম পর্ব

$
0
0

প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্বচতুর্থ পর্বপঞ্চম পর্ব শেষ পর্ব

90

রাসূলুল্লাহ্ (সা:) হলেন ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। রাসুলুল্লাহ্ (সা:) কে না জেনে, তার পথনির্দেশনা, নিষেধাবলী এবং শিক্ষণ সম্পর্কে অবগত না হয়ে ইসলামকে জানার কোন পথই নেই।

আল্লাহর রাসূল শান্তিচুক্তি করেছেন এবং যুদ্ধ করেছেন, বসতি স্থাপন করেছেন এবং ভ্রমণ করেছেন, ক্রয়-বিক্রয় করেছেন, আদান-প্রদান করেছেন। তিনি কখনো একাকী বসবাস করেনি নি নচেৎ একাকী ভ্রমণও করেননি।

মুসলিম উম্মাহ্ আজ দুর্বলতার শিকার কারণ তারা রাসুলুল্লাহর আদর্শ এবং পথনির্দেশনা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে কারণ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বলেছেনঃ“(হে মুসলমানরা), তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনীতে অনুকরণযোগ্য উত্তম আদর্শ রয়েছে, (আদর্শ রয়েছে) এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যে যে আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহী এবং যে পরকালের (মুক্তির) আশা করে, (সর্বোপরি) সে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে” (সূরা আহযাব:২১)

 

এমনো কিছু মুসলিম রয়েছে যারা সেমিনার কিংবা উৎসব উদযাপনের সময় রাসুলুল্লাহর জীবনী পড়ে অথচ তার দেয়া নির্দেশাবলী অনুসরণ করে না। আবার এমন অনেকেই রয়েছে যারা তাঁর জীবনী পড়ে হয় সওয়াবের আশায় নতুবা বিভিন্ন ঘটনাবলীর সাথে পরিচিত হওয়ার উদ্দেশ্যে যেমন- যুদ্ধ, দিনক্ষণ ইত্যাদি

এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত: রাসুলুল্লাহ(সা:) এর আদেশ এবং পথনির্দেশনাবলীর মূলনীতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের অভাব এবং তাঁর ভালোবাসা অর্জনে এটার আবশ্যকতা সম্বন্ধে জানার অভাব।

দ্বিতীয়ত: সীমাবদ্ধ পড়াশোনা এবং উপসংহার টানার দুর্বলতা হেতু রাসুলুল্লাহর জীবনীতে আলোচ্য পথনির্দেশনা হৃদয়ঙ্গম করতে তাদের ব্যর্থতা।

রাসুলুল্লাহ্ (সা:) এর জীবনালেখ্য থেকে শিক্ষা এবং সুফল লাভ করার তাৎপর্য:

রাসূল (সা:) এর জীবনী শিক্ষার উদেশ্যে এটা নয় যে তা পড়ার মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করা কিংবা তৎকালীন ঐতিহাসিক জ্ঞান আহরণ করা অথবা কোনো প্রসিদ্ধ বীরপুরুষের আত্নকথা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা যাবে। এই ধরনের ভাসাভাসা গবেষণা অমুসলিমদের দ্বারা হয়ে থাকে। তাঁর জীবনী পড়ার জন্য একজন মুসলিমের নানমুখী উদ্দেশ্য থাকা উচিত তন্মধ্যে রয়েছে:

প্র্থমত: আল্লাহর রাসূলকে অনুসরণ করা উচিত কারণ তিনি সকল মুসলিমদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শস্বরূপ। তিনি সেই আইন প্রণয়নকারী যাঁকে আমাদের আনুগত্য করা উচিত কারণ আল্লাহ্ বলেছেন: “(হে মুসলমানরা), তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনীতে অনুকরণযোগ্য উত্তম আদর্শ রয়েছে, (আদর্শ রয়েছে) এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যে যে আল্লাহর সাক্ষাৎ পেতে আগ্রহী এবং যে পরকালের (মুক্তির) আশা করে, (সর্বোপরি) সে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে।” (সূরা আহযাব:২১) আল্লাহ বলছেন: “যদি তোমরা তার কথামতো চলো তাহলে তোমরা সঠিক পথ পাবে।”(সূরা নূর:৫৪) আল্লাহ্ আরো বলেন: “যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে(যেন) আল্লাহরই আনুগত্য করে।’’(সূরা নিসা:৮০) আল্লাহ্ আরো বলেন:“(হে নবী) তুমি বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার কথা মেনে চলো, (আমাকে ভালোবাসলে), আল্লাহ্ও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের গুনাহবলী মাফ করে দিবেন;আল্লাহ্ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’(সূরা আলে ইমরান:৩১)

তিনি(রাসুলুল্লাহ) ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি এবং আদর্শস্বরূপ যাকে অনুসরণ করা ব্যতীত আমাদের আল্লাহকে আনুগত্য কিংবা ইবাদাত করার কোনো উপায় নেই

ইসলামিক মনীষীরা তাঁর জীবনী থেকে দাওয়াত দেওয়ার কৌশল এবং ধাপসমূহ আহরণ করেছেন। আল্লাহর কথাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ(সা:) কি অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং কিভাবে শত বাধা-বিপত্তির মোকাবেলা করেছেন সেটাও তারা জেনেছেন।

  • তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষকরা শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন।
  • তাঁর জীবনী থেকে শাসকবৃন্দ সুশৃঙ্খল নেতৃত্বদানের পদ্ধতি আয়ত্ত করতে পারেন।
  • তাঁর জীবনী থেকে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্য এবং নিয়মতান্ত্রিক নীতিমালা আয়ত্ত করতে পারেন।
  • যারা দু:খ কষ্টে জর্জরিত, তারা ধৈর্য্য এবং সহিষ্ণুতার সর্বোচ্চ মাত্রা শিক্ষালাভ করতে পারেন এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর উপর তাদের বিশ্বাস ও আস্থা আরো দৃঢ়তা লাভ করে যাতে করে তাদের সংকল্প ইস্পাতকঠিন হয়ে ওঠে এটা জেনে যে পরিশেষে ফলাফল তাদের অনুকূলেই যাবে।
  • তাঁর জীবনী থেকে ইসলামিক চিন্তাবিদরা আরো ভালোভাবে আল্লাহর কালাম এবং বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের সম্পর্ক বোঝার দক্ষতা লাভ করতে পারেন তন্মধ্যে রয়েছে: বাতিলকৃত বা স্থগিতকরণ সম্পর্কীয় আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার কারণ এবং আরো অনেক গভীরতর জ্ঞান।
  • সমগ্র জাতি তাঁর জীবনী থেকে নৈতিকতা, সামাজিক রীতিনীতি, আদবকায়দা এবং প্রশংসনীয় উৎকর্ষতা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।

 

ইবনে কাছীর বলেছেন: “ বিশেষ যত্ন এবং মনযোগের সহিত রাসুলু্ল্লাহ্ (সা:) এর জীবনী পড়া উচিত কারণ ওমর আল-ওয়াকেদী থেকে বর্ণিত আব্দুল্লাহ্ ইবন ওমার ইবনে আলী বলেছেন তাঁর পিতা আলী ইবন আল-হুসাইনকে বলতে শুনেছেন: “আমরা রাসুলুল্লাহর বিজয় সম্পর্কে জানতাম কারণ আমরা পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ জানি।”

আল-ওয়াকেদী বলেছেন: “আমি মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে তাঁর চাচা আল-যুহরি বলছেন বিজয়ের ঘটনাবলীর সাথে দুনিয়ার জীবন এবং আখিরাতের নিবিড় সম্পর্ক লুকিয়ে আছে।’’

ইসমাঈল ইবন মুহাম্মদ ইবন সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস বলেছেন: “আমার পিতা আমাদরকে রাসুলুল্লাহর বিজয়সমূহের কাহিনী শিক্ষা দিতেন এবং পুনরাবৃত্তি করে আমাদের বলতেন এগুলো তোমাদের পূর্বপুরুষদের গৌরবময় কর্ম; সুতরাং এগুলোকে বৃথা হতে দিয়ো না।’’

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনেক রাজা-বাদশাহ্, নেতা, কবি এবং দার্শনিকদের জীবনী রয়েছে কিন্তু তাদের কোনোটাই রাসুল (সা:) এর জীবনীর মত অনুকরণীয় আদর্শরূপে অনুসরণ করা হয়নি। কালের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে তাদের কৃতিত্ব শুধু রয়ে গেছে কয়েকটি নাম।

ইতিহাসের খাতায় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জীবনী নিছক উপহাস হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নমরূদ যে ইব্রাহিম (আ:) কে বলেছিল: “আমি জীবন এবং মৃত্যু দান করি।’’ কুরআনে বর্ণিত ফেরাউন বলত “আমিই হচ্ছি তোমাদের সবচেয়ে বড় রব”(সূরা নাযিয়াত:২৪) এবং তার পরিণতি কি হয়েছিল? সে আরো বলত: “হে আমার পারিষদরা, আমি তো জানি না আমি ছাড়া তোমাদের আরও কোনো মাবূদ আছে।”(সূরা কাছাছ:৩৮)

তাদের সময়কার বাঘা ব্যক্তিত্ব আজ সকলের পরিহাসের পাত্র: তরুণ-বৃদ্ধ, জ্ঞানী-মূর্খ সবার কাছে। যদিও তারা তাদের সময়কার জনগণকে ধোঁকা দিতে সফল হয়েছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে তাদের ধোঁকাবাজি আজ পরিষ্কার এবং তারা উপহাসের পাত্ররূপে পরিগণিত।

রাসূলুল্লাহ্ (সা:) এর জীবনী মানুষদের শিরক আর ইবাদাতের দূষণীয়তা থেকে বের করে আল্লাহর একত্ববাদ এবং বিশ্বাসের আলোতে আসার পথ বাতলে দিয়েছে। আল্লাহ্ বলছেন: “হে নবী আমি তোমাকে (হেদায়াতের) সাক্ষী (বানিয়ে) পাঠিয়েছি, তোমাকে বানিয়েছি (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (জাহান্নামের) সতর্ককারী, আল্লাহ্ তাআলার অনুমতিক্রমে তুমি হচ্ছো আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ও (হেদায়াতের) এক সুস্পষ্ট প্রদীপ।”(সূরা আহযাব:৪৫-৪৬)

 

দ্বিতীয়ত: আমরা রাসুলুল্লাহ (সা:) এর জীবনী পড়ি যাতে করে তাঁর সততা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় হয়। তাঁর মো’জেযাসমূহ এবং নবুওয়্যাতের নিদর্শনাবলী আমাদের ঈমান এবং তাঁর সততার উপর আস্থা স্থাপনে নিশ্চিতভাবে সহায়তা করে। তাঁর জীবনী এবং মহৎ দৃষ্টিভঙ্গি কেবলমাত্র তাঁর চূড়ান্ত উৎকর্ষ, মহত্ব এবং সততার প্রমাণ বহন করে।

 

তৃতীয়ত: আমরা তাঁর জীবনী পড়ি যাতে করে আমাদের হৃদয়ের গভীরে তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা দৃঢ়তর হয় কেননা তাঁর জীবনী মহৎ আচরণ, সহৃদয় ব্যবহার, মানবজাতির কল্যাণ এবং সঠিক পথ প্রদর্শনে তাঁর যত্নবান উদ্যোগ, মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা,দু:খ-কষ্ট থেকে সুখ-শান্তির দিকে টেনে আনা যাতে করে কোনো দু:খ-কষ্টই যেন তাঁর জাতির উপর পতিত না হয় সে জন্য তাঁর শারীরিক এবং আর্থিক ত্যাগ-তিতিক্ষা ইত্যাদির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত বহন করে।

চলবে…..

 

ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার কিছু কার্যকরী কৌশল

$
0
0

মুল প্রবন্ধঃ ProductiveMuslim.com | অনুবাদঃ মুসাফির শহীদ

Morning-Alarm

আমরা যারা নিয়মিত সালাত আদায় করার চেষ্টা করি, আমাদের সবগুলো সালাত ঠিক থাকলেও ‘ফজরের সালাত’ নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকেই অনেক চেষ্টা করেও পারি না ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে। কীভাবে করা যায় এ সমস্যার সমাধান? আমি শুধু দু’ একদিনের কথা বলছি না, বলছি প্রতিদিনকার কথা। আসুন জেনে নেই এ ব্যাপারে কিছু কার্যকরী কৌশল।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা যখন প্রতিদিন সূরা আল-ফাতিহা তিলাওয়াত করি, দিনে কমপক্ষে ১৭ বার, আমরা এই আয়াতটিও তিলাওয়াত করিঃ

আমরা একমাত্র তোমারি ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারি সাহায্য প্রার্থনা করি।” [সূরা আল-ফাতিহাঃ ০৫]

আমরা কি সত্যিই আল্লাহর ইবাদত করতে চাই? “অবশ্যই!” তাহলে আল্লাহর সাহায্যও চাই? “হুম!” আবার ফজরের সালাতের জন্যও জেগে উঠতে চাই? “জ্বী, ভাই!” কিন্তু তারপরও আমরা পারি না কেন? কারণ, আমাদের চাওয়ায় আন্তরিকতার অভাব।

আপনার কি কখনও ঘুমাতে যাওয়ার মুহূর্তে এমন অনুভূতি হয়েছে যে, আপনি অবশ্যই ফজরের সালাতের জন্য উঠবেন কিংবা আগে থেকেই আপনি জানতেন সেদিন বেশি ঘুমাবেন? নিচের দৃশ্যপট দুটি কল্পনা করার চেষ্টা করুন। আমি মনে করি, আমরা প্রায় সকলেই এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি।

দৃশ্যপটঃ ১

আপনার হৃদয় ঈমানে পরিপূর্ণ, আপনি বিতির পড়েছেন, কিছুটা কুর’আন তিলাওয়াত-ও করেছেন এবং যদিও আপনার হাতে ফজর পর্যন্ত ঘুমানোর জন্য মাত্র দু’ ঘণ্টা সময় আছে, তারপরও জেগে উঠার ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত। কারণ, আপনি আপনার মন, হৃদয় ও দেহকে প্রস্তুত করে নিয়েছেন। এমনকি মাঝে মাঝে ওয়াক্ত পার হয়ে গিয়ে সালাত মিস করার ভয়ে মাঝ রাতেও ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন। যদি আপনি এ ধরনের কোন ঘটনার সম্মুখীন না হয়ে থাকেন, তবে এমন সময়ের কথা ভাবুন যেদিন আপনাকে খুব ভোরে বাস কিংবা ট্রেন ধরতে হয়েছিল। আর ভাবুন, কীভাবে আপনার মন, হৃদয় ও দেহ সজাগ ছিল। হয়তো অনেক দেরিতে ঘুমিয়েও জেগে উঠেছিলেন বাস কিংবা ট্রেনের জন্য।

দৃশ্যপটঃ ২

আপনার জীবনে হয়তো এমন অনেক দিন আছে যেগুলোতে আপনি প্রকৃতপক্ষেই বেশি ঘুমাতে চান। যার জন্য আপনি আগে থেকেই ‘অতিরিক্ত ঘুমানোর’ পরিকল্পনা করেন। তারপরও আপনি জেগে উঠেছেন, আর তখনই শুরু হয়েছে ‘Snooze Alarm’ এর সাথে যুদ্ধ এবং আধুনিক শয়তানের কৌশল, “আর মাত্র পাঁচ মিনিট…”

এই দুটি দৃশ্যপটের মধ্যে একটি দৃশ্যপট বর্ণনা করে ‘আপনি অবশ্যই ঘুম থেকে জেগে উঠবেন’ আপনার এ ধরনের গভীর মানসিকতার কথা, আর অন্য দৃশ্যপটটি বর্ণনা করে ‘আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না’ এ ধরনের মানসিকতার কথা। কারণ, আপনার অন্তর এটা চায় না, আর আপনিও শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠার চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নন। নিচে আমি কিছু কৌশলের কথা বর্ণনা করছি যেগুলো আপনাকে সব সময় দৃশ্যপটঃ ১ এর মত সফলতা অর্জনে সাহায্য করবে ইনশা আল্লাহ্‌।

 

আধ্যাত্মিক কৌশল

১. আল্লাহকে চেনাঃ এটা ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার চাবিকাঠি এবং এক নম্বর কৌশল। আপনি যদি জানেন আপনি কার ইবাদত করছেন, আর এ-ও জানেন যে, তিনি চান আপনি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাঁর ইবাদত করুন, তাহলে আপনি জেগে উঠবেনই! ‘আল্লাহ’ কে- এ ব্যাপারে আমাদের জ্ঞানের কমতিই আমাদেরকে দৃশ্যপট-২ এর দিকে ধাবিত করে। তাই আপনার প্রভুকে জানুন, আর এটাই আপনার চাবিকাঠি।

২. আন্তরিকতাঃ ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার ব্যাপারে আন্তরিক হোন। নিজেকে শুধু এটুকু বলবেন না যে, ‘যদি আমি ফজরের ওয়াক্তে উঠতে পারি তবে ভালো হবে’, বরং আন্তরিকতার সাথে বলুন, ‘আমি ফজরের ওয়াক্তে জেগে উঠবোই ইনশা আল্লাহ!’

৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওযু করাঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে আযেব রা.-কে বলেছিলেন―
«إذا أخذت مضجعك فتوضأ وضوءك للصلاة». مسلم (৪৮৮৪)
যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে। [মুসলিম : ৪৮৮৪]

৪. বিতিরের সালাত ও দু’আঃ বিতিরের সালাত আদায় না করে ঘুমাবেন না, আর বিতিরের সালাত আদায়ের সময় আল্লাহর কাছে অনুনয়-বিনয় করুন যাতে তিনি আপনাকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে সাহায্য করেন।

৫. সামান্য কুর’আন তিলাওয়াত করুনঃ মহা গ্রন্থ আল-কুর’আনের মাধ্যমে দিনের সমাপ্তি অবশ্যই আপনার মনোযোগকে ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার দিকে নিবন্ধিত করবে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমাতে যাওয়ার আগে সূরা আল-সাজদাহ ও সূরা আল-মূলক (৩২ ও ৬৭ নম্বর সূরা) তিলাওয়াত করার পরামর্শ দিতেন।

. ঘুমাতে যাওয়ার আগে আল্লাহকে স্মরণ করুনঃ এটা আমার বর্ণনাকৃত প্রথম পয়েন্টেরই অংশ। আর এখানেই আপনি আপনার সকল অনুনয়-বিনয় আল্লাহর কাছে জানাবেন। প্রথম প্রথম দু’আগুলো পড়ার জন্য আপনি ছাপিয়ে নিতে পারেন কিংবা দু’আর বই ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এক বা দু’ সপ্তাহের মধ্যেই দু’আগুলো আপনার মুখস্থ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। আর ঠিক ঘুমিয়ে পড়ার আগেই সেগুলো নিয়মিত পড়বেন।

৭. ফজরের সালাত আদায়কারীদের জন্য ঘোষণাকৃত পুরস্কারগুলোর কথা স্মরণ করুনঃ মুনাফিকের হাত থেকে বেঁচে থাকা, শেষ বিচারের দিন আলোকিত হওয়া, সারাদিন আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকা, জীবন থেকে অলসতা কেটে যাওয়া, কর্মঠ হওয়া- এই পুরস্কারগুলোর কথা স্মরণ করুন, ইনশা আল্লাহ আপনি জেগে উঠতে পারবেন।

এছাড়া অন্যান্য যে সব কৌশল আপনাকে ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠতে সাহায্য করবে, সেগুলো হলঃ

  • জাগিয়ে দেয়ার জন্য বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের বলাঃ পরিবারের অন্যান্য সদস্য কিংবা বন্ধুদের বলুন আপনাকে জাগিয়ে দিতে। আর পরস্পরকে সাহায্য করুন। যদি আপনি আগে জেগে উঠেন তবে স্বার্থপর না হয়ে অন্যদেরও জাগিয়ে তুলুন।
  • দেড় (১.৫) ঘন্টা ঘুমানোর নিয়মঃ একটি গোপন কৌশল জানিয়ে দিচ্ছি, ঘুম বিজ্ঞানে একটি তত্ত্ব আছে যাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ তার ঘুমের একটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করে দেড় ঘন্টায়। কাজেই আপনি যদি দেড় (১.৫ ঘন্টা) এর গুণীতকে (যেমনঃ ১.৫ ঘন্টা, ৩ ঘন্টা কিংবা ৪.৫ ঘন্টা ইত্যাদি) জেগে উঠতে পারেন, তবে আপনি থাকবেন সতেজ ও পুনরিজ্জ্বীবিত। তা নাহলে আপনার মাঝে আলসেমি থেকে যাবে। তাই ফজরের সালাত যদি ভোর পাঁচটায় হয়, আর আপনি বারোটা বাজে ঘুমান, তবে অবশ্যই আপনার এলার্ম সাড়ে চারটায় দিন। কারণ, এতে আপনি সাড়ে চার ঘন্টা ঘুমাতে পারবেন (অবশ্য ঘুম আসতে আপনার যদি সময়ের প্রয়োজন হয় তবে তা যোগ-বিয়গ করে নিবেন)।
  • দুপুরে সামান্য ভাত ঘুম দিনঃ আরেকটি কৌশল, যা নেয়া হয়েছে সুন্নাহ ও অনেকের পরামর্শ থেকে, আর তা হল দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর সামান্য ভাত ঘুম দেয়া। মাত্র আধ ঘন্টার ঘুমই আপনাকে করে তুলবে উজ্জীবিত।

কৌশলগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন, ইনশা আল্লাহ আপনি সফল হবেনই।

Read External link Disclaimer

Read External link Disclaimer

এ ওয়েব সাইটের সাথে সম্পৃক্ত অন্য ওয়েব সাইট অথবা অন্য ওয়েব সাইটে প্রদত্ত বিষয়-বস্তুর সাথে এ ওয়েব সাইটে প্রদত্ত বিষয়-বস্তুর সম্পৃক্ততা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অন্য ওয়েব সাইটে প্রবেশ করার ব্যাপারে কোনো দায়-দায়িত্ব কুরআনের আলো বহন করে না। তাতে প্রবেশ করবেন নিজ দায়িত্বেই। কারণ, সে সকল ওয়েব সাইট আমাদের দখলে নেই এবং তার বিষয়-বস্তু কিংবা ওয়েব সংক্রান্ত অন্যান্য প্রযুক্তিও আমাদের আয়ত্বে নেই। এবং এটাও মনে করা যাবে না যে, কুরআনের আলোর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য ওয়েব সাইটে উপস্থাপিত জ্ঞান ও তথ্যের ব্যাপারে কুরআনের আলো একমত। কুরআনের আলো সে সব ওয়েবের লিংক দিয়ে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চায়। তাছাড়া সে সব ওয়েব সাইটে প্রদত্ত তথ্যের কোনো দায়-দায়িত্ব কুরআনের আলো কখনও বহন করে না।

(সংগ্রহ করা হয়েছে এই ব্লগ থেকে )

জুম’আর দিনের ফযীলত

$
0
0

উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য জুম’আর দিনের ফযীলত সমূহ

১) সূর্য উদিত হয় এমন দিনগুলোর মধ্যে জুম’আর দিন হল সর্বোত্তম দিন। এ দিনে যা কিছু ঘটেছিল তা হলঃ

(ক) এই দিনে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল,

(খ) এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল,

(গ) একই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল [মুসলিমঃ৮৫৪],

(ঘ) একই দিনে তাঁকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল,

(ঙ) এই দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয়েছিল,

(চ) এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিল [আবু দাউদঃ১০৪৬],

(ছ) এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে,

(জ) এই দিনেই কিয়ামত হবে,

(ঝ) এই দিনেই সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে [আবু দাউদঃ১০৪৭],

(ঞ) প্রত্যেক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, আকাশ, পৃথিবী, বাতাস, পর্বত ও সমুদ্র এই দিনটিকে ভয় করে। [ইবনে মাজাহঃ১০৮৪, ১০৮৫; মুয়াত্তাঃ৩৬৪]।

 

২) উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এটি একটি মহান দিন। এ জুম’আর দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদের উপর ফরজ করা হয়েছিল; কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিষ্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ও ফযীলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহন করে নিল। [বুখারী ৮৭৬, ইফা ৮৩২, আধুনিক ৮২৫; মুসলিমঃ ৮৫৫]

 

৩) জুম’আর দিন হল সাপ্তাহিক ঈদের দিন। [ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮]

 

৪) জুম’আর দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদা সম্পন্ন। (মুসনাদে আহমদঃ৩/৪৩০; ইবনে মাজাহঃ১০৮৪)

 

৫) জুম’আর দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হল জুম’আর দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। [বুখারীঃ৯৩৫, ইফা ৮৮৮, আধুনিক ৮৮২; মুসলিমঃ৮৫২]

 

৬) জুম’আর রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি মারা যায় আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। [তিরমিযীঃ১০৭৮]

 

৭) জান্নাতে প্রতি জুম’আর দিনে জান্নাতীদের হাট বসবে। জান্নাতী লোকেরা সেখানে প্রতি সপ্তাহে একত্রিত হবেন। তখন সেখানে এমন মনমুগ্ধকর হাওয়া বইবে, যে হাওয়ায় জান্নাতীদের সৌন্দর্য অনেক গুণে বেড়ে যাবে এবং তাদের স্ত্রীরা তা দেখে অভিভূত হবে। অনুরূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি স্ত্রীদের বেলায়ও হবে। [মুসলিমঃ২৮৩৩, ৭১/৭৫৩]

 

৮) যে ব্যক্তি জুম’আর দিনে সুরা কাহফ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেবেন। [জামেউস সাগীরঃ৬৪৭০]

 

৯) যে ব্যক্তি জুম’আর দিনে সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে। [মুসলিম]

 

১০) প্রত্যেক সপ্তাহে জুম’আর দিন আল্লাহ তায়ালা বেহেশতী বান্দাদের দর্শন দেবেন। [সহীহুত তারগীব]

 

১১) এই দিনে দান খয়রাত করার সওয়াব অন্য দিনের চেয়ে বেশী হয়। ইবনুল কায়্যিম বলেছেন, অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের দানের সওয়াব যেমন বেশী তেমনি শুক্রবারের দান খয়রাত অন্য দিনের তুলনায় বেশী। [যাদুল মা’আদ]

 

১২) ইবনুল কায়্যিম আরও বলেছেন যে, অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের মর্যাদা যেমন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুম’আ বারের মর্যাদা ঠিক তেমন। তাছাড়া রমজানের কদরের রাতে যেমন ভাবে দোয়া কবুল হয়, ঠিক তেমনি শুক্রবারের সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও দোয়া কবুল হয়। [যাদুল মা’আদঃ১/৩৯৮]

 

সূত্রঃ বই-প্রশ্নোত্তরে জুমুআ ও খুৎবা (লেখকঃ অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম; পরিমার্জনেঃ ডঃ মোহাম্মদ মনজুরে ইলাহী, ডঃ আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া মজুমদার, ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।)

কার্যকর অধ্যনের ৫টি ফলপ্রসূ বৈশিষ্ট্য

$
0
0

লেখক : ইয়াকুব আলী | ভাষান্তর : মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

crop380w_istock_000002193842xsmall-books

 

অনেকেই বই পড়েন। কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করা হয় কী পড়েছেন, তখন মস্তিকের সাথে যুদ্ধ করতে হয়! আপনিও কি তেমন পাঠক? আপনি কি শেখার অনেক আগ্রহ নিয়ে দীন শিক্ষার ক্লাসে বসছেন কিন্তু মনে হচ্ছে কিছুই শিখতে পারেননি? ক্লাসে বসে কি মণে হয়, “থাক, এটা লিখে রাখার দরকার নেই। এটা আমি কখনোই ভুলবো না,” কিন্তু একসপ্তাহ পরে ওই ক্লসের একটি বাক্যও আপনি স্মরণ করতে পারছেন না?

আপনি যখনই কোনো ক্লাসে যাচ্ছেন, বই পড়া শুরু করছেন কিংবা এমপি-থ্রী প্লেয়ারে ইসলামী বক্তৃতা শুনতে যাচ্ছেন, আপনাকে কয়েকটি কল্যাণমুখী মনোভাব নিয়ে সেগুলো শুরু করতে হবে। নীচে এমনই কয়েকটি প্রয়োজনীয় মনোভাব তুলে ধরা হলো :

. ইখ্‌লাস (আন্তরিকতা বা অন্তরের বিশুদ্ধতা)

নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, “আমি কেন এটা শিখছি বা পড়ছি?” “এটা কি এজন্য যে, লোকে আমাকে জ্ঞানী বলে ডাকবে?” “এটা কি বিতর্কে জয়ী হওয়ার জন্য?” “এটা কি আমার প্রতি মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য?” যদি এগুলোর কোনো একটি আপনার ক্ষেত্রে সত্য হয়, তাহলে এই পড়াশোনা দিয়ে আপনি সত্যিকার অর্থে মোটেই উপকৃত হবেন না।

ইবনু মাসুদ (রা) বলেন, “জ্ঞান কোনো ধারাবাহিক বর্ণনা নয়; বরং তা অন্তরে স্থাপিত এক আলো।”

“নিশ্চয়ই যারা জ্ঞানী তারাই আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা আল-ফাতির; ৩৫:২৮]

সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র একারণেই যে, তা ব্যক্তিকে আল্লাহর ভয় ও আনুগত্য শেখায়, নয়তো তা (জ্ঞান নয়) অন্যকিছু।”

. নিয়্যত (মনের উদ্দেশ্য)

প্রথমেই যে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো, আপনার জ্ঞানার্জন হলো একটি ইবাদত কর্ম। এটি ব্যক্তিগত তথা গোপন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) এবং আপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “আমার নিয়্যতের (মনের ইচ্ছা) চেয়ে আমার কাছে আর কিছু বেশি কঠিন মনে হয়নি।”

নিজের প্রকাশ্য ও গোপন উভয় ধরণের ‘আমলের দিকে লক্ষ করুন। প্রকাশ্য ‘আমলের চেয়ে গোপন ‘আমলের সংখ্যা কি বেশি? গোপন ‘আমলের চেয়ে প্রকাশ্য ‘আমল করতেই কি আপনার বেশি আগ্রহ জাগে? যদি তা-ই হয়, তবে আপনাকে নিয়্যতের (মনের উদ্দেশ্য) প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী হতে হবে। আপনি যে ‘আমল করছেন, তা কার জন্য? মানুষ নাকি আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) জন্য?

. তাকওয়া

যে বক্তি তার প্রতিপালককে স্মরণ করে এবং যিনি তা করেন না, তাদের প্রথম জন জীবিত আর পরের জন মৃতের ন্যায়।

জ্ঞান শিক্ষার্থী আল্লাহর নামে জ্ঞানার্জন করবেন এবং খেয়াল রাখবেন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) তাকে দেখছেন। যদি আল্লাহ চান তো, এতেই আপনার পড়াশোনায় বরকত নেমে আসবে।

“যিনি জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে সফল হতে চান আবার একই সাথে অতিমাত্রায় পানাহার ও নিদ্রাকে সমান গুরুত্ব দেন, তিনি আসলে অসম্ভব সাধনের চেষ্টা করছেন।” [ ‘The Manners of the Knowledge Seeker’ বই থেকে নেওয়া]

. নীরবতা

অনেক কিছু জানার পর সেগুলো মুখে প্রকাশ করে নিজের জ্ঞান জাহির করার ইচ্ছা জাগবে। অনেক সময় শোনার চেয়ে বলতেই বেশি ভালো লাগবে। এমন মানুষের জন্য সতর্কবাণী:

“যে কিয়ামতে বিশ্বাস করে, সে ভালো কথা বলুক অথবা নিশ্চুপ থাকুক।” [আল-বুখারি; খণ্ড ৮, অধ্যায় ৭৬, হাদীস নং ৪৮২]

ইমাম শাফে‘ঈ বলেন, “আপনি যদি কিছু বলতে চান, তবে  [আগে] চিন্তা করুন। যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এতে কোনো ক্ষতি নেই, তবে বলুন। যদি সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, আপনার কথায় ক্ষতি হবে, তবে বলবেন না।

লোকমানকে (রা) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “আপনি কীভাবে এত জ্ঞানী হলেন?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন: “ আমার যা প্রয়োজন নেই, আমি তা চাই না, আর যা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তা বলি না।” [‘The Manners of the Knowledge Seeker’ বই থেকে নেওয়া]

৫. বিনম্রতা

আমাদের থাকতে হবে এমন আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করা এবং মনে রাখা যে, এমন অনেকেই আছেন যিনি আমার থেকে বেশি জ্ঞানের অধিকারী।

ইমাম শাফে‘ঈ বলেছেন: “আমি ইমাম মালিকের (র) উপস্থিতিতে বইয়ের পাতা খুবই আস্তে করে, নিঃশব্দে উল্টাতাম যাতে তিনি শব্দে বিরক্ত না হন; এটা করতাম তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার কারণে।”

ইবনু ‘আব্বাস বলেন: “ছাত্র হিসেবে আমি নিজেকে বিনয়ী রেখেছিলাম। তাই শিক্ষক হিসেবে আমি সম্মানিত হয়েছি।”

শেষ কথা

কেউ জ্ঞানার্জন করলে, তার জ্ঞান তাকে বনয়ী করবে। আপনি যদি এমন কোনো জ্ঞানী ব্যক্তিকে দেখে থাকেন যার আচরণ মন্দ, তাহলে তার ক্ষেত্রে বলা যায়, ওই জ্ঞানী ব্যক্তি মুখ দিয়ে যা বলে অন্তরে তা প্রত্যাখ্যান করে। যে জ্ঞান তার জীবনে এসেছে, তা আসলে আন্তরিক, উপকারী জ্ঞান নয়।

নিজেকে কল্যাণমুখী, চৌকস করে গড়তে হলে শিষ্টাচার শিখতে হবে যা হবে জ্ঞানভিত্তিক শিষ্টাচার।

আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক বলেন : “আমি শিষ্টাচার শিখতে ত্রিশ বছর ব্যয় করেছি আর জ্ঞানার্জনে ব্যয় করেছি বিশ বছর।”

 

এখন থেকে আমরা যখন পড়তে বসবো, আমরা যেন উল্লিখিত পাঁচটি মনোভাব সঙ্গে নিয়ে পড়তে বসি। যাতে করে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ অর্জন করতে পারি।

 


কিছু প্রশ্ন? উত্তর আছে আপনার কাছে?

$
0
0

লিখেছেনঃ সাইফ

l

নিজেকে করার কিছু প্রশ্ন , যদি পারেন তো জবাব দিন , না পারলে আল্লাহর দিকে ফিরে আসুনঃ

১/ আপনি শুধু জুমআ’র নামাজই পড়েন কেন? আপনাকে কি আল্লাহ্‌ শুধু জুমার দিনেই আলো, বাতাস, পানি খাবার দিয়ে থাকেন? শনিবার দেন না? রবি, সোম, মঙ্গল সব দিনই তো দেন, সবদিন পরিপূর্ণ আল্লাহর নেয়মত ভোগ করেন, কিন্তু আল্লাহ্‌কে শুধু একদিনই স্মরণ করেন। এবার বলুন আপনি কি ঠিক পথে আছেন? এটা কি স্পষ্টত অপরাধ নয়? জবাব দিন , না হলে ফিরে আসুন।

২/ আপনি কি মনে করেন ইসলাম শুধু মসজিদ , মাদ্রাসায় , ইমাম, আলেমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ? সবার জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কি ইসলাম নয়? তাহলে আমাদের প্রিয় নবীর জীবনের প্রতিটি অংশই কেন ইসলাম জড়িত, কিংবা সাহাবীরা/৪ খলিফা কেনইবা ইসলামিক জীবন যাপন করেছেন? এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি নিজেকেই ধোঁকা দিচ্ছেন না? জবাব দিন, না হলে ফিরে আসুন।

৩/ আপনি জানেন নামাজ পড়া ফরজ, আপনি এও জানেন নামাজ না পড়লে জাহান্নামে  যেতে হবে, আপনার এটাও জানা আছে যে জাহান্নাম অত্যন্ত ভয়াবহ, দুনিয়ার কোন শাস্তিই জাহান্নামের ধারে কাছেও নেই, তবু কেন আপনি পড়ছেন না? আপনি কি জেনে বুঝে নিকৃষ্ট জায়গায় , ভয়াবহ শাস্তির জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন না? কেউ যদি জেনে বুঝে শাস্তি পেতে চায়, অথচ সে ইচ্ছা করলে শাস্তির বদলে চির সুখের স্থান পেতে পারে তাকে আপনি কি বলবেন ? চরম দুর্ভাগা বলবেন না? জবাব দিন , না হলে ফিরে আসুন।

৪/ আপনি তো জানেন জান্নাতে আরাম আয়েশের অভাব নেই। ইচ্ছা মত ভাল ভাল খাবার, পরমা সুন্দরী জান্নাতি হুর, যা যা ইছে করে সব পাওয়া যাবে জান্নাতে গেলে। দুনিয়ায় মানুষ কদিন বাঁচে? ৮০/১০০ বছর?আর আখিরাতের জীবন তো অনন্ত অসীম। আপনি এই ৮০-১০০ বছর আরামে কাটিয়ে দিতে চান আর অনন্ত জীবন ছেড়ে দিতে চান? এর থেকে বোকামি আর কি হতে পারে?

৫/ আপনি সবই মানেন সবই বোঝেন, কিন্তু অলসতা কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে  পালন করেন না, কি করে আশা করেন জান্নাত পাওয়ার। অনেকে বলেন ভাই আমি তো জাহান্নামী, তাদেরকে বলতে ইচ্ছে করে ভাই জাহান্নামকে আপনি কি মনে করেন? সাধারন জেলখানা ? তাহলে শুনুন

নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ

“কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।”

[ বুখারী: ৬৫৬২ , মুসলিম: ২১৩ ]

জবাব দিন , নাহলে ফিরে আসুন। যারা ফিরে আসবে এই মুহূর্ত থেকে তাদের জন্য আল্লাহ্‌ সুসংবাদ দিয়েছেন,

“আর যারা খারাপ কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে, তবে নিশ্চয়ই তোমার রব এরপরও ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।” [ সূরা আ’রাফ ১৫৩]

“তারা কি দেখে না,তারা প্রতি বছর একবার কিংবা দুবার বিপদগ্রস্ত হয়?  এরপরও তারা  তওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।” [ সূরা তাওবা ১২৬]

“সুতরাং তারা কি আল্লাহর নিকট তওবা করবে না? এবং তার নিকট ক্ষমা চাইবে না? আর আল্লাহ  ক্ষমাশীল,পরম দয়ালু।” [সূরা মায়েদা ৭৪]

যারা ভাবে এখন পাপ করি পরে সময়মত তওবা করে নেব, তাদের সাধারণতঃ কোনদিনই তওবা করার সৌভাগ্য পাবে না।

আল্লাহ্‌ বলেন,

“আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।” [সূরা নিসা ১৮]

তাই আমার ভাই ও বোনেরা ফিরে আসুন , এখনই, এখনই এবং এখনই। তওবা করে ফিরে আসুন। আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করুন।

 

নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য-সমর্থন করার একশত উপায়

$
0
0

অনুবাদ : ইকবাল হোসাইন মাছুম কাউসার বিন খালেদ

সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। নবী ও রাসূলদের শ্রেষ্ঠতম সত্বা, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম , তাঁর সাথী-সঙ্গী এবং পরিবার-পরিজনের প্রতি সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক।

ইসলামের মূলভিত্তি সমূহের একটি হল:

এ কথার ঘোষণা দেয়া যেঃ~ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত ইবাদতের উপযুক্ত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল।

ইসলামের এ মহান দু’টো ঘোষণার দ্বিতীয়টি হল:~ মুহাম্মাদ [সা:] আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।

 

নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে এ ঘোষণার বাস্তবায়ন করা যায়ঃ

প্রথমতঃ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সত্য বলে মেনে নেয়া। তিনি মানব ও জ্বিনসহ সকলের জন্য প্রেরিত। তার প্রধান মিশন হল আল-কুরআন ও সুন্নাহ। এ দু’টো বাদ দিয়ে কোন ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়তঃ তার আনুগত্য করা, তার হুকুমে সন্তুষ্ট থাকা। তার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ সম্পূর্ণভাবে মেনে নেয়া, তার সুন্নাত ও আদর্শের অনুসরণ করা। এবং এর বাহিরে যা আছে তা প্রত্যাখ্যান করা।

তৃতীয়তঃ নিজের চেয়ে, নিজের মাতা-পিতা ও পরিবার-পরিজনের চেয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বেশী মুহাব্বত করা-ভালবাসা। এ ভালবাসার যথার্থ রূপ হচ্ছে তাকে সম্মান করা, মর্যাদা দেয়া, সাহায্য করা এবং তার পক্ষ সমর্থন করা।

 

সকল মুসলিমের কর্তব্য হলঃ এ বিষয়গুলো বাস্তবে রূপদানের চেষ্টা করা। এতে তার ঈমান পরিশুদ্ধ হবে, কালেমায়ে তাওহীদের দ্বিতীয় ঘোষণা সঠিক বলে গৃহীত হবে। শুধু মুখে স্বাক্ষ্য দেয়ার নাম ঈমান নয়। যেমনটি করে মুনাফিকরা।

আল্লাহ বলেনঃ
মুনাফিকরা বলে, আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহও জানেন নিশ্চয়ই আপনি তাঁর রাসূল। কিন্তু আল্লাহ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। (সূরা আল-মুনাফিকুনঃ ১)

কেন মুনাফিকদের এ ঘোষণা কাজে আসেনি? কারণ তারা এ ঘোষণার বাস্তবায়নে কাজ করেনি।

এ প্রসঙ্গে আমরা আপনার খেদমতে এমন কিছু বিষয় পেশ করছি যা দিয়ে আপনি আল্লাহর রাসূলকে মুহাব্বত ও ভালবাসার পরিচয় দিতে পারবেন। বিশেষ করে বর্তমানের এ সংকটময় সময়ে তার মুহাব্বত ও ভালবাসার প্রমাণ দেয়া অনেক জরুরী হয়ে পড়েছে। ঈমানের দাবীতে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকে যার যার সামর্থ অনুযায়ী মুহাব্বতের দাবীর প্রমাণ দিবেন। নিজে এর দায়িত্ব বহন করবেন।

 

ব্যক্তি হিসাবে দায়িত্বঃ~ 

[১ ]~ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তের অকাট্য প্রমাণাদির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা, যা দিয়ে প্রমাণ হয় যে, তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের রাসূল। এ সকল প্রমাণের মূল হল আল-কুরআন। এতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তের সত্যতার বিষয়ে যে সকল বানী এসেছে তা অনুধাবন করা ও তাতে চিন্তা-গবেষণা করা।

[২]~ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য ও অনুসরণ যে অবশ্য কর্তব্য এবং তার সকল নির্দেশ পালন করা যে অপরিহার্য, এ বিষয়ে কুরআন,সুন্নাহ ও ইজমার প্রমাণাদিগুলো শিক্ষা করা।

[৩]~ মহান আল্লাহ তাআলা যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ সংরক্ষণ করেছেন সে ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করা এবং সঠিক ধারণা লাভ করা। আর সেটি সম্পন্ন হয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও অক্লান্ত চেষ্টা-মেহনতের মাধ্যমে যেমন আমরা দেখি উম্মাতের হাদীস বিশারদগন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে দূর্বল হাদীস, সহীহ হাদীস, বানোয়াট হাদীস চি‎িহ্নত করেছেন। এবং এগুলো নিরূপনের অত্যান্ত সূক্ষ্ম ও গ্রহনযোগ্য কিছু মূলনীতি প্রনয়ন করেছেন। এটা শুধু এ উম্মাতে মুহাম্মদীই করেছে এবং করছে। অন্য কোন জাতি তাদের নবীর আদর্শ সংরক্ষণের বিষয়ে এমন ভূমিকা অতীতে রাখেনি।

[৪]~ অন্তরে আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুহাব্বতের অনুভূতি জাগ্রত করার চেষ্টা করা। এটা তার অনুপম স্বভাব, চরিত্র, আচার-আচারণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট মন্ডিত অবয়ব-আকৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন ও তার সীরাত পাঠের মাধ্যমে অর্জন করা যায়।

[৫]~ আমাদের প্রত্যেকের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যে ইহসান ও অনুগ্রহ আছে তা সদা অনুভব করা। তিনি কত সুন্দরভাবে আল্লাহর দীন আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন, আমানত আদায় করেছেন, নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন ও উম্মাতের কল্যাণ কামনা করেছেন।

[৬]~ আল্লাহ তাআলার নেয়ামত ও অনুগ্রহের পর আমাদের উপর তার অনুগ্রহ সবচে বেশী। তিনিই আমাদের আল্লাহর দিকে ও তার জীবন বিধানের দিকে পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলের পক্ষ থেকে তাকে উত্তম প্রতিদানে সম্মানিত করুন! যে প্রতিদান হবে সকল নবীকে তাদের উম্মাতের পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিদানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর।

[৭]~ অনুভব করা যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তার উম্মাতের প্রতি সবচেয়ে দয়াদ্র, করুণাময়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ 

“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্টতর।” (সূরা আল-আহযাব : ৬)

অর্থ্যাৎ একজন ঘনিষ্ট ও আপন ব্যক্তি তার আরেক ঘনিষ্ট ব্যক্তিকে যত আপন ভাবে, যত আন্তরিক হতে পারে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মাতের জন্য এর চেয়ে বেশী ঘনিষ্ট।

 

[৮]~  যে সকল আয়াত ও হাদীস আল্লাহর কাছে তার শ্রেষ্ঠত্ব, তার প্রতি আল্লাহর ভালবাসা , তাকে আল্লাহর সম্মান প্রদর্শন বিষয়ে প্রমাণ বহন করে তা জানা ও সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।

[৯]~ আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে ভালবাসতে আমাদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তা কঠোরভাবে পালন করা।বরং তাকে নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসা। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

“তোমাদের কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার প্রাণের চেয়ে, সন্তানের চেয়ে, মাতা-পিতার চেয়ে ও সকল মানুষের চেয়ে অধিকতর প্রিয় না হব।”

[১০]~ আল্লাহ তাআলা তার সাথে যে আদব-কায়দা, শিষ্ঠাচার অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন তা কাঠোরভাবে পালন করা।

যেমন তিনি বলেছেনঃ

হে ঈমানদারগন! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল তার সাথে সে রকম উচ্চস্বরে কথা বলো না; কারণ এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে। যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার। (সূরা আল-হুজুরাত : ২-৩)

আল্লাহ আরো বলেনঃ

“রাসূলকে ডাক দেয়ার ক্ষেত্রে তোমরা একে অপরের ডাকের মত গণ্য করো না।” (সূরা আন-নূর : ৬৩)

 

[১১]~ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করার বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনে যত্নবান হওয়া। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ

“যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলকে সাহায্য কর ও সম্মান কর।” (সূরা আল-ফাতহ: ৯)

 

[১২]~ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাহায্য করার জন্য আন্তরিক নিয়্যত ও সংকল্প অব্যাহত ভাবে ধারণ করা তার পক্ষে প্রতিরোধ করা।

[১৩]~ বিশ্বাস করা, যে ব্যক্তি সঠিকভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করবে, তাকে ভালবাসবে তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার, জান্নাতে সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর সাথে থাকবে। যেমন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, আমি আপনাকে ভালবাসি। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ

“তুমি যাকে ভালবাস তার সাথে থাকবে।”

 

[১৪]~ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরুদ পেশ করার ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া। যখনই তাঁর নাম উচ্চারণ হয়, আজানের পরে, জুমআর দিনে তার প্রতি বেশী করে দরুদ পাঠ করা।

[১৫]~ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঠিক ও বিশুদ্ধ সীরাতগ্রন্থ পাঠ করা। তার সকল ঘটনাবলী থেকে নিজের জীবন গঠনের উপাদান সংগ্রহ করে নেয়া। নিজে জীবনে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা-সাধনা করা।

[১৬]~ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]- এর সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করা। তার সহীহ হাদীসমূহ অধ্যায়ন করা, ভালভাবে অনুধাবন করতে চেষ্টা করা। তাতে যে সকল বিষয় উন্নত চরিত্র গঠন সম্পর্কে, এক আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে সেগুলো সুন্দরভাবে অনুসরণ করা।

[১৭]~ তাঁর [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সকল সুন্নতের অনুসরণ করা। এ ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া।

[১৮]~ মুস্তাহাব বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও আগ্রহভরে তাঁর অনুসরণ করার চেষ্টা করে যাওয়া। এমনকি পূর্ণ জীবনে অন্তত একবারের জন্যেও যদি হয়। যাতে জীবনের যাবতীয় পর্বে – প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ সম্পন্ন হয়।

[১৯]~ তাঁর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর যে কোন সুন্নত ও আদর্শ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা।

[২০]~ মানুষের মাঝে তাঁর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর আদর্শের অনুশীলন ও প্রসার দেখলে আনন্দিত হওয়া।

[২১]~ মানুষের মধ্যে তাঁর আদর্শের চর্চা ও আমলের অনুপস্থিতির কারণে ব্যথিত ও মর্মাহত হওয়া।

[২২]~ নবীজী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর বা তাঁর আদর্শের সমালোচনা-ছিদ্রান্বেষণকারীর প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষন করা।

[২৩]~ তাঁর পরিবারস্থ লোকজন যথা সন্তান-সন্ততি ও সহধর্মিণী প্রমুখদের ভালবাসা। ইসলাম ও নবীজীর আত্মীয়তার সূত্রধরে তাদেরকে মুহাব্বতকরে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা।তাঁর আত্মীয়ের মধ্যে যারা অমুসলিম বা পাপি তাদের হেদায়াত কামনা করা। কেননা নবীজীর নিকট অন্যদের তুলনায় এদের হেদায়াতই ছিল সবচে প্রিয় ও কাঙ্খিত। বিষয়টি আমরা উমর বিন খাত্তাব [রা]-এর নিম্নোক্ত উক্তি থেকে স্পষ্টকরে বুঝতে পারব, যখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর চাচা আব্বাস [রা] আনহুকে সম্মোদন করে বলেছিলেন।

( হে আব্বাস! ইসলাম গ্রহন করার জন্য আপনাকে অশেষ মুবারকবাদ।যেদিন আপনি ইসলাম গ্রহন করেছিলেন সেদিন আপনার ইসলাম গ্রহন আমার নিকট পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহন অপেক্ষা অধিক প্রিয় ও কাঙ্খিত ছিল। তার কারণ হচ্ছে : আমি জানতে পেরেছিলাম যে রাসুলুল্লার [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট আপনার মুসলমার হওয়াটা খাত্তাবের মুসলমান হওয়া অপেক্ষা অধিক কাঙ্খিত ও প্রিয় ছিল।

 

[২৪]~ আহলে বাইত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর অসিয়ত পালন করা। কারণ নবীজী বলেছেন:“আমার পরিবার সর্ম্পকে আমি তোমাদেরকে আল¬াহর কথা স্মরণ করিয়ে যাচ্ছি” একথাটি তিনি পরপর তিন বার বলেছেন।

[২৫]~ নবীজীর সাহাবীদের মুহাব্বত করা ,তাঁদের সম্মান করা এবং তাদের পরে আগত সকল উম্মত অপেক্ষা এলম,আমল এবং আল্লাহ্‌ তা’লার নিকট তাদের অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় তাদের মর্যাদা বেশী বলে বিশ্বাস পোষন করা।

[২৬]~ আলেম-উলামাদের মুহাব্বত করা, তাঁদের সম্মান করা।নবুওয়াতী উত্তরাধিকার তথা এলমের সাথে তাদের সম্পর্ক ও অবস্থানগত উচ্চতার কারণে।উলামারাই হচ্ছেন নবীদের উত্তরসূরী।সুতরাং উম্মতের উপর নবীজীর অধিকারের ভিত্তিতে তাদের (উলামা) মুহাব্বত ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

 

পরিবার ও সামাজিক ক্ষেত্রে:~

[২৭]~ রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর মুহাব্বতের উপর সন্তানদের প্রশিক্ষন দান করা।

[২৮]~ জীবনের যাবতীয় ক্ষেত্রে তাদেরকে (সন্তান) নবীজীর আদর্শের অনুসরণের প্রশিক্ষন দান করা।

[২৯]~ তাদেরকে নবীজীর [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর জীবন-চরিত সম্পর্কীয় বই-পুস্তক সংগ্রহ করে দেয়া । এই লিংক থেকে ডাউনলোড করুন।

[৩০]~ তাঁর জীবন-চরিতধর্মী ক্যাসেট সংগ্রহ করা।

[৩১]~ প্রশিক্ষন দানের ক্ষেত্রে পরিষ্কার ও বোধগম্য কারিকুলাম সম্পন্ন কার্টুন ছবি বাছাই করে দেয়া।

[৩২]~ নিজ ঘরে পরিবারস্থ লোকদের নিয়ে সাপ্তাহে এক বা একাধিক সীরতের দরসের আয়োজন করা।

[৩৩]~ গৃহ:স্বামীকে পরিবারস্থ লোকজনদের সাথে চাল-চলন উঠা-বসার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর অনুসরণ করা।

[৩৪]~ সন্তানদেরকে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]- কর্তৃক বর্ণিত দোআসমূহ মুখস্থ করানো এবং প্রাত্যহিক জীবনে তা বাস্তবায়ন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা।

[৩৫]~ সন্তানদেরকে তাদের প্রাত্যহিক ব্যয়ের একটি অংশ হাদীসের নির্দেশনা অনুসারে ব্যয়ের জন্য উৎসাহী করা।

যেমন ইয়াতীমকে সহযোগিতা করা, খাদ্য প্রদান, প্রয়োজনগ্রস্তকে সহযোগিতা করা।

[৩৬]~ হাদীসে বর্ণিত উপমাগুলো বাস্তবায়নে সন্তানদের অভ্যস্ত করে তোলা ; যেমন ‘মুমিন বিচক্ষণ এবং চতুর’, ‘মুমিন এক গর্তে দুবার পা দেয় না’, ‘সহজ করে দেও, কঠিন কর না’ ইত্যাদি।

[৩৭]~ সীরাত সম্পর্কিত পারিবারিক প্রতিযোগিতার আয়োজন।

[৩৮]~ ‘রাসূলের গৃহে একদিন’ এই শিরোনামে রাসূলের জীবনীর সংশ্লেষে মুসলিম পরিবারের পরিচয় প্রদান।

 

শিক্ষা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট লোকদের ক্ষেত্রেঃ~

[৩৯]~  উম্মতের উপর রাসূলের হক বর্ণনা করে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে রাসূলের মুহাব্বাতের বীজ বপন।

[৪০]~  অধিকহারে আলোচনা সভার আয়োজন করা, যাতে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর ব্যক্তিত্ব ও জীবনের সংশ্লিষ্ট সার্বিক আলোচনা উত্থাপন করা হবে।

[৪১]~  শিক্ষা সিলেবাসে এবং ইসলামিক ডিপ্লোমা শাখাগুলোতে সীরাতুন নবীর বিষয় আকারে সংযোজনের জন্য শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা।

[৪২]~  পশ্চিমা প্রসিদ্ধ ভার্সিটিগুলোতে সীরাত পাঠের জন্য স্বতন্ত্র ডিপার্টমেন্ট খোলার জন্য অর্থায়নের তৎপরতা চালানো।

[৪৩]~  সীরাত সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সীরাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য গবেষকদের উৎসাহ প্রদান।

[৪৪]~  স্কুল এবং ভার্সিটিতে সীরাতের প্রদর্শনীর কার্যক্রম গ্রহণ, যাতে ইসলামের অভ্যুদয়কালিন ভৌগলিক কাঠামো বানানো হবে এবং রাসূলের সীরাত ও রেসালাতের পরিচয় প্রদান করা হবে।

[৪৫]~  লাইব্রেরীগুলোর নির্দিষ্ট একটি অংশ বিশিষ্ট করে দেয়া হবে, যাতে রাসূলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু থাকবে, এবং তা স্থাপিত হবে প্রকাশ্য কোন স্থানে।

[৪৬]~  সীরাতুন নবী বিষয়ে বিশ্বকোষধর্মী কোন কাজ হাতে নেয়া হবে, এবং তাকে রেফারেন্সের মানে উন্নীত করতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বের অন্যান্য ভাষায়।

[৪৭]~  ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বাৎসরিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে, তাতে উপস্থাপিত হবে সীরাতুন নবীর সর্বোত্তম আলোচনা-গবেষণাটি। এবং মূল্যবান পুরস্কারে গবেষককে ভূষিত করা হবে।

[৪৮]~  যুবকদেরকে নিয়ে ওয়ার্কশপ করা এবং তাদেরকে বাস্তব কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট করে তাদের অন্তরে রাসূলের মুহাব্বাত এবং তার সুন্নতের সাথে সম্পৃক্ত করা।

[৪৯]~  রাসূলের অনুসারী নেতৃত্ব গঠনে বিশেষ অনুশীলনমূলক কর্মশালার আয়োজন।

 

ইমাম, দায়ী ও তালেবুল ইলমদের ক্ষেত্রেঃ~

[৫০]~  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত ও রেসালাতের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা। তিনি উদার ও বিশুদ্ধতম সত্য নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন এবং তার দাওয়াতের মৌল নীতি হচ্ছে তাবৎ মানব শ্রেণিকে মানুষের প্রতিপালকের নিরঙ্কুশ ইবাদতের প্রতি হেদায়েত করা—সাথে সাথে এ বিষয়টিরও স্পষ্টিকরণ।

[৫১]~  গোত্র, শ্রেণি নির্ভেদেমানুষকে দাওয়াত এবং এই দীনের প্রতি তাদেরকে হেদায়েতের নিমেত্তে কর্মতৎপরতা চালানো।

[৫২]~  রাসূলের চারিত্রিক ও স্বভাবগত সিফাত সমূহ—রিসালাতের পূর্বের ও পরের—বর্ণনা।

[৫৩]~  উপভোগ্য শৈলী ব্যবহার করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফযীলত এবং তার উম্মতের বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্ণনা।

[৫৪]~  পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী এবং সাহাবীদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ নীতিমালা বর্ণনা।

[৫৫]~  আহলে কিতাব, পৌত্তলিক এবং মুনাফিকদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ পদ্ধতির বর্ণনা।

[৫৬]~  রাসূলের প্রাত্যহিক জীবনের নীতিমালা সংক্রান্ত বর্ণনা।

[৫৭]~  কিছু কিছু জুমার দ্বিতীয় খুতবা রাসূলের সীরাত বিষয়ক আলোচনা দ্বারা বিশিষ্ট করা, পুরো খুতবা জুড়ে এ আলোচনার প্রয়োজন নেই।

[৫৮]~  কুরআনের যে সমস্ত আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, সালাতে পাঠ করা হলে সে প্রসঙ্গে সালাতের পূর্বে অনুর্ধ্বে পাঁচ মিনিট সার আলোচনা করা।

[৫৯]~  মসজিদ কেন্দ্রিক তাহফীজুল কুরআনের হলকার পাশাপাশি সীরাতুননবীর অনুশীলনের হলকার সংযোজন।

[৬০]~  রাসূলের সীরাত সংক্রান্ত যে সমস্ত বিভ্রান্তি সাধারণ মানুষের ভাবনায় ছড়িয়ে আছে সেগুলোর অপনয়োন এবং বিশুদ্ধ করণ। এবং রাসূলের পক্ষ যা বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা আকড়ে ধরার জন্য সুবিস্তৃত এবং স্পষ্ট ভাষায় সকলকে আহ্বান জানান।

[৬১]~  রাসূলের বিরোধিতায় যে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, আঘাত করেছে তার মর্যাদায়, তার ব্যাপারে উলামায়ে উম্মতের ফতোয়া বর্ণনা করা, এবং যারা এ বিষয়ে লিপ্ত, তাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করা এবং তাদের কর্মকান্ড হতে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করা ওয়াজিব—এ বিষয়টি সবিশেষ উল্লেখ করা।

[৬২]~  রাসূলের দাওয়াতী নীতিমালার সবিস্তার উল্লেখের মাধ্যমে মানুষকে তাদের ধর্মের প্রতি প্রত্যবর্তনের লক্ষ্যে কর্মতৎপরতা চালানো।

[৬৩]~  রাসূলের ব্যাপারে অতিরঞ্জন পরিহারের লক্ষ্যে টিভি, রিডিও এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সতর্কবাণী প্রচার করা। অতিরঞ্জন সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেয়া যেমন কুরআনে এসেছে—

তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন কর না।

এবং এ ব্যাপারে রাসূলের বিশেষ হাদীসগুলো বর্ণনা করা, যেমন হাদীসে এসেছে—

তোমরা আমার অনর্থক স্তুতি কর না, যেমন খ্রিস্টানরা ইবনে মারইয়ামের সাথে করেছে। সাথে সাথে এ বিষয়টিও বর্ণনা করে দেয়া যে, বিশুদ্ধ মুহাব্বাত একমাত্র তার অনুসরণেই নিহিত।

[৬৪]~  সীরাতের মৌলিক উৎসগুলো হতে রাসূলের জীবনী অধ্যয়নে সকলকে উৎসাহী করা, এবং সে উৎসগুলো সম্পর্কে তাদেরকে ওয়াকিবহাল করানো।

[৬৫]~  রাসূল ও তার সীরাত সম্পর্কে যে সকল বিভ্রান্তি, সংশয় ছড়িয়ে আছে সেগুলো দূর করা।

 

সংকৃতিবান, চিন্তাবিদ, মিডিয়াকর্মী এবং সংবাদকর্মীদের ক্ষেত্রেঃ~

[৬৬]~ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্ব, তার উম্মতের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি প্রচার প্রসার এবং মিডিয়া এবং কালচারাল বিভিন্ন ফাংশনে সে সংক্রান্ত আলোচনার সূত্রপাত।

[৬৭]~  এমন কোন বিষয়ের উল্লেখ হতে বিরত থাকা, যাতে রাসূলের সুন্নতের সামান্যতম বিচ্যুতি ঘটে।

[৬৮]~ পশ্চিমা ও ইহুদি প্রপাগান্ডার মুকাবেলা করা ; তারা আমাদের ধর্ম ও নবী সম্পর্কে যে সমস্ত সংশয় ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে তার যথপোযুক্ত প্রতিরোধ করা।

[৬৯]~  অমুসলিমদের উদার শ্রেণিকে নিয়ে কালচারাল ও তথ্যের আদান-প্রদান সূচক সম্মিলনীর আয়োজন এবং রাসূল ও তার রেসালাত সম্পর্কিত আলোচনার উত্থাপন।

[৭০]~  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অমুসলিমদের উদার ও ন্যয়নিষ্ঠ শ্রেণি যা বলেছে, লিখেছে, সেগুলো প্রচার করা।

[৭১]~  রাসূলের নীতিমালা, পদ্ধতি, সীরাত এবং তার আচরিত নীতিমালার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরার লক্ষ্যে কালচারাল সেমিনার-সিম্পেজিয়ামের আয়োজন।

[৭২]~  রাসূলের সীরাত নিয়ে মিডিয়া প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং এ জন্য মূল্যবান পুরস্কার নির্ধারণ।

[৭৩]~  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার জীবনী নিয়ে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প এবং ছোট ছোট পুস্তিকা প্রণয়ন।

[৭৪]~  পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীর সম্পাদকদের নিয়ে পরামর্শ সভা ও বৈঠকীর আয়োজন করা, যাতে কুরআন ও হাদীসের সে আয়াত ও বর্ণনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে, যা প্রমাণ করে রাসূলের মুহাব্বাত ওয়াজিব, তার মুহাব্বাত সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা ও সকল মানুষের মুহাব্বাতের চেয়ে অগ্রগামী, এমনকি তা অগ্রগামী নিজের প্রতি মুহাব্বাতের চেয়েও। এবং এই মুহাব্বাতের অনস্বীকার্য দাবী হচ্ছে তার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন, তার অনুসরণ এবং পৃথিবীর যে কারো কথার তুলনায় তার কথাকে অধিক অগ্রাধিকার প্রদান।

[৭৫]~  রাসূলের সীরাত, স্ত্রী-পরিজন-সাহাবী এমনকি শত্র“দের সাথে আচরণ নীতিমালা ও তার চারিত্রিক ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য বিভিন্ন চ্যানেলের কর্ণধারদের সাথে বৈঠক করা।

[৭৬]~  ভিজ্যুয়াল কোম্পানীগুলোকে রাসূলের সীরাত সংক্রান্ত ভিডিও ক্যাসেট প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে উৎসাহ প্রদান।

[৭৭]~  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ-বৈশিষ্ট্য, এবং সুন্নতে নববীর কিছু গল্প নিয়ে কার্টুন নির্মাণের জন্য টেলিভিশন এবং চ্যানেল কোম্পানী ও সংস্থাগুলোকে উৎসাহ প্রদান।

 

দাতব্য ও দাওয়াতী প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রেঃ~

[৭৮]~  বিভিন্ন কমিটি গঠন বা ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহায্য-সহযোগিতার ঝান্ডা বহন করবে।

[৭৯]~  নবীজীর বৈশিষ্ট্য সম্বলিত অডিও, ভিডিও, ক্যাসেট ও বিভিন্ন বই পুস্তক প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনী স্থানসমূহ ও মেলায় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারগুলোতে স্টল বরাদ্দ নেয়া।

[৮০]~  রাসূলের সীরাত সংক্রান্ত ক্যাসেট, পুস্তক, ও প্রকাশনা পরিবেশনের জন্য শো রুম প্রতিষ্ঠা।

[৮১]~  সুন্নাত এবং সীরাতের সর্বোত্তম সেবাকারীকে সালাফের অনুসৃত নীতিমালার মাপকাঠিতে নির্ধারিত পুরস্কার প্রদান এবং বার্ষিক সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন, যাতে বড় বড় ব্যক্তিত্বদের নিমন্ত্রণ জানানো হবে।

[৮২]~  অন্যান্য ভাষায় রাসূলের সীরাত প্রকাশের এবং বিশ্বব্যাপী প্রকাশনা কেন্দ্র এবং মাকতাবাগুলোতে পরিবেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ।

[৮৩]~  রাসূলের পবিত্র সীরাত সংক্রান্ত আলোচনা, ইসলাম ধর্মের শিক্ষা, উম্মতের বৈশিষ্ট্যবলী এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত এ ধর্মের সৌন্দর্য বর্ণনা সম্বলিত পত্রিকা বা সাময়িকীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা।

[৮৪]~  রাসূলের নুসরতে নিয়োজিত কর্মীদের এবং সীরাত সংক্রান্ত রচনা, অনুবাদ এবং সাইট নির্মাণে সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করা।

 

সাইট কর্মকর্তা এবং কর্ণধারদের ক্ষেত্রেঃ~

[৮৫]~  সম্মেলনের আয়োজন, যাতে ইসলাম ধর্মের বৈশিষ্ট্য, সকল নবীর ক্ষেত্রে একই মুহাব্বাতের অনুবর্তনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

[৮৬]~  সাইট নির্মাণ কিংবা সংস্থা গঠন। অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত, তার বৈশ্বিক রেসালাতের বর্ণনা সম্বলিত সাইটের একটি অংশ নির্ধারণ করে দেয়া।

[৮৭]~  অমুসলিমদের হেদায়েতের লক্ষ্যে তাদের সাথে আলোচনা-বৈঠকে অংশগ্রহণ, তাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর ব্যক্তিত্ব এবং তার আনিত ধর্মের পাঠে উৎসাহ প্রদান।

[৮৮]~  বিশেষ কোন হাদীস বা নববী বাণী সমৃদ্ধ বিশেষ ”গ্রপ” মেইল করা।

[৮৯]~  এখন থেকে শেষ পর্যন্ত সমকালিনতার সাথে প্রাসঙ্গিক করে রাসূলের ব্যক্তিত্ব, তার দাওয়াত সংক্রান্ত বিশেষ ইন্টারনেট প্রচারণা।

[৯০]~  বিভিন্ন উপলক্ষ্যে মিডিয়া পুস্তক ও গবেষণার যে তালিকা বের হয়, তাতে সীরাত সংক্রান্ত গবেষণাগুলো সংযোজন করা।

 

বিত্তবান এবং ইসলামী হুকুমাতের ক্ষেত্রেঃ~

[৯১]~  সীরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মতৎপরতার পৃষ্ঠপোষকতা করা।

[৯২]~  হাদিস ও ওয়াজ সম্বলিত বিভিন্ন লিফলেট ছাপানো.

[৯৩]~  বিভিন্ন ভাষায় বিশেষ করে ইংরেজী ভাষায় ইসলাম ও নবিজী সম্পর্কে আলোচনা করে, প্রোগ্রাম পরিচালনা করে এমন চ্যানেল প্রতিষ্টা করা ও ম্যাগাজিন প্রকাশ করার কাজে অংশগ্রহন করা।

[৯৪]~  ইসলাম ও নবিজী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপনার জন্য বিদেশী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সময় বরাদ্দ নেয়া ও ভাড়া নেয়া।

[৯৫]~  নবিজীর সীরাত গবেষণা ও বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার জন্য বিভিন্ন কেন্দ্র বা সেন্টার প্রতিষ্টা করা।

[৯৬]~  নবিজীর সীরাত কীর্তি সম্বলিত বিভিন্ন পাঠাগার ও যাদুগার প্রতিষ্টা করা।

[৯৭]~  নবিজীর সীরাত সম্বলিত বিভিন্ন ওয়েবসাইট নির্মান করা।

[৯৮]~  বিভিন্ন ভাষায় বিশেষ করে ইংরেজী ভাষায় এমন বই পুস্তক ছাপানো ও প্রকাশ করা, বা ক্যাসেট বের করা ও মিড়িয়া প্রোগ্রামসমূহের আয়োজন করা যা নবীজী আনিত ইসলাম ধর্মের চমৎকার দিকগুলো ফুটিয়ে তুলে, মহানবীর উৎকৃষ্ট চরিত্রের বিভিন্ন দিকসমূহ গতিময় উপস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের সম্মুখে পেশ করে।

[৯৯]~  সীরাত সংক্রান্ত বিভিন্ন দাওয়াতী প্রতিযোগীতায় সাহায্য করা। উৎসাহ ব্যাঞ্জক পুরস্কার ঘোষনা করা।

[১০০]~  নবীজীর সাহায্য-সমর্থন করার ক্ষেত্রে বৈধ পন্থা অবলম্বন করা এবং বিদআত ও কুসংস্কার সহ সর্বপ্রকার সুন্নাহ পরিপন্থি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা।

ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবন গাফফার

ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

 রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সীরাহ (জীবনী) কেন পড়া উচিৎ?

বইঃ আর রাহীকুল মাখতুম – ডাউনলোড ( রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনী)

কীভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসব?

 

ইসলামে ঈদে মীলাদুন্নবী পালনের বিধানের উপর কিছু ফাইল

$
0
0

আজকের বিশ্বে মুসলিম উম্মার অন্যতম উৎসবের দিন হচ্ছে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’। সারা বিশ্বের বহু মুসলিম অত্যন্ত জাঁকজমক, ভক্তি ও মর্যাদার সাথে আরবী বৎসরের ৩য় মাস রবিউল আউআল মাসের ১২ তারিখে এই ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বা নবীর জন্মের ঈদ পালন করেন। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিমই  এই ‘‘ঈদের’’ উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাসের সাথে পরিচিত নন। যে সকল ব্যক্তিত্ব এই উৎসব মুসলিম উম্মার মধ্যে প্রচলন করেছিলেন তাঁদের পরিচয়ও আমাদের অধিকাংশের অজানা রয়েছে। আমরা জানি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন পালন বা রবিউল আউয়াল মাসে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ পালনের বৈধতা ও অবৈধতা নিয়ে আলেম সমাজে অনেক মতবিরোধ হয়েছে, তবে মীলাদুন্নবী উদযাপনের পক্ষের ও বিপক্ষের সকল আলেম ও গবেষক একমত যে, ইসলামের প্রথম শতাব্দিগুলিতে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন পালন করা বা উদযাপন করার কোন প্রচলন ছিল না।

ইসলাম ধর্মে ঈদে মীলাদ বলতে কি বোঝায়? ইসলামে ঈদ কয়টি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর জন্ম দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল? নিশ্চিত ও সর্ব সম্মতভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর ওফাত বা মৃত্যু দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল? যে দিনে রাসূলে কারীম সা. ইন্তেকাল করলেন সে দিনে আনন্দ উৎসব করা কি ভাল না মন্দ? শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদ পালন করা কি জায়েয? এটা কি বিধর্মীদের অনুকরণ? এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুজতে যেয়ে এ সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।

এ ফাইলে ঈদ-ই-মীলাদুন্নবীপালন বিষয়ে কিছু বই, প্রবন্ধ, অডিও-ভিডিওর লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। লিঙ্ককগুলো খুলুন এবং এ সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি জানুন। সেই সাথে অন্যদের নিকট লিংকগুলো শেয়ার করুন। ধন্যাবদ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনে হকের উপর মৃত্যু অবধি অবিচল রাখুন। আমীন।

 

১) ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তক: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

২) ঈদে মীলাদুন্নবী (শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু শুদ্ধ)

৩) ঈদে মীলাদুন্নবীর ধারা

৪) রাসূলুল্লাহ (সা) এর জন্ম-মৃত্যুর তারিখ সম্পর্কে আলেমদের বিভিন্ন বক্তব্য

৫) গান-বাজনা ও হারাম জিনিসের আয়োজন ব্যতীত মীলাদুন্নবী উদযাপন

৬) মীলাদুন্নবী উদযাপন না করার কারণে পরিবারের যারা তিরস্কার করে, তাদের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি

৭) মীলাদুন্নবী নামে মসজিদে সমবেত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা করা

৮) মীলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলিয়ন মিলিয়ন দরূদ জমা করার প্রসঙ্গ

৯) জনৈক খ্রিষ্টান নারীর জিজ্ঞাসা মীলাদুন্নবী কী, মুসলিমের নিকট এ দিনের গুরুত্ব কত

১০) মীলাদুন্নবী বিদআত সমর্থনকারীর প্রতিবাদ

১১) মীলাদুন্নবীর মিষ্টি ক্রয় করা

১২) মীলাদুন্নবী ও জন্ম দিনের সিয়াম পালন করা

১৩) রাসূলুল্লাহ সা. সশরীরে এসে সাক্ষাত করেন, এমন ধারণা পোষণকারী ব্যক্তিকে কিভাবে প্রতিবাদ করব

১৪)  ঈদে মিলাদুন্নবী (শেইখ মতিউর রহমানের অডিও লেকচার)

১৫) ঈদে মিলাদুন্নবী (শেইখ মতিউর রহমানের ভিডিও লেকচার)

১৬) মিলাদ উন নাবী বিষয়ক প্রশ্নোত্তর (ভিডিও)

আল্লাহ্‌ আমাদের হক্ক কথা জানার এবং মানার তাউফিক দান করুন। আমিন

সৌজন্য: IslamHouse ওয়েবসাইট 

Related Articles, Lectures and Book

  1. আপনি কি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে চেনেন?
  2. কীভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসব?
  3. বইঃ আর রাহীকুল মাখতুম (রাসূল (সা:) এর জীবনী)
  4. সীরাহ (রাসূল (সা:) এর জীবনী) কেন পড়া উচিৎ?
  5. আল-কুরআন: রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবন্ত মু‘জিযা
  1. 100-Rasul (SalallahuAlayhiwasallam) bhalobasha.mp3
  2. 2-a. Nobi (s)er Morjada – Part 1.mp3
  3. 2-b. Nobi (s)er Morjada – Part 2.mp3
  4. 3.Nabi (s)-er Haq or Odhikar.mp3
  5. 110- Part 1 -Rasul (s) Shomporke Shotik Gan Hasel Kora.mp3
  6. 110- Part 2 -Rasul (s) Shomporke Shotik Gan Hasel Kora.mp3
  7. 111 Rasul (s) Madinar Jibon.mp3

 

 

 

কীভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসব?

$
0
0

মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

মুমিন মাত্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত পোষণ করে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত রাখা ঈমানের এক অপরিহার্য অংশ। পরম শ্রদ্ধা, গভীর ভালোবাসা আর বিপুল মমতার এক চমৎকার সংমিশ্রণের সমন্বিত রূপ হচ্ছে ‘মহব্বত’ নামের এ আরবী অভিব্যক্তিটি।

ঈমানের আলোকে আলোকিত প্রত্যেক মুমিনের হৃদয় আলোড়িত হয়, শিহরিত হয়, মনে আনন্দের বীনা বাজতে থাকে যখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারিত হয়, তাঁর জীবন-চরিত আলোচিত হয় কিংবা তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী পাঠ করা হয়। সত্যের দীক্ষায় দীক্ষিত হৃদয় তাঁর আদর্শের শ্রেষ্ঠতায় ও সৌন্দর্যে মোহিত হয়, উম্মতের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালোবাসায় আপ্লুত হয়। তাঁর একনিষ্ঠ দিক নির্দেশনায় পথ খুঁজে পায় পথহারা বিভ্রান্ত মানব সন্তানেরা, আর দুর্বল চিত্তের লোকেরা ফিরে পায় মনোবল। মানবতার কল্যাণকামীরূপেই আল্লাহ তাঁকে প্রেরণ করেছেন এ বিপর্যস্ত ধরাধামে। সত্যিই তিনি তাঁর যুগের যমীনকে মুক্ত করেছেন অশান্তির দাবানল হতে, উদ্ধার করেছেন অজ্ঞানতা ও মুর্খতার নিকষ অন্ধকার হতে। তাইতো জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তাঁকে বরণ করে নিয়েছে মানবতার বন্ধুরূপে।

সত্যের এহেন প্রতিষ্ঠাতা, চারিত্রিক মাধূর্য ও ব্যবহারিক সৌন্দর্যের এমন রূপকারের প্রতি একটু বেশী পরিমাণে ভালোবাসা পোষণ করা এবং তাঁর প্রতি পাহাড়সম প্রগাঢ় শ্রদ্ধা রাখা মুমিন জীবনে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ইসলামী শরী‘আত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত পোষণকে ওয়াজিব ও অপরিহার্য বলে আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ বলেন,

﴿قُلۡ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ وَإِخۡوَٰنُكُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ وَعَشِيرَتُكُمۡ وَأَمۡوَٰلٌ ٱقۡتَرَفۡتُمُوهَا وَتِجَٰرَةٞ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَآ أَحَبَّ إِلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٖ فِي سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٢٤﴾  [التوبة: 24]

‘বল, তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দ হওয়ার আশংকা তোমরা করছ, এবং সে বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তার পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত।’’ [আত-তাওবাহ: ২৪]

যাদের কাছে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক প্রিয় নয়, তাদেরকে আল্লাহ এ আয়াতটিতে ভীষণ আযাবের হুমকি দিয়েছেন। ওয়াজিব ও অপরিহার্য কাজ বর্জন না করলে এ ধরনের হুমকি দেয়া হয় না।

ইমাম বুখারী রাহেমাহুল্লাহ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِه»

‘‘শপথ ঐ সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তান হতে অধিকতর প্রিয় হব।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩]

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

‘‘তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষ হতে প্রিয়তম না হই।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮]

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ না করলে ঈমানদার বলে কেউ বিবেচিত হবে না। অতএব ঈমানের অনিবার্য দাবী হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা।

তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা পোষণে আমাদের সমাজের সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা ব্যালেন্স রক্ষা করতে পারেন না। দেখা যায় যে, একদল লোক তাঁর মহব্বতে পাগলপারা হয়ে তাকে অতিমানবীয় পর্যায়ে উন্নীত করে এবং তাঁকে আল্লাহর বহু গুণাবলীতে শরীক করে। যেমন তিনি গায়েব জানেন, মৃত্যুর পরও মানুষের ভাল-মন্দ করতে পারেন, মানুষের জন্য দো‘আ করেন ও দো‘আ কবুল করতে পারেন, তিনি এখনই আমাদের শাফা‘আত কবুল করতে পারেন ইত্যাদি আরো নানাবিধ ভ্রান্তিপূর্ণ আকীদা পোষণ। আরেকদিকে অন্যদল তাকে সাধারণ মানুষের পর্যায়ে ফেলে অন্য মানুষের মতই তাকে ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নয় বলে বিশ্বাস করে। এদের কেউ কেউ তাঁর মুখনিঃসৃত কোন কোন হাদীস ও আমলকে অস্বীকার করে। ফলে তাঁকে অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা এ প্রকার লোকেরা অনুভব করে না।

এ উভয় শ্রেণীর লোকেরা প্রকৃতপক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্যিকার ভাবে মহব্বত করা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছে। কারণ তারা এমন সব কাজ করছে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাদের মহব্বতের দাবীর অসারতা প্রমাণ করছে। এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

১. প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকে দূরে সরে থাকা:

সুন্নাহ থেকে অপ্রকাশ্যে দূরে থাকার উদাহরণ হল: যেমন মৌলিক ইবাদতসমূহকে আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব প্রথা মনে করা এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা না করেই এগুলো পালন করা, অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা ও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা, তাঁর প্রতি হৃদয়ে মহব্বত পোষণ না করা, সুন্নাহ ভুলে যাওয়া ও তা না শেখা এবং এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করা।

আর প্রকাশ্যে সুন্নাহ থেকে দূরে সরে থাকার উদাহরণ হল: ওয়াজিব ও মুস্তাহাব পর্যায়ের দৃশ্যমান সুন্নতী আমল ত্যাগ করা, যেমন ‘‘রাতেব’’ তথা সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নামের সালাতসমূহ, বিতর এর সালাত, খাওয়া ও পরার সুন্নাতসহ, হজ্জ ও সিয়ামের নানাবিধ সুন্নাত পরিত্যাগ করা। এমন কি কেউ কেউ এগুলোকে নিতান্ত ফুজুলী বা অতিরিক্ত কাজ বলে মনে করে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত একটি  হাদীসে বলেন,

«فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي»

‘‘অতঃপর যারা আমার সুন্নাত থেকে বিরাগভাজন হয়, তারা আমার দলভুক্ত নয়।’’[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩ , সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৬৯]

. বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ প্রত্যাখ্যান করাঃ

যুক্তির বিচারে উত্তীর্ণ নয় কিংবা বাস্তবতার সাথে সংগতিপূর্ণ নয় অথবা এ হাদীস অনুযায়ী বর্তমানে আমল করা সম্ভব নয় ইত্যাদি নানা যুক্তিতে সহীহ ও বিশুদ্ধ হাদীস অস্বীকার করা কিংবা সেগুলোকে তার প্রকৃত অর্থ থেকে অপব্যাখ্যা করে মনগড়া অর্থে প্রণয়ন করা। অনেকে একজন রাবীর বর্ণনা হওয়ার কারণেও খবরে আহাদকে অস্বীকার করে। কেউ কেউ আবার শুধুমাত্র কুরআন দ্বারা আমালের অজুহাত দেখিয়ে সুন্নাহকে অস্বীকার করে। অথচ আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ﴾ [الحشر:7]

‘‘রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।’’ [সূরা আল হাশরঃ ৭]

. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত অনুসরণ থেকে সরে আসাঃ

প্রগতি ও উন্নতির প্রভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত ও আদর্শ অনুসরণ হতে সরে এসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতি ঝুঁকে পড়তে দেখা যায় অনেককে। এর চেয়ে মারাত্মক হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজের সাথে অন্যদের কথা-কাজ তুলনা করে সাধারণের উদ্দেশ্যে পেশ করা। এতে সাধারণ মানুষ রাসূলের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজ ইসলামী শরী‘আতেরই অংশ। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [النجم:8]

‘‘এতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি প্রেরণ করা হয়।’’ [আন নাজমঃ ৪]

. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে আলোচনার সময় মনসংযোগ না করা এবং আগ্রহের সাথে শ্রবণ না করা অথচ আল্লাহ বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَرۡفَعُوٓاْ أَصۡوَٰتَكُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ ٱلنَّبِيِّ وَلَا تَجۡهَرُواْ لَهُۥ بِٱلۡقَوۡلِ كَجَهۡرِ بَعۡضِكُمۡ لِبَعۡضٍ﴾ْ [الحجرات:2]

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সেকরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না।’’ [সূরা হুজুরাতঃ ২]

. সুন্নার যারা প্রকৃত অনুসারী তাদেরকে ত্যাগ করা, তাদের গীবিত করা ও তাদেরকে উপহাস করা।

. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈশিষ্ট্য ও তার মুজিযাসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান না রাখা।

. দ্বীনের মধ্যে নানা প্রকার বিদআত চাল করা।

দেখা যায়, অনেক লোক ইবাদাতের নামে নানাবিধ বিদ‘আত চালু করেছে আমাদের সমাজে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদ‘আত থেকে উম্মতকে সাবধান করেছেন। এদেরকে যখন বিদ‘আত ছেড়ে দেয়ার আহবান জানানো হয়, তখন তারা বিদ‘আতকে আরো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে।

. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্পর্কে বাড়াবাড়িঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বাড়াবাড়ির অর্থ হচ্ছে তাঁকে নবুওয়াত ও রিসালাতের উর্ধ্বে স্থান দেয়া এবং অনেকক্ষেত্রে আল্লাহর গুণাবলীতে তাঁকে শরীক করা ও তাঁর কাছে দো‘আ করা, শাফা‘আত চাওয়া ইত্যাদি। অথচ সহীহ বুখারীর বর্ণনায় তিনি স্বয়ং বলেন,

«لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ»

‘‘তোমরা আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জন করো না, যেমন নাসারাগণ অতিরঞ্জন করেছে ইবনু মারইয়াম সম্পর্কে। আমি তো শুধূ আল্লাহর বান্দা। বরং তোমরা বলো – (আমি) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’

সুনান আবি দাউদে একটি হাদীসে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«لا تجعلوا قبري عيدا وصلوا علي فإن صلاتكم تبلغني حيث كنتم»

‘‘তোমরা আমার কবরকে উৎসবস্থলে পরিণত করো না, আর আমার উপর সালাত পড়। কেননা তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের সালাত আমার কাছে পৌঁছে।’’ [সহীহ সুনান আবি দাউদ, হাদীস নং ২০৪২]

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় তিনি আরো বলেন,

«لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسْجِدًا»

‘‘আল্লাহ লানত করুন ইহুদী ও নাসারাদেরকে, তারা তাদের নবীদের কবরকে মাসজিদরূপে গ্রহণ করেছে।’’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১২]

৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত ও দরূদ পাঠ না করাঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। অথচ তার নাম উচ্চারণ করে অথবা শুনে অনেকেই দরূদ ও সালাম পাঠ করে না। তিরমিযীর একটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘‘ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধুসরিত হোক যার কাছে আমার উলেস্নখ করা হয় কিন্তু সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’’

তিরমিযী অন্য আরেকটি বর্ণনায় তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’’

উপরোক্ত বিষয়ের সবগুলোই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বতের পরিপন্থি। সুতরাং আজ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার শরয়ী দায়িত্ব পালন করে নিজেদের ঈমানের যথার্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়, তাদের উচিত উপরোক্ত দল দু’টির চিন্তা-চেতনা ও কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে আসা এবং শরী‘আত তাঁর জন্য ভালোবাসার যে উপায়, উপকরণ ও উপাদান নির্ধারণ করেছে তা সত্যিকারভাবে অনুসরণ করা। ‘তাঁকে ভালবাসি’ – মুখে এ দাবী করে জীবনের নানা ক্ষেত্রে তাঁকে ও তাঁর আদর্শকে উপেক্ষা করা যেমন ভালোবাসার দাবীকে অসার প্রমাণিত করে, তেমনি অতিরিক্ত ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে তাঁকে স্রষ্টার সমপর্যায়ে উন্নীত করাও অত্যন্ত গর্হিত ও শরী‘আতের দৃষ্টিতে প্রত্যাখ্যাত।

ইসলামী শরীআত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যেভাবে ভালোবাসার নির্দেশনা আমাদেরকে দিয়েছে নিম্নে আমরা সে বিষয়টি তুলে ধরছিঃ

. সকল মানবের উপর রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দেয়াঃ

আল্লাহ তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টির আদি ও অন্তের সকলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী, নবীদের নেতা ও সর্দার। সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى كِنَانَةَ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَاصْطَفَى قُرَيْشًا مِنْ كِنَانَةَ وَاصْطَفَى مِنْ قُرَيْشٍ بَنِى هَاشِمٍ وَاصْطَفَانِى مِنْ بَنِى هَاشِمٍ»

‘‘আল্লাহ ইসমাঈলের সন্তান থেকে কিনানাকে চয়ন করেছেন এবং কিনানা থেকে কুরাইশকে নির্বাচন করেচেন। আর কুরাইশ থেকে চয়ন করেছেন বনু হাশিমকে এবং আমাকে চয়ন করেছেন বনু হাশিম থেকে।’’ [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৭৭]

সহীহ মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ فَخْرَ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ»

‘‘আমি আদম সন্তানের নেতা এবং এতে কোন অহংকার নেই। আর আমি ঐ ব্যক্তি প্রথম যার কবর বিদীর্ণ হবে, প্রথম যিনি শাফা‘আতকারী হবে এবং প্রথম যার শাফা‘আত কবুল করা হবে।’’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠত্বের আকীদা, মনে-মগজে ধারণ করার অর্থই হল তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্ভ্রম পোষণ করা এবং তাকে যাবতীয় সম্মান ও মর্যাদা দেয়া।

. সকল ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আদব ও শিষ্টাচার রক্ষা করাঃ

নিম্ন বর্ণিত রূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শিষ্টাচার রক্ষা করা যায়।

. উপযুক্ত বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করা। এক্ষেত্রে আল্লাহ রাববুল আলামীন যেভাবে তার প্রশংসা করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তাঁর নিজ সম্পর্কে বলার জন্য যা শিখিয়ে দিয়েছেন, তাই হলো তাঁর প্রশংসা করার জন্য সর্বোত্তম অভিব্যক্তি। সালাত ও সালাম পেশের মাধ্যমে এ কাজটি অতি উত্তমভাবে আদায় হয়। আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [الأحزاب:56]

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর উপর সালাত পেশ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার উপর সালাত ও সালাম পেশ কর।’’ [সূরা আহযাবঃ ৫৬]

সালাত ও সালাম রাসূলের স্তুতি বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম বলেই তাশাহুদ, খুতবা, সালাতুল জানাযা, আযানের পর ও যে কোন দো‘আর সময়সহ আরো বহু ইবাদাতে তা পেশ করার নিয়ম করে দেয়া হয়েছে; বরং তার উপর সালাত ও সালাম পেশ আলাদাভাবেই একটি ইবাদাত হিসেবে স্বীকৃত।

খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা, ফযীলত, বৈশিষ্ট্য, মু‘জিয়া ও সুন্নাহ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে বেশী বেশী স্মরণ করা। মানুষকে তাঁর সুন্নাহ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা, তাঁর সম্মান, মর্যাদা ও উম্মতের উপর তাঁর অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা, তাঁর সীরাতকে সদাপাঠ্য বিষয় বস্তুতে পরিণত করা। এর মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সদা জাগরুক থাকবে।

গ. শুধু ‘মুহাম্মদ’ নামে তাকে উল্লেখ না করা, বরং এর সাথে ‘নবী’ বা ‘রাসূল’ সংযোজন করে সালাত ও সালাম পাঠ করা। আল্লাহ বলেন,

﴿لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ﴾ [النور:63]

‘‘তোমরা একে অপরকে যেভাবে ডাক, রাসূলকে তোমাদের মধ্যে সেভাবে আহবান করো না।’’ [সূরা নূরঃ ৬৩]

. মসজিদে নববীতে কেউ এলে এ মসজিদের আদব রক্ষা করা, বিশেষ করে তাঁর কবরের পাশে এসে স্বর উচ্চ না করা। উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু একদল লোককে এজন্য খুব সতর্ক করেছিলেন। পাশাপাশি তাঁর শহর মদীনা মুনাওয়ারার সম্মান রক্ষা করাও অপরিহার্য।

. তাঁর হাদীসের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, হাদীস শোনার সময় ধৈর্য ও আদবের পরিচয় দেয়া, হাদীস শেখার প্রতি অনুপ্রাণিত হওয়া। এক্ষেত্রে এ উম্মতের প্রথম প্রজন্মসমূহের আদর্শ অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।

. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সব বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে প্রতিপন্ন করাঃ

এসব বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল- ঈমানের মৌলিক বিষয়সমূহ, দ্বীনের মৌল স্তম্ভসমূহ, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে তাঁর দেয়া যাবতীয় সংবাদ ইত্যাদি। তাঁর সত্যতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلنَّجۡمِ إِذَا هَوَىٰ ١ مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمۡ وَمَا غَوَىٰ ٢ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [النجم:1-4]

‘‘শপথ তারকার, যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  ভ্রষ্ট হননি  এবং বিভ্রান্তও হননি। তিনি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কোন বক্তব্য প্রদান করেননি। এতো শুধুই ওহী, যা তাঁর কাছে প্রেরিত হয়।’’ (সূরা নাজমঃ ১-৪)

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া সংবাদকে অসত্য বলা ও একে কোন অপবাদ দেয়া হল সম্পূর্ণ কুফুরী ও মারাত্মক অশিষ্টতা, যার কোন ক্ষমা আল্লাহর কাছে নেই। আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَا كَانَ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ أَن يُفۡتَرَىٰ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن تَصۡدِيقَ ٱلَّذِي بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَتَفۡصِيلَ ٱلۡكِتَٰبِ لَا رَيۡبَ فِيهِ مِن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٣٧ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣٨ بَلۡ كَذَّبُواْ بِمَا لَمۡ يُحِيطُواْ بِعِلۡمِهِۦ وَلَمَّا يَأۡتِهِمۡ تَأۡوِيلُهُۥۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلظَّٰلِمِينَ ٣٩﴾ [يونس:37-39]

 ‘‘আর এ কুরআন তো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো থেকে রচিত নয়, বরং এ হচ্ছে তার পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং সে গ্রন্থের বিশদ বিবরণ যা রাববুল আলামীনের পক্ষ থেকে সন্দেহাতীতভাবে অবতীর্ণ। তারা কি বলে যে, সে তা রচনা করেছে? বল, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে এস এবং তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। বরং যে জ্ঞান তাদের আয়ত্বে নেই সে সম্পর্কে তারা মিথ্যাচার করছে….।’’(সূরা ইউনুসঃ ৩৭-৩৯)

ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শিষ্টাচারিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল- তাঁর সবকিছু পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া ও তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, তাঁর দেয়া সব সংবাদ সত্য বলে মেনে নেয়া এবং খেয়ালের বশবর্তী হয়ে যুক্তির খাতিরে তা প্রত্যাখ্যান না করা কিংবা কোন সংশয়ের কারণে তাতে সন্দেহ প্রকাশ না করা অথবা অন্য লোকদের মতামত ও বুদ্ধিবৃত্তিক নির্যাসকে তাঁর উপর প্রাধান্য না দেয়া।’’ [মাদারিজুস সালেকীন ২/৩৮৭]

৪. তাঁর ইত্তেবা করা, আনুগত্য পোষণ ও তাঁর হিদায়াতের আলোকে পরিচালিত হওয়াঃ

এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [الأحزاب:21]

 ‘‘নিশ্চয় রাসূলুল্লাহর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ, বিশেষ করে ঐ ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা পোষণ করে এবং আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে।’’ [সূরা আহযাবঃ ২১]

ইমাম ইবনু কাসীর বলেন, ‘‘সকল কথা, কাজ ও অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে এ আয়াতটি একটি মৌলিক দলীল।’’ [তাফসীরুল কুরআনিল আযীম: ৩/৪৭৫]

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [النساء:80]

 ‘‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল আমি তো তোমাকে তাদের হেফাযতকারী রূপে প্রেরণ করিনি।’’ [সূরা নিসাঃ ৮০]

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [النساء:59]

 ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুসরণ কর আল্লাহর এবং অনুসরণ কর রাসূলের; আর তোমাদের মধ্যে যারা উলুল আমর তাদের। আর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতণ্ডায় লিপ্ত হও, তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের (সমাধানের) দিকে ফিরে আস, যদি তোমরা ঈমান পোষণ করে থাক আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি। এটাই পরিণামের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ও সুন্দরতম।’’ [সূরা নিসাঃ ৫৯]

এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই অসংখ্য হাদীসে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছেন।

. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের বিধান দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়াঃ

এ বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার অন্যতম একটি মানদন্ড। এর বাস্তবায়ন না হলে ভালোবাসা তো নয়ই বরং ঈমানের দাবীও কেউ করতে পারে না। সেটিই আল্লাহ বলেছেন এভাবে,

﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء:65]

 ‘‘তোমার রবের শপথ! কক্ষণও নয়, তারা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তারা তোমাকে নিজেদের মধ্যকার বাদানুবাদের ক্ষেত্রে হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নেয়, অতঃপর তুমি যে মিমাংসা করে দাও তাতে তাদের মনে কোন দ্বিধা তারা রাখে না এবং পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়।’’ [সূরা নিসাঃ ৬৫]

ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘‘যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত থেকে বের হয়ে যায়, আল্লাহ নিজে তাঁর পবিত্র সত্ত্বার কসম করে বলেছেন যে, তারা ঈমানদার নয়।’’ [মাজমু আল ফাতাওয়া ২৮/৪৭১]

. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়াঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহব্বত করার একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও বড় উপায় হচ্ছে তাঁর পক্ষে অবস্থান নেয়া ও তাঁকে সাহায্য করা। আল্লাহ বলেন,

﴿لِلۡفُقَرَآءِ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ ٱلَّذِينَ أُخۡرِجُواْ مِن دِيَٰرِهِمۡ وَأَمۡوَٰلِهِمۡ يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗا وَيَنصُرُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ٨﴾ [الحشر:8]

‘‘যে সকল দরিদ্র মুহাজিরকে তার বাসস্থান ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত করা হয়েছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে, তারাই হল সত্যবাদী।’’ [সূরা হাশরঃ ৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়া ও তাঁকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে চমৎকার ও সত্যিকার সব উদাহরণ পেশ করেছেন তাঁরই প্রিয় সাহাবাগণ। আজকের প্রেক্ষাপটে যেখানে বিভিন্ন দেশের অমুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্নক কথা বলছে, সেখানে আমাদের উচিত তার প্রতিবাদ করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়া। অতএব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশের সারবত্তা তুলে ধরা ও মানুষকে তা মেনে নেয়ার আহবান জানানোই হল মূলত আজকের প্রেক্ষাপটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য করার অর্থ।

. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহব্বত করার আরেকটি উপায় হল তাঁর প্রিয় সাহাবাদেরকে ভালোবাসা ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেয়া, তাদেরকে আমাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ ও তাদের সুন্নাতের অনুসরণ করা। আল কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সাহাবাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন এবং তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন ও তাদের প্রতি তিনি যে সন্তুষ্ট সে ঘোষণাও দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সাহাবাগণের প্রতি ভালোবাসা পোষণের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা আরো পাকাপোক্ত হয়।

৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের প্রচার ও প্রসার করা তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণের অন্যতম একটি উপায়। নিজের জীবনে সুন্নাতকে বাস্তবায়ন না করে এবং সুন্নাতের প্রচার প্রসারের জন্য কোনরূপ চেষ্টা না করে শুধু মৌখিকভাবে তাঁকে ভালোবাসার দাবী করলেই তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা হয় না- বিষয়টি সবার কাছেই স্পষ্ট। আজ আমাদের সমাজে যেখানে সুন্নাত ও বিদ‘আতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটেছে, অথবা যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত সুন্নাত থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিংবা তথাকথিত কতিপয় আধুনিক শিক্ষিতরা সুন্নাতের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করছে, সেখানে সত্যিকার সুন্নাতের বিপুল প্রচার ও প্রসার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসার দাবীদারদের উপর এক অপরিহার্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিশেষে এ কথা বলে শেষ করবো যে, আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে জানা, বোঝা ও আমল করার মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নেতা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসার তাওফীক  দিয়ে আমাদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করে দেন। আমীন।

স্থায়ী দাম্পত্যের জন্য বিবাহপূর্ব পরামর্শ গ্রহণ করুন

$
0
0

মূল : আমাল কিল্লাওয়ি | ভাষান্তর ও সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

প্রকাশনায় : PureMatrimony Bangladesh

muslim-man-putting-shoes-on-woman

সম্প্রতি এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে মানুষের দাম্পত্য নিয়ে নানা সমস্যার কথা শুনলাম। অতিথিরা যখন নেচে গেয়ে অনুষ্ঠান মাত করছিল, হলের একদম পেছনের দিকে বসে বসে ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন আর অপূর্ণ প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের কথা হচ্ছিল। গানবাজনার উচ্চ শব্দের কারণে পরস্পরের কথা শোনার জন্য মাঝে মাঝে আমাদেরকে চিৎকার করে কথা বলতে হচ্ছিল। একজন কমবয়সী নারী বললেন, তার স্বামী তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দেবেন না। উপস্থিত আরেক বান্ধবী শশুরবাড়ির লোকজনের সাথে কীভাবে চলতে হবে সেই বিষয়ে পরামর্শ চাইলেন। এক মা কাঁদতে কাঁদতে তার মেয়ের সম্ভব্য বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বললেন। তালাকপ্রাপ্তা মেয়ে ঘরে তুলতে কেমন লাগবে সেই অনুভূতির কথাও বললেন।

অন্যরকম একটা রাত! নবদম্পতির জন্য অনেক অনেক দো‘আ আর শুভকামনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি হলো। মনে আছে, বর-কনে, উভয়ের জন্য আমি আরও বেশি দো‘আ করেছিলাম : ‘হে আল্লাহ! ওদের তুমি একটা স্থায়ী এবং সুস্থ-সুন্দর সম্পর্ক দিয়ে ধন্য করো। আমীন।’ অনুষ্ঠান থেকে গভীর চিন্তা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। ফলে ঘুমিয়ে পড়তে বেশ সমস্যা হলো। ওইরাতে অভিজ্ঞতার পরিহাস আমাকে ভালো মতোই নাড়া দিল।

গত কয়েকমাসের মধ্যেই আমার আশেপাশের অনেক কয়টা সংসার ভেঙ্গে গেছে। আমার জানা মতে, এমন আরও অনেক দম্পতি চূড়ান্ত বিচ্ছদের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, বিবাহ বিচ্ছেদ একটি সঠিক এবং অনেক ক্ষেত্রে একটা অপরিহার্য পছন্দ। কিন্তু কী কারনে এত বিপুল সংখ্যক দাম্পত্য জীবনের এত দ্রুত অবসান ঘটছে? প্রতিশ্রুতি এবং দায়িত্ববোধের একটি সংস্কৃতিকে লালন করার জন্য কী ধরণের পরিবর্তন দরকার?

সেদিন রাতে যতগুলো ঘটনা আমি শুনেছিলাম, তার সবগুলোর সারকথা ছিল একটাই : বিয়ের আগে ওইসব দম্পতির কেউই বিবাহপূর্ব পরামর্শ গ্রহণ করেননি। তাদের কেউই বিয়ের মতো জীবন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি এবং তাদের অধিকাংশ সমস্যাগুলো এমন সব বিষয় থেকে সৃষ্টি হয়েছিল, বিয়ের পূর্বে যেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। মুসলিম সমাজগুলোতে বিবাহ বিচ্ছেদের উপর একটি সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা গেছে, গবেষণায় অংশ নেওয়া তালাকপ্রাপ্ত নারী-পুরুষদের কেউই মসজিদের ইমামের সাথে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ছাড়া, অন্যকোনো বিবাহপূর্ব পরামর্শই গ্রহন করেননি। তাদের অনেকেই বলেছেন, আরও ব্যাপক বিবাহপূর্ব পরামর্শ পেলে এবং বিয়ের পরে সমস্যায় পড়ার সাথে সাথে এধরনের সহজ পরামর্শ পেলে তারা অনেক উপকৃত হতেন। আমাদের সমাজগুলোতে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের অভাব একটি দুঃখজনক বাস্তবতা।

যখনই কোনো দম্পতির বাগদানের খবর শুনি, আমরা অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের জন্য দৌড়ে যায়। কখনও কি আমরা সময় করে ভেবেছি, সারাজীবনের জন্য একটি সিদ্ধান্ত নিতে ওই নবদম্পতির কী পরিমাণ প্রস্তুতি এবং সহযোগিতার প্রয়োজন? বিয়ের অনুষ্ঠানে হাসিখুশি চেহারায় ছবি তুলতে ব্যস্ত কয়জন নবদম্পতি আসলেই জানে, তারা কোন পথে পা বাড়াচ্ছে? নতুন সম্পর্কের প্রেমোত্তেজনা তাদেরকে প্রায়ই এই বাস্তবতা উপলব্ধিতে অন্ধ করে দেয় যে, তাদের বিয়ে হলো স্রষ্টার সাথে একটি পবিত্র অঙ্গীকার। এই আত্মিক সম্পর্কের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা কি তাৎপর্যপূর্ণ নয়?

বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আমরা কত সময়, শ্রম আর অর্থ ব্যয় করি! অথচ খোদ বিয়ের জন্যই কিছু করি না। এমন কেন হয়? বিয়ে অনুষ্ঠানের সামান্য বিষয়টা নিয়েও আমাদের জল্পনা-কল্পনার কমতি থাকে না। অথচ সেই অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের অপরিহার্য উদ্দেশ্য, অন্য একজন মানুষের সাথে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার “অঙ্গীকার”কে আমরা উপেক্ষা করে যায়। একজন মহিলা আমাকে বলেছিলেন, ‘বিয়ে নিয়ে ভাবার জন্য দু’মাস মাত্র সময় পেয়েছিলাম। প্রেমে মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম, তাই অন্যকিছু নিয়ে ভাববার সময় পায়নি।’

অনেক যুগল ভূলবশত মনে করেন, বিয়ের আগে তাদের কোন পরামর্শ গ্রহনের প্রয়োজন নেই, দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলতে পারলেই সব ঠিক থাকবে। তবে কথা হলো, একটা নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত দ্বন্দ্ব থাকা সুস্থ দাম্পত্যের জন্য জরুরি এবং বিবাহপূর্ব পরামর্শ সম্ভব্য সমস্যা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দেয়।

বিয়ের ব্যাপারে পাকাকথা দেওয়ার আগেই বিবাহপূর্ব পরামর্শ গ্রহণ করুন।

পরিবার ও বিবাহ বিষয়ক গবেষক, লিসা কিফ্‌ট এর মতে, বিবাহপূর্ব পরামর্শ গ্রহণ আপনাকে নিন্মোক্ত ক্ষেত্রে সাহায্য করবে:

১) পারস্পরিক ভূমিকার ব্যাপারে প্রত্যাশাগুলো কেমন, তা আলোচনা করা। একটি দাম্পত্য সম্পর্কে প্রত্যেকের নিজনিজ দায়িত্ব এবং কর্তব্যগুলো নিয়ে কথা বলা জরুরি। যেমন : কে আর্থিক দিকটা সামলাবেন আবার কে বাড়ির কাজগুলো দেখাশোনা করবেন ইত্যাদি। আগেভাগেই প্রত্যেকের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা হলে, পরস্পরের কাছে ভবিষ্যত প্রত্যাশাগুলো সচ্ছ এবং পরিষ্কার হয়ে যায়।

২) পরস্পরের ব্যক্তিগত এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া। গানবাজনা, হিজাব, জবাই করা পশুর গোশত খাওয়া, কোনো নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসরণ করা ইত্যাদি বিষয়ে দুজনের কার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, তা জেনে নিন। সময় থাকতেই এসব বিষয়ে আলোচনা করলে আপনারা পরস্পরের জন্য কতটুকু মানানসই, তা বুঝতে পারবেন। এতে করে কীভাবে ভিন্ন মতের মানুষের সাথে মানিয়ে চলতে হবে তা জানা যাবে।

৩) পরস্পরের বংশ এবং পরিবার সম্পর্কে কথা বলা। একটি সম্পর্কের সাথে যতগুলো বিষয় জড়িত থাকে, তার অধিকাংশ সম্পর্কে আমরা আমাদের বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদের থেকে শিখে থাকি। জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ের প্রভাবগুলো চিহ্নিত করলে এবং সেসব থেকে অর্জিত আচার-ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করলে বুঝা যায়, দাম্পত্য জীবনে সেগুলো কোন ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে।

৪) পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ান। যে দম্পতির মাঝে যত উন্নতমানের বোঝাপড়া বিদ্যমান, তারা তত কার্যকরভাবে নিজেদের সমস্যার নিরসন করতে পারেন। এতে করে খুব সামান্য সময়ই আপনি তর্কে জড়াবেন এবং অধিকাংশ সময় পরস্পরকে বুঝতে পারবেন।

৫) ব্যাক্তি জীনবের জন্য, দাম্পত্য জীবনের জন্য এবং পারিবারিক জীবনের জন্য লক্ষ্য স্থির করুন। মনে রাখবেন, আপনি অন্য একটা মানুষের সাথে নিজের জীবনটাকে ভাগাভাগি করার অঙ্গীকার করতে যাচ্ছেন। একসাথে থাকা অবস্থায় নিজেদের ভবিষ্যতটা কেমন দেখতে চান, তা আলোচনা করা কি জরুরি নয়? বিয়ে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? কয়টি সন্তান প্রত্যাশা করেন? ভবিষ্যত জীবনের একটা রূপরেখা তৈরি করা পরস্পরকে বুঝার একটা অসাধারণ উপায়। এতে পারস্পরিক অঙ্গীকারগুলো আরও দৃঢ় হয়ে যায়।

বিবাহপূর্ব পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে দম্পতিরা অনেক মানসিক যন্ত্রণা এবং দ্বন্দ্ব সংঘাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সমস্যার সমাধান খোঁজার চেয়ে সমস্যা যেন তৈরিই না হয়, তা নিশ্চিত করা ইসলামের অন্যতম মূল বিষয়। কাজেই আমাদের ইমামগণ এবং সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বিবাহপূর্ব পরামর্শ এবং শিক্ষা দানের জন্য প্রশিক্ষন গ্রহণ করা দরকার। এটি হবে সুখী দম্পতি এবং সুস্থ দাম্পত্যের ক্ষেত্রে একটি নিশ্চিত লাভজনক বিনিয়োগ।

আপনার অভিমত জানান :

১) আপনি কি সম্ভব্য পাত্র-পাত্রীদের জন্য বিবাহপূর্ব পরামর্শ গ্রহণ করাকে উপকারী বলে মনে করেন?

২) বিবাহপূর্ব পরামর্শ দানের ক্ষেত্রে আর কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?

৩) কীভাবে সম্ভব্য পাত্র-পাত্রীদেরকে বিবাহপূর্ব পরামর্শ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা যায়?

আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানিয়ে মন্তব্য করুন।

 

Join Pure Matrimony!

শুধুমাত্র বাস্তব জীবনে ইসলাম চর্চাকারী অবিবাহিত মুসলিম ছেলেমেয়েদেরকে আল্লাহ্‌ভীরু জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী খুঁজে পেতে সহায়তা করাই “পিওর ম্যাট্রিমনি” ওয়েবসাইটের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন  – http://www.quraneralo.com/purematrimony/

Facebook: http://www.facebook.com/purematrimonybd

Viewing all 514 articles
Browse latest View live